1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভাবনায় নতুন বছর

অধ্যাপক ড. কানন পুরকায়স্থ : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২৩

২০২৩ সালের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে লিখতে বসে প্রথমে কার্ল সাগানের কথা মনে পড়ে। কারণ সাগান তাঁর ‘Pale Blue Dot’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ‘Science cuts two ways, of course; its product can be used for both good and evil. But there is no turning back from science. The early warning about technological dangers also come from science .’ সাগানের এই উক্তি সংগত কারণেই আমাদের ভাবনাকে জাগিয়ে তোলে। আমরা ভাবি, আগামী দিনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কি মানবসভ্যতার উপকারে আসবে? এর উত্তর খুঁজতে প্রথমে জানা প্রয়োজন বিগত বছরের বিজ্ঞান গবেষণার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালে আমরা কী ধরনের উদ্ভাবন আশা করতে পারি।

চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায় সাইকিডেলিক বা চিত্তপ্রভাবী ওষুধের আবিষ্কার, যা পিটিএসডি (Post Traumatic Stress Disorder) রোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে।

এ ধরনের ওষুধের মধ্যে একটি হলো সিলোসাইবিন (Psilocybin)| যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন (FDA) এ ধরনের কয়েকটি ওষুধের অনুমোদন এরই মধ্যে দিয়েছে। কিন্তু এ ধরনের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সন্দেহ রয়েছে।
করোনাভাইরাসের বিভিন্ন রূপ (variant) এরই মধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে। এই বিভিন্ন রূপকে টার্গেট করে ভ্যাকসিন তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। ২০২৩ সালে নাসিকায় বা কণ্ঠনালিতে স্প্রের মাধ্যমে বিভিন্ন রূপের ভিত্তিতে কভিড রোগের ভ্যাকসিন প্রদান করা হবে বলে আশা করা যায়।

লিউকেমিয়া রোগকে সাধারণত কেমোথেরাপি এবং অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে নিরাময় করা হয়। এখন CRISPR পদ্ধতিতে জিন সংস্করণের মাধ্যমে লিউকেমিয়া রোগের চিকিৎসা প্রদান শুরু হয়েছে। উল্লেখ্য,

CRISPR হচ্ছে ‘Clustered Regularly Interspaced Short Palindromic Repeats’. এটি জিনোম সংস্করণের একটি প্রযুক্তি। ২০২২ সালে লন্ডনের গ্রেট ওরমন্ড স্ট্রিট হাসপাতালে এ ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতির সাফল্য উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া বিভিন্ন জিনসংক্রান্ত রোগের ক্ষেত্রে ২০২৩ সালে ঈজওঝচজ পদ্ধতির ব্যবহার লক্ষ করা যাবে।

বিষম প্রতিস্থাপন পদ্ধতি (Xenotransplant) ব্যবহার করে অন্যান্য প্রাণীর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ; যেমন—শূকরের হৃৎপিণ্ড মানুষের দেহে প্রতিস্থাপন করার চেষ্টা বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন। যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করে দুজন মস্তিষ্ক মৃত (brain dead) মানুষের মধ্যে রক্ত সঞ্চালন করা সম্ভব হয়েছে। ২০২৩ সালে এ ধরনের গবেষণার অগ্রগতি দেখা যাবে।

এদিকে স্নায়ুবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে চলছে নানা গবেষণা। মানুষের চেতনার উৎস মস্তিষ্কের কোথায়? মস্তিষ্কের স্নায়ু বা নিউরনের সঙ্গে চেতনার সম্পর্ক আছে কি? মনের বিভিন্ন অবস্থায় নিউরনের চিত্র (neuro-imaging) বিশ্লেষণ করে তা থেকে চেতনার উৎস সম্পর্কে জানা যায় কি না, তা নিয়ে আরো গবেষণা লক্ষ করা যাবে ২০২৩ সালে। এদিকে ডেভিড চালমার জানিয়েছেন, ‘If we understand consciousness, we will understand ourselves a whole lot better.’ অন্যদিকে প্রাণরসায়নবিদ ক্রিস্টভ কচ আশা করেন যে আমরা অচিরেই ‘neural correlate of consciousness’ সম্পর্কে জানতে পারব।

২০২৩ সালে মহাকাশবিজ্ঞানে নতুন নতুন আবিষ্কার আশা করা যায়। স্পেস এক্স নামের বৃহৎ আকারের রকেট পর্যটক নিয়ে মহাশূন্যে ভ্রমণ করবে ২০২৩ সালে। এরই মধ্যে ১২০ মিটার উঁচু এই মহাকাশযানের পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। মহাশূন্য পর্যটকরা চাঁদের আশপাশে ভ্রমণ করে আবার পৃথিবীতে ফিরে আসবে বলে আশা করা যায়।

২০২৩ সালে দুটি মহাকাশযান পাঠানো হবে আমাদের সৌরমণ্ডলে। এই মিশনের উদ্দেশ্য হচ্ছে বৃহস্পতির বরফ আচ্ছাদিত তিনটি চাঁদ—ইউরোপা, কেলিস্টো ও রানিমেড সম্পর্কে অন্বেষণ করা। এই প্রকল্পের নাম Jupiter Icy moons explorer (Juice) । এই সৌরমণ্ডলের বসবাসযোগ্য অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য কী, তা খতিয়ে দেখা এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। বৃহস্পতির চাঁদে প্রাণের সন্ধান পাওয়া যায় কি না, তা অনুসন্ধান করাও এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ‘Hospitability in our solar system is still a huge mystery’. ২০২৩ সালে Psyche নামের মহাকাশযান নাসা প্রেরণ করবে ১৬ Psyche নামের গ্রহাণুতে। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে গ্রহাণুর উপাদান বিশ্লেষণ করা। কারণ গ্রহাণুর উপাদান ও চৌম্বক ক্ষেত্র বিশ্লেষণ করে জানা যাবে কিভাবে আমাদের সৌরমণ্ডলে পাথরের মতো গ্রহ সৃষ্টি হলো। এদিকে নাসার Osiris-Rex মহাকাশযান অন্য গ্রহাণুর নমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে ফিরে আসবে ২০২৩ সালে। গ্রহাণুর গঠনশৈলী বিশ্লেষণ আগামী দিনে অন্যান্য গ্রহের উৎস সন্ধানে সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়।

গত জুলাই মাসে জেমস ওয়েভ মহাকাশ দুরবিন থেকে মহাশূন্যের নানা চিত্র পাওয়া যায়। জ্যোতির্বিদরা মহাকাশে WASP-96b নামে এক বহিঃগ্রহের সন্ধান পান (exoplanet) , যা পৃথিবী থেকে ১১৫০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। জেমস ওয়েভ মহাকাশ দুরবিন থেকে আরো নতুন চিত্র ২০২৩ সালে আশা করা যায়। এই দুরবিন আগামী দিনে গভীর মহাকাশের নানা রহস্য উদঘাটন করবে।

মহাকর্ষ তরঙ্গ শনাক্ত করার মাধ্যমে মহাবিশ্বের কোথাও প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে কি না, তা LIGO বা Laser Interferometer Gravitational Wave Observatory -এর মাধ্যমে শনাক্ত করার গবেষণা চলছে। আশা করা যায়, এই প্রকল্প থেকে নতুন উপাত্ত পাওয়া যাবে ২০২৩ সালে।

বিকল্প জ্বালানির সন্ধানে ফিউশন শক্তি নিয়ে গবেষণা অব্যাহত রয়েছে। ২০২২ সালে অক্সফোর্ডে Joint European Torus Re-actor -এ সামান্য সময়ের জন্য অতি তাপমাত্রার প্লাজমা তৈরি করা সম্ভব হয়েছে, যা থেকে শক্তির পরিমাণ ৫৯ মেগাজুল। তা ছাড়া ফ্রান্সে

ITER, সুইজারল্যান্ডে TCV রি-অ্যাক্টর, দক্ষিণ কোরিয়ায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের লরেন্স লিভারমুর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে ফিউশন জ্বালানি নিয়ে গবেষণা চলছে। জানা যায়, দক্ষিণ কোরিয়ার রি-অ্যাক্টর থেকে ৩০ সেকেন্ডের জন্য ১০০ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপ সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে। ফিউশন জ্বালানির ক্ষেত্রে অনেকে মনে করেন, ‘It seems the question now is not whether fusion will work, but who will get there first. ’ ২০২৩ সালে আমরা এ ক্ষেত্রে আরো অগ্রগতি দেখব।

কম্পিউটারের জগতে কোয়ান্টাম কম্পিউটার নতুন বিপ্লবের সূচনা করেছে।

২০২৩ সালে যোগাযোগ, কম্পিউটিং, কোয়ান্টাম সেনসিং ও সিমুলেশনের ক্ষেত্রে কোয়ান্টাম প্রযুক্তির ব্যবহার সীমিত পরিসরে লক্ষ করা যাবে। এরই মধ্যে সাইবার নিরাপত্তা ও কোয়ান্টাম টেলিপরটেশনের ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তির ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩ সালে এই প্রযুক্তির সর্বজনীন ব্যবহারের জন্য সাইবার নিরাপত্তার অবকাঠামো তৈরির কাজ শুরু হবে। এরই মধ্যে ফিনল্যান্ডে কোয়ান্টাম কম্পিউটার HELMI-এর সঙ্গে সুপার কম্পিউটার LUMI যুক্ত করা হয়েছে। এ ধরনের সংকর কম্পিউটারের ব্যবহার নিয়ে চলছে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা।

এই মহাবিশ্বে প্রাণের উৎস সন্ধানে গবেষণা অব্যাহত আছে। ধারণা করা হয় যে কয়েক মিলিয়ন বছর আগে তেজস্ক্রিয় উল্কাপিণ্ডের মাধ্যমে আমাদের সৌরমণ্ডলে কিছু রাসায়নিক পদার্থ; যেমন—অ্যামাইনো এসিডের সৃষ্টি হয়, যা থেকে প্রাণের সৃষ্টি। কিন্তু অ্যামাইনো এসিড কিভাবে সৃষ্টি হলো, তা নিয়ে চলছে গবেষণা। ধারণা করা হয় যে গামা রশ্মির মাধ্যমে এই রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটিত হতে পারে। নাসার গডার্ড স্পেস সেন্টার জানিয়েছে, বিলিয়ন বছর আগে যে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে অ্যামাইনো এসিড সংশ্লেষিত হয়েছিল, তা জানতে আমাদের আরো সময় লাগবে।

সর্বোপরি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি থেমে নেই। এই সভ্যতা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সভ্যতা। কার্ল সাগানের আরেকটি উক্তি মনে পড়ছে। সাগান তাঁর ‘Cosmos’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘Imagination will often carry us to worlds that never were, but without it we go nowhere.’ মানুষের কল্পনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে সচল রাখবে প্রতিনিয়ত। তাই ২০২৩ সালে আমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নতুন নতুন আবিষ্কারে সমৃদ্ধ হব, তাতে সন্দেহ নেই।

লেখক : ড. কানন পুরকায়স্থ – বিজ্ঞান ও পরিবেশ বিষয়ক উপদেষ্টা ও অধ্যাপক, যুক্তরাজ্য


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ