ইলেকট্রনিক টেন্ডারিংয়ে (ই-টেন্ডারিং) বছরে ৬০ কোটি ডলার বা ৬ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে বলে জানা গেছে। শুধু অর্থ সাশ্রয় নয়, দরদাতাদের ৪৯ কোটি ৭০ লাখ কিলোমিটার ভ্রমণ দূরত্ব কমেছে। এছাড়া ১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৫৯ টন কার্বন নিঃসরণ কম হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের মূল্যায়নে উঠে এসেছে এসব তথ্য। অর্থাৎ ই-টেন্ডারিং চালু হওয়ায় অর্থব্যয়, সময় ও পরিবেশ দূষণ কমেছে। তবে আমাদের মতে, ই-টেন্ডারিংয়ের সবচেয়ে বড় সুফল হলো দুর্নীতির সুযোগ কমে যাওয়া এবং টেন্ডারবাজি তথা দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ হওয়া।
সরকারি ক্রয় কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে ২০১১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে ই-টেন্ডারিং কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ইতঃপূর্বে প্রচলিত টেন্ডার প্রক্রিয়ায় নানা ধরনের অসঙ্গতি, দুর্নীতি ও অনিয়মের কথা সর্বজনবিদিত। টেন্ডারবাজদের অপতৎপরতা ও সহিংস আচরণের খবর মাঝেমধ্যেই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হতো। নানারকম অবৈধ পন্থা অবলম্বন ছাড়াও সশস্ত্র টেন্ডারবাজরা কার্যাদেশ হাতিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে অনেক সময় খুনখারাবির ঘটনা পর্যন্ত ঘটাত।
টেন্ডার প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও অনিয়ম দূর করতে ই-টেন্ডারিং পদ্ধতির গুরুত্ব অপরিসীম। অনলাইন বা ই-টেন্ডারিং পদ্ধতিতে ঘরে বসেই দরপত্র সংক্রান্ত সব কাজ করা সম্ভব। পাশাপাশি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে দরপত্রের প্রস্তাব, মূল্যায়ন, চুক্তি ব্যবস্থাপনা এবং ই-পেমেন্টসহ সংশ্লিষ্ট অনেক কাজই স্বল্প সময়ে, সহজে ও সমন্বিতভাবে করা যায়। দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে আনার পাশাপাশি কাজের সঠিক মান বজায় রাখতে ই-টেন্ডারিং পদ্ধতির কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করি আমরা।
অবশ্য এ কথাও সত্য, শুধু পদ্ধতি বা প্রক্রিয়ার পরিবর্তন হলেই চলবে না, নাগরিকদের মধ্যে দুর্নীতি ও নৈরাজ্য থেকে দূরে থাকার মানসিকতা তৈরির উদ্যোগও নিতে হবে। প্রসঙ্গত, ই-টেন্ডারিং ব্যবস্থা চালু হলেও দুর্নীতির নতুন উপায় উদ্ভাবনের খবর বেরিয়েছে ইতঃপূর্বে। যেমন, কোনো কোনো এলাকার কাজে সিঙ্গেল দরপত্র পাওয়া গেছে।
এর অর্থ হলো, ওই এলাকার প্রভাবশালী কোনো ঠিকাদার অন্য ঠিকাদারদের দরপত্রে অংশ নিতে হুমকি দেন অথবা অন্য কোনো উপায়ে নিবৃত্ত করেন। এটা পূর্বতন অন্যের টেন্ডারের কাগজপত্র ছিনতাইয়ের মতোই দুর্নীতি বলা যায়।
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, ই-টেন্ডারিং পদ্ধতি চালু হলেও টেন্ডার ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতি পুরোপুরি দূর হয়নি। ই-টেন্ডার প্রক্রিয়া মনিটরিংয়ের মাধ্যমে এ ধরনের দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করতে হবে। তারা যাতে আর কোনোভাবেই টেন্ডারে অংশ নিতে না পারেন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আমরা ই-টেন্ডারিংয়ের শতভাগ সাফল্য প্রত্যাশা করি।