যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপি-জামায়াতের লবিস্ট নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য সংসদকে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। একই সঙ্গে লবিস্ট নিয়োগে কত টাকা ব্যয় হয়েছে সেই তথ্যও দেন তিনি।
বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সংসদে ৩০০ বিধিতে দেওয়া বিবৃতিতে এ তথ্য জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ সে দেশের আইনে বৈধ প্রক্রিয়া উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ভারত-পাকিস্তান, কাতার-সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নে লবিস্ট নিয়োগ দিয়ে থাকে। কিন্তু লবিস্ট নিয়োগের উদ্দেশ্য কী সেটা হলো মুখ্য।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াত যুক্তরাষ্ট্রে মোট ৮টি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছে। ২০১৪ সালে জামায়াত একটি ফার্ম নিয়োগ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার জন্য। এজন্য তারা দেড় লাখ ডলার দেয়। বিচার বন্ধে তারা আরেকটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছিল। আর যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে প্রভাবিত করার জন্য পিস অ্যান্ড জাস্টিস নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ ৩২ হাজার ডলার দিয়ে নিয়োগ করে। বিএনপি ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ২৭ লাখ ডলার প্রতি বছর, আর প্রতিমাসে রিটেইনার ফি এক লাখ ২০ হাজার ডলার ব্যয় করেছে। এই তথ্যগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিএনপি ২০১৭ সাল পর্যন্ত চারটি এবং ২০১৯ সালে একটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করে। আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে জামায়াত-বিএনপি তিনটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করে।
লবিস্ট নিয়োগের বিষয়ে গত রোববার (২৩ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেছিলেন বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ ও জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক। এর প্রেক্ষাপটে এসব তথ্য দিলেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, দুঃখের বিষয় হচ্ছে লবিস্টরা এমন সব বক্তব্য তুলে ধরেছেন, যেগুলো দেশের মানুষ জানলে ধিক্কার দেবে। লবিস্ট চিঠি দিয়ে বলেছে, বাংলাদেশে সাহায্য সহায়তা বন্ধ করে দিতে। উন্নয়ন যাতে ব্যাহত হয় তার জন্য তারা যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে বলছে।
তিনি বলেন, মাঠে-ময়দানে যারা বিএনপির কর্মী আছেন, তারা কেউ চাইবেন না দেশে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাক। কিন্তু তাদের কিছু নেতৃস্থানীয় মানুষ অগোচরে এমন কাজ করেছেন। বিএনপি সদস্যরাও নিশ্চয় চান না দেশ রসাতলে যাক। তাদের নেতারা কীভাবে এটা লেখতে পারেন?
এদিকে সরকারের লবিস্ট নিয়োগ প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সরকার লবিস্ট নিয়োগ করেনি। পিআর ফার্ম নিয়োগ করেছে। একটা হচ্ছে সিনেট, স্টেট ডিপার্টমেন্টে গিয়ে লবিং করা, সরকার কিন্তু সে ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করেনি। সরকার যেটা করেছে অপপ্রচারও মিথ্যা তথ্য যেগুলো ছড়ানো হয়, তার বিপরীতে সত্য তথ্যগুলো জানানো। বিজিআর নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ২০১৪-১৫ সালে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেসময় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধে বানোয়াট তথ্যের বিরুদ্ধে যাতে লিখতে পারে। বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা বন্ধের জন্য বিজিআরকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
সরকার দেশের জনগণের মঙ্গলের জন্য যে ধরনের ব্যবস্থা প্রয়োজন সেটা নেবে। তার একটি নমুনা হচ্ছে বিজিআর- এ কথা বলেন এ কে আব্দুল মোমেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপির কিছু কিছু লোক জাতিসংঘ মহাসচিবকে চিঠি দিয়েছেন বাংলাদেশের সংসদকে অবৈধ ঘোষণা করার জন্য। এ ধরনের কাজ যারা করে তাদের প্রতি ধিক্কার। বিএনপি যে এতোগুলো ফার্মে রাষ্ট্রবিরোধী কাজে টাকা ব্যয় করলো, তারা কী তাদের দলের আয়-ব্যয়ের হিসাব দেখিয়েছেন? তারা কী তাদের সব নেতার সঙ্গে আলোচনা করে এই কাজগুলো করেছে?