1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

তেইশ’র আশা-জাগানিয়া বাংলাদেশ

ড. আতিউর রহমান : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ১ জানুয়ারি, ২০২৩
তেইশ’র আশা-জাগানিয়া বাংলাদেশ

নববর্ষে দেশের অর্থনীতি নিয়ে যখন লিখতে শুরু করেছি তখনই ২৮ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে স্বপ্নের মেট্রো রেল প্রকল্প উদ্বোধন করা হলো। বহুল আলোচিত এই প্রকল্প উদ্বোধনের পর প্রথম পর্যায়ে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১.৭৩ কিমি চলেছে দ্রুতগামী মেট্রো রেল। আশা করা যায়, বাকি অংশ অর্থাৎ মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রো রেল চলাচলের কাজও অচিরেই শেষ হবে।

আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নাটকীয় মাত্রায় গতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হলেও অনেক ক্ষেত্রেই নগরায়ণের বেলায় টেকসই পরিকল্পনা নিয়ে এগোনো সম্ভব হয়নি।

অথবা টেকসই পরিকল্পনা থাকলেও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন করা যায়নি। এর ফলে অসহনীয় যানজটে জনজীবনে দুর্ভোগ এবং অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি আমাদের জন্য নৈমিত্তিক হয়ে উঠেছে। তুলনামূলক ছোট আকারের শহরগুলোতে কিছুটা পরিকল্পনা নিয়ে এগোনো গেছে বলে এর সুফলও পাওয়া গেছে। রাজশাহী সিটি এর সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হতে পারে। তবে ঢাকার নিত্যদিনের জীবনে দুর্ভোগ নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বেশি। এর নেতিবাচক প্রভাব ঢাকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপরও পড়ছে। এক দশক ধরে বেশ কিছু পরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণ করে ঢাকার সংকটের একটি সুরাহা করার সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ দেখেছি। বেশ কিছু ফ্লাইওভার, ইউলুপ, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হয়েছে। অনেকটির কাজ এখনো চলছে। এই অভিযাত্রায় সর্বশেষ সাফল্যের পালক হিসেবে যুক্ত হয়েছে ঢাকার মেট্রো রেল। ঢাকার যানজট নিরসনে এবং পরিবহন খাতে যথাযথ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় এই প্রকল্পটি বিশেষ সহায়ক হবে বলে সংশ্লিষ্টজনরা আশা করছেন। দিল্লির মেট্রো রেলের ইতিবাচক প্রভাব দেখেই এমনটি হয়তো তাঁরা ভাবেন।

শুধু মহানগরী নয়, পুরো দেশের যোগাযোগ অবকাঠামোতে একটি ব্যাপকভিত্তিক পরিবর্তন নিয়ে আসাটি বর্তমানে ক্ষমতাসীন সরকারের প্রধানতম অগ্রাধিকারের জায়গায় রয়েছে বলে মনে হয়। সেটিই কাম্য। কারণ আমাদের জনগণের যে অমিত অর্থনৈতিক সম্ভাবনা রয়েছে তার বাস্তবায়ন ও বিকাশের পরিবেশ সৃষ্টির দায়িত্ব রাষ্ট্রের। তাই কৃষকের ফসল বাজারজাতকরণ সহজ করা, এমএসএমই উদ্যোক্তাদের কাঁচামাল ও উৎপাদিত পণ্য সরবরাহ যাতে সাশ্রয়ী করা যায়, বৃহৎ শিল্পে বিনিয়োগের ক্ষেত্র যাতে উর্বর হয় তা নিশ্চিত করার দায়িত্বটি সরকারের। আর সে জন্যই চাই যোগাযোগ অবকাঠামোতে ব্যাপকভিত্তিক সরকারি বিনিয়োগ। আমরা একই সঙ্গে দারিদ্র্য বিমোচন এবং প্রবৃদ্ধির চাকাকে গতিশীল দেখতে চাই। শক্তিশালী সড়ক যোগাযোগ এবং পরিবহন নেটওয়ার্ক এ জন্য একান্ত অপরিহার্য। বাড়তি রেল যোগাযোগও সাধারণ মানুষের যাতায়াত, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সরকারের মনোযোগও উভয় দিকেই বলে মনে হয়। এই নীতি-মনোযোগের সুফলও আমরা অচিরেই আরো বেশি করে পেতে শুরু করব বলে ধারণা করা যায়। পদ্মা সেতুসহ দেশব্যাপী যে সেতু নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে তার পাশাপাশি ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে এবং ঢাকায় মেট্রো রেলের মতো প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে এগুলোর ইতিবাচক প্রভাব সরাসরি ভোগ করবে দেশের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ। বাকি দুই-তৃতীয়াংশ জনগণও এগুলোর পরোক্ষ সুফলভোগী হবে। এরই মধ্যে আমরা পদ্মা সেতু ও কালনা সেতুর প্রভাবে দক্ষিণ বাংলার অর্থনৈতিক পুনর্জাগরণের নজির দেখতে পাচ্ছি।

আজ থেকে এক দশক আগেও আমাদের উন্নয়ন ভাবনার মূল জায়গায় ছিল পিছিয়ে থাকা প্রান্তিক ও দরিদ্র নাগরিকরা। তাদের দারিদ্র্য সীমার ওপরে নিয়ে আসাটিই আমাদের প্রধান কাজ ছিল। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও কল্যাণমুখী নীতি বাস্তবায়নের পথে এগোনোর সুবাদে এখন পরিস্থিতি বহুলাংশে উন্নীত হয়েছে। করোনা দুর্যোগে যে আমরা বেশির ভাগ দেশের তুলনায় ভালো করেছি, এটিই আমাদের এই সাফল্যের সবচেয়ে বড় প্রমাণ বলে মনে করি। এ ক্ষেত্রে সাফল্য না থাকায় চীনের অর্থনীতি যেভাবে অনিশ্চয়তার মুখে পড়ছে, তা থেকেই অনুমান করা যায় কভিড মোকাবেলায় বাংলাদেশের নেতৃত্ব কী অসাধ্যই না সাধন করেছে। জীবনকে প্রাধান্য দিয়ে অর্থনীতি পরিচালনার এই নীতি-মনোযোগ বিশ্ববাসী দীর্ঘদিন মনে রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। কাজেই এখন সময় এসেছে আরো বড় স্বপ্ন দেখার এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে উদ্যোগী হওয়ার। মনে রাখতে হবে, আমরা এরই মধ্যে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছি। এবং অল্প সময়ের মধ্যে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নাম লেখাব। উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাখতে সামাজিক সুরক্ষায় মনোযোগ তো দিতেই হবে, একই সঙ্গে বৃহত্তর জনগণের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে অবকাঠামোগত সমর্থনও চাই। আর সেখানেই এই বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর সার্থকতা।

সার্বিক বিচারে ২০২৩ সালটি তাই আশা-জাগানিয়াই হবে বলে মনে হয়। একই সঙ্গে সংবেদনশীল থাকতে চাই আমাদের সামনে থাকা চ্যালেঞ্জগুলোর বিষয়েও। আগেই বলেছি করোনা সংকট মোকাবেলায় আমরা সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছি। তবু প্রবৃদ্ধির গতি কিছুটা কমেছে সংগত কারণে। চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ১ শতাংশ কমিয়ে ফেলা সুবিবেচনাপ্রসূতই বলা চলে, কিন্তু সেখান থেকে উঠে আসার চেষ্টা শুরু করতে না করতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আবারও আরো বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছি আমরা। গোটা বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই সংকটে পড়েছে। ফলে আগের চার-পাঁচ বছরে যে গতিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, আগামী চার-পাঁচ বছরের গতি তার তুলনায় কমই হবে। কিন্তু প্রবৃদ্ধির গতির চেয়ে এখন বেশি মনোযোগ দেওয়া দরকার সংকট থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করার দিকে। আমাদের নীতিনির্ধারকরাও সে পথেই হাঁটছেন বলে মনে হয়। কৃষিকে দুর্যোগকালের রক্ষাকবচ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে কৃষি উৎপাদন আরো বলশালী করার জন্য স্পষ্ট নীতি-উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে। একাধিক টাকা-ডলার বিনিময় হারের জটিলতা সত্ত্বেও প্রবাস আয় প্রবাহ বাড়ানোর সদিচ্ছা দৃশ্যমান। রপ্তানিমুখী শিল্পগুলোর জন্য প্রণোদনাও অব্যাহত থাকছে। বিদেশি মুদ্রা আয়কারী এই দুটো খাতের সক্রিয়তাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখাই কাম্য। তাই এবারও দেখা যাচ্ছে যে প্রবৃদ্ধির গতি আগের চেয়ে কমলেও এখনো বেশির ভাগ অর্থনীতির চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। আর প্রতিটি সংকটই নতুন সুযোগ নিয়ে আসে। ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার জেরে নতুন ধরনের রাজনৈতিক মেরুকরণ ঘটছে বিশ্বমঞ্চে। বাংলাদেশের সামনে তাই নতুন নতুন রপ্তানির বাজারে প্রবেশের সুযোগ এবং নতুন নতুন বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া আন্তর্দেশীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার বাজারগুলোতে বাংলাদেশের যে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, সেটিও নতুন করে সামনে আসছে। এরই মধ্যে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে। সংযোগের উন্নতির কারণে তা আরো বাড়বে বলে আশা করা যায়। বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য পণ্য ও কাঁচামাল সরবরাহেও ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য এখন ঊর্ধ্বমুখী।

এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে আমাদের সামনে সংকট যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে অমিত সম্ভাবনাও। সম্ভাবনাগুলোকে বাস্তবে রূপ দিতে পারলে সংকট মোকাবেলা খুব কঠিন হওয়ার কথা নয়। স্বাধীনতার পর থেকেই আমরা বারবার বড় ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সফল হয়েছি। এ শতাব্দীর শুরুর দশকের শেষভাগে যে বৈশ্বিক আর্থিক খাতের সংকট দেখা দিয়েছিল ওই সময় তো আমরা সফলতার সঙ্গে সংকট মোকাবেলা করে প্রবৃদ্ধির চাকাকে আরো গতিশীল এবং আরো বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে সক্ষম হয়েছিলাম। ফলে সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিয়ে সাফল্যের সঙ্গে সংকট মোকাবেলার ট্র্যাক রেকর্ডও আমাদের রয়েছে। আর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার পথনকশা দাঁড় করিয়ে সেই পথে কার্যকরভাবে এগিয়ে যাওয়ার মতো নেতৃত্বও আমাদের রয়েছে। অতীতে যেমন সুশাসনের চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও আমাদের অর্থনীতির গতিময়তা ধরে রাখতে পেরেছিলাম, এবারেও তার ব্যত্যয় ঘটবে বলে মনে হয় না। কেননা আমরা আমাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও ভোগের শক্ত পাটাতন গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছি। আর আছে জনগণের চির-উদ্ভাবনী আত্মশক্তি। ফলে সব মিলিয়ে নতুন বছরের শুরুটা নতুন করে আশাবাদী করছে আমাদের সবাইকে। সংকট মোকাবেলা করে এগিয়ে যাওয়ার এই আত্মবিশ্বাস চির-জাগরূক থাকুক।

লেখক : ড. আতিউর রহমান – বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ

নির্বাচিত

‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ শিরোনামের ডকু-ড্রামায় প্রধানমন্ত্রী আসলে কোথায়?

ছিনিয়ে আনলাম স্বাধীনতা : সাজ্জাদ হোসেন সাখাওয়াত

ছিনিয়ে আনলাম স্বাধীনতা : সাজ্জাদ হোসেন সাখাওয়াত

বিশ্বসেরা গবেষকদের তালিকায় স্থান পেলেন শাবির ৮৫ শিক্ষক

ফারুকী হত্যা মামলায় মুফতি ইব্রাহীমের জামিন নাকচ 

জয়পুরহাটে পানিফল চাষে লাভবান চাষিরা

বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে বিআইডব্লিউটিএ’র কন্ট্রোল রুম ও হটলাইন চালু

পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় গুরুত্ব পাচ্ছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও দক্ষতা

অনলাইনে পেনশন তুলতে পারবেন বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা

দেশের হাসপাতাল এবার ব্রিটিশ স্থাপত্য পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকায়

বিএনপির এমপিরা পদত্যাগ করলেই কি!