1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

“ওরা রাজাকার শাবক”

মোঃ পৃথিবী আলম রাজ : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২১

স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করছি আমরা। ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে পেয়েছিলাম একটি পতাকা। পাকিস্তানি পতাকা উপড়ে ফেলে বাংলাদেশের পতাকা উড়াতে আমাদের পূর্বপুরুষরা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। আজকে ৫০ বছর পর আমার দেশের আলো-বাতাসে বড় হওয়া প্রজন্মের হাতে পাকিস্তানের পতাকা। বাংলাদেশকে উপেক্ষা করে পাকিস্তানের প্রতি এই ভালবাসা রক্তক্ষরণ ঘটায় আমাদের অন্তরে।

সদ্য সমাপ্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আমাদের বাংলাদেশ বাজে পারফর্ম করেছে। একটি মহল যুক্তি দিচ্ছে সেজন্যই প্রজন্মের একটি অংশের হাতে পাকিস্তানের পতাকা। যুক্তির খাতিরে যদি এটা সত্য ধরেও নেই, তবে কি আগামীতে জিম্বাবুয়ে/অস্ট্রেলিয়া খেলতে আসলে ওরা ওই দেশের পতাকা উড়াবে? উত্তর টা বোধকরি সবাই ‘না’ বলবেন। তাহলে পরিষ্কার, এটা বাংলাদেশের পার্ফরম্যান্সের জন্য নয়। শুধুমাত্র পাকিস্তান প্রীতির জন্যই ওদের হাতে পাকিস্তানি পতাকা।

১৯৭১ সালেও এদেশের সবাই বাংলাদেশ চায় নি। একটা অংশ তো সরাসরি পাকিস্তানি গণহত্যায় সহায়তা করেছে। গোলাম আজম, নিজামি, মুজাহিদ, সাঈদী, কাদের মোল্লা, সাকা চৌধুরী এদেশের বিপক্ষে অংশ নিয়েও পরবর্তীতে এদেশে রাজনীতি করেছে। শুধু রাজনীতি-ই নয়, বাংলাদেশের পতাকা স্থান পেয়েছে তাদের কারো কারো গাড়িতে। আমাদের দেশের জন্য এর চেয়ে লজ্জার কিছু আর হতে পারেনা। স্বাধীনতার ৫০ বছরে প্রজন্ম কি ভুলে গেলো পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর গণহত্যার ইতিহাস? প্রজন্ম কি ভুলে গেলো নারীদের উপর পশুর চেয়েও ঘৃণিত অত্যাচারের ইতিহাস? প্রজন্ম কি শহীদ জুয়েল, শহীদ রুমী, শহীদ মোস্তাকদের ভুলে গেলো? ভুলে না গেলে শহীদ জুয়েল স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে কিভাবে এদেশের নাগরিক হয়ে পাকিস্তানের পতাকা উঁড়ায়! শহীদ জুয়েল নিশ্চয়ই আমাদের ধিক্কার জানাচ্ছে।

অনুশীলনের সময় মিরপুরের মাটিতে পাকিস্তানি পতাকা উঁড়ানোর যে ধৃষ্টতা ওরা দেখিয়েছে তা খালি চোখে দেখা যাবেনা। পাকিস্তানের ক্রিকেট দলের বর্তমান প্রজন্ম নিশ্চয়ই ১৯৭১ সালের ইতিহাস পড়েছে। সেখানে নিশ্চয়ই তাদের পূর্বপুরুষদের অত্যাচারের ইতিহাস নেই। নেই ৩০ লক্ষ শহীদের ইতিহাস। তাদের পড়ানো হয় তাদের মতো করে। তবে তারা এটা জেনেছে এদেশে তাদের অনেক ভক্ত আছে। একজন তো সেদিন বলেই ফেললেন – ” তার দুঃখ কেন পাকিস্তান থেকে আলাদা হলাম!” পাকিস্তানের ক্রিকেটারেরা হয়তো সেজন্যই ধৃষ্টতা দেখানোর সাহস দেখিয়েছে।

পাকিস্তানে ভারতের কোহলির ভক্ত হওয়ায় যদি ১০ বছরের জেল হতে পারে, বাংলাদেশে কেনো পাকিস্তান সাপোর্ট করার জন্য শাস্তির ব্যবস্থা থাকবেনা। আমাদের দেশের সুবিধা নিয়ে যারা অন্তরে পাকিস্তান প্রীতি রাখবে তাদের কে আইনের আওতায় আনা উচিত। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে পতাকা আমাদের দিয়েছিলেন, সে পরিচয় আমাদের দিয়েছিলেন তার সম্মান সমুন্নত রাখতে হবে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবার এবং চার নেতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে যারা ক্ষমতায় এসেছিলো এবং ২১ বছর দেশ শাসন করেছিলো তারা পাকিস্তানের আদর্শের চর্চাই এদেশে করেছে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভাবে যোজন-যোজন এগিয়ে থাকার পরেও আমাদের দেশের একজন নাগরিক পাকিস্তান থেকে আলাদা হবার জন্য আফসোস করে। এই ধৃষ্টতা দেখানোর সাহস একদিনে হয়নি। ছাড় দেয়ার কারণেই এই দুঃসাহস ওরা দেখিয়েছে।

রাজাকার মুজাহিদ বলেছিলো -‘ এদেশে কোন যুদ্ধাপরাধী নাই। এদেশে কোন স্বাধীনতা বিরোধী নাই!” এই ধৃষ্টতা দেখাতে পেরেছিলো কারণ ওদের গাড়িতে তখন বাংলাদেশের পতাকা তুলে দিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। বাংলাদেশের মানুষ এই একটা কারণে হলেও বেগম খালেদা জিয়া-কে কোনদিন ক্ষমা করবেন না।

পাকিস্তানের প্রতি ভালবাসা দেখানো ওরা একবাক্যে রাজাকার শাবক। যারা বিভিন্ন উপায়ে পাকিস্তানের প্রতি ওদের ভালবাসা দেখিয়ে ফেলে। পাকিস্তানের মতো একটি অকার্যকর রাষ্ট্র থেকে আলাদা হবার জন্য আক্ষেপ করে। এদের দমন করতে হবে। প্রয়োজনে কঠোর আইন করতে হবে। মহান স্বাধীনতার প্রশ্নে কোন আপোষ হতে পারেনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের যে স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন, তা রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের।

উপরে কয়েকবার বলেছি প্রজন্মের কথা। কিন্তু আমাদের প্রজন্মের উপর বিশ্বাস হারাবেন না । আমরা তার প্রমাণ বাংলাদেশ-পাকিস্তান তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে দিয়েছি। বাংলাদেশের কোন নাগরিককে পাকিস্তানের জার্সি-পতাকাব বহন করতে দেয়া হয়নি। ওরা গুটিকয়েক, ওরা দূর্বল চিত্তের। ওদের বিরুদ্ধে কয়েকজন প্রতিরোধ গড়ে তুললেই বাংলাদেশের সম্মান ধরে রাখা সম্ভব। শহীদ জুয়েলের দেশের কোন নাগরিক পাকিস্তানের পতাকা উঁড়িয়ে জয়ধ্বনি করবে আমরা তা হতে দেয়া হবেনা। ১৯৭১ সালেও ওরা ছিলো। ২০২১ সালেও ওরা আছে। আমাদের পূর্বপুরুষেরা যেভাবে ওদের প্রতিহত করেছিলো, আমাদের প্রজন্ম ঠিক সেভাবেই ওদের প্রতিহত করবে।

শেষ করছি কবি আবদুল হাকিমের বিখ্যাত দুটি লাইন দিয়ে-

“যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী।
সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।”

লেখক: মোঃ পৃথিবী আলম রাজ, সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা জেলা উত্তর।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ