1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

যোগাযোগব্যবস্থার সব দিকেই মনোযোগ দিতে হবে 

নিউজ এডিটর : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৩

১৪ নভেম্বর এক্সপ্রেসওয়ের যুগে প্রবেশ করেছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামও। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি এক্সপ্রেসওয়েটি উদ্বোধন করেন। মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী সিডিএ এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে গতিময় হয়ে উঠবে চট্টগ্রাম শহর- এমনটিই প্রত্যাশা। এর মাত্র তিন সপ্তাহ আগেই উদ্বোধনের মাধ্যমে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। যোগাযোগব্যবস্থায় এবার আরেকটি নতুন মাইলফলক যুক্ত হলো এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে। এক্সপ্রেসওয়ের মতো বড় প্রকল্প বন্দরনগরীর অর্থনীতি ও জনজীবনে আনবে স্বস্তি। একই গতি ও স্বস্তি আনার কাজ বহু আগেই শুরু হয়েছে রাজধানীতে। স্বাধীনতার ৫২ বছর পর মেট্রোরেলের মাধ্যমে সর্বপ্রথম মানসম্পন্ন গণপরিবহনব্যবস্থা পেয়েছি। প্রথম দিকে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল সেবা চালু ছিল। সম্প্রতি তা মতিঝিল পর্যন্ত পৌঁছেছে। ধীরগতির শহর হিসেবে পরিচিত ঢাকায় দ্রুতগতিসম্পন্ন গণপরিবহনের সংকট শুরু থেকেই ছিল। সে অভাব পূরণ হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যেও রয়েছে উচ্ছ্বাস। তবে চালু হওয়া মেট্রোরেলের রুট বাদেও ঢাকার অন্যান্য পথের যাত্রীরাও দ্রুতগতিসম্পন্ন গণপরিবহনের অভাব বোধ করছেন।

যোগাযোগব্যবস্থার এ অগ্রগতিতে বিশেষত সড়ককে গতিশীল করতে সরকারের উদ্যোগে মেট্রোরেল রুটে সড়কের মান, মেট্রোরেলের ট্রানজিট স্টেশন এবং ফুটপাতের গুণগতমানের দিকটিও বিবেচনায় আনার সময় এসেছে। কারণ গণপরিবহনব্যবস্থা একটি সমন্বিত ব্যবস্থা। একক ব্যবস্থা হিসেবে একে যাচাই করা যাবে না। শুধু মেট্রোরেল দিয়ে আমরা রাজধানীর গণপরিবহনব্যবস্থার সার্বিক দিক যাচাই করতে পারি না। মেট্রোরেলের মতো পরিবহনব্যবস্থা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। পৃথিবীর সব প্রান্তেই তা ব্যয়বহুল। সমন্বিত গণপরিবহনব্যবস্থার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এখন এ গণপরিবহনব্যবস্থা কীভাবে সবার জন্য সাশ্রয়ী করে তোলা যায় সে বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের মনোযোগ গভীর করা জরুরি।

গণপরিবহনের সেবাপ্রার্থীরা সচরাচর যাতায়াতের খরচ নিয়েই অভিযোগ বেশি তোলেন। আবার মেট্রোরেলে যাতায়াত সহজ ও দ্রুত হওয়ায় অনেকে ভাড়া নিয়ে আপত্তি না করারই পক্ষে। মূলত যাদের পক্ষে এমন ব্যয়ভার বহন করা সহজ তাদের কাছে মেট্রোরেলের ভাড়া বেশি মনে হয় না। কিন্তু নিত্যপণ্যের বাজার ও জীবনযাপনের ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ার পর অনেকের জীবনেই সমন্বয়ের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। সেখানে অনেকের পক্ষে সময় সাশ্রয়ী হলেও সড়কের চেয়ে বেশি ভাড়া বহন করা সম্ভব নয়। সেজন্য নীতিনির্ধারকদের ভাড়ার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা প্রয়োজন। চাকরিজীবী মধ্যবিত্ত অনেকের জন্য নিয়মিত যাতায়াতের এ ব্যয়ভার বহন করা কষ্টসাধ্য। তার পরও সময়ের মূল্য বিবেচনা করেই অনেকে মেট্রোরেলে চড়ছেন। আশার বিষয়, মেট্রোরেল নিয়ে সরকারের আরও দূরদর্শী পরিকল্পনা রয়েছে। ঢাকায় আরও পাঁচটি মেট্রোরেল লাইনের কথা যদি আমরা হিসাবে রাখি তাহলে সমন্বিতভাবে এর সুফল এখনই অনুমান করা যেতে পারে। ২০৩০ সাল নাগাদ এ পাঁচটি মেট্রো লাইন সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। বলা বাহুল্য, এ পাঁচটি লাইনের নির্মাণব্যয়ও কম নয়। তবে ব্যয়বহুল হলেও দ্রুতগতিসম্পন্ন গণপরিবহনব্যবস্থার প্রতি সরকার ও সাধারণের আগ্রহ রয়েছে। বড় বড় এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের আগ্রহ সরকারের থাকলেও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কিছু ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। পরিকল্পনার মাধ্যমে ঘাটতি দূর করে সমন্বিত ও সুপরিকল্পিত গণপরিবহনব্যবস্থা গড়ে তোলার বিষয়ে সরকারের মনোযোগ এখনও ফেরেনি। যেমন বাস ও ট্রেন নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা দীর্ঘদিন ধরেই আমরা শুনছি। কিন্তু এখনও এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। ফলে কবে নাগাদ রাজধানীতে বাস সার্ভিস মানসম্পন্ন করে তোলা যাবে তা এখনও বলা যাচ্ছে না।

দ্রুতগতিসম্পন্ন গণপরিবহনব্যবস্থা নির্মাণ অবশ্যই জরুরি। তবে এ নির্মাণকাজের সমান্তরালে কিছু প্রসঙ্গ রয়েছে। এ সমান্তরাল উদ্যোগগুলোকেও যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। তেমনটি করতে না পারলে উন্নত গণপরিবহনব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। গণপরিবহনের একটি মোডের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়লে চলে না। এজন্যই মাল্টিমোডাল পদ্ধতির ওপর জোর দিতে হবে। রাজধানীতে যত রাস্তা রয়েছে সেগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন জরুরি। সড়কব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে সব বাস সার্ভিসকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তা করা না গেলে মেট্রোরেলের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে পড়তে হবে। অতিনির্ভরশীলতার ফলে মেট্রোরেলের ওপর চাপ বাড়বে। একই সঙ্গে বাড়বে মেট্রোরেলের ব্যয়ভার নির্বাহের খরচও। ভবিষ্যতে এ অতিনির্ভরতা শুধু ঢাকা নয়, গোটা রাষ্ট্রের জন্যই বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এজন্য সুসমন্বিত গণপরিবহনব্যবস্থা গড়ে তোলার বিষয়ে সুপরিকল্পনা ও দ্রুত বাস্তবায়নের সদিচ্ছা জরুরি। উন্নত দেশগুলোতেও মেট্রোরেল সুবিধা রয়েছে। কিন্তু সেসব দেশেও অন্যান্য গণপরিবহন সেবাকে উন্নত করে তোলা হয়। মূলত একটি সেবার প্রতিপূরক যেন আরেকটি সেবা হয়ে ওঠে সেভাবেই সমান্তরালে প্রতিটি সেবাকে উন্নত করা হয়। তাতে যাত্রীদের ভোগান্তি লাঘব হয় এবং সাধারণে গণপরিবহনব্যবস্থার পূর্ণ সুবিধাভোগী হয়। আমাদের এখানে মেট্রোরেলের প্রতিপূরক কোনো গণপরিবহন সেবা নেই। যে অবকাঠামো রয়েছে সেটিকেও উন্নত করার বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের মনোযোগ ফেরেনি।

রাজধানীর বাস সার্ভিসের মানোন্নয়নের দাবি বহুদিনের। ২০০৫ সালের এসডিপিতেও মানোন্নত বাস সার্ভিস ও ফ্র্যাঞ্চাইজের কথা বলা হয়েছিল। বাস সার্ভিসের মানোন্নয়নের পরবর্তী ধাপে মেট্রোরেলের মতো দ্রুতগতিসম্পন্ন গণপরিবহনব্যবস্থার কথা বলা হয়। আমরা মেট্রোরেল বা এক্সপ্রেসওয়ের দিকে মনোযোগ দিলেও বাস সার্ভিসের দিকে মনোযোগ দিইনি। এ মুহূর্তে আমাদের মনোযোগ বাস সার্ভিস উন্নত করার দিকে ফেরাতেই হবে। এক্সপ্রেসওয়েতে বাস সার্ভিস চালুসহ সার্বিকভাবে বাস সার্ভিস উন্নত করা ছাড়া রাজধানীতে ধীরগতির গণপরিবহনব্যবস্থার বেহাল চিত্র দূর করা সম্ভব নয়। আমরা দেখছি, মেট্রোরেলের পাশাপাশি আরেকটি প্রকল্প, জয়দেবপুর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত আন্তঃনগর রেললাইন স্থাপনার কাজ চলছে খুবই ধীরগতিতে। বড় বড় শহরে মেট্রোরেল অসংখ্য সম্ভাবনার সুযোগ এনে দেয়। কিন্তু সেই সম্ভাবনা ধরার জন্য রাজধানীর পাশের শহর কিংবা জেলার সংযোগস্থাপন জরুরি। সমস্যা হলো, ঢাকার পাশের সব রুটকে আমরা মেট্রোরেলের সম্ভাব্য রুট বিবেচনা করছি। কিন্তু মেট্রোর মতো ব্যয়বহুল প্রকল্পের বাইরেও আমরা যদি রেলব্যবস্থা উন্নত করতে পারি, তাহলে যেমন ব্যয়ভার অনেকাংশে কমিয়ে আনা যাবে তেমন নাগরিক সুবিধাও অনেকাংশেই বাড়ানো সম্ভব। ঢাকা-জয়দেবপুর রেলওয়ে চার লেনে উন্নীত করার কাজটি সফলতার মুখ দেখলে, পরিবহনব্যবস্থায়ও গতি আসবে। আন্তঃনগর রেলব্যবস্থা উন্নত করার মাধ্যমে রাজধানীর ওপর চাপ কমবে, সময় সাশ্রয়ী হবে। সেইসঙ্গে আন্তঃনগর রেলব্যবস্থায় ভাড়া সাশ্রয়ের মাধ্যমেও সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। যাতে সড়কের ওপরও চাপ কমবে অনেকখানিই। কিন্তু আমাদের মনোযোগ এখনও এদিকে পুরোপুরি নেই। তাই সরকারের নীতিনির্ধারকদের উচিত যেসব প্রকল্পে খরচ কম এবং যাত্রীদের ব্যয় সাশ্রয় করবে সেসব প্রকল্পে জোর দেওয়া। যখন এমনটি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে তখন মেট্রোরেল বা সড়কের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টির বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া সহজ হবে। ঢাকার বাইরে আন্তঃনগর যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করতে পারলে রাজধানীকেন্দ্রিক বিনিয়োগের বোঝাও অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হতো। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা সৃষ্টি এবং পাশাপাশি শিল্প খাত বিকেন্দ্রীকরণের সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

আমাদের মনে রাখতে হবে, দ্রুতগতিসম্পন্ন গণপরিবহনব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি। একই সঙ্গে জরুরি এর সমান্তরালে গড়ে তোলা আন্তঃনগর পরিবহনব্যবস্থা, বাস সার্ভিস, বাস ফ্র্যাঞ্চাইজ, সড়ক অবকাঠামোর আধুনিকায়ন, ফুটপাতের উন্নীতকরণ, যানজট নিয়ন্ত্রণ, ট্রাফিক পুলিশসেবার আধুনিকায়নসহ আরও অনেক বিষয়। শুধু মেট্রোরেল রাজধানী কিংবা এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে যানজট সমস্যার নিরসন হবে না, যদি না এগুলোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায় এবং সমান্তরাল ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়।

গণপরিবহনব্যবস্থায় বিনিয়োগ বেড়েছে যা আশাপ্রদ। কিন্তু মাল্টিমোডাল সমন্বয়ের অভাব এখনও রয়েছে। এ মাল্টিমোডাল সমন্বয় করতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে যানজট সংকট বাড়বে। কারণ একটি খণ্ডিত অংশে গতিসঞ্চার করলেও যে অংশে যানসংকট রয়েছে সেখানে যানজট প্রকট আকার ধারণ করবে। তখন গতিসম্পন্ন অঞ্চলেও নানাবিধ সংকট দেখা দিতে শুরু করবে। ফলে বিনিয়োগকৃত অর্থের অপচয়ই হবে। এর সুফল ভোগ করা সম্ভব হবে না। আমরা দেখছি, নীতিনির্ধারকরা বিভিন্ন বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে যতটা আগ্রহী গণপরিবহনব্যবস্থায় সমন্বয়ের বিষয়ে ততটাই অনাগ্রহী। এমন ভাবনা থেকে তাদের দ্রুত বের হয়ে আসতে হবে। শুধু একটি রুটে উন্নত গণপরিবহনব্যবস্থা গড়ে তুললেও সমস্যার সমাধান হবে না। রাজধানীর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রুটেও মনোযোগ দিতে হবে। সেসব রুটের সমস্যাগুলো শনাক্ত করে সংকট নিরসনের মাধ্যমে গণপরিবহনব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। যাত্রীদুর্ভোগ লাঘব করতে পারলে জনজীবনে যেমন গতি আসবে, তেমন অর্থনীতির চাকাও হবে সচল। গণপরিবহনের সঙ্গে অর্থনীতির নিবিড় সম্পর্ক অনস্বীকার্য। কিন্তু অনস্বীকার্য এ বিষয়টির উন্নয়নে যে বিষয়গুলোর দিকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া দরকার তা অবহেলিত থাকলে ক্ষতি আমাদেরই।

লেখক : ড. আদিল মুহাম্মদ খান – নির্বাহী পরিচালক, আইপিডি ও অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ