1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

আমাদের আলোর দিশারি ড. সায়মা ওয়াজেদ পুতুল

নিউজ এডিটর : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৩

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অটিজম-বিশেষজ্ঞ, সাইকোলজিস্ট, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক অ্যাডভাইসরি প্যানেলের বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশের অটিজম-বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি ড. সায়মা ওয়াজেদ। তিনি বিশেষ শিশুদের পরম বন্ধু, মানবসেবার অন্যতম অগ্রদূত। অটিস্টিক বা বিশেষ শিশুদের সামগ্রিক কল্যাণ ও সেবায় সর্বাগ্রে তার অবদান আজ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত; যার প্রচেষ্টায় বর্তমানে বিশেষ শিশুরা সমাজের বোঝা নয়, দেশের সম্পদ। মমতা ও ভালোবাসার সঙ্গে এসব শিশুকে উপযুক্ত পরিবেশ দিতে পারলে তারাও হতে পারে দেশ ও বিশ্বের সম্পদ। বিশ্বে অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে, যেখানে অটিস্টিক শিশুদের মধ্য থেকে তৈরি হয়েছে অনেক বরেণ্য ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশের শিশুরাও সে পথেই হাঁটছে। বাংলাদেশকে এমনই এক সুন্দর বাস্তবতার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য উত্তরসূরি ড. সায়মা ওয়াজেদ। সায়মা ওয়াজেদের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে অটিজম একটি সামাজিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। ক্রমশ সেই আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী; ফলে অনেক অটিস্টিক শিশু মূলধারায় ফিরে আসছে। অসহায় পিতামাতা হতাশা কাটিয়ে আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন। এসব অভিভাবকের মধ্যে নতুন করে বিশেষ শিশুদের নিয়ে উত্সাহের সৃষ্টি হয়েছে। এসব অভিভাবকের মনোবল ও সাহস বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা একটি আশ্রয় খুঁজে পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরোডিসঅর্ডার অ্যান্ড অটিজম (ইপনা) প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও ড. সায়মা ওয়াজেদের রয়েছে অসামান্য অবদান। ইপনা তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অটিজম ও অন্যান্য স্নায়ুবিকাশজনিত সমস্যাসংক্রান্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় সেবা ও পরামর্শ দেবার পাশাপাশি উচ্চতর গবেষণা ও প্রশিক্ষণ-কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছে। বিশেষ শিশুদের জন্য অগ্রণী ভূমিকা রাখা ড. সায়মা ওয়াজেদের জন্ম ১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর। আজকের এই দিন তার বর্ণাঢ্য ও বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবনের ৫১ বছর পেরিয়ে ৫২ বছরে পদার্পণ করলেন। তার ৫২তম জন্মদিনে জানাই গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি, শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা। গুণী ব্যক্তিত্ব, মানবতার প্রতীক ড. সায়মা ওয়াজেদের পিতা বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া।

মানবসেবায় ড. সায়মা ওয়াজেদ বিশেষ শিশুদের সুরক্ষায় নিরলস ও নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার দেশের প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি অত্যন্ত আন্তরিক। বিশেষ করে, অটিজম ও অন্যান্য স্নায়ুবিকাশজনিত সমস্যায় আক্রান্ত শিশু ও তাদের পরিবারের সুরক্ষায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার রয়েছে অতুলনীয় দরদি মন, যা মানবসেবায় ব্রতধারী জনাব সায়মা ওয়াজেদকে বিশেষ শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠার কাজকে এগিয়ে নিতে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছে। সায়মা ওয়াজেদ বর্তমানে সারা বিশ্বেই অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একজন লাইসেন্সপ্রাপ্ত মনোবিজ্ঞানী। মানসিক প্রতিবন্ধিতা, স্নায়বিক প্রতিবন্ধিতা, অটিজম ও মানসিক স্বাস্থ্যসমস্যায় যুক্ত ব্যক্তিদের আর্থিকভাবে সহায়তার জন্য প্রতিষ্ঠিত সূচনা ফাউন্ডেশনের সম্মানিত চেয়াররপাসন হিসেবেও মানবিক দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন ড. সায়মা ওয়াজেদ।

ড. সায়মা ওয়াজেদ ১৯৯৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক এবং ২০০২ সালে ক্লিনিক্যাল-মনস্তত্ত্বে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৪ সালে স্কুল-মনস্তত্ত্বে বিশেষজ্ঞ ডিগ্রি অর্জন করেন। ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময় তিনি বাংলাদেশের নারীদের উন্নয়নের ওপর গবেষণা করেন। এ বিষয়ে তার গবেষণাকর্ম ফ্লোরিডার একাডেমি অব সায়েন্স কর্তৃক শ্রেষ্ঠ সায়েন্টিফিক উপস্থাপনা হিসেবে স্বীকৃত হয়। তিনি ২০০৮ সাল থেকে শিশুদের অটিজম ও স্নায়বিক জটিলতা-সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর কাজ করছেন। সায়মা ওয়াজেদের উদ্যোগে ২০১১ সালে ঢাকায় প্রথম বারের মতো অটিজম-বিষয়ক দক্ষিণ এশীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৩ সাল থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষজ্ঞ পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন। মনস্তত্ত্ববিদ সায়মা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান অটিজম স্পিকসের পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেন। স্বীকৃতিস্বরূপ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর তাকে ‘হু অ্যাক্সিলেন্স’ পুরস্কারে ভূষিত করে। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার ব্যারি ইউনিভার্সিটি ‘ডিসটিংগুইসড অ্যালামনাই অ্যাওয়ার্ডস’ প্রদান করেছে সায়মা ওয়াজেদকে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জনস্বাস্থ্যসেবায় অবদানের স্বীকৃতস্বরূপ তাকে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়। সম্মাননার সাইটেশনে উল্লেখ করা হয়েছিল—সায়মা একজন মনোবিজ্ঞানী এবং শিশুদের অটিজম বিষয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের একজন প্রবক্তা। ২০১৬ সালে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ডিজিটাল ক্ষমতায়নের জন্য ইউনেসকোর আন্তর্জাতিক জুরি বোর্ডের সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। ২০২০ সালের জুলাই মাসে সায়মা ওয়াজেদ ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ)-এর থিম্যাটিক রাষ্ট্রদূত হন। জলবায়ুঝুঁকি মোকাবিলার জন্য গঠিত ফোরামের কাজে তার সম্পৃক্ততা প্রশংসিত হয়েছে। স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যেও সারা বিশ্বে তিনি অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে, তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছেন। বাংলাদেশে অটিজম-বিষয়ক বিভিন্ন নীতি নির্ধারণে উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভের পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে অটিজম-বিষয়ক ‘শুভেচ্ছা দূত’ হিসেবেও সায়মা ওয়াজেদ কাজ করছেন। অটিজম নিয়ে অসামান্য অবদান রাখায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে বিশেষ সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য কন্যা ড. সায়মা ওয়াজেদ কিছুদিন আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক দপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন। ডব্লিউএইচওর ছয়টি অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল এই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। এই অঞ্চলে প্রতি পাঁচ বছর পরপর নতুন করে সদস্যদের ভোটে এক জন প্রতিনিধি নির্বাচিত হন। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ঘনবসতিপূর্ণ এই অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যজনিত নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলায় কাজ করে সংস্থাটির আঞ্চলিক দপ্তর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১১টি সদস্য দেশের মধ্যে ভোট প্রদানকারী ১০টি দেশের মধ্যে আট ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক অ্যাডভাইসরি প্যানেলের বিশেষজ্ঞ ড. সায়মা ওয়াজেদ।

পরিশেষে বলব, ড. সায়মা ওয়াজেদ অবশ্যই সম্পূর্ণ নিজের যোগ্যতায় মানুষের জন্য কাজ করে চলেছেন এবং তার মধ্যে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নীতি-আদর্শ বহমান। বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা ড. সায়মা ওয়াজেদ এগিয়ে এসেছেন মানুষের কল্যাণে। মাতার সান্নিধ্য তাকে মানবিক শিক্ষায় শিক্ষিত করেছে। ড. সায়মা ওয়াজেদের নেতৃত্বে বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বে বিশেষ শিশুদের সব ধরনের অধিকার প্রতিষ্ঠায় মহতী কার্যক্রম আরো বেগবান হবে এবং একই সঙ্গে তার এই মহতী কার্যক্রম বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে আরো মর্যাদা ও গৌরবের আসনে অধিষ্ঠিত করবে, এটাই আমার দৃঢ় বিশ্বাস। ড. সায়মা ওয়াজেদের শুভ জন্মদিনে আবারও রইল আমাদের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও অফুরন্ত প্রাণঢালা শুভেচ্ছা।

লেখক : অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান – কোষাধ্যক্ষ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও অধ্যাপক, বক্ষব্যাধি বিভাগ


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ