1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

শত বছরের স্বপ্নপূরণ: হাজার যাত্রী নিয়ে ছুটল ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’

ডেস্ক রিপোর্ট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৩

বহুল প্রতীক্ষিত ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। পূর্ব নির্ধারিত শিডিউল অনুযায়ী শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে কক্সবাজার আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ যাত্রা শুরু করে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার গোলাম রব্বানী।

তিনি বলেন, প্রথম ট্রেন দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এতে যাত্রী ছিল ১ হাজার ৩০ জন।

ট্রেনটির আজ রাত ৯টা ১০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। ফিরতি ট্রেন কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ঢাকার কমলাপুর স্টেশন ছাড়বে রাত সাড়ে ১০টায়।

ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচলে যাত্রীবাহী ট্রেনের গতিসীমা ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার নির্ধারণ করা হয়েছে। কয়েক দফা পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলের সফল কার্যক্রম শেষে গত ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার রেল সংযোগ উদ্বোধনের সময় ডিসেম্বর থেকে দুটি ট্রেন চালুর নির্দেশ দেন।

ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত শোভন চেয়ারের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৯৫ টাকা। এসি চেয়ারের ভাড়া ১ হাজার ৩২৫ টাকা, এসি সিটের ভাড়া ১ হাজার ৫৯০ টাকা এবং এসি বার্থের ভাড়া (ঘুমিয়ে যাওয়ার আসন) ২ হাজার ৩৮০ টাকা। অপর দিকে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত শোভন চেয়ারের ভাড়া ২০৫ টাকা, স্নিগ্ধা শ্রেণির ৩৮৬ টাকা, এসি সিটের ৪৬৬ এবং এসি বার্থের ভাড়া ৬৯৬ টাকা।

ট্রেন ছাড়ার সময়সূচি

পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের দেওয়া সময়সূচি অনুযায়ী, ১ ডিসেম্বর দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে কক্সবাজার আইকনিক স্টেশন থেকে ছাড়বে ট্রেনটি। চট্টগ্রামে পৌঁছাবে বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটে। ২০ মিনিট যাত্রাবিরতি দিয়ে ছাড়বে বিকাল ৪টায়। রাত ৯টা ১০ মিনিটে পৌঁছাবে ঢাকায়। একইভাবে ঢাকা থেকে রাত ১০টা ৩০ মিনিটে ছেড়ে চট্টগ্রামে পৌঁছাবে রাত ৩টা ৪০ মিনিটে। সেখানে ২০ মিনিট যাত্রাবিরতি দিয়ে রাত ৪টায় রওনা দিয়ে কক্সবাজারে পৌঁছাবে সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে। তবে ঢাকা থেকে সোমবার এবং কক্সবাজার থেকে মঙ্গলবার সাপ্তাহিক বন্ধ থাকবে ট্রেনটি। এই দুই দিন একমুখী গন্তব্যে চলাচল করতে পারবেন যাত্রীরা। ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনের নম্বর ৮১৩ ও কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা ট্রেনের নম্বর ৮১৪ নির্ধারণ করেছে রেলওয়ে।

কোথায় পাওয়া যাবে টিকিট?

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ২৩ নভেম্বর সকাল ৮টা থেকে কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। অনলাইন এবং কাউন্টারে পাওয়া যাচ্ছে টিকিট। রেলওয়ের নিয়ম অনুযায়ী যাত্রার ১০ দিন আগে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। কিন্তু ঢাকা-কক্সবাজার রুটের প্রথম ট্রেনের টিকিট গত মঙ্গলবার থেকে বিক্রির ঘোষণা দিলেও তা সম্ভব হয়নি। কারণ কয়েকদিন আগে টিকিটের দাম নির্ধারণ সংক্রান্ত প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রণালয়। সেটি রেল ভবন থেকে সংশ্লিষ্ট বিভাগে এবং অনলাইন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সহজকে আদেশ দিতে সময় লেগেছে। এরপর সহজ অনলাইনে টিকিট বিক্রির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। সব প্রক্রিয়া শেষ হওয়ায় ২৩ নভেম্বর সকাল থেকে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে।

ট্রেনের ভাড়া

ঢাকা থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ৩৪৬ কিলোমিটার। কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ারের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ভ্যাটসহ ৬৯৫ টাকা, এসি চেয়ারের ভাড়া এক হাজার ৩২৫ টাকা, এসি সিটের ভাড়া এক হাজার ৫৯০ টাকা এবং এসি বার্থের (ঘুমিয়ে যাওয়ার আসন) ভাড়া দুই হাজার ৩৮০ টাকা।

রেলের পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) তারেক মোহাম্মদ ইমরান বলেন, ‘২৩ নভেম্বর সকাল ৮টা থেকে কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হয়। প্রথম পর্যায়ে ট্রেনটিতে দুই ধরনের আসন রয়েছে। এসি এবং নন-এসি। এর মধ্যে কক্সবাজার থেকে ঢাকা পর্যন্ত যেতে এসি আসনের ভাড়া পড়ছে ভ্যাটসহ এক হাজার ৩২৫ টাকা এবং নন-এসি আসনের ভাড়া পড়ছে ৬৯৫ টাকা।’

ঢাকা-কক্সবাজার রুটে আরও সাত ট্রেন চালুর পরিকল্পনা

প্রথম ধাপে একটি ট্রেন আসা-যাওয়া করলেও আগামী বছরের শুরুতে এই বহরে সাতটি ট্রেন যুক্ত হবে বলে জানালেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান পরিবহন কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আপাতত ঢাকা-কক্সবাজার রুটে চলাচল করবে কক্সবাজার এক্সপ্রেস। শুরুতে চট্টগ্রামের যাত্রীদের জন্য কোনও আসন বরাদ্দ রাখা হয়নি। তবে পরে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ট্রেনটি প্রতিদিন ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাবে, সেখান থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকায় যাবে। মাঝখানে চট্টগ্রাম ছাড়া কোনও স্টেশনে দাঁড়াবে না। চট্টগ্রামে ২০ মিনিট যাত্রাবিরতি দেবে। তবে ঢাকা থেকে সোমবার এবং কক্সবাজার থেকে মঙ্গলবার বন্ধ থাকবে ট্রেন চলাচল।’

ঢাকা-কক্সবাজার রুটে আন্তনগর এবং কমিউটার মিলে আরও সাতটি ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে উল্লেখ করে শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে দুটি, ঢাকা থেকে আরও একটি, রাজশাহী থেকে একটি, সিলেট থেকে একটি, চাঁদপুর থেকে একটি এবং চট্টগ্রাম থেকে একাধিক কমিউটার ট্রেন চালুর কথা ভাবছি আমরা। সবমিলিয়ে আরও সাতটি ট্রেন আগামী বছরের শুরুতে চালুর পরিকল্পনা আছে। তবে বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। স্টেশনগুলোর কাজ সম্পন্ন না হওয়া এবং জনবল নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত বেশি ট্রেন চালানো যাবে না।’

চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার রতন কুমার চৌধুরী বলেন, ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনে মোট ১৫টি বগি থাকবে। এর মধ্যে একটি এসি এবং আরেকটি নন-এসি। এর মধ্যে ১১৫টি আসন থাকবে চট্টগ্রামের যাত্রীদের জন্য। দুই বগির মধ্যে এসিতে আসন থাকবে ৫৫টি এবং নন-এসিতে আসন থাকবে ৬০টি।’

রেললাইন পুরোপুরি প্রস্তুত

ট্রেন চলাচলের জন্য ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথ কতটা প্রস্তুত জানতে চাইলে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী বলেন, ‘রেললাইন পুরোপুরি প্রস্তুত। এর আগে আমরা পরীক্ষামূলক ট্রেন চালিয়ে দেখেছি। লাইনে কোনও ধরনের সমস্যা পাওয়া যায়নি।’

প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ

দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের কাজের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মো. সুবক্তগীন বলেন, ‘দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত। কালুরঘাট ব্রিজ দিয়ে এখন ট্রেন নেওয়া যাবে। তবে প্রকল্পের অবকাঠামোগত কিছু কাজ বাকি আছে। সেগুলো ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে পারবো বলে আশা করছি। এছাড়া রেললাইনের কাজ শতভাগ শেষ।’

ট্রেন চলাচলের জন্য ইতোমধ্যে রেললাইনে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন চট্টগ্রাম রেলওয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘শুক্রবার থেকে কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। কাউন্টারে কোনও যাত্রীকে সন্দেহ হলে তল্লাশি করা হবে। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দুটি থানা এবং ছয়টি পুলিশ ফাঁড়ির প্রস্তাব পুলিশ সদর দফতরে পাঠানো হয়েছে। সেগুলো এখনও অনুমোদন হয়ে আসেনি। এরপরও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি আমরা।’

প্রাথমিকভাবে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন এলাকা চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার আওতায় থাকবে বলে জানালেন চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে ১০ সদস্যের পুলিশের টিম কক্সবাজারে পৌঁছে গেছে। তারা কক্সবাজার স্টেশন, প্ল্যাটফর্মসহ রেললাইনের নিরাপত্তার পাশাপাশি অন্যান্য কাজ করবে। এছাড়া আরও ১০ সদস্যের পুলিশ থাকবে কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনে।’

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকায় চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেললাইন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার এবং রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কিলোমিটার। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের প্রায় সাত বছর পর ২০১৮ সালে ডুয়েল গেজ এবং সিঙ্গেল ট্র্যাক রেললাইন প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রথমে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। পরে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করায় ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এতে অর্থায়ন করেছে এশিয়ান ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার। এটি সরকারের অগ্রাধিকার (ফাস্ট ট্র্যাক) প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ