1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে রাজনীতি

সাইফুর রহমান তপন : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার ধরন নিয়ে ধোঁয়াশা এখনও যায়নি। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত কজন চিকিৎসক গত ২৮ নভেম্বর তার গুলশানের বাসভবনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, খালেদা জিয়ার ‘সিরোসিস অব লিভার’ হয়েছে এবং এ রোগের চিকিৎসা কেবল যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির তিনটি হাসপাতালেই আছে; খালেদা জিয়াকে বাঁচাতে হলে অবিলম্বে তাকে ওই হাসপাতালগুলোর যেকোনোটিতে পাঠাতে হবে।

বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় বা বিএসএমএমইউ-এর সাবেক উপাচার্য ডা. কামরুল হাসান মনে করেন, খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও চিকিৎসা নিয়ে কথা বলার জন্য অথরাইজড ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ হলেন এভারকেয়ার হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, যার অধীনে খালেদা জিয়া এখন সেখানে ভর্তি আছেন, অথবা ওই হাসপাতালের যে-চিকিৎসকেরা তাকে এখন দেখভাল করছেন তারা। গত ৫ ডিসেম্বর রাতে প্রচারিত একটা টিভি অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, যে চিকিৎসকেরা বলছেন খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিস হয়েছে যারা বলেছেন তারা এভারকেয়ার হাসপাতালের কেউ নন।

তাছাড়া, তার মতে, কারো শরীরে লিভার সিরোসিসের মতো রোগ জটিল রূপ নিতে ‘৩০ বছরের মতো সময়’ লাগে। অথচ খালেদা জিয়ার ‘চিকিৎসক দল’ সংবাদ সম্মেলন করার দুদিন আগেও বিএনপি নেতারা গণমাধ্যমে প্রচারিত এমন খবরকে উড়িয়ে দিয়েছেন।

ডা. কামরুল আরও বলেছেন, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুর্নীতির দায়ে আদালতে দণ্ডিত হয়ে খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার তিন মাস পর বিএনপি নেতারা বলতে শুরু করেন, তাদের নেত্রীর অবস্থা সংকটাপন্ন, অবিলম্বে তার সুচিকিৎসা প্রয়োজন। তখন সরকার তাকে বিএসএমএমইউতে আনতে চাইলে বলা হয়, খালেদা জিয়া এতে সম্মত নন। এভাবে পাঁচ মাস চলে যাওয়ার পর তাকে বিএসএমএমইউতে আনা হয় এবং চিকিৎসার মাধ্যমে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন।

এরপর সরকার খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদনে ‘মানবিক’ কারণে সাড়া দিয়ে কিছু শর্তসাপেক্ষে তাকে মুক্ত করে দেন। সেই সুবাদে গত বছরের মার্চ থেকে- করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর- তিনি তার গুলশানের বাসায়ই ছিলেন। সেখান থেকে বেশ কবার এই এভারকেয়ার হাসপাতালেই চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি। ডা. কামরুলের প্রশ্ন- এ দীর্ঘ সময়ে এত যে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে তিনি গেলেন তাতে কি ওই মারণব্যাধি ধরা পড়েনি?

প্রসঙ্গত, উল্লিখিত ২৮ নভেম্বরের সংবাদ সম্মেলনের মুখ্য বক্তা ডা. এফ এম সিদ্দিকীসহ সেখানে যে কজন ডাক্তার উপস্থিত ছিলেন তাদের প্রায় সবাই বিএনপির চিকিৎসক সংগঠন- ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা ড্যাবের সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত।

তাদের কেউই এভারকেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসক নন। আবার ডা. কামরুলও আওয়ামী লীগের রাজনীতির অনুসারী বলে পরিচিত। সেদিক থেকে দুপক্ষের বক্তব্যকেই কেউ রাজনীতির গন্ধযুক্ত বললে তাকে এর জন্য কাঠগড়ায় তোলা যাবে না।

এ কথা মানতেই হবে যে, এ চিকিৎসকদের সবাই স্বনামধন্য এবং তাদের সবার খালেদা জিয়ার রোগের ধরন এবং এর চিকিৎসার ব্যাপারে কথা বলার যোগ্যতা আছে।

যে বিষয়টি সাধারণ মানুষকে ধন্দে ফেলছে তা হলো- খালেদা জিয়ার প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে কোনো অথেনটিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। খালেদা জিয়া শুধু পাবলিক ফিগার নন। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দুজন মানুষের একজন তিনি। হাসপাতালে তিনি কেমন আছেন, কবে তিনি সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেন- এ নিয়ে মানুষের কৌত’হল ও উদ্বেগ থাকাট খুবই স্বাভাবিক।

আমরা এর আগে এ ধরনের পাবলিক ফিগারদের অসুস্থতার সময় দেখেছি সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের পক্ষ থেকে কিংবা দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনও চিকিৎসক নিয়মিত রোগীর অবস্থা জানিয়ে ব্রিফিং করতেন। কিন্তু খালেদা জিয়ার বেলায় এর কিছুই দেখা যাচ্ছে না।

বলা হচ্ছে, এভারকেয়ার হাসপাতাল রোগীর এমনকি রোগ-সংক্রান্ত ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষায় খুব সচেতন। তাই তারা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসা বিষয়ে কোনো ব্রিফিং করছে না। কিন্তু খালেদা জিয়া বা তার পরিবারের কেউ অনুমতি দিলে এভারকেযারের এ ধরনের ব্রিফিং আয়োজনে সমস্যা থাকার কথা নয়। গোটা দুনিয়াজুড়েই এমন চর্চা আছে।

এদিকে বিএনপি নেতারা যখন বলেই চলেছেন যে, বিদেশে না পাঠালে খালেদা জিয়ার যেকোনো সময় যেকোনো কিছু ঘটে যেতে পারে তখন সরকারকে এ বিষয়ে প্রায় নির্বিকার দেখাচ্ছে। যে-অনুষ্ঠানে ডা. কামরুল হাসান কথা বলেছেন সেই একই অনুষ্ঠানে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এক মারাত্মক কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, বিদেশে না পাঠানো হলে সামনের ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যেই খালেদা জিয়ার ‘কিছু একটা’ হয়ে যেতে পারে। জাফরুল্লাহ অশীতিপর এক লোক, কখন কী বলেন তার ঠিক-ঠিকানা থাকে না।

তারপরও লোকে তাঁকে খালেদা জিয়া ও তার দলের খুবই ঘনিষ্ঠ বলেই জানে। তাই কখনও কখনও তার কথায় অন্তত মিডিয়ায় অনুরণন তৈরি হয়। কিন্তু এতেও সরকারের খুব একটা হেলদোল দেখা যাচ্ছে না। তবে কারো কারো ধারণা, খালেদা জিয়ার প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে সরকারের অজানা কিছু নেই। যদি সত্যিই এভারকেয়ারে থাকতে থাকতেই তার জীবানসান ঘটে, এর একটা রাজনৈতিক মূল্য আছে, যা সরকারকেই পরিশোধ করতে হতে পারে। সরকার তা ভালোভাবেই জানে।

তাদের এ ধারণার সপক্ষে তারা সম্প্রতি গণমাধ্যমে দেয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের দুটি বিবৃতির প্রসঙ্গ টানেন। ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সরকার ‘অমানবিক’ নয়। আর আইনমন্ত্রী বলেছেন, খালেদা জিয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাতে সরকার একটু সময় নিচ্ছে, কারণ সরকার এ বিষয়ে একটা ‘সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত’ নিতে চায়।

খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার ইচ্ছার মধ্যে মেডিক্যাল রিজনের চেয়ে রাজনৈতিক কারণটা বেশি বলে মনে করছে সরকার- এটা এখন স্পষ্ট। বিএনপি নেতারাও প্রায় একই কারণেই তাদের নেতাকে বিদেশে পাঠাতে চাচ্ছেন- এমন ধারণাও বাতুলতা নয়।

খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা নিতে দেয়ার যুক্তিটা যদি মানবিকতা হতো তাহলে তার পক্ষ থেকে প্রচলিত আইন মেনে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করলেই সব ল্যাঠা চুকে যেত। কারণ সরকারের একাধিক মন্ত্রী এবং সরকারদলীয় নেতারাও সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপিকে এ পথ বাতলে দিচ্ছেন।

কিন্তু বিএনপি নেতারা কোনোভাবেই এ পথ অবলম্বনে রাজি নন বলে মনে হচ্ছে। এর কারণটাও বোধগম্য। এ পথে হাঁটলে শুধু খালেদা জিয়ার ‘আপসহীন’ ভাবমূর্তি ভেঙে পড়বে না বিএনপির রাজনীতিও বড় সড় ধাক্কা খাবে। তারা বরং খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে না দিলে ‘অবিলম্বে’ সরকারপতনের আন্দোলন শুরু করার মুহুর্মুহু ঘোষণা দিয়ে চলেছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় তো এমনও বলেছেন যে, তাদের কাছে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নয় ‘শেখ হাসিনার পতনটাই’ বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষে বিএনপি নেত্রীর প্রতি ‘মানবিক’ হওয়া মানে সম্ভাব্য রাজনৈতিক ডিভিডেন্ট থেকে বঞ্চিত হওয়া। এ কারণেই, সম্ভবত, আইনমন্ত্রী সমস্যা সমাধানে সময় নেয়ার কথা বলেছেন। অর্থাৎ খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দানের আগে সরকার একটা উইন-উইন পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়।

আমরা মনে করি, বিএনপি নেতারা যদি মনে করেন, তাদের নেত্রীর জীবন আসলেই সংকটাপন্ন এবং তাকে বাঁচানোই এখন তাদের অগ্রাধিকার, তাহলে রাজনীতির খেলা ছেড়ে তাদের উচিত অন্তত এ ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে কোনো দরাদরিতে না যাওয়া।

লেখক: সাইফুর রহমান তপন, সাবেক ছাত্রনেতা ও কলাম লেখক।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ