1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

পুলিশের চোখে মরিচের গুঁড়া নিক্ষেপ করে হামলা করেন নুর-রাশেদরা

নিউজ এডিটর : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৩

ঘটনার সূত্রপাত ২০২১ সালের ২৭ মার্চ দুপুরে। ঘটনাস্থল জাতীয় প্রেস ক্লাবের বিপরীত পাশের সড়ক। একদিন আগেই ২৬ মার্চ সকালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকায় এসেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার ঢাকায় পা রাখার কয়েক ঘণ্টা পরই দুপুরে জুমার নামাজের পর মোদীর সফরের প্রতিবাদে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর নেতাকর্মীরা। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে হেফাজত নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বাঁধে।

এ ঘটনায় মোদীর ঢাকায় অবস্থানকালেই ২৭ মার্চ হরতালের ডাক দেয় হেফাজত। সেই হরতাল কর্মসূচি চলাকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে ছাত্র অধিকার পরিষদের তৎকালীন নেতা (বর্তমানে গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি) নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। তাতে বাধা দিতে গেলে নুরের নেতৃত্বে পুলিশের ওপর হামলা চালায় ছাত্র অধিকারের নেতাকর্মীরা। মোদীর বাংলাদেশে আগমনের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতমূলক কাজের মাধ্যমে রাস্তার যান চলাচল বন্ধ করে দেয় তারা।

সেদিন ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা জনমনে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে বিশ্বের চোখে বাংলাদেশে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে রাস্তায় ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, লাঠিসোটা নিয়ে রাস্তায় নামে। ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ যানবাহনে আগুন দেয়। পুলিশি বাধার সম্মুখীন হলে এক পর্যায়ে পুলিশের চোখে মরিচের গুঁড়া ও বালু নিক্ষেপ করেন তারা।

এ ঘটনায় করা মামলায় আড়াই বছর পর গণঅধিকার পরিষদের (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক তৎকালীন ছাত্র অধিকার পরিষদ নেতা রাশেদ খানসহ ১৮ জনের নামে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সঠিক নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় গণঅধিকার পরিষদ অন্য অংশের সদস্যসচিব মো. ফারুক হাসান এবং মো. তারেক রহমানকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে। ২০২১ সালের ২৭ মার্চের ওই তাণ্ডবের ঘটনার সময় আসামিরা সবাই ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা ছিলেন।

গত ৩০ অক্টোবর বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫(৩) এবং দণ্ডবিধির ১৪৩/১৮৬/২২৪/২২৫/৩৩২/৩৩৩/৩৫৩/৩৪ ধারায় পৃথক দুটি চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই শাহজাহান মিয়া। এরপর ২২ নভেম্বর বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলার চার্জশিটটি ‘দেখিলাম’ মর্মে বিচারক সই করে মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলির আদেশ দেন। আগামী ২ জানুয়ারি দণ্ডবিধির মামলার চার্জশিট গ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে। মামলার চার্জশিটে উঠে এসেছে উল্লিখিত ঘটনার বিবরণ।

চার্জশিটে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ২৭ মার্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতৃত্বে আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে হেফাজতের হরতাল চলাকালে বিভিন্ন যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে। তারা মোদীর বাংলাদেশে আগমনের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতমূলক কাজের মাধ্যমে রাস্তার যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। জনমনে ভীতি সৃষ্টি করে বিশ্বের চোখে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে আসামিরা এ ঘটনা ঘটায়।

পুলিশকে হত্যার উদ্দেশে মারধর করেন রাশেদরা
মামলার চার্জশিটে আরও বলা হয়, গাড়িতে আগুন দেওয়ার প্রস্তুতির সময় মামলার বাদী তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সমাবেশের নামে রাস্তা অবরোধ করে জনগণ ও যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্ত না করে রাস্তা ছাড়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু তারা পুলিশের অনুরোধ ও নিষেধ অমান্য করে রাস্তার যান চলাচল বন্ধ করে গাড়িতে আগুন দিতে উদ্যত হন।

এসময় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের বাধা দিলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে বিদেশি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানের (মোদী) চোখে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করে। বাংলাদেশ সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ওপর পেট্রোল, মরিচের গুঁড়া, বালু ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। লাঠিসোটা নিয়ে পুলিশের ওপর হামলে পড়ে। পুলিশকে হত্যার উদ্দেশে মারধর করে। এতে পুলিশের একাধিক সদস্য আহত হন।

হুকুমদাতা ফারুক-রাশেদরা
মামলার চার্জশিটে বলা হয়, পরবর্তী সময়ে বিক্ষোভকারীরা ঘটনাস্থল থেকে ছত্রভঙ্গ হয়ে পালানোর চেষ্টা করলে বাদী সঙ্গীয় ফোর্সের সহায়তায় আসামিদের অনেককে গ্রেফতার করে। তবে অজ্ঞাতনামা অনেকে পালিয়েও যায়। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার মো. রবিউলের দেহ তল্লাশি করে তার প্যান্টের পকেটে রাখা প্লাস্টিকের বোতলে পেট্রোল ও গ্যাস লাইটার উদ্ধার করা হয়। এছাড়া আসামি মো. সজলের কাছ থেকে ব্যাগে রাখা বালু, নজরুল করিম সোহাগের দেহ তল্লাশি করে প্যান্টের পকেটে রাখা সাদা প্লাস্টিকের পলিথিনে মোড়ানো মরিচের গুঁড়া উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার আসামিরা এজাহারনামীয় আসামি ফারুক হাসান, মশিউর রহমান, রাশেদ খান, আকরাম হোসেন, তারেক রহমানদের পরিকল্পনাকারী এবং হুকুমদাতা হিসেবে উল্লেখ করে।

রাশেদসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোনা জারির আবেদন
রাশেদ খান ছাড়াও মামলায় চার্জশিটভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন- যুব অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক রবিউল হাসান, ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাকা মহানগর উত্তরের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সজল, ঢাকা কলেজ শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নজরুল করিম সোহাগ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সম্পাদক আল-আমিন, মো. আসাদুজ্জামান, মোমিন আকন্দ, মো. আরিফুল ইসলাম, মো. শিপন হাওলাদার, রোকেয়া আক্তার, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, আরেফিন হোসেন, তাওহিদুল ইসলাম শিপন, ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আকতার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেন, গণঅধিকার পরিষদের নেতা মশিউর রহমান, আবু বক্কর সিদ্দিক হাসান ও মো. জাকির হোসেন স্বপন।

আসামিদের মধ্যে মশিউর রহমান গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। রাশেদ খান, আবু বকর সিদ্দিক ও জাকির হোসেন পলাতক। বাকিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন। রাশেদ খানসহ পলাতক তিন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।

নুর ঘটনার নেতৃত্বে থাকলেও চার্জশিটে নাম নেই
২০২১ সালের ২৭ মার্চ ঢাকায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগমনের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের এক মানববন্ধনে অংশ নেন ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা। সমাবেশের একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ওইদিন দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে জাতীয় প্রেস ক্লাবের বিপরীত পাশে একত্র হয়ে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে আসামিরা হেফাজতে ইসলামের হরতাল সমর্থনে মোদীর ঢাকা সফরের বিরোধিতা করে অন্তর্ঘাতমূলক কাজের মাধ্যমে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। তারা ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এমনকি পুলিশের চোখে মরিচের গুঁড়া ও বালু নিক্ষেপ করা হয়। পুলিশের ওপর আক্রমণ করে এবং হত্যার উদ্দেশে মারধর করে।

এসময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চারজনকে আটক করে। পরদিন শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক নাছির উদ্দিন খান বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলা করেন। মামলায় আসামিদের গ্রেফতার দেখানো হয়। তবে মামলার এজহারে নুরের নেতৃত্বে হামলার কথা উল্লেখ করা হলেও চার্জশিটে তার নাম আসেনি।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ