আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনের মুলতবি ঘোষণা করেছেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মুলতবি ঘোষণার সময় তিনি বলেন, আমাদের দ্বিতীয় অধিবেশন শুধুমাত্র কাউন্সিলরদের জন্য। আমাদের এই কমিটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। নতুন কমিটি গঠন হবে। তার জন্য নির্বাচন কমিশনও আমরা গঠন করেছি। সেই নির্বাচন কমিশন বসবে এবং নাম প্রস্তাব হবে এবং সেখানে নতুন নেতৃত্ব আসবে।
মুখে হাসি নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আজ থেকে আমাদের বিদায়, নতুন নেতৃত্ব আসুক সেটাই আমি চাই।
পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দুর্নীতি করে টাকা বানাতে আসিনি। আমার বাবা রাষ্ট্রপতি ছিলেন, প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আমি চার চারবারের প্রধানমন্ত্রী। আমাদের পরিবার দুর্নীতিই যদি করতো, তাহলে দেশের মানুষকে কিছু দিতে পারতাম না। আমরা দেশের মানুষকে দিতে এসেছি, মানুষের জন্য করতে এসেছি। একারণে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করবে, অন্তত আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে হিসেবে এটা মেনে নিতে পারি না।’
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সরকার গঠনের পর থেকে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি। ১৯৯৬ সালে একটা নির্বাচন হয়েছিল। ১৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া ভোট চুরি করে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু কারও ভোট চুরি করলে বাংলাদেশের মানুষ তা মেনে নেয় না, এদেশের মানুষ মেনে নেয়নি।
তিনি বলেন, তখন গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল, আন্দোলন হয়েছিল। খালেদা জিয়া সেই ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল, আর ৩০ মার্চ পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিল। বাংলার জনগণ তাকে বাধ্য করেছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১২ জুন যে নির্বাচন হয়েছিল সেই নির্বাচনে আমরা সরকার গঠন করি। বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছিলাম, বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধি করেছিলাম, সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি করেছিলাম, পুল, ব্রিজ, রাস্তা-ঘাট, যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতুসহ অনেক কাজ করে বাংলাদেশকে আমরা একটা জায়গায় নিয়ে এসেছিলাম। আমাদের দুর্ভাগ্য, ২০০১ এ আমরা সরকারে আসতে পারিনি।
‘কেন পারিনি, এটা অনেকবার বলেছি, আর বলতে চাই না কিন্তু বাংলাদেশের এতটুকু স্বার্থ আমার জীবন থাকতে নষ্ট হবে না, কারো হাতে তুলে দেবো না- আমার এই প্রতিজ্ঞাই ছিল। হয়তো সে কারণেই আমরা আবার আসতে পারিনি। তাতে আমার কোনও আফসোস নেই। কিন্তু ২০০১ এ যারা ক্ষমতায় এসেছিল হত্যা, খুন, জঙ্গিবাদ, লুটপাট, দুর্নীতি, বিদ্যুত না দিয়ে এর পরিবর্তে খাম্বা -এরকম অনেক খেলাই এদেশের মানুষ দেখেছে।’
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তার আগে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
আর এক বছর পরই যেহেতু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, তাই এবারের সম্মেলনের মাধ্যমে দায়িত্ব পাওয়া নতুন কমিটিকে নির্বাচনী পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। সে জন্য এবারের সম্মেলনের ভিন্ন মাত্রার গুরুত্ব রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লষকরা।