1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ভোটের উৎসবে কাঁপছে পুরো দেশ

ডেস্ক রিপোর্ট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৩

৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। পুরো দেশ নির্বাচনী জ্বরে কাঁপছে। প্রার্থীদের প্রচারণায় জমে উঠেছে নির্বাচন। এই উৎসবে একযোগে শামিল হয়েছে জাতি, ধর্ম, বর্ণ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। গ্রামের বাজারে,পাড়া-মহল্লায়,শহরের অলিগলি মিছিলে মিছিলে মুখরিত হয়ে উঠেছে। পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো দেশ।চায়ের দোকান এখন রাজনৈতিক আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে। পছন্দের প্রার্থীর জন্য সমর্থকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইছে। প্রার্থীরাও ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছে।

স্কুল-কলেজ,খেলার মাঠ কিংবা রাস্তার মোড়ে চলছে জনসভা। শুধু মাঠে ময়দানেই নয়, প্রযুক্তির কল্যাণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউবসহ নানা মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে ভোটের রাজনীতি।

গণতন্ত্র ও নির্বাচন দুইটি শব্দ সমার্থক নয়,তবে একটি অপরটির পরিপূরক। নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র হয় না আবার গণতন্ত্র ছাড়া নির্বাচনও অর্থহীন। গণতন্ত্রের সর্বশ্রেষ্ঠ উক্তিটি করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন। তিনি বলেছেন, Democracy is the Government of the people,by the people,for the people. (গণতান্ত্রিক সরকার জনগণের অংশগ্রহণ, জনগণের দ্বারা ও জনগণের জন্য)। এখানে জনগণের অংশগ্রহণের কথাই বলা হয়েছে। ব্যক্তি কিংবা দল নয়। সংবিধান অনুযায়ী,প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। তাঁরাই পাঁচ বছরের জন্য ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করেন। সাংসদরা জনগণের প্রতিনিধি হয়েই আইন প্রণয়নসহ যাবতীয় কাজ করেন। জনগণের সাথে জনপ্রতিনিধিদের সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যম হলো ভোট। এটাই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের রীতি।

বাংলাদেশের নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে দেশি-বিদেশি একটি চক্র খুবেই তৎপর ছিল, এখনো আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তায় তারা কোনঠাসা অবস্থায় আছে। বিগত দুইটি নির্বাচনের মতো দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে পায়তারা শুরু করেছিল একটি অশুভ শক্তি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে না,একতরফা ভোট হবে এমন প্রচারণা এক শ্রেণির লোক করেই যাচ্ছিল।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ভোটের মাঠে থাকবে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এমন সিন্ধান্তে ষড়যন্ত্রকারীদের চক্রান্ত বুমেরাং হয়ে গেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা অনেকদিন ধরেই বলে আসছেন, নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। কেউ বিনা ভোটে নির্বাচিত হতে পারবে না। সে বিষয়ে তিনি বারবার সতর্ক করেছিলেন। এজন্য তিনি নৌকা মনোনয়ন দিয়েছেন,অন্যদিকে দলীয় প্রার্থীদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। যার ফলে এখন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা প্রায় সমান সমান। এবং তিনশ আসনেই নির্বাচন হচ্ছে, একটি আসনেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ নেই।

স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ব্যাপক অংশগ্রহণে নির্বাচনে নতুনত্ব এসেছে। অন্তত ১৩০ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সাথে দলীয় প্রার্থীদের কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। বাকি আসন গুলোতে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা না হলেও বিনা ভোটে কিংবা আরাম আয়েশে জিতে আসার সুযোগ নেই। ভোটে অবহেলা করলে সেখানেও দলীয় যেকোনো প্রার্থীর পরাজয় ঘটতে পারে। আগে যারা দল কিংবা শরিক দলের নেতারা ভেবেছিলেন নৌকা পেলেই নিশ্চিত জয়ের গ্যারান্টি, তাদের অনেকের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।

এদের অনেক হেভিওয়েট প্রার্থীরাও পরাজয়ের আশংকায় আছে। নৌকার সাথে কোথাও কোথাও জাতীয় পার্টি কিংবা অন্যান্য দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলেও মূল লড়াই হবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সাথে। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে ১৫৩ জন ঈগল ও ১২৬ জন ট্রাক এবং বাকিরা অন্যান্য নির্বারিত প্রতীকে নির্বাচন করছেনন। ধারণা করা হচ্ছে, নৌকার সাথে ঈগল ও ট্রাকের মাঠে জমজমাট লড়াই হবে।

বাংলাদেশের নিবন্ধন মোট ৪২ টি দলের মধ্যে ২৭টি দল সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে।এবং মোট প্রার্থী সংখ্যা ১ হাজার ৮৯৬ জন। আসন প্রতি ছয় জনের বেশি।২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধিত সব দল অংশগ্রহণ করলেও মোট প্রার্থী ছিলেন ১ হাজার ৮৬১ জন। এবার বিএনপিসহ তাদের জোট অংশগ্রহণ না করলেও প্রার্থী সংখ্যা কমেনি,বরং বেড়েছে।দলগত ভাবে আওয়ামী লীগ ২৬৫,জাতীয় পার্টি ২৬২,তৃণমূল বিএনপি ১৩৩,ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ১২২ টি,জাসদ ৬৪,ওয়ার্কার্স পার্টি ২৬,তরীকত ফেডারেশন ৩৮,জেপি ১৩,সাম্যবাদী দল ৪,ইসলামী ঐক্যফ্রন্ট ৩৯,ইসলামী ঐক্যজোট ৪২,কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ২৯,গণফোরাম ৯,গণফ্রন্ট ২১,জাকের পার্টি ২১,বিকল্পধারা ১০,বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ৩৭,বাংলাদেশ ৯৫,বিএনএফ ৪৫,বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ৪,কল্যাণ পার্টি ১৬,বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ১১,বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ৫,বিএনএম ৫৪,বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ৫ টি,সুপ্রীম পার্টি ৭৯,সাংস্কৃতিক মুক্তি জোট ৬৩ আসনে প্রার্থী দিয়েছে।রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ১ হাজার ৫১৩ জন এবং স্বতন্ত্র ৩৮২ জন প্রার্থী হয়েছেন।

এবারের নির্বাচনে প্রতিটি দল উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী প্রার্থী করেছেন। মোট ৯৪ জন নারী প্রার্থী আছেন। এর মধ্যে ২৬ জনই স্বতন্ত্র প্রার্থী।

এছাড়া নৌকা ২০,জাতীয় পার্টি,বাংলাদেশ কংগ্রেস ও এনপিপিতে ৯ জন করে, তৃণমূল বিএনপি ৬,বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট ও বিএনএফ ৩ জন করে এবং গণফ্রন্ট ও বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টিতে ২ জন করে নারী প্রার্থী আছেন। এছাড়াও সমাজে পিছিয়ে থাকা সম্প্রদায় ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায় থেকে ২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম।

আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনে টার্গেট প্রথমত ভোটকে উৎসবমূখর করা, দ্বিতীয়ত ভোটার উপস্থিতি বৃদ্ধি করা এবং তৃতীয়ত নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করা। ভোটে কত শতাংশ ভোটার উপস্থিত হলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে, এটা আমাদের সংবিধানে উল্লেখ নেই। তবে বিগত নির্বাচন গুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়,অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে ৬০-৭০ শতাংশ ভোটার উপস্থিত হন। যা পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে হয় না। যুক্তরাষ্ট্র,যুক্তরাজ্য, জাপানসহ উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে ভোটাধিকারের হার ৫০-৫৫ শতাংশ।

ইউরোপের দেশগুলো গণতান্ত্রিক অধিকারের কথা বললে সেসব দেশের জনগণের বড় অংশই ভোট দেন না। বাংলাদেশে বিএনপি জোট অংশগ্রহণ না করলেও সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোটার উপস্থিতির রেকর্ড আছে। বিগত স্থানীয় পরিষদ নির্বাচন গুলোতে বিএনপি অংশগ্রহণ না করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছে। ভোটের ক্ষেত্রে দলের থেকেও প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা গুরুত্বপূর্ণ। এজন্যই আওয়ামী লীগ লক্ষ্যপূরণে দলীয় নেতাকর্মীদেরকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য উম্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।

একটি নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশন একা পারেনা। রাজনৈতিক দল গুলো ,গণমাধ্যম,সুশীল সমাজসহ সর্বোপরি জনগণের সর্বাত্মক সহযোগিতা দরকার। একমাত্র কমিশনের পক্ষে সম্ভব নয়। নির্বাচনকে উৎসবমুখর ও অংশগ্রহণ করতে স্ব স্ব জায়গা থেকে সবারই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। জনগণের সর্বাত্মক অংশগ্রহণ হলে কোনো শক্তি বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।

নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষের কাছে একটি সর্বজনীন উৎসব। সমাজের প্রতিটি মানুষ এই উৎসবে শামিল হয়। যারা ভোটার তারা সরাসরি অংশগ্রহণ করলেও যারা ভোটার হননি তারাও নির্বাচনের প্রকৃয়া থেকে বাদ যায়না। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা নির্বাচন নিয়ে জোরেশোরে মাঠে রয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। নৌকার বিপরীতে স্বতন্ত্র কিংবা অন্যান্য দলগুলোর প্রচারণায় নির্বাচনী আমেজে পুরো দেশ। যারা বলেছিলেন, বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন অংশগ্রহণ হবে না। তাদের ধারণা ইতোমধ্যেই ভুল প্রমাণিত হয়েছে। উৎসবের রং লেগেছে ভোটের হাওয়ায়, ভোট উৎসবে মাতোয়ারা পুরো বাংলাদেশ।

লেখক: তাপস হালদার – সাবেক ছাত্রনেতা ও সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ