1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিতে ভাঙনের বনভোজন

অসিত পুরকায়স্থ : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২২

পশ্চিমবঙ্গের প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু প্রায়ই বলতেন, ‘বিজেপি একটা অসভ্য বর্বর রাজনৈতিক দল। বর্বরদের দল।’ এ রকম কমিউনিস্টদের শাসনে ৩৪ বছর থাকা একটি রাজ্যের নাগরিকরা যে বিজেপির মতো সাম্প্রদায়িক দলকে দূরে রাখবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

কমিউনিস্টরা ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকে দূরে থাকেন। ধর্মকে তারা আফিম মনে করেন। ধর্মের আফিম খাইয়ে আমজনতাকে ভুলিয়ে রাখা শাসকের কৌশল, পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষকে কয়েক দশক ধরে এই পাঠ দিয়ে গেছেন তারা।

একজন শ্রমিক মুসলিম না হিন্দু, সেটা বড় কথা নয়; বড় কথা, তিনি শ্রমিক। ধর্মের নামে বিভাজন করে শোষণ চলতে পারে না। পক্ষপাতিত্ব চলতে পারে না। ধর্ম দেখে বিচার হতে পারে না। সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরুর তত্ত্ব সরিয়ে সহনাগরিক হিসেবে হিন্দু-মুসলিম এই দুই ধর্মের পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি পাশাপাশি থাকার পাঠ শিখে নিয়েছেন। আর সেটাই পশ্চিমবঙ্গে সরকার গড়ার ক্ষেত্রে বিজেপির বড় বাধা। কেননা তাদের রাজনীতির ইউনিক সেলিং প্রোপজিশন বা ইউএসপি হলো ধর্ম।

বাঙালি সংস্কৃতি আর মননের এক্কেবারে বিপরীত মেরুতে ভারতীয় জনতা পার্টির আদর্শ, অনুশীলন। দেশে বিজেপির রামরাজত্ব প্রতিষ্ঠার মহৎ উদ্দেশ্যের সঙ্গেও অধিকাংশ বাঙালির ঘোরতর মতবিরোধ আছে। আধুনিক বাঙালি, বিজ্ঞানমনস্ক বাঙালি, শিক্ষিত বাঙালি কখনও গরুর দুধে সোনা পাওয়া যাওয়ার গুজবে মেতে ওঠে না, যেমনটা বিজেপি নেতৃত্ব প্রচার করে। ইতিহাস খুঁড়ে দাঙ্গার কঙ্কাল তুলে এনে ধর্মীয় সংঘাত সৃষ্টি করে রাজনৈতিক মুনাফা তোলার যে চেষ্টা বিজেপি করে থাকে, তাদের সেই চেষ্টাকে বাঙালি ব্যর্থ করে দেবে, তা বিজেপি নেতৃত্ব বুঝতে পারেনি।

পশ্চিমবঙ্গে জনসংযোগহীন একটা দল বিজেপি। মানুষের মূল সমস্যা সমাধানে মানুষের পাশে না থেকে, মানুষের প্রতিদিনের বেঁচে থাকার লড়াইয়ে সহযোগিতা না করে, কোমরে টাকার বান্ডিল বেঁধে ধর্মের বেসাতি করতে এসে পশ্চিমবঙ্গ ভাগের ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। রাজ্যে অরাজকতা সৃষ্টি করে ক্ষমতা দখলে বিজেপির এই প্রচেষ্টাকে রাজনীতি সচেতন বাঙালির ধরে ফেলতে অসুবিধা হয়নি।

বিভিন্ন রাজনৈতিক সমীকরণে এবং শাসকবিরোধী ভোট বিজেপির দিকে গেলে ২০১৯ লোকসভা ভোটের ফল বিজেপিকে ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে জিতে পশ্চিমবঙ্গে সরকার গড়ার স্বপ্ন দেখায়। সেই স্বপ্নের উচ্চাশায় বিভোর হয়ে লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জনগণের সরকার গড়ার পথে না হেঁটে, শর্টকাটে ক্ষমতা দখল করতে গিয়ে নেতা-মন্ত্রী কিনে আর ধর্মের আফিম নিয়ে জনগণের মাথার ওপর বসতে চেয়েছিল বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। সাধারণ মানুষ তা ভালোভাবে নেয়নি।

জনভিত্তিহীন একটা দল হঠাৎ করে ধমকে-চমকে-কৌশলে ধর্মের জিকির তুলে সরকার দখল করতে চাইছে, এটা বাঙালির বুঝতে অসুবিধা হয়নি। নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহের মতো বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব মত্ত হাতির মতো পশ্চিমবঙ্গজুড়ে ‘দিদি ও দিদি’ করে যেভাবে দাপিয়ে বেড়িয়েছে, তা বাঙালির স্বভাব ও শিষ্টাচারের সঙ্গে এক্কেবারে খাপ খায় না। ফলে অধিকাংশ বাঙালি জনমানসে বিজেপি সম্পর্কে নেতিবাচক রায় স্পষ্ট হয়। বিজেপির পশ্চিমবঙ্গে সরকার গঠনের স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়।

নির্বাচনি যুদ্ধে ব্যর্থ হতেই রাজ্য বিজেপিতে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। অন্য দল থেকে ক্ষমতার লোভে যারা দলে ভিড়েছিলেন, তারা আবার ক্ষমতার লোভে বিজেপি ছেড়ে যাচ্ছেন। নেতা-মন্ত্রী-বিধায়ক ঝাঁকে ঝাঁকে বিজেপি কর্মী শাসক দলে ভিড়ছেন। জেলায় জেলায় শুরু হয়েছে বিজেপি ভাঙনের নতুন বনভোজন রাজনীতি।

আদি বিজেপি-নব্য বিজেপি দ্বন্দ্বের পাশাপাশি দলে পদ ধরে রাখতে বিজেপিতে ব্যাপক গণ্ডগোল বেঁধেছে। পদ আর ক্ষমতার লোভে জনবিচ্ছিন্ন বিজেপি নেতাকর্মীদের মধ্যে যে গণ্ডগোল বেঁধেছে, তাতে বিজেপি যে আরও পাতলা হবে, তা এখনই বলে দেয়া যায়। কেননা কোনো আদর্শ বা দেশ সেবার ব্রত নিয়ে বিজেপিতে যাননি ওই সব নেতা। তারা সুবিধাবাদী রাজনীতির অংশ হিসেবে সর্বত্র বিচরণ করেন, যখন যেখানে সুবিধা হয়।

অন্যদিকে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের একাধিক জনবিরোধী নীতি, দেশের কালো টাকা উদ্ধার করে প্রত্যেক নাগরিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১৫ লাখ টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নোটবন্দির সিদ্ধান্ত, কৃষকবিরোধী বিল, করোনা সংকটকালে দেশের পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার বিষয়ে মোদি সরকারের ভূমিকা, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ব্যাংক, বিমাসহ একাধিক সংস্থা বেসরকারি হাতে তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত বিজেপি সম্পর্কে জনগণের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।

একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশের গরিব মানুষের আয় ৫৩ শতাংশ কমে গেছে। সেখানে ধনী সম্প্রদায়ের আয় ৪০ শতাংশ বেড়েছে। স্বৈরতান্ত্রিক বিজেপি সরকারের আমলে কোটি কোটি মানুষ চাকরি হারিয়েছে। মানুষের নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। ভেঙে গিয়েছে খাদ্যনিরাপত্তার শৃঙ্খল। বিজেপির মোদি সরকারের হাতে পড়ে দেশের অর্থনীতির পতন হয়েই চলেছে। বিজেপির ভণ্ডামি ধরা পড়ে গেছে সারা দেশে।

তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে তৃতীয়বারের জন্য সরকার গঠন করে সব ধর্মের মানুষের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে উন্নয়নমূলক প্রকল্প নিয়ে যেভাবে মানুষের দুয়ারে পরিষেবা পৌঁছে দিচ্ছেন, যেভাবে দলের সংগঠনের দায়িত্ব নিজের হাতে রেখে সংগঠন আরও মজবুত ও জনসংযোগ বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছেন, তাতে আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির শক্তি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে বলে মনে হয়।

লেখক : অসিত পুরকায়স্থ – সাংবাদিক, পশ্চিমবঙ্গ।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ