1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বিএনপি নেতাদের ব্যবসায়িক বিরোধের জেরেই আ ফ ম কামালকে হত্যা!

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ৮ নভেম্বর, ২০২২

সিলেটে বিএনপি নেতা আ ফ ম কামালকে ব্যবসায়িক বিরোধের জেরে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। এ ঘটনায় বিএনপির স্থানীয় একাধিক কর্মী জড়িত বলেও ধারণা তাদের। এদিকে বিএনপি নেতারা এই হত্যাকাণ্ডকে প্রথমে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করলেও এখন মত পাল্টেছে।

নগরীর বড়বাজার এলাকায় রবিবার রাত ৮টার দিকে ফিল্মি কায়দায় হত্যা করা হয় আ ফ ম কামালকে। ঘটনার সময় নিজ প্রাইভেট কার চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। ব্যস্ততম সড়কে প্রাইভেট কারের গতিরোধ করে তাকে ছুরিকাঘাত করে দ্রুত পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। স্থানীয়রা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ময়নাতদন্তে তার শরীরে ২৫টি ছুরিকাঘাতের ক্ষত পাওয়া গেছে। সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, ‘কামালের বাম হাতে ১৬টি, বাম বগলের নিচে দুটি, বাম বুকে একটি ও বাম পায়ে ৬টি আঘাত করা হয়েছে।’

আ ফ ম কামাল ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক এবং জেলা ছাত্রদলের সাবেক প্রচার সম্পাদক। তার বাসা নগরীর সুবিদবাজার এলাকায়। কামালের মৃত্যুর খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক সিলেট বিএনপির নেতাকর্মীরা হাসপাতালে ছুটে যান। সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপি সিলেট জেলা সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী এটিকে সরকারদলীয়দের কাজ বলে উল্লেখ করেন।

তবে সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ বলেন, ‘নিহত কামালের ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা ছিল। ব্যবসা নিয়ে নগরীর কয়েকজনের সঙ্গে তার বিরোধ চলছিল। এই বিরোধের জেরে গত ১৫ অক্টোবর নগরীর জিন্দাবাজার এলাকার আল মারজান শপিং সেন্টারের সামনে দুই পক্ষের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরদিন কামালসহ কয়েকজনকে আসামি করে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন বিএনপি নেতা আজিজুর রহমান সম্রাট। নগরীর বড়বাজার এলাকার বাসিন্দা তিনি। হত্যাকাণ্ড ওই এলাকাতেই ঘটেছে। আমরা ধারণা করছি, ব্যবসাসংক্রান্ত পূর্ব বিরোধের জের ধরে এ ঘটনা ঘটতে পারে।

সিলেট বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইনুল জাকির বলেন, ‘রবিবার রাতে বড়বাজার এলাকায় নিজের প্রাইভেট কার চালিয়ে যাচ্ছিলেন কামাল। এ সময় মোটরসাইকেলে আসা দুই ব্যক্তি তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। এমএজি ওসমানী মেডিকেলে নেয়ার পর তার মৃত্যু হয়।’ তিনি বলেন, সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আশা করি খুব শিগগিরই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদেরও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।

গতকাল রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কামালের পরিবারের কেউ থানায় মামলা করেননি। ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার রাতেই বিক্ষোভ মিছিল করে জেলা ও মহানগর বিএনপি। সিলেট ওসমানী মেডিকেল থেকে মিছিল নিয়ে চৌহাট্টা পর্যন্ত যান বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা সড়কের ওপর টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। পরে মিছিল থেকে ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকর্মী রিকাবিবাজারে আওয়ামী লীগের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলনস্থলের ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলেন। এ সময় সম্মেলন উপলক্ষে লাগানো বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিও ছিঁড়ে ফেলেন।

খবর পেয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ছাত্রদল কর্মীদের ধাওয়া দেন। প্রায় ১৫ মিনিট ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলার পর পুলিশ এসে উভয় পক্ষকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। উত্তেজিত ছাত্রলীগ কর্মীরা সম্মেলনস্থলের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন এবং ছাত্রদল কর্মীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবি করেন। পরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেলসহ আওয়ামী লীগ নেতারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, নিজেদের মধ্যে কোন্দলের কারণে একজন বিএনপি নেতা নিহত হয়েছেন। অথচ ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা আমাদের ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়ে আগুন দিয়েছেন। এছাড়া তারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ছিঁড়েছেন যা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দোষীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা না হলে বিএনপিকে সিলেটে কোনো সমাবেশ করতে দেয়া হবে না। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সিলেটে বিএনপির যে কোনো ধরনের কর্মসূচি প্রতিহত করবে।

তবে সোমবার নিজেদের আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে বিএনপি। রবিবার রাতে বিএনপি নেতারা এই হত্যাকাণ্ডকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করলেও মত পাল্টে এখন এই হত্যাকাণ্ডকে রাজনৈতিক রং দেয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছেন। গতকাল দুপুরে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, কামাল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আমরা সবাই মর্মাহত। এই হত্যাকাণ্ডকে রাজনৈতিক লেবাস দিতে চাই না। যে বা যারা জড়িত তাদের যেন দ্রুত গ্রেপ্তার করা হয়। তবে নিরীহ কাউকে যেন হয়রানি করা না হয়। তিনি বলেন, কামাল হত্যার কারণে সিলেট বিএনপি সোমবার সব সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করেছে। মঙ্গলবার থেকে জেলা বিএনপি ৩ দিনের শোক পালন করবে। সবাই কালো ব্যাজ পরিধান করবে। তিনি আরো বলেন, ১৯ নভেম্বর আমাদের বিভাগীয় সমাবেশ। এই সময়ের মধ্যে আসামিরা গ্রেপ্তার না হলে ২০ নভেম্বর থেকে কঠোর আন্দোলনে যাবে বিএনপি।

এদিকে, আ ফ ম কামালের মরদেহের ময়নাতদন্ত গতকাল দুপুরে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সম্পন্ন হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর তার ভাই ময়নুল হক লাশ গ্রহণ করে জালালাবাদ ইউনিয়ন আলীনগর গ্রামের বাড়ির দিকে রওনা দেন। সেখানেই তার জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ