1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

আওয়ামী লীগ বললে অপরাধ, বিএনপি বললে প্রতিবাদ

সৈয়দ বোরহান কবীর : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২১

ডা. মুরাদ হাসানের কদর্য, অরুচিকর কথাবার্তা নিয়ে এখন দেশ সরগরম। একজন প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং চিকিৎসক কীভাবে এত নোংরা ভাষায় কথা বলতে পারেন তা নিয়ে নানা জনের নানা মত। ডা. মুরাদের এসব অশ্লীল কথাবার্তা প্রকাশের পরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছেন। মন্ত্রিসভা থেকে তাকে কার্যত বরখাস্ত করেছেন।

এর মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা প্রমাণ করলেন রাজনীতিতে তিনি আবর্জনা লালন করেন না। প্রধানমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্ত সব মহলে প্রশংসিত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে কিছু পদক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। শেখ হাসিনা অত্যন্ত সাহসী রাজনীতিবিদ তা আমরা সবাই জানি।

কিন্তু নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে কঠিনতম সিদ্ধান্ত নিতে তিনি যে এতটুকু বিচলিত নন তা দুটি ঘটনায় আবার প্রমাণ করলেন। জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুরের নির্বাচিত মেয়র। এলাকায় তার জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতীত। সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন।
কিন্তু দলের আদর্শবিরোধী কর্মকান্ডের কারণে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করতে এতটুকু দ্বিধা করেননি শেখ হাসিনা। ডা. মুরাদ আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। তার পিতা জামালপুর আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে মুরাদের পিতার নামে জামালপুরে একটি রেলস্টেশনের নামকরণ করেছিলেন। কিন্তু যখন ডা. মুরাদ সীমা লঙ্ঘন করেছেন তখন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেরি করেননি প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্ত সবার জন্য একটি বার্তা। রাজনীতিতে যে অসভ্যতা, কুৎসিত আচরণের কোনো স্থান নেই তা শেখ হাসিনা সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলেন।
ফেসবুকে ডা. মুরাদের একটি সাক্ষাৎকার আপত্তিকর। এ সাক্ষাৎকার প্রচারের পর এ নিয়ে বিভিন্ন মহল সোচ্চার হলো। নারী নেত্রী, সুশীলসমাজ, বুদ্ধিজীবী সবাই ছি ছি রব তুললেন। এসব প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত আশাপ্রদ। নারী নেত্রী, সুশীলসমাজ কিংবা শিক্ষক-বুদ্ধিজীবীরা যে কোনো সমাজের আলোকবর্তিকা। তাঁরা আমাদের পথ দেখান। ডা. মুরাদের কিছু বক্তব্য নিয়ে সুশীলসমাজ যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন তা যথাযথ। কিন্তু সুশীলদের এ প্রতিক্রিয়া আমাদের মতো মূর্খ আমজনতার মধ্যে কিছু বিভ্রান্তি সৃষ্টি করল। সুশীল, নারী নেত্রীদের বক্তব্য শুনে মনে হলো বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা স্বাদুপানির মাছ। তাঁরা কেউ মুরাদের মতো নারীবিদ্বেষী নন। নারী নিয়ে কুরুচিকর অশ্লীল মন্তব্য বাংলাদেশে এটিই প্রথম। বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা প্রমিত বাংলায় কথা বলেন। ‘চ’ এবং ‘ম’ বর্গীয় শব্দের ধারেকাছেও যান না। ধবধবে রাজনীতির সফেদ জমিনে কালিমা লেপনকারী প্রথম ব্যক্তি হলেন ডা. মুরাদ। বিভ্রম ঘোচাতে একটু ফিরে দেখার চেষ্টা করলাম। রাজনীতিবিদদের কথাবার্তা কার কেমন খুঁজে দেখলাম খানিকটা। খুঁজতে গিয়ে আমি নিজেই লজ্জিত হলাম। ডা. মুরাদের বক্তব্য নিয়ে যখন সারা দেশ তোলপাড়, তখন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের একটি বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অবাধে বিচরণ করছে। মুরাদের বক্তব্য যদি আবর্জনা হয় তাহলে আলালের বক্তব্য নর্দমা। দেশের প্রধানমন্ত্রী একজন বয়োজ্যেষ্ঠ নারী সম্পর্কে এত বীভৎস বক্তব্য কেউ দিতে পারেন- তা ভেবেই আমি শিউরে উঠলাম। কোথায় আমাদের নারী নেত্রীরা? কোথায় আমাদের সুশীলসমাজ? কোথায় আমাদের বুদ্ধিজীবীরা? এত জঘন্য বক্তব্যের পর তাদের মুখে কোনো কথা নেই কেন? এ প্রশ্নের উত্তর আমি খুঁজে পাই না। মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল একা নন। বিএনপির নারী নেত্রী আসিফা আশরাফী পাপিয়া ২০০৯-এর সংসদে নারী কোটায় সংসদ সদস্য ছিলেন। সংসদে তাঁর একটি বক্তব্য কোনো সুস্থ মানুষ শুনতে পারবে না। এত দুর্গন্ধযুক্ত বক্তব্য একজন নারী দিতে পারেন তা ভেবেই সারা শরীর ঘিনঘিন করে ওঠে। কখনো শুনিনি বাংলাদেশের নারীবাদীরা এ বক্তব্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। ওই সংসদেই বিএনপির নারী সংসদ সদস্য রেহেনা আক্তার রানু, শাম্মী আক্তার যেসব কথাবার্তা বলেছেন তা কোনো সুস্থ মানুষ উচ্চারণ করতে পারবেন না। জাতীয় সংসদে এই নষ্টদের উৎসবের সময় আমরা সুশীলদের প্রতিবাদ করতে দেখিনি। নারী অধিকার নিয়ে সোচ্চার নারীবাদীরা কোনো বিবৃতি দেননি। শেখ হাসিনা শুধু চারবারের প্রধানমন্ত্রী নন, এ দেশের নারী জাগরণের পথিকৃৎ। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশে নারী জাগরণের নতুন অধ্যায় রচিত হয়েছে। অথচ তাঁর প্রতি একরকম অশ্রাব্য উচ্চারণের পরও জাতির বিবেকরা নীবর কেন?

মুরাদের বক্তব্যের পর বিএনপি নেতারা যেসব কথাবার্তা বলেছেন তা কি মুরাদের বক্তব্যের চেয়ে কোনো অংশে শালীন? সাদেক হোসেন খোকা বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে রাজনীতিতে এসেছে। শুধু বিএনপি নয়, অনেক বুদ্ধিজীবীকে বলতে শুনি ইশরাকের দম আছে। সাহসী। মুরাদের বক্তব্যের পর ইশরাক যে ভাষায় মুরাদ ও আওয়ামী লীগের নেতাদের গালাগালি করলেন তা শ্রবণ-অযোগ্য। এটুকু ছেলে এত নোংরা কথা শিখল কীভাবে? কাউকে তো বলতে শুনলাম না- ‘ইশরাক এটাও অন্যায়। এমন করলে তুমিও তো মুরাদ হবে। ’ বরং কেউ কেউ ইশরাককে বাহবা দিলেন। বাঃ এক কাজে দুই ফল। আওয়ামী লীগের নেতারা কুকথা বললে তা হবে কুরুচি আর বিএনপি নেতারা একই কথা বললে তা হবে সাহসী!

আমাদের সুশীলদের এ পক্ষপাত নতুন নয়। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, একই কাজে আওয়ামী লীগ পায় নিন্দা, বিএনপি পায় হাততালি। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অভিযানের দায়িত্ব দেন। এ অভিযানে সুশীলসমাজ আর্তনাদ করে উঠল। হলিডে সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ খান লিখলেন- ‘গণতন্ত্রের লজ্জা’। আবার অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জিয়া যখন সেনাবাহিনী দিয়ে অস্ত্র উদ্ধার অভিযানের নামে আওয়ামী লীগ এবং জাসদ নিধন শুরু করলেন তখন সেই হলিডেই সম্পাদকীয়তে লিখল- ‘অতিপ্রয়োজনীয় কাজ’। গণবাহিনী ও সর্বহারার সন্ত্রাসীরা ১৯৭২-৭৫ সালে শুরু করল গুম-খুন-সন্ত্রাস। বঙ্গবন্ধু যখন এর বিরুদ্ধে কঠোর হলেন তখন এ দেশের সুশীলরা আর্তনাদ করলেন। আর জিয়া যখন বিচারের নামে প্রহসন করে কর্নেল তাহেরকে হত্যা করলেন, ১৩ হাজার সৈন্যকে হত্যা করা হলো তখন কেউ টুঁশব্দ করল না। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডের পর কোথায় ছিলেন আমাদের জাতির বিবেকরা? শিশু রাসেল হত্যা, অন্তঃসত্ত্বা নারী হত্যা, নববধূ হত্যা, মানবতার কোনো নৃশংসতা সেদিন বাদ যায়নি। আমাদের নারীমুক্তির কজন নেত্রী এ নিয়ে সে সময় ধিক্কার দিয়েছিলেন? ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত সময়ে কি কুৎসিত অপপ্রচার করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু পরিবারকে নিয়ে। তখন কি কেউ বলেছেন, থামো। চরিত্রহননের সেই বীভৎসতার বিরুদ্ধে আমাদের সুশীলরা মৌনব্রত অবলম্বন করেছিলেন। আবার এ সুশীলরাই জিয়া হত্যাকান্ডের পর ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে ভাঙা সুটকেসের গল্প ফেঁদেছেন। এই নারীবাদীরাই বেগম জিয়ার জন্য শোকের পসরা বসিয়েছে।

জিয়ার মৃত্যুর পর বেগম জিয়াকে দুটি বাড়ি দেওয়া হলো, নগদ টাকা দেওয়া হলো। সবাই বলল, বাঃ বেশ। কেউ কি বলেছে জাতির পিতার কন্যারা তো এতিম, নিঃস্ব। বলেনি। এমনকি জিয়া জীবিত থাকা অবস্থায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে প্রবেশ করতে দেননি জাতির পিতার কন্যাদের। তখন আমাদের সুশীলরা কেন নীরব ছিলেন? ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হন। দীর্ঘ ২১ বছর পর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পায় আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনা সরকারি বাসভবন হিসেবে বেছে নেন বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত গণভবনকে। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর যেটি প্রায় পরিত্যক্ত ছিল। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে মন্ত্রিসভা শেখ হাসিনাকে গণভবনটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। যেহেতু এটি আর কেউ ব্যবহার করে না সেজন্য জাতির পিতার স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে গণভবন শেখ হাসিনাকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এ সিদ্ধান্ত ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে মাতম উঠল! প্রতিদিন এ নিয়ে লেখা, বিবৃতি। এমনকি সে সময় শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এক আওয়ামী লীগ নেতা এর সমালোচনা করে একটি জাতীয় দৈনিকে কলাম লিখে ফেললেন। শেখ হাসিনা গণভবন নেননি। আমাদের সুশীলদের সমালোচনায় দুঃখ পেয়ে তৎক্ষণাৎ গণভবন ছেড়ে সুধা সদনে ওঠেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। বেগম জিয়া রাষ্ট্রের কাছ থেকে দুটি বাড়ি পেলেন, তা সঠিক, মানবিক। আর এ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতার কন্যা পিতার স্মৃতিময় বাড়িটি পেলে তা মহা অন্যায়, অমানবিক। কী অদ্ভুত বিচার!

১৯৯১ সালে বেগম জিয়া নির্বাচনী প্রচারণায় কি কুৎসিত ভাষায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে আক্রমণ করেছিলেন, মনে আছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশ বিক্রি হবে। ফেনী পর্যন্ত ভারত দখল করবে। এমনকি ধর্মবিশ্বাস নিয়েও কটাক্ষ করা হয়েছিল। যখন একজন নারীর প্রতি তাঁর ধর্ম নিয়ে অশালীন মন্তব্যের প্রতিবাদ করতে লোক পাওয়া ছিল দুষ্কর। ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসে বেগম জিয়া ভারত সফরে গেলেন। ফিরে এসে বললেন, ‘গঙ্গার পানি নিয়ে আলোচনা করতে ভুলে গেছি। ’ ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হয়েই শেখ হাসিনা গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি করলেন। বেগম জিয়া যখন আমাদের পানির ন্যায্য হিস্সা আদায় করতে পারলেন না তখন আমাদের বুদ্ধিজীবীরা বললেন, ‘বেগম জিয়াকে আরও সময় দিতে হবে। ’ আর শেখ হাসিনা যখন প্রত্যাশার চেয়ে বেশি পানি আনলেন তখন ওই বুদ্ধিজীবীরাই লিখলেন- ‘পানি পাব তো? নিশ্চয়ই ভারতের কোনো মতলব আছে। ’ জিয়া ক্ষমতায় এসে পার্বত্য চট্টগ্রামে সামরিক শক্তি প্রয়োগ শুরু করেন। বাঙালিদের পাঠিয়ে বিভেদ আর নিষ্পেষণের নতুন ধারা সূচনা করেন তিন পার্বত্য জেলায়। তখন আমাদের বুদ্ধিজীবীরা বললেন, ‘ঠিক ঠিক। দেশের সার্বভৌমত্ব সবার আগে। ’ পাহাড়ে চলল অশান্তি, যুদ্ধ। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হয়ে শান্তিচুক্তি করলেন। সুধীজন বললেন, ‘চুক্তি করে লাভ কী হলো?’ পাহাড়ে যে অশান্তি বন্ধ হয়েছে সে কথা কেউ বললেন না। শেখ হাসিনা যা করবেন তার একটি খুঁত বের করার প্রাণান্ত চেষ্টা আমাদের একশ্রেণির বুদ্ধিজীবীর প্রধান কাজ।

একজন অর্থনীতিবিদ কাম সুশীল বুদ্ধিজীবী। বাবা প্রখ্যাত আইনজীবী ছিলেন। যাঁকে শেখ হাসিনা নারী কোটায় সংসদ সদস্য বানিয়েছিলেন। ওয়ান-ইলেভেনে তাঁর ক্ষমতার ভূত চাপল। অনির্বাচিত সরকারের মোসাহেবি করে বিদেশে চাকরিও পেলেন। আওয়ামী লীগের বিশেষ করে শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক নীতি ও কৌশলের সমালোচনা করাই তাঁর একমাত্র কাজ। পদ্মা সেতু নিয়ে তাঁর বক্তব্যগুলো আবার পড়লাম। তিনি বললেন, ‘বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন ছাড়া পদ্মা সেতু অবাস্তব। ’ তারপর বললেন, ‘নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করলে অর্থনীতির ওপর মারাত্মক চাপ বাড়বে। ’ যখন পদ্মা সেতু হয়েই গেল এখন তিনি বলছেন, ‘অর্থনীতিতে সুশাসন জরুরি। দুর্নীতি বন্ধ না করলে বাংলাদেশ অভীষ্টে পৌঁছাতে পারবে না। ’ অথচ এই প্রচ- জ্ঞানী অর্থনীতিবিদ কখনো বলেন না, বিএনপি আমলে বাংলাদেশ পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এখন তারেক জিয়া লন্ডনে কীভাবে রাজকীয়-জীবন যাপন করেন সে প্রশ্নও তিনি এবং বাংলাদেশের কোনো অর্থনীতিবিদ করেন না। যাঁরা সরকারের দুর্নীতি নিয়ে সোচ্চার তাঁরা হাওয়া ভবন, তারেক-মামুনের দুর্নীতি নিয়ে এত নীরব কেন? ইদানীং প্রায়ই সুশাসন নিয়ে কথা শুনি। কারও কারও কথা শুনে মনে হয় দেশে বোধহয় আইনের শাসন নেই। গুম-খুন নিয়ে সুশীলরা এত উদ্বিগ্ন যে তাঁরা সম্ভবত নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। ২০০১ সালের অক্টোবরের কথা মনে আছে? নির্বাচনের রাত থেকে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের ওপর শুরু হলো নির্বিচারে আক্রমণ। হত্যা, ধর্ষণ, সন্ত্রাস। বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হলো। হত্যা করা হলো কয়েক শ মানুষকে। কত মানুষ গুম হলো তার হিসাব নেই। আমাদের জাতির বিবেকদের কজন তার প্রতিবাদ করেছিলেন।

কিছুদিন ধরে সংখ্যালঘু ইস্যু সুশীলদের খুবই উপাদেয় খাদ্য। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর কীভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর বর্বর, পাশবিক নিপীড়ন চালানো হয়েছিল তা আমাদের জাতির বিবেকরা কেন বলতে লজ্জা পান আমি জানি না। এখন ধর্ষণ হলেই আমরা সোচ্চার হই। অবশ্যই হওয়া উচিত। একটি সভ্যসমাজে নারীর প্রতি কোনো নিপীড়নই গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু আমরা কেন পূর্ণিমা, ফাহিমার কথা বলি না। বুধবার বুয়েটের আবরার হত্যাকান্ডের রায় দেওয়া হলো। ২০ জনকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে। আবরারের বাবা বললেন, রায়ে সন্তুষ্ট। কিন্তু আমাদের বুদ্ধিজীবী, সুশীলরা সন্তুষ্ট নন। একজন প্রবীণ নাট্যাভিনেতার কথায় চমকে উঠলাম। তিনি বললেন, ‘এ ঘটনার নেপথ্যে যারা তাদের তো বিচার হলো না। ’ ২০০২ সালে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হলো এ বুয়েটেই। মারা গেলেন নিরীহ শিক্ষার্থী সনি। তখন এই অভিনেতাকে এত মুষড়ে পড়তে দেখিনি। সনি হত্যার আসামিদের বিচার কার্যকর হয়নি।

এখন বেগম জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে উদ্বিগ্ন কিছু মানুষ নিজেরাই যেন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বেগম জিয়াকে করুণা করে যখন জেল থেকে ফিরোজায় আনা হলো তখন কি তাঁরা শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ দিয়েছেন? ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর কি তাঁরা বেগম জিয়াকে অমানবিক বলেছেন? ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর মুমূর্ষু মানুষ যখন ঢাকা মেডিকেলে গেলেন তখন মেডিকেলের মূল ফটক বন্ধ করে দেওয়া হলো। তখন কি কেউ বলেছেন, চিকিৎসা না দেওয়া অন্যায়? এ দেশে পরিপাটি কিছু মানুষ আছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে তাঁরা সারাক্ষণ অণুবীক্ষণ যন্ত্র নিয়ে বসে থাকেন। আর বিএনপি ক্ষমতায় এলে তাঁরা নাকে তেল দিয়ে ঘুমান। আওয়ামী লীগ টানা ১৩ বছর ক্ষমতায়। দীর্ঘ সময় একটি দল ক্ষমতায় থাকলে অনেক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। আওয়ামী লীগ সরকারেও নানা অসুস্থতা এখন দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার সব ভালো করছে এমন নয়। ভালো-মন্দ মিলিয়েই একটা সরকার। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে অনেকে লাগামহীন, বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। ডা. মুরাদ হাসান তাদেরই একজন। কিন্তু ডা. মুরাদ প্রথম রাজনীতিবিদ নন যিনি এ রকম অসভ্যতা করলেন। বিএনপির এক নেতা, যুক্তরাষ্ট্রে এক কর্মীর স্ত্রীর সঙ্গে যে কুৎসিত, কদর্য ভাষায় কথা বলেছেন তা কি আমরা কেউ শুনিনি। বিএনপি তাকে কোনো শাস্তি দেয়নি। এখন আলালের বক্তব্যের পর বিএনপি মহাসচিব বলছেন, ‘আলাল গুরুতর অসুস্থ’। না বিএনপি, না সুশীল, না নারীবাদী নেতৃবৃন্দ কেউ আলালের ভয়ংকর বক্তব্যের নিন্দা জানাননি। আজ মুরাদ-মাহির ফোনালাপ নিয়ে কত কথা শুনছি। অথচ খোয়াব ভবনে শোবিজের নায়িকাদের উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো জোর করে। আপত্তি জানালেই টেলিভিশনে নিষিদ্ধ করা হতো। কই তখন কেন সবাই চোখ বন্ধ করে ছিলেন? ইউটিউবে, ফেসবুকে বিএনপিপন্থি হিসেবে পরিচিত কিছু ব্যক্তি যে অসভ্য ইতরের মতো প্রতিদিন নোংরা, দুর্গন্ধময় কথাবার্তা বলছেন তা কি আমাদের সুশীলরা শোনেন না, নাকি শুনেও না শোনার ভান করেন? এত নিকৃষ্টমানের নারীবিদ্বেষী, নিপীড়নমূলক অশ্লীলতার কোনো প্রতিবাদ দেখিনি কারও। তাহলে কি ধরে নেব আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, মন্ত্রী এমনকি বঙ্গবন্ধু পরিবারের বিরুদ্ধে চরম অসভ্য-অশ্লীল চরিত্রহননের বিরামহীন চেষ্টা বুদ্ধিজীবী ও নারীবাদীদের দৃষ্টিতে বৈধ? আওয়ামী লীগ বললেই তা অপরাধ। বিএনপি বললে তা প্রতিবাদ? যে কোনো নারীর প্রতি, যে কোনো মানুষের প্রতি অশালীন, নোংরা এবং প্রকাশ-অযোগ্য কথা বলা অপরাধ। ডা. মুরাদের মতো একই অপরাধ প্রতিদিন যারা করছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়, তাদের কেউ অবচেতনভাবে বাহবা দিচ্ছেন না তো? ডা. মুরাদের ব্যাপারে যাঁদের সরব সোচ্চার দেখলাম, অন্যদের বেলায় তাঁরা নীরব কেন? ডা. মুরাদের ব্যাপারে শেখ হাসিনা যে সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, বিএনপি-জামায়াতের নিয়ন্ত্রণে থাকা সোশ্যাল মিডিয়ায় বমি উগরানো এ রকম অসংখ্য মুরাদের বিরুদ্ধে বিএনপি কি ব্যবস্থা নিতে পারবে? এদের বিরুদ্ধে কি বুদ্ধিজীবী, সুশীল, নারী নেত্রীরা বিবৃতি দেবেন?

লেখক : সৈয়দ বোরহান কবীর, নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত। Email : poriprekkhit@yahoo.com


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ