1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ফারদিনের মৃত্যু; নতুন করে ভাবচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে  

ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২২

বুয়েট ছাত্র ফারদিন নূরের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করছে ডিবি ও র‌্যাব। দুটি সংস্থাই দাবি করেছে, ফারদিন খুন হননি, তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

সবকিছু বিশ্লেষণ করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সাংবাদিকদের জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে ফারদিন নূর আত্মহত্যা করেছেন।

পুলিশ আরও বলেছে, ফারদিন হতাশাগ্রস্ত ছিলেন, তিনি তার বান্ধবীকে মেসেজ দিয়ে জানিয়েছিলেন ৩০ বছরের বেশি বাঁচতে চান না। তার রেজাল্ট খারাপ হচ্ছিল, টাকার অভাবে বিদেশেও যেতে পারছিলেন না। এছাড়া আত্মহত্যার রাতে তিনি বিভিন্ন স্থানে একা একা ঘুরে বেড়িয়েছেন। ব্রিজ থেকে লাফ দেওয়ার ভিডিও প্রভৃতি মিলিয়ে প্রতীয়মান হয়েছে, তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

ফারদিনের মতো অসংখ্য মানুষের রয়েছে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা। কিন্তু এ খাতে চিকিৎসায় রয়েছে স্বল্পতা। অন্যান্য রোগের মতো মানসিক সমস্যাও একটি রোগ। কিন্তু সচেতনতার অভাব এবং মানসিক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত চিকিৎসক ও হাসপাতালের অভাবে দেশে মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা সুবিধা একেবারেই অপ্রতুল। গ্রাম পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত চিকিৎসাব্যবস্থা ভয়ানকভাবে ভঙ্গুর। ফলে মানুষ নির্ভর করে ঝাড়ফুঁক, তন্ত্র-মন্ত্রের ওপর।

গবেষকদের মতে, মানুষের নানা কারণে মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া বা অস্বাস্থ্যকর সম্পর্ক, বেকারত্ব, অর্থনৈতিক সংকট, পারিবারিক বিরোধ, চাকরিসংক্রান্ত সমস্যা, মাদকাসক্তি, মাতৃত্বজনিত জটিলতা প্রভৃতি কারণে মানুষ মানসিক সমস্যা ও বিষণ্নতায় ভুগতে পারে। দেশে প্রতিবছর প্রায় ১০ হাজার মানুষ মানসিক সমস্যার কারণে আত্মহত্যা করে। মানসিক সমস্যাকে ঘিরে রয়েছে নানা কুসংস্কার।

মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকেন। কখনো কখনো তারা লুকিয়ে থাকেন, এমনকি তাদের পরিবার দ্বারা নির্যাতিত হন। অনেক সময় চিকিৎসার জন্য অভিভাবকরা চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে লুকিয়ে গ্রাম্য কবিরাজের কাছে যান। এতে সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করে। অনেকে তাদের মানসিক সমস্যা আড়াল করতে কোনো সাহায্য ছাড়াই নীরবে ভোগেন। জাতিসংঘের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৮৬ লাখ ৬৩ হাজার ৪৬০। অথচ দেশে মোট ২৭০ জন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এবং ৫০০ জনের মতো মনোবিজ্ঞানী রয়েছেন; যা বিপুলসংখ্যক মানসিক স্বাস্থ্য রোগীর সেবার জন্য একেবারেই অপর্যাপ্ত। আরেকটি বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো বেশির ভাগই শহরভিত্তিক।

মানসিক স্বাস্থ্যনীতি কার্যকর করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ না থাকায় এ ত্রুটিগুলো রয়ে গেছে। সরকারের মানসিক স্বাস্থ্য বাজেট মোট স্বাস্থ্য বাজেটের মাত্র ০.৪৪ ভাগ এবং ০.১১ ভাগেরও কম মানুষ বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় মানসিক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত চিকিৎসা ও ওষুধের সুবিধা পেয়ে থাকেন। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব মেন্টাল হেলথ সিস্টেমসে প্রকাশিত ২০১৯ সালের গবেষণা অনুসারে, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ বাংলাদেশের একমাত্র জাতীয় পর্যায়ের মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট। এটি রাজধানী ঢাকা শহরে অবস্থিত। এবং একটি ২০০ শয্যাবিশিষ্ট মানসিক হাসপাতাল রয়েছে, যা বিপুলসংখ্যক জনসংখ্যার জন্য পর্যাপ্ত নয়।

দেশে সরকারি-বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্যসেবার মান যথাযথ নয়। রয়েছে দালাল ও ভুয়া চিকিৎসকের ছড়াছড়ি। আর ডাক্তার নামক সোনার হরিণের সরকারি হাসপাতালে দেখা মেলে না বললেই চলে। তারা ব্যস্ত সময় কাটান নিজস্ব চেম্বার বা প্রাইভেট হাসপাতালে। আর সিনিয়র ডাক্তার হলে তো কথাই নেই। এছাড়া মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো পরিদর্শনের জন্য কোনো পর্যালোচনা সংস্থা নেই, বা কোনো নির্দিষ্ট মানসিক স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষও নেই।

কোভিড-১৯-এর কারণে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে সরকারি হাসপাতালগুলো ডেঙ্গি রোগীদের নিয়ে ব্যস্ত। এছাড়া রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় এবং সীমিত সম্পদের কারণে সরকারি হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। অনেক ক্ষেত্রে মানসিক রোগীদের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়। বাংলাদেশে সব ধরনের রোগীর জন্য প্রাইভেট হাসপাতাল সব সময়ই ব্যয়বহুল। ফলে দরিদ্র বা নিম্ন-আয়ের রোগীদের জন্য বেসরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেওয়া প্রায় অসম্ভব।

বাংলাদেশে উন্নত দেশগুলোর মতো বিশেষায়িত মানসিক স্বাস্থ্যের হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা জরুরি। দরকার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও মনোবিজ্ঞানী। সেই সঙ্গে দরকার নজরদারি। সর্বোপরি মানসিক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত জটিলতা দূরীকরণে প্রয়োজন যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ফারদিনের মতো যাতে কাউকে অকালে মৃত্যুবরণ করতে না হয়, সেজন্য রাষ্ট্রকে নিতে হবে যথাযথ ব্যবস্থা।

লেখক : ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার, আইনজীবী


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ