1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

জামিয়া ইকরা বাংলাদেশ : দেশপ্রেম শেখায় যারা

ইবার্তা সম্পাদনা পর্ষদ : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২১

কওমি-ঘরানার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একেবারেই ব্যতিক্রম রাজধানীর রামপুরার জামিয়া ইকরা বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা, বিজয় দিবসের মতো আয়োজনগুলো ঘটা করে পালন হয় এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে। বিজয়ের ৫০ বছর এখানকার ছাত্র-শিক্ষকদের গর্বিত করেছে।

২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্র হিসেবে উদ্ভবের এই দিনগুলো কওমি মাদ্রাসায় কোনো গুরুত্বই পায় না। তবে গত বছর থেকে এক ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে।

কোনো কোনো মাদ্রাসা, কোনো কোনো ছাত্র-শিক্ষক এই বৃত্ত ভেঙে বের হয়ে আসছেন। তারাও বাঙালির গর্বের এই দিনগুলো নিজেদের করে নিচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার গোটা জাতি যখন বিজয় দিবস পালন করছে, সে সময় রামপুরার হাজীপাড়ার ঝিলপারের কওমি মাদ্রাসা জামিয়া ইকরা বাংলাদেশে গিয়েও দেখা গেল নানা আয়োজন।

একজন ছাত্র শুদ্ধ উচ্চারণে আবৃত্তি করছিলেন কবি শামসুর রাহমানের ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’ কবিতাটি।

এবার দেশের প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি মাদ্রাসায় যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালনের নির্দেশ দেয় মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। নির্দেশ দেয়া হয় নতুন জাতীয় পতাকা উত্তোলনের। মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথা শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে ধরতে বলা হয়।

এই মাদ্রাসাটিতে তোলা নতুন জাতীয় পতাকা কওমি-ঘরানায় দিনবদলের বার্তাই যেন তুলে ধরছিল।

শিক্ষার্থীরা সেখানে দেয়ালিকা তৈরি করেছে, একটি বাংলায়, একটি আরবিতে। যেখানে ইসলাম ও দেশপ্রেম নামক একটি লেখায় বলা হয়েছে- ‘মানবতার ধর্ম ইসলামে দেশকে ভালোবাসার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।’

এ ছাড়া আদর্শ সমাজ গঠনে কী করণীয় তা নিয়ে লিখেছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির একজন শিক্ষার্থী। কবি, ছাড়ায় ফুটে উঠেছে দেশ, সমাজ ও মানবতার কথা।

শিক্ষার্থীরা দেশের গানও গেয়েছে। শিক্ষকরা আলোচনা ছাত্রদের বলেছেন, একজন প্রকৃত মুসলিমের জন্য প্রকৃত দেশপ্রেমিক হওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

এক শিক্ষক বলেছেন, ‘আমাদের একজন মুসলিম হতে হবে, তেমনি একজন বাঙালিও হতে হবে।’

একজন ছাত্র গাইল- ‘মাগো, ভাবনা কেন/আমরা তোমার শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলে/তবু শত্রু এলে অস্ত্র হাতে ধরতে জানি/তোমার ভয় নেই, মা, আমরা প্রতিবাদ করতে জানি।’

নিজের লেখা পাঠ করে শোনায় আরেক ছাত্র। ‘আমি বিস্মিত’ নামক ওই লেখায় ছাত্রটি লিখছে, ‘এক তরুণ আমাদের বলল, কালিমা পতাকা কবে উড়বে। লাল-সবুজের পতাকা দেখতে আর ভালো লাগে না। কথাটি দু-তিনবার পুনরাবৃত্তি করল আমার কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা দেখে। কিন্তু আমার কাছে তার প্রশ্নটি অনেক আশ্চর্যজনক মনে হয়েছিল। আমি এটা কল্পনাও করিনি।’

সেই ছাত্র বলে, ‘আজকে যুব সমাজের মগজ ধোলাই হচ্ছে ইসলামের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে।…কালিমা দেশের প্রেমের শিক্ষা দেয়। কালিমা কখনও দেশের প্রতি বিরাগী হওয়ার শিক্ষা দেয় না। এ কথা সেই যুবককে কে বোঝাবে?’

বেশ কয়েক বছর ধরেই এই মাদ্রাসায় বিজয় দিবসে কুইজ, আবৃত্তি, দেশের গান, গজল ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালন করা হয়।

মাদ্রাসার শিক্ষক মুহাম্মদুল্লাহ ইয়াহইয়া জানান, সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে বিজয় দিবসের সূচনা করা হয়। সকাল ১০টা থেকে ছাত্রদের মধ্যে তাদের স্বরচিত বিভিন্ন সৃজনশীল লেখনীর প্রতিযোগিতা হয়।

একই মাদ্রাসার শিক্ষক মুফতি ফয়জুল্লাহ আমান কাসেমী বলেন, ‘ছেলেরা ইসলামি সংগীত ও দেশাত্মবোধক গান গেয়েছে। দেশপ্রেমের যেসব সংগীত রয়েছে, এগুলো তারা পরিবেশন করেছে। এ ছাড়া কবিতা আবৃত্তি ছিল। এর পর একাত্তর সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদের রুহের মাগফিরাত কামনায় ও দেশের শান্তি-সমৃদ্ধির জন্য দোয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, ছাত্রদের মধ্যে যেন দুটো দিকই থাকে। একদিকে তাদের মধ্যে যেন আল্লাহর প্রতি প্রেম, অন্যদিকে দেশের প্রতিও প্রেম থাকে। এমন যেন না হয়, আল্লাহর প্রতি প্রেম আছে কিন্তু দেশের প্রতি ভালোবাসা, দায়িত্ববোধ নেই। দেশের প্রতি কোনো বিরূপ ভাব নিয়ে যেন তারা বেড়ে না ওঠে, এটাই আমাদের সব সময় চেষ্টা থাকে।‘

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের ছাত্ররা যেন ধার্মিক হওয়ার পাশাপাশি দেশপ্রেমিক নাগরিক হয়ে বেড়ে ওঠে। আলহামদুলিল্লাহ, তাদের মধ্যে এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। তারা একদিকে যেমন গজল গাইছে, অন্যদিকে দেশাত্মবোধক সংগীত পরিবেশন করছে, কবিতা আবৃত্তি করছে।’

সব কওমি মাদ্রাসায় তাদের ধারা অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা একটা সৌন্দর্য। এর দ্বারা মানুষ ধর্মের দিকেও আসবে, একই সঙ্গে একজন দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবেও বেড়ে উঠবে।’

মুক্তিযুদ্ধের সময় মুসলিম লীগ ও জামায়াতে ইসলামীর মতো কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দল ও এই ঘরানার মানুষদের মধ্যেও পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষে কাজ করা লোক ছিল।

সে সময়ে এই ঘরানার দুটি রাজনৈতিক দল সারা দেশে কাজ করত। একটি নেজামে ইসলাম পার্টি, অন্যটি জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। এর মধ্যে নেজামে ইসলাম পার্টির প্রায় পুরোটাই পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করেছে।

জমিয়তের একটি অংশ পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষে থাকলেও একটি অংশ স্বাধীনতার পক্ষে ছিল। যদিও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার পক্ষে প্রমাণ পাওয়া কঠিন।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ