1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বরেন্দ্র অঞ্চলে আধুনিক পদ্ধতিতে ড্রাগন ফল চাষে বাম্পার ফলন

ডেস্ক রিপোর্ট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৩

লাভজনক ড্রাগন ফল চাষে বরেন্দ্র অঞ্চলে নতুন দিগন্তের উন্মোচন হয়েছে। রাজশাহী কৃষি অঞ্চলে (রাজশাহী-নাটোর-নওগাঁ-চাঁপাইনবাবগঞ্জ) দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে ড্রাগন ফলের চাষ। বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রধান সমস্যা পানি সংকট, এজন্য ড্রাগন ফল চাষ সেখানে প্রধান সম্ভাবনা হিসেবে দেখা দিয়েছে। আমেরিকান এই ফলটি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে বরেন্দ্র অঞ্চলে।

জানা গেছে, ২০০৫ ও ২০০৬ সালে ড্রাগন ফল প্রথম আমদানি করা শুরু হয়। সে সময় চড়া দামে বিক্রি হতো এই ফল। এই ফল থাইল্যান্ড, ফ্লোরিডা ও ভিয়েতনাম থেকে নিয়ে আসা হতো। কিন্তু এর এক দশক পর পাল্টে গেছে পেক্ষাপট। এখন দেশেই চাষ হচ্ছে এই ফল। কর্মসংস্থান হচ্ছে হাজারো মানুষের। এখন দেশের বাজারেও সহজলভ্য এই ফল।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, ড্রাগন ফল গাছের কোনও পাতা নেই। এটি এক ধরনের ক্যাকটাস-জাতীয় গাছ। তবে এই গাছে ফুল ধরে। ফুল থেকেই হয় ড্রাগন ফল। ফলের গাছ সাধারণত দেড় থেকে আড়াই মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। একটি ফলের ওজন কমপক্ষে ১৫০ থেকে ৬০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। এর বীজগুলো খুবই ছোট, কালো ও নরম।

রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, প্রতি বছর ড্রাগন ফলের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজশাহী জেলায় ২১৪ হেক্টর জমিতে হয়েছে ড্রাগন চাষ। উৎপাদন হয়েছে ৪ হাজার ৪১৮ মেট্রিক টন। নাটোর জেলায় ১৩৪ হেক্টর জমিতে চাষ হয়ে উৎপাদন হয়েছে ১ হাজার ৫৪৫ মেট্রিক টন। নওগাঁ জেলায় ৪৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়ে উৎপাদন হয়েছে ৩৬০ মেট্রিক টন। চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৭ দশমিক ৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে উৎপাদন হয়েছে ৩২৫ মেট্রিক টন।

২০২১-২২ অর্থবছরে রাজশাহী জেলায় মাত্র ৫৭ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল ড্রাগন। উৎপাদন ছিল ৬৮৮ মেট্রিক টন। নাটোর জেলায় ৬৫ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছিল ৫৫২ মেট্রিক টন। নওগাঁয় ২৬ হেক্টর জমিতে উৎপাদন ২২০ মেট্রিক টন। চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৩ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছিল ২৩৪ মেট্রিক টন।

২০২০-২১ অর্থবছরে রাজশাহী জেলায় ২৭ হেক্টর জমিতে ড্রাগন ফল উৎপাদন হয়েছিল ৩২৪ মেট্রিক টন। নাটোর জেলায় ৪০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন ৬৪০ মেট্রিক টন। নওগাঁয় ২২ হেক্টর জমিতে উৎপাদন ছিল ১০৮ মেট্রিক টন। চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৪ হেক্টর জমিতে উৎপাদন ছিল ২ মেট্রিক টন।

ড্রাগন ফল চাষে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পিছিয়ে থাকলেও রাজশাহী জেলা এগিয়েছে কয়েকগুণ।

চাষিদের ভাষ্য, স্বল্প খরচ, অধিক উৎপাদন, পর্যাপ্ত বাজার চাহিদা, পুষ্টিগুণ এবং ভালো দাম পাওয়ায় ড্রাগন ফল চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। ড্রাগনের বাগান তৈরির পর সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে প্রায় ২০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এর চারা তৈরির কাজও খুব সহজ। ডাল কেটে মাটিতে বপণ করলেই সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠে ড্রাগন গাছ।

রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার ড্রাগন চাষি শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর থেকে এই ফল চাষ করে আসছি। এ বছরে আবারও শুরু হয়েছে চাষ। এবার ২৭ একর জমিতে ড্রাগনের চাষ করা হবে। এর চাষ প্রতিবছর বাড়ানো হচ্ছে। স্বল্প খরচে অধিক লাভের কারণে এর চাষ বাড়ছে। দ্রুত ফল পাওয়ার জন্য ড্রাগন গাছে অতিরিক্ত আলো দেওয়া হয়। এতে দ্রুত ফল দেয় গাছ।’

রাজশাহীর স্থানীয় বাজারেও কম দামেই মিলছে এই ফল। রাজশাহীর নগরীর শালবাগান এলাকার মোশারফ ফল ভান্ডারের মালিক মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় ড্রাগন ফল বিক্রি করা হচ্ছে। এক সময় বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো। এখন আর আমদানি করতে হয় না। বরেন্দ্র অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় উৎপাদন করা ড্রাগন ফল নগরীতে সরবরাহ করা হয়।’

রাজশাহী নগরীর উপশহর এলাকার ক্রেতা সেতেরা বেগম বলেন, ‘আমি নিয়মিতই ড্রাগন ফল কিনে থাকি। আগে বিদেশি ড্রাগন ফলটা কিনতাম। এখন সেটি বাজারে পাওয়া যায় না। দেশে উৎপাদিত ড্রাগন ফলটা বেশি পাওয়া যায়। দেশে উৎপাদিত ফলটাও স্বাদে তেমন খারাপ লাগে না।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর ইউনিয়নের পুনরচাঁদপুর গ্রাম সংলগ্ন ভাগলপুর মাঠে এক মাস আগে অন্যের জমি বর্গা নিয়ে ড্রাগন বাগান করেছেন আসমাউল হক। তিনি বলেন, ‘এলাকার অন্যদের ড্রাগন বাগান দেখে উৎসাহিত হয়ে ১২ বছরের চুক্তিতে একটি জমি বর্গা নিয়ে ৮ হাজার ড্রাগন চারা রোপণ করেছি। এতে উপজেলা কৃষি বিভাগের সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে।’

রাজশাহীর পবা উপজেলার মোহনপুর এলাকায় ২৬ কাঠা জমিতে ড্রাগনের চাষ করেছেন মো. বজলুর রহমান। ড্রাগন গাছে আগাম ফুল ও ফল পেতে বৈদ্যুতিক বাল্ব জ্বালিয়ে কৃত্রিম দিন করে রাখেন তিনি। তার দাবি, এভাবে বৈদ্যুতিক বাল্ব জ্বালিয়ে রাখলে ড্রাগন গাছে আগাম ফুল আসে। তার জমিতে ইতোমধ্যে ড্রাগনের ফুল আসা শুরু করেছে।

তিনি আরও জানান, শুধু রাজশাহী শহরে নয়, রাজশাহী অঞ্চলের আমের মতো ড্রাগন ফলও দেশের বিভিন্ন এলাকায় রফতানি করে থাকেন চাষিরা।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. মোজদার হোসেন বলেন, ‘জেলার গোদাগাড়ীতে সবচেয়ে বেশি ড্রাগনের চাষ হয়। পোড়ামাটির অঞ্চল হিসেবে খ্যাত এলাকার মাটি ড্রাগন চাষে বেশি উপযোগী।’

রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক শামসুল ওয়াদুদ বলেন, ‘বরেন্দ্রভূমিতে ড্রাগন চাষ বেশ লাভজনক। ড্রাগন হচ্ছে মরুভূমি এলাকার ফল। রাজশাহী অঞ্চলের মাটি অধিকাংশ সময় খরায় শুষ্ক থাকে। ড্রাগন চাষ সহজসাধ্য ও চাষে খরচও কম হয়। পোকামাকড় কম আক্রমণ করে এই ফলে। আবার অতিবৃষ্টিতেও এর ক্ষতি হয় না।’ এসব কারণে আগের চেয়ে বর্তমানে এর চাষ বেড়েছে বলে জানান তিনি।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ