1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

লন্ডনে তারেকের বিকল্প হাওয়া ভবন: স্বেচ্ছাচারিতায় ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা

ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ৮ জানুয়ারি, ২০১৮

 বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ঘিরে যুক্তরাজ্যে গড়ে উঠেছে বিশাল সিন্ডিকেট। দেশ ও দেশের বাইরে এই সিন্ডিকেটই মূলত নিয়ন্ত্রণ করেন বিএনপি’র রাজনীতি। সবকিছুর রিমোট কন্ট্রোল তাদেরই হাতে। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনের পর হাওয়া ভবন কেন্দ্রিক সিন্ডিকেটের কবলে জিম্মি ছিল বিএনপি’র রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় প্রশাসন। সবাই তখন জানত মন্ত্রিসভার বাইরে হাওয়াভবন কেন্দ্রিক সিন্ডিকেট হচ্ছে প্রশাসনের চালক। ঠিক একই কায়দায় যুক্তরাজ্যেও তারেক রহমানকে কেন্দ্র করে হাওয়া ভবনের আদলে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। বিএনপি’র রাজনীতির নিয়ন্ত্রক এখন এই সিন্ডিকেট। মাঠের নিবেদিত প্রাণ কর্মীদের কেউ ক্রসফায়ারের শিকার হচ্ছেন, কেউ হচ্ছেন গুম। আবার মামলার বেড়াজালে আটকে জেল, জুলুম, রিমান্ডের দকল সইছেন অনেকে। তাদের টেক্কা দিয়ে রাজনীতির নিয়ন্ত্রক হলেন নিরাপদ অবস্থানে তারেক রহমানকে ঘিরে গড়া উঠা সিন্ডিকেট। যতই জেল জুলুম সইছেন সিন্ডিকেটের পছন্দের তালিকায় ঢুকতে না পারলে দলীয় পদ পদবী পাওয়া যায় না।
লন্ডনে নতুন বলয়ের সাথে রয়েছেন হাওয়া ভবনের পুরাতন সদস্যরা। বিগত ইউপি, পৌর এবং উপজেলা নির্বাচন মনোনয়ন বাণিজ্যের সাথে জড়িত ছিলেন যৌথ এই সিন্ডিকেট। বাংলাদেশে অনেক জেলা এবং থানায় কমিটি গঠনেও রয়েছে লন্ডনে তারেক রহমান কেন্দ্রীক সিন্ডিকেটের প্রভাব। কমিটি ও মনোনয়ন বাণিজ্যে বিশাল অঙ্কের টাকা লেন-দেনও হয় এই সিন্ডিকের মাধ্যমে। তাই অনেক টাকাওয়ালা ব্যবসায়ী দলীয় পদ পদবী নিশ্চিত করতে তদবিরের জন্য হরহামেশাই বাংলাদেশ থেকে লন্ডনে আসতে দেখা যায়।
বিভিন্ন নির্বাচনে মনোনয়ন এবং দলীয় পদ পদবী সিন্ডিকেটের মর্জির উপর অনেকটা নির্ভর করে। সিন্ডিকেট ম্যানেজ করা গেলে দলীয় ত্যাগী নেতাদের পেছনে ফেলে পদ এবং নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া নিশ্চিত এ বিষয়টি এখানে ওপেন সিক্রেট। আবার সিন্ডিকেট বিরাগভাজন হলে যত ত্যাগই স্বীকার করুন না কেন সবকিছুই চরম অনিশ্চিত। তাই বলা হয়, বিএনপি’র রাজনীতিতে মাঠে থাকার দরকার নেই। তারেক রহমানের সিন্ডিকেট ম্যানেজ থাকলেই চলে। ভাইয়া গ্রুপের সুনজরে থাকলে দলীয় পদ পদবী পেতে মাঠ, ময়দান, রাজপথ কোথায়ও উপস্থিতির দরকার হয় না। ভাইয়া গ্রুপের বিরাগভাজনে থাকলে কোন কাজে আসে না ক্রসফায়ার, রিমান্ড, গুম, জেল, জুলুম  ও নির্যাতন।
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারির পর পালিয়ে গিয়েছিলেন তারেক রহমানের পিএস হাওয়া ভবনের দাপুটে ও প্রভাবশালী মিয়া নূর উদ্দিন অপু। দীর্ঘদিন তিনি পালিয়েছিলেন মালয়েশিয়ায়। সবকিছু ম্যানেজের পর এখন তিনি বাংলাদেশে। নিয়মিত আসা যাওয়ায় রয়েছেন লন্ডনে। বাংলাদেশ থেকে নিয়মিত লন্ডনে আসা-যাওয়া করেন হাওয়া ভবনের আরেক প্রভাবশালী আতিকুর রহমান রোমন। ১/১১-এর পর আমেরিকায় পালিয়ে যাওয়া হাওয়া ভবনের কথিত মুখপাত্র আশিক ইসলামও নিয়মিত লন্ডনে আসা-যাওয়ায় রয়েছেন। এসব আসা-যাওয়ার পেছনে রয়েছে টাকাওয়ালাদের পদ পদবী ও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মোটা অঙ্কের অনুদান।
এই চক্রের সাথে নতুন যোগ হয়েছেন আবদুর রহমান সানি। একাডেমিক যোগ্যতায় তিনি বাংলাদেশে পলিটেকনিতে পড়াশুনা করা লন্ডনে মুখে মুখে প্রচারিত তিনি হলেন বিএনপি’র চীফ এক্সিকিউটিভ। চেয়ারপার্সন, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের পরই এখন তার অবস্থান। তারেক রহমানের সাথে দলীয় নেতা-কর্মীসহ সবার সেতুবন্ধনের কাজটি এখন করছেন তিনি। স্থায়ী কমিটির সদস্যরা তাকে ধরনা দিতে হয় তারেক রহমানের সান্নিধ্য পেতে। তার কথায় অনেক সিদ্ধান্তও হয় বিএনপিতে। দলীয় পরিচয় বা অফিসিয়াল পরিচিতি নেই তার। তার আচরণে কেউ আপত্তি জানালে তারেক রহমান সাফ জবাব দেন ওতো দলীয় কেউ নন। দলে তো তার কোন পদ পদবী নেই। তবে তার দাপটে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদেরও কাবু হয়ে থাকতে হয়।
তাকে কেউ বলেন তারেক রহমানের পিএস, কেউ বলেন ড্রাইভার, কেউ বলেন ব্যক্তিগত সহকারী। তবে তার দাপট স্থায়ী কমিটির উপরে। তারেক রহমান যে মঞ্চে বক্তব্য রাখেন সেই মঞ্চে পেছনের চেয়ারটি থাকতে হয় তার জন্য। নতুবা তিনি কঠোর মাইন্ড করেন। দলীয় বা অফিসিয়াল পদ পদবী না থাকলে সভা সমাবেশের মঞ্চে নেতাদের পাশের চেয়ারে বসেন কোন এখতিয়ারে? লন্ডনে কখনো দেখা গেছে মঞ্চে নেতাদের চেয়ার নেই। তারপরও আবদুর রহমানের জন্য তারেক রহমানের পেছনের চেয়ারটি ছিল ঠিকই।
দলের ভেতরে এখন মশহুর আবদুর রহমান সানীর বিরাগ ভাজন হলেন তো মরছেন। দলীয় অবস্থান নড়বড়ে হয়ে যায় তার সুনজরে না থাকলে। তাই বিএনপি যারা করেন সকলেই সানীকে ম্যানেজ ও তোয়াজে থাকতে হয়।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্য বিএনপি’র কাউন্সিল কেন্দ্র করে আবদুর রহমান সানীর দাপটের বিষয়টি প্রকাশ করেছেন যুক্তরাজ্য বিএনপি সভাপতি আবদুল মালেক। তিনি এক সহকর্মীকে বিষয়টি বলার সময় রেকর্ড করেন আরেকজন। আবদুল মালেক তার সহকর্মীকে জানাচ্ছিলেন কমিটি গঠনে সানীর একটি ভুমিকা থাকবে। তাই সানী তাকে জানিয়েছেন কারা কমিটিতে থাকবে সেই নামের তালিকা দেওয়ার জন্য। এই কথোপকথনের অডিও রেকর্ড এখন যুক্তরাজ্য বিএনপি’র নেতাকর্মীদের মোবাইল ও ফেইসবুক ইনবক্সে ভাইরাল হয়ে আছে। বাংলাদেশ থেকেও অনেকে তারেক রহমানের সাথে দেখা করতে আসেন আবদুর রহমান সানীকে ম্যানেজ করে। তার ভাই কবীর আহমদ হলেন তারেক রহমানের সাথে দেখা করার বাংলাদেশ এজেন্ট। বাংলাদেশ থেকে যারা কবীরকে ম্যানেজ করে লন্ডনে যান তারেক রহমানের সাথে তাদের সাক্ষাৎ নিশ্চিত থাকে। এসব সাক্ষাতের বিনিময়েও রয়েছে বিশাল বাণিজ্য। শোনা যায় কবীরের আয়ের মূল উৎস হচ্ছে লন্ডনে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা। দলীয় নেতা-কর্মীরা অসুস্থা বা আহত হয়ে হাসপাতালে গেলে পর চেয়ারপার্সন দেখতে গেছেন এমন নজির কমই রয়েছে। আবদুর রহমান সানীর পিতা অসুস্থ হয়ে সম্প্রতি ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাকে দেখতে গিয়েছিলেন চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর থেকে শুরু করে স্থায়ী কমিটির অনেকে। অথচ বিপুল নেতা-কর্মী জেল জুলুম গুমের শিকার হচ্ছেন। তাদের পরিবারকে দেখতে কেউ গেছেন এমন উদাহরণ বিএনপিতে নেই। বিএনপি’র অঘোষিত চীফ এক্সিকিউটিভ (!) আবুদর রহমান সানীর অসুস্থা পিতাকে দেখতে গেছেন পুরো বিএনপি। এতেই অনুমান করা যায় তার প্রভাব কতটা রয়েছে দলে।
২০১৩ সালে তারেক রহমানের উপদেষ্টা হিসাবে যোগ দেন হুমায়ূন কবীর। ২০১৫ জানুয়ারীতে বিএনপি’র ডাকে অবরোধ কর্মসূচির সময় আমেরিকার ৬ কংগ্রেসম্যানের সাক্ষর জালিয়াতি করে বিবৃতির কথা সবারই জানা রয়েছে। এই সাক্ষর জালিয়াতির মূল হোতা ছিলেন লন্ডনে তারেক রহমান কেন্দ্রীক সিন্ডিকের প্রভাবশালী সদস্য হুমায়ূন কবীর। যদিও আমেরিকায় আরেক উপদেষ্টা সরদার এফ সাদীকে তখন বহিস্কার করে মুখ রক্ষার চেষ্টা করেছিল বিএনপি। কিন্তু স্বাক্ষর জালিয়াতির সাথে যুক্তরাজ্যের মূলধারার পত্রপত্রিকায় হুমায়ূন কবীরের নাম উঠে আসে। যুক্তরাজ্যে বেড়ে উঠা হুমায়ূন কবীর এক সময় লেবার পার্টির পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হেমলেটস-এ একটি ওয়ার্ড শাখার সেক্রেটারি ছিলেন। দলীয় অসদাচরণের কারনে লেবার পার্টি থেকে তাকে বহিস্কার করা হয়। এক রকম ভবঘুরে জীবনযাপন করতেন হুমায়ূন কবীর। তারেক রহমানের উপদেষ্টা ও হালে বিএনপি’র আন্তর্জাতিক সম্পাদক। এর বাইরে তার কোন পূর্ব পরিচিতি নেই।
এই ভবঘুরে হঠাৎ করেই তারেক রহমানের উপদেষ্টা হিসাবে মনোনীত হন। বিশেষ উপদেষ্টা হিসাবে দলীয় কর্ণধারের ভুমিকায় অবতীর্ণ হন ২০১৩ সালে। দলের সর্বস্তরে তার খবরদারি এখন বিএনপি’র ভেতরে মশহুর। দলীয় কাউন্সিলের পর তাকে প্রথমে সহকারি আন্তর্জাতিক সম্পাদক মনোনীত করা হয়েছিল। কিন্তু তার দাপট এতটাই যে, কয়েকদিনের মাথায়ই তাকে পূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্পাদক হিসাবে মনোনয়ন দিতে বাধ্য হয় দল। লন্ডনে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে আলাপ আলোচনায় তিনি বাংলাদেশে অবস্থানরত সিনিয়র নেতাদের কথায় কথায় পাচায় লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার নসিহত করেন। রাজপথে নির্যাতন, জেল, জুলুম সহ্য করে মামলার বোঝা মাথায় নিয়ে বাংলাদেশে নেতা কর্মীরা রাজনীতি করেন। হঠাৎ করে তারেক রহমানের সান্নিধ্যে এসে সহকারী আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদ, দুই দিনের মাথায় পদোন্ততি পেয়ে আন্তর্জাতিক সম্পাদক হওয়ার পর তার প্রভাব নিয়ে দলের ভেতরেই প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে তারেক রহমানের স্বেচ্ছাচারিতা নিয়েও।
অনেকে ছাত্র রাজনীতির গোড়া থেকে বিএনপি’র রাজনীতির সাথে জড়িত। রাজপথে নির্যাতন, জেল, জুলুম, রিমান্ডের দখল রয়েছে অনেকের জীবনে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই হয়নি এমন অনেকের। অথচ দলে আসছে কবে এর কোন হদীস নেই। সহকারি আন্তর্জাতিক সম্পাদক হলেন সরাসরি। দুই দিনের মাথায় পদোন্নতি দিয়ে পূর্ণ সম্পাদক! কতটা স্বৈরাচারি হলে এমনটা হতে পারে? কাকে ভবিষ্যৎ বিএনপি সরকারে মন্ত্রি বানানো যায় এনিয়েও চিন্তায় থাকতে দেখা যায় ভবঘুরে হুমায়ুন কবীরকে। নিজেকে ভবিষ্যৎ বিএনপি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরিচয় দিতে সাচ্ছ্যন্দবোধ করেন তিনি। কেউ প্রতিমন্ত্রী বললে মাইন্ড করেন।
তারেক রহমানের উপদেষ্টা হওয়ার পর তার আয়ের উৎস ছিল ব্যারিষ্টার জমিরি উদ্দিন সরকারের ছেলে নওফেল জমিরের প্রতিষ্ঠিত জমির টেলিকম। সরকার পরিবর্তনে বিলম্ব দেখে গত বছরের গোড়ার দিকে নওফেল জমির তাকে পোষা বন্ধ করে দেন। এখন তার আয়ের উৎস ড্রাগ স্মাগলার হিসাবে খ্যাত একজন ব্যবসায়ী। তারেক রহমানের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়াই হচ্ছে এই আয়ের উৎস। এই ড্রাগ স্মাগলার ব্যবসায়ীর সাথেই তাকে হরদম দেখা যায়। তারেক রহমানকেও দেখা যায় পূর্ব লন্ডনের অলগেইটে ওই ড্রাগ স্মাগলারের রেন্টুরেন্টে মাঝে মধ্যেই আসা-যাওয়া করতে।
লন্ডনে তারেক রহমানকে ঘিরে গড়ে উঠা সিন্ডিকের আরেক সদস্য হলেন আবু সায়েম।  পেশায় একজন ইমিগ্রেশন আইনজীবী। ক্লায়েন্টদের জাল কাগজ তৈরি করে দেওয়ার অভিযোগে ২০১৪ সালে যুক্তরাজ্য পুলিশ গ্রেফতারও করেছিল তাকে। তিনি তারেক রহমানের উপদেষ্টা। বিএনপিতে হঠাৎ আসা আবু সায়েমের দাপটেও অনেকেই কোনঠাসা দলে। আবু সায়েম এক সময় গণফোরাম করতেন। সেখান থেকে হঠাৎ করেই বিএনপিতে গা ভাসান। এই গা ভাসানো এবং তারেক রহমানের সান্নিধ্যে যাওয়ার সেতু হল আবদুর রহমান সানী। তার বদৌলতেই তারেক রহমানের উপদেষ্টা পদ লাভ করেন। বাংলাদেশে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের উপর খবরদারিও করেন এখন। দল ক্ষমতায় আসলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হবেন এটাও প্রচার করেন তার অনুগতদের কাছে।
যুক্তরাজ্য বিএনপি’র কমিটি গঠন নিয়ে স্বেচ্চাচারিতা: গত মে মাসে যুক্তরাজ্য বিএনপি’র মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়। তখন দলটির চেয়ারপার্সন লন্ডনে থাকায় কমিটি গঠনের বিষয়টি পিছিয়ে যায়। সম্প্রতি হঠাৎ করেই যুক্তরাজ্য বিএনপি’র কাউন্সিল ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এ কাউন্সিল কোথায় হবে, কারা ভোটার থাকবে এর কোন ঘোষণা নেই। শুধু প্রচারিত হয় ২ জানুয়ারি কাউন্সিল হবে। যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সভাপতি ও সেক্রেটারি ফেইসবুক বার্তায় ঘোষণা করেন যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন জোনের সভাপতি-সেক্রেটারি ভোটার হবেন কাউন্সিলে। তাদেরকে ২ জানুয়ারী ১২টার মধ্যে পূর্ব লন্ডনে অবস্থিত যুক্তরাজ্য বিএনপি’র কার্যালয়ে উপস্থিত হওয়ার আহ্বান জানানো হয় গোপন চিঠিতে। একই সাথে ফেইসবুক বার্তায় বলা হয় ১২টার পর কার্যালয় থেকে কাউন্সিলদের নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যাওয়া হবে বিশেষ ব্যবস্থায়। যুক্তরাজ্য বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির অন্যান্য সদস্যরাও জানেন না কোথায় সেই সম্মেলন হবে। বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা ২৭ ডিসেম্বর বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে একটি লিখিত আবেদন পেশ করেন। তারেক রহমানের একজন উপদেষ্টার মাধ্যমে এই লিখিত আবেদন পেশ করা হয়। লিখিত আবেদনে তারা সম্মেলনের প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা, সম্মলনের স্থান নির্ধারনে গোপনীয়তা ও নির্বাহী কমিটির অন্যদের কিছুই না জানানোর বিষয়টি অবহিত করা হয়। কিন্তু তারেক রহমান এতে কোন পাত্তাই দেননি। কমিটির সদস্যদের না জানিয়ে অতি গোপনীয়তায় সম্মেলন ও কাউন্সিল করায় সম্মতি অব্যহত রাখেন। এতে সংক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা ১ জানুয়ারী রাতে যুক্তরাজ্য বিএনপি’র কার্যালয় দখলে নেয়। রাতে কার্যালয়ে অবস্থান নিয়ে তারা ঘোষণা করেন গোপনে কোন কাউন্সিল হওয়া চলবে না।
কার্যালয় দখলের পর বিএনপি’র আন্তর্জাতিক সম্পাদক মাহিদুর রহমানের তত্ত্বাবধানে সভাপতি এম এ মালেক ও সাধারণ সম্পাদক কয়সর আহমদ কার্যালয়ে আসেন। তখন বিক্ষুব্ধ নেতা কর্মীদের সামনে সভাপতি এম এ মালেক পরের দিনের সম্মেলন ও কাউন্সিল স্থগিত ঘোষণা করেন। এসময় তিনি জানান, ‘প্রক্রিয়া ও প্রস্তুতিতে অস্বচ্ছতার কারণে আগামীকালের সম্মেলন স্থগিত করা হল।’  এই বক্তব্যটি তখন ফেইসবুকে লাইভ প্রচার করেন অনেক সদস্য।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তারেক রহমান বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারিকে বহাল রাখতে চান। এজন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছেন কোন রকমে নাম মাত্র একটি কাউন্সিল করার জন্য। তারেক রহমানের নির্দেশনা পেয়েই সভাপতি ও সেক্রেটারি অতি গোপনীয়তায় কাউন্সিল করার উদ্যোগ নেন। এমনকি গোপন স্থানে কাউন্সিল ঘোষণার পর সভাপতি বিভিন্নজনের কাছে বলেন, কমিটি গঠনে সানীর (আবদুর রহমান সানী) একটি ভুমিকা থাকবে। তার কাছে একটি তালিকা পাঠাতে হবে। তিনি ঘনিষ্টদের কাছে এও বলেন, ৫ জানুয়ারির বাংলাদেশের ইলেকশনের মতই একটা কাউন্সিল করে নিয়ে যেতে বলেছেন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান।
যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সেক্রেটারি কয়সর আহমদ ও সভাপতি এম এ মালেকের প্রতি তারেক রহমানের আস্থা। যদিও এম এ মালেক এবং কয়সর এম আহমদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ মানুষের মুখে মুখে। প্রশ্ন উঠেছে তারেক রহমান চাইলে তো এমনিতেই যাকে চাইবেন তাকেই সভাপতি-সেক্রেটারি মনোনীত করতে পারেন। দলের সব জেলা ও থানায় কেন্দ্র থেকেই কমিটি চাপিয়ে দেওয়া হয়। যুক্তরাজ্য বিএনপিতে দিলে অসুবিধা কোথায়! তারেক রহমান কেন অতি গোপনীয়তায় কাউন্সিলের নির্দেশ দেবেন! এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, তারেক রহমান চাচ্ছেন বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারি নিজ নিজ পদে বহাল থাকুক। তবে এর দায়টা তিনি নিতে চান না। কারণ তিনি জানেন তাদের প্রতি বেশিরভাগ নেতাকর্মী নাখোশ। কাউন্সিলের উপর দিয়ে দায়টা সারতে চান তিনি। তবে দলের নেতা-কর্মীরা এই দুইজনকে সভাপতি ও সেক্রেটারি পদে দেখতে চান না। এছাড়া যুক্তরাজ্যের মত জায়গায় এরকম অনেক শিক্ষিত যোগ্য লোক থাকার পরও অশিক্ষিত নতেৃত্ব দেখতে চায় না দলের সাধারণ নেতাকর্মীরা। শুধুমাত্র তারেক রহমানের পছন্দের কারণে কয়সর এম আহমদ গত মেয়াদের সেক্রেটারি। তৃতীয়বারের মত কয়সর আহমদকে একই পদে চাচ্ছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারেক রহমান সিন্ডিকেটের মূল সদস্য আবদুর রহমান সানীর পছন্দ হচ্ছে কয়সর এম আহমদ। মুখে মুখে প্রচার রয়েছে দুনিয়ার সবকিছু বৃথা যেতে পারে। তারেক রহমানের কাছে আবদুর রহমান সানীর পছন্দ কখনো বৃথা যাবে না। ১ জানুয়ারী রাতে কাউন্সিল স্থগিত করার পরের দিন যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বিএনপি’র আন্তর্জাতিক সম্পাদক মাহিদুর রহমানকে ডেকে পাঠান তারেক হরমান। তখন তাকে নতুন করে সম্মেলন করার দায়িত্ব দেন তারেক রহমান। তারেক রহমানের ইচ্ছার আলোকে ঢাকা কেন্দ্রীয় অফিস থেকে রুহুল কবীর রিজভী স্বাক্ষরিত একটি নতুন নির্দেশনাও নেওয়া হয়। এই নির্দেশনায় বলা হয়, পরবর্তী দুই সপ্তাহের মধ্যে সম্মেলন ও কাউন্সিল করার জন্য। সেই আলোকে মাহিদুর রহমানের তত্ত্বাবধানে নতুন করে ১৫ জানুয়ারি কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সাথে তারেক রহমান নির্দেশনা দিয়েছেন  কাউন্সিলের রেজাল্ট ঘোষণা না করার জন্য। কাউন্সিল শেষে রেজাল্ট তারেক রহমানের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে মাহিদুর রহমানকে। তারেক রহমান নিজে রেজাল্ট ঘোষণা করবেন।
একটি সূত্র জানায়, নিজের ঘারে দায় না নিয়ে তারেক রহমান যে কোন মূল্যে মালেক এবং কয়সরের নেতৃত্ব ধরে রাখতে চাচ্ছেন। এজন্যই কমিটি গঠনে যত লোকচুরি খেলা হচ্ছে যুক্তরাজ্য বিএনপিতে। গত দুই বছর যাবত এম এ মালেক ও কয়সর এম আহমদ যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন আঞ্চলিক কমিটি তাদের আত্মীয়স্বজন এবং অনুগতদের দিয়ে গঠন করার অভিযোগ রয়েছে শুরু থেকে।
প্রতিবেদন: পূর্ব পশ্চিম নিউজ


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ