1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে…

রেজাউল করিম খোকন : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২২

২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্য নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে সরকার। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ গঠনের পর এই টাস্কফোর্সের একটি নির্বাহী কমিটিও গঠন করা হয়েছে। যারা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১’ প্রতিষ্ঠার জন্য নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সুপারিশ দেবে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে এই কমিটি। এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও ঘোষণা দেয়া হয়েছে আগামী নির্বাচনে তাদের স্লোগান হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগের সম্মেলনে এই কথা বলেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি এই নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি ও উদ্ভাবনী জাতি হিসেবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১’ প্রতিষ্ঠার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সুপারিশ দেবে এই কমিটি।

‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বলতে স্মার্ট নাগরিক, সমাজ, অর্থনীতি ও স্মার্ট সরকার গড়ে তোলা হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও আর্থিক খাতের কার্যক্রম স্মার্ট পদ্ধতিতে রূপান্তর হবে। এ জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন এবং এর উন্নয়নে একটি দক্ষ ও স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা কাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন কার্যক্রম ডিজিটাইজেশন করা হবে। টাস্কফোর্সের নির্বাহী কমিটির কর্মপরিধিতে আরো বলা হয়, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া, আইন ও প্রযুক্তিগত অবকাঠামো সৃষ্টি এবং সব পর্যায়ে তা বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ ও দিকনির্দেশনা দেবে এই কমিটি। এ ছাড়া শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও আর্থিক খাতের কার্যক্রমকে স্মার্ট পদ্ধতিতে রূপান্তরের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন, স্মার্ট ও সর্বত্র বিরাজমান সরকার গড়ে তোলার লক্ষ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক, বাণিজ্যিক এবং বৈজ্ঞানিক পরিমণ্ডলে তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিধিমালা প্রণয়ন, রপ্তানির কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ নীতি প্রণয়ন ও সময়াবদ্ধ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে ব্যবস্থা, আর্থিক খাতের ডিজিটাইজেশন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এই কমিটি। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’-এর গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোও বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দেয়াও হবে এই কমিটির কাজ। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব এ নির্বাহী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন। কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন বাণিজ্য সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান, জাতীয় টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এটুআই প্রকল্পের পরিচালক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফর সফটওয়্যার এন্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কলসেন্টার এন্ড আউটসোর্সিংয়ের সভাপতি, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতি, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব (সদস্য সচিব)। অবশ্য কমিটি প্রয়োজনে আরো সদস্য নিতে পারবে (কো-অপ্ট)। কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ।

সারা বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে গেলেও দেশের অর্থনীতি এখনো যথেষ্ট গতিশীল ও নিরাপদ রয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার। সারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে দেশ আজকের পর্যায়ে পৌঁছেছে। একসময়ে দারিদ্র্যপীড়িত, খরা, মঙ্গা, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত, বিপর্যস্ত জনপদের দেশ হিসেবে দুনিয়াজুড়ে পরিচিতি ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু গত কয়েক দশকের পথপরিক্রমায় এদেশের মানুষ অনেক অসাধ্য সাধন করেছে। এখন বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত গোটা বিশ্বে। গত এক দশকেরও বেশি সময়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে। জীবনযাপন, ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যাংকিং, আর্থিক লেনদেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, কৃষি, শিল্প, যোগাযোগ, বিনোদন, গবেষণা প্রভৃতি ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার সবকিছুকেই সহজ, সাবলীল করে তুলেছে। স্মার্ট বাংলাদেশ ধারণার বাস্তবায়ন দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে সন্দেহ নেই। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই নানা প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আমাদের অনেক আশবাদী করে তুলেছে সরকারের বিভিন্নমুখী তৎপরতা। তবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে এর অনুষঙ্গ হিসেবে অনেক কিছুই প্রয়োজন। যা এখনো শতভাগ নিশ্চিত করা যায়নি। এজন্য সবার আগে প্রয়োজন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার নিশ্চিতকরণ, দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদের আহরণ এবং তার উপযুক্ত ব্যবহার ঘটানো।

একটি বিষয় সবাইকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে, আমাদের যে বিপুল জনসংখ্যা, তাকে জনশক্তি বা জনসম্পদে রূপান্তর করতে না পারলে জনসংখ্যার বিরাট বোঝার চাপে আমাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক কাঠামো নানাভাবে বিপর্যস্ত হবে। দিনে দিনে ভয়াবহ সংকট আমাদের সামনে এসে দাঁড়াবে। সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিরতা, অপরাধপ্রবণতা, মূল্যবোধের অবক্ষয়, মাদকাসক্তি প্রভৃতি অনাকাক্সিক্ষতভাবে বাড়তেই থাকবে। জনবহুল একটি দেশের বেশিরভাগ নারী-পুরুষ যদি কর্মক্ষম এবং উপার্জনক্ষম হন তাহলে সে দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি স্বাভাবিকভাবেই মজবুত হতে বাধ্য। আমাদের জনসংখ্যাকে আপদ না ভেবে জনশক্তিতে রূপান্তরের চেষ্টা চালাতে হবে। তখন তা জনসম্পদে পরিণত হবে। আমরা আমাদের জনসম্পদকে দেশের অভ্যন্তরে যেভাবে কাজে লাগাই না কেন, তা আমাদের জন্য সমৃদ্ধির নতুন বার্তা বয়ে আনবে। অর্থনীতিতে ভিন্নমাত্রা যুক্ত করবে। জনশক্তিকে কারিগরি জ্ঞানে সমৃদ্ধ করে জনসম্পদে রূপান্তরের লক্ষ্যে আমাদের সবাইকে সচেতনভাবে এগিয়ে আসতে হবে। এটা দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেয়ার সঠিক এবং কার্যকর উপায়। বেকার, কারিগরি জ্ঞানশূন্য তরুণ-তরুণীদের মেধা, শ্রম ও মননশীলতাকে যথার্থভাবে কাজে লাগাতে না পারলে আমাদের জাতীয় জীবনে আরো অনেক দুর্যোগ এসে হানা দিতে পারে। আমরা কোনোভাবেই তা চাই না। দেশকে সমৃদ্ধ উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যেতে হলে, জনসংখ্যার বিরাট বোঝাকে অভিশাপ মনে না করে আশীর্বাদ হিসেবে গণ্য করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি শিক্ষার বিস্তারের কোনো বিকল্প নেই। কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরাই আমাদের অর্থনীতির চেহারাটা আরো বদলে দিতে পারে। দেশে তো বটেই, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভালো বেতনে চাকরি নিয়ে যেতে পারে তারা। আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে উপযুক্ত এবং ভালো বেতনে চাকরির সুযোগ পেতে পারে তারা অনায়াসেই। এভাবে আমাদের প্রবাসী রেমিট্যান্স ধারায় বিপুল জোয়ার সৃষ্টি হতে পারে।

স্রেফ বিশেষ একটি দলের কিংবা গোষ্ঠীর নির্বাচনী স্লোগান কিংবা কল্পনার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে যথার্থ উন্নত আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন সেক্টরের মানুষকে সম্পৃক্ত করে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে এ জন্য। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকা মেধাবী মানুষদের খুঁজে বের করে তাদের মেধা ও যোগ্যতার উপযুক্ত মূল্যায়ন করতে হবে। এ দেশের বহু মেধাবী মানুষ উপযুক্ত মূল্যায়ন না পাওয়ার কারণে বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমায়। তাদের দেশের মধ্যে কাজ করার ব্যাপারে উৎসাহী করে তুলতে হবে। ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, অসুস্থ রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক চর্চা, চাঁদাবাজি, সামাজিক অনাচার, বৈষম্য, শোষণ-বঞ্চনা, স্বেচ্ছাচার, অনিয়ম, অগণতান্ত্রিক মনোভাব, দুর্নীতির মূল উৎপাটন করে সামাজিক ন্যায়বিচারভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে আবশ্যিকভাবেই। এজন্য সুনির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীকে নিয়ে গোটা কার্যক্রম পরিচালনা করা হলে মূল গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে না কোনোভাবেই। স্মার্ট বাংলাদেশ শুধু একটি গোষ্ঠী কিংবা রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি নয়, গোটা বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের ধ্যানজ্ঞান, চিন্তা-ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু হতে হবে। এ ব্যাপারে সবাইকে অবশ্যই আন্তরিক হতে হবে।

লেখক : রেজাউল করিম খোকন, সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা ও কলাম লেখক


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ