1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

নির্মম ইতিহাসের ভুল স্বীকার

খান মুহাম্মদ রুমেল : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ৪ নভেম্বর, ২০২২

প্রকৃতি জুড়ে মধ্য কার্তিকের আলস্য। হলুদ হেমন্ত দূরের গ্রামীণ জনপদে মেলে ধরছে শীতের আগমনী বার্তা। কুয়াশায় ঢেকে রাখছে চারপাশের ভোর এবং সকালের অনেকটা সময়। বেলা একটু বাড়লে হলুদ রোদ বয়ে আনে অপার্থিব আলস্য মাখা দিন।

নগরে কি তার ছাপ মেলে? ইট নগরে এখনো সেই ভ্যাপসা গরমের রুক্ষতা। চামড়া তাতানো রোদ। প্রচণ্ড গতির এই শহরে প্রকৃতির রূপ আস্বাদনের সুযোগ কোথায় নাগরিক মানুষের? অথবা প্রকৃতিরেই সুযোগ কোথায় এই শহরে নিজেকে সমেলে ধরার? তবে দ্বন্দ্বের কিছুটা ব্যতিক্রম দেখা যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গেলে।

অসংখ্য গাছপালায় ঘেরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গেলে কার্তিকের মাঝামাঝি সময়ে একটু আধটু শীত শীত অনুভূত হয়। তেমনই এক সকাল ছিল গেল ৩১ অক্টোবর কিংবা ১৫ কার্তিক সকালে।

এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বটতলায় সপরিবার এসেছিলেন এক মার্কিন নাগরিক। সঙ্গে ছিলেন দেশের বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত। ছিলেন আরও অনেকেই। সেই নাগরিকের নাম-টেড কেনেডি জুনিয়র। নামটা একটু পরিচিত লাগছে কি?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়াত সিনেটর অ্যাডওয়ার্ড এম টেড কেনেডির ছেলে এই কেনেডি জুনিয়র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের দক্ষিণ দিকে যে বটগাছ আছে সেটি লাগিয়েছিলেন অ্যাডওয়ার্ড কেনেডি—১৯৭২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি।

অ্যাডওয়ার্ড কেনেডির গাছ লাগানোর আগেও এই জায়গায় একটি বটগাছ ছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে সেই বটগাছটি উপড়ে ফেলেছিল পাকিস্তান হানাদার বাহিনী। কারণ এই বটতলায় পুঞ্জিভূত হয়েছিল পাকিস্তানি শোষকদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের বীজ। এখানে রচিত হয়েছিল ২৩ বছরের শোষণের বিরুদ্ধে মুক্তির লড়াইয়ের মন্ত্র। সুতরাং বর্বর পাকিস্তানের বৃক্ষটি হয়ে উঠেছিল শত্রুসম।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় অ্যাডওয়ার্ড কেনেডি ছিলেন ডেমোক্র্যাট দলের মার্কিন সিনেটর। সেই সময়ের রিপাবলিকান নিক্সন সরকার পাকিস্তানের পক্ষ নিলেও কেনেডি ছিলেন স্বাধীন বাংলার অভ্যুদয়ের পক্ষে। ছিলেন মুক্তিকামী সাতকোটি বাঙালির পক্ষে। সুতরাং স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এসে তার ছেলে এই স্মৃতির বটতলায় এসে আবেগ তাড়িত হবেন—এইতো স্বাভাবিক।

স্ত্রী সন্তান এবং ভাইয়ের সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে বাঙালি সাজে তিনি পরিদর্শন করেন বটতল। রিকশায় ঘোরেন ক্যাম্পাসে। তার ভাষায়- এখানে এসে বাবার স্মৃতি অনুভব করেছি। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এক সেমিনারে অংশ নেন।

বক্তৃতায় বলেন নিজের আবেগের কথা। বাবার স্মৃতির কথা। সেখানে কথা বলেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। তার বক্তব্য হলো—১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল। কিন্তু তার দেশের অনেক রাজনীতিবিদ এবং শিল্পী সাহিত্যিক ঠিকই বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন।

পিটার হাসের ভাষায় এটিই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। এমনকি তখন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন উপরাষ্ট্রদূত নিজ দেশের সরকারের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে গিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ নিয়েছিলেন সেই কথা বলতেও ভোলেননি তিনি।

হ্যাঁ, আমরাও স্বীকার করি—জর্জ হ্যারিসনের ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর কথা। ম্যাডিসন স্কয়ারে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত সাধক পণ্ডিত রবিশঙ্করের সাথে আয়োজন করা এই কনসার্ট মুক্তিকামী বাঙালির কথা পৃথিবীর সামনে তুলে ধরতে সহায়ক হয়েছিল।

আজন্মের বোহেমিয়ান আরেক মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গের ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’ কবিতা আমাদের মুক্তির উদ্দীপনায় সাহস জুগিয়েছে।

আমাদের দুই কোটি শরণার্থীর কথা, আমাদের যুদ্ধ সংগ্রাম দুঃখ-দুর্দশার কথা পৃথিবীর মানুষের সামনে আসতে সাহায্য করেছে এই কবিতা। কিন্তু নিক্সন সরকার যে পাকিস্তানকে সহায়তা করেছে, অস্ত্র গোলাবারুদ দিয়েছে, পাকিস্তানের পরাজয় নিশ্চিত জেনে জাতিসংঘকে ব্যবহার করে যুদ্ধ বিরতির চেষ্টা করেছে এবং সর্বশেষ কিছুই না পেরে সপ্তম নৌবহর বঙ্গোপসাগর অভিমুখে যাত্রা করিয়েছে—এই বেদনা আমরা ভুলি কী করে!

পাকিস্তানের প্রতি তাদের এই নির্লজ্জ সমর্থন এবং সহযোগিতা না থাকলে আমাদের যুদ্ধ জয় আরও সহজ হতে পারতো না? আমাদের প্রাণহানি আরও কম হতো না?

আবার যদি বর্তমানে ফিরি—মানবতার দোহাই দিয়ে বঙ্গবন্ধুর খুনিকে নিরাপদ আশ্রয় দিয়ে রেখেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সেই দৃশ্যও তো সামনে ভাসে!

তবুও স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এসে পিটার হাসের বক্তব্য শুনে কিছু আশা জাগে। যুক্তরাষ্ট্র হয়তো ইতিহাসের দায় স্বীকার করছে। হয়তো একদিন তারা স্পষ্ট করে বলবে—একাত্তরে পাকিস্তানের পক্ষ নেওয়া আমাদের ভুল সিদ্ধান্ত ছিল! হয়তো তারা একদিন বলবে—বাঙালির কাছে ক্ষমা প্রার্থী। হয়তো তারা একদিন বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিকে ফেরত দেবে।

হয়তো একদিন বাংলাদেশে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে ঘটে যাওয়া বিশ শতকের সবচেয়ে ভয়াবহ গণহত্যার স্বীকৃতি দেবে। ইতিহাসের সকল দায় স্বীকার করুক যুক্তরাষ্ট্র। ইতিহাসের সকল দায় শোধ করুক যুক্তরাষ্ট্র। আমরা আশায় থাকি। আমরা আশায় বাঁচি।

লেখক : খান মুহাম্মদ রুমেল – অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর, সময় টেলিভিশন


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ