1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

হাসিনার সামনে নতুন ইতিহাস সৃষ্টির হাতছানি

আবদুল মান্নান : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২৩

পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একটি নতুন স্বাধীন জাতি রাষ্ট্র সৃষ্টি করে নিজের নাম ইতিহাসে অমর করে গেছেন। এখন কন্যা শেখ হাসিনার সামনে আরেক ইতিহাস সৃষ্টির হাতছানি; যদিও সেই ইতিহাস এরই মধ্যে সৃষ্টি হয়ে গেছে। একটানা তিন মেয়াদে দেশের প্রধানমন্ত্রী থাকার গৌরবের পালকটা এখন তাঁর মাথায়। ২০২৩ সালের ৭ জানুয়ারি তিনি এই মেয়াদের শেষ বছরে পদার্পণ করবেন। সব ঠিক থাকলে সামনের বছর জানুয়ারি মাসে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে একটি নতুন সরকার আসার কথা রয়েছে এবং টানা তিন মেয়াদের খাতা মূল্যায়ন করলে সামনের নির্বাচনেও আগের ধারাবাহিকতায় জনগণের রায়ে শেখ হাসিনার আবার সরকার গঠনের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। যদিও এক বছর ধরে সেনাশাসক জিয়ার দল বিএনপি তার মিত্রদের নিয়ে শেখ হাসিনাকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে ফেলার নিয়মিত হুমকি দিয়ে আসছে। একজন সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা, যিনি এখন নিজে একটি দল খুলে তাঁর সভাপতি হয়েছেন, তিনি এক বছর ধরে ক্যারম খেলার ভাষায় নিয়মিত বলে বেড়ান টোকা দিলেই শেখ হাসিনার সরকার পড়ে যাবে। ,

শেখ হাসিনা সরকারকে অসাংবিধানিকভাবে হটাতে বিএনপি তো চেষ্টা করছেই; তাদের সঙ্গে ডজনখানেক ওয়ান ম্যান পার্টি ছাড়াও যথারীতি গাঁটছড়া বেঁধেছে একাত্তরের ঘাতকদের দল জামায়াত আর বাম ঘরানার দলগুলো। প্রশ্ন উঠতে পারে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনা ও তাঁর নেতৃত্বাধীন দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার ব্যাপারে আমি কেন এত আশাবাদী? আশাবাদী এই কারণেই যে ধারাবাহিকভাবে শেখ হাসিনার তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার কারণে দেশের ও জনগণের যে উন্নতি ও পরিবর্তন হয়েছে তা আগের কোনো সরকারের আমলে দেখা যায়নি। এই সত্যটি স্বীকার করে নেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের সমর্থক হওয়ার কোনো দরকার নেই। এই দফার প্রথম মেয়াদে শেখ হাসিনা তাঁর শাসনামলের দুই মাসের মাথায় প্রথম যে ভয়াবহ ধাক্কাটা সামাল দিতে হয়েছিল, তা ছিল বিডিআর বিদ্রোহ। তিনি সেই ধাক্কাটা অনেক সাহসের সঙ্গে মোকাবেলা করেছিলেন। যাঁরা এই বিদ্রোহের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাঁদের যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচার হয়েছে।

শেখ হাসিনার দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে বিএনপি জিগির তুলল ২০১৪ সালে অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক বাতিল ঘোষিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন না হলে তারা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবে না; যা সাংবিধানিকভাবে সম্ভব ছিল না। প্রয়োজনে একটি দেশের সংবিধানের কোনো ধারার ব্যাখ্যা দেওয়ার অধিকার একমাত্র দেশের সর্বোচ্চ আদালতের। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধান থেকে বাতিল করে তা তাঁরা দিয়েছেন। এই ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচন তখনো সম্ভব ছিল না, এখনো নেই। শেখ হাসিনা পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানালেন বিএনপিসহ সংসদে অন্যান্য দলকে নিয়ে তিনি নির্বাচনকালীন একটি সর্বদলীয় সংসদ গঠন করবেন। তিনি খালেদা জিয়াকে এমনও বললেন, বিএনপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ যে কয়টি মন্ত্রণালয় চায় তা তাদের দেওয়া হবে। টেলিফোনে তিনি খালেদা জিয়াকে গণভবনে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য আমন্ত্রণ জানালেন। খালেদা জিয়া শেখ হাসিনার সঙ্গে অত্যন্ত অসৌজন্যমূলক আচরণ করে তাঁর প্রস্তাব নাকচ করে জামায়াত-শিবিরকে সঙ্গে নিয়ে সারা দেশে অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেন। সেই দফায় অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার হয়ে প্রায় ৪০০ নিরীহ মানুষ মৃত্যুবরণ করেন আর কয়েক শ কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস করা হয়। ২০১৪ সালের ৪ জানুয়ারি বিএনপির বয়কটের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং শেখ হাসিনা আবার সরকার গঠন করতে সক্ষম হন। সেই নির্বাচন বয়কট করা ছিল বিএনপির জন্য একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত, যা তাদের অনেক নেতা এখন স্বীকার করেন।

২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি যোগ দিয়েছিল, তবে তাদের দুর্ভাগ্য, তাদের নিজস্ব কোনো যোগ্য নেতা ছিল না। ধার করে তারা ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে এসেছিল। এটা মানতেই হবে ড. কামাল হোসেন একজন প্রথিতযশা আইনজীবী, তবে প্রচলিত অর্থে রাজনীতিবিদ নন। তাঁর রাজনৈতিকজীবন শুরু বঙ্গবন্ধুর ছায়াতলে আর তার মৃত্যুও হয় বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর। ড. কামাল হোসেন হয়তো সরল বিশ্বাসে সেবার বিএনপির নির্বাচনকালীন নেতার দায়িত্ব হাতে নিয়েছিলেন। বাস্তবে তিনি একটি প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়েছিলেন। তিনি বুঝতে পারেননি তাঁকে সামনে রেখে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা মনোনয়ন বাণিজ্য করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেবেন। সেবার ড. কামালের নেতৃত্বে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রায় ২০ জন জামায়াত প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। কোনো কোনো নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির একাধিক প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু তাঁদের কোনো এজেন্ট বা এমনকি কোনো পোস্টারও ছিল না। সেই নির্বাচনে যা হওয়ার তা-ই হয়েছিল।

শেখ হাসিনার চলমান মেয়াদে যত না ছিল অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ তার চেয়েও বেশি ছিল বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ; যা মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে তিনি যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি যখন দেশের সার্বিক অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে নজর দিয়েছেন, ঠিক সেই সময় বিশ্বে আঘাত হানল করোনা মহামারি। মাস দুয়েকের মধ্যেই অচল হয়ে গেল তামাম বিশ্ব। অর্থনৈতিক স্থবিরতা আর মন্দা দেখা দিল দেশে দেশে, বাংলাদেশও বাদ গেল না। এক শ্রেণির সুধী আর সরকারবিরোধীে রাজনীতিবিদ দেশের মানুষকে আগাম জানিয়ে দিলেন, এই করোনার কারণে দেশের রাস্তাঘাটে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হবে শ্রেফ চিকিৎসার অভাবে। কিন্তু শেখ হাসিনার আগাম প্রস্তুতির কারণে তা হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, যে কয়টা দেশ এই মহামারি মোকাবেলায় সফল হয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আর তার জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে তার প্রাপ্যটুকু না দিলে চরম অন্যায় হবে।

করোনার ভয়াবহতা শেষ না হতেই শুরু হলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। বিশ্বায়নের এই যুগে যুদ্ধের মতো একটি প্রাণঘাতী কর্মকাণ্ড যেখানেই শুরু হোক না কেন, তার রেশ বিশ্বের যেকোনো দেশে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে লাগতে বাধ্য। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হলো না। দেশ-বিদেশে পরিবহন ভাড়াসহ অন্যান্য কাঁচামালের মূল্যও বৃদ্ধি পেল। এর ফলে দেশে সব ধরনের আমদানীকৃত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পেল। দেশে ডলার সংকট দেখা দিল, রিজার্ভে টান পড়ল। সরকারের বিরোধী পক্ষ এ নিয়ে কম হৈচৈ করল না। তারা বুঝেও না বোঝার ভান করে এই বলে বেড়াল যে এই সংকট শুধু বাংলাদেশের একার এবং এর ফলে বাংলাদেশ অচিরেই দেউলিয়া হয়ে যাবে। তবে তাদের হতাশ হতে হলো সরকারের আমদানি ও ব্যয়নীতি পরিবর্তনের ফলে।

বর্তমান সরকারের শুরুতে ডজনখানেক মেগাপ্রকল্প হাতে নেওয়া হয়, যার বেশ কয়েকটি এরই মধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। পদ্মা সেতু ও ঢাকায় মেট্রো রেল প্রকল্প জনগণের জন্য উদ্বোধন করা হয়েছে। এই সরকারের আরেকটি চোখ-ধাঁধানো প্রকল্প হচ্ছে কর্ণফুলী টানেল, যা উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে। বর্তমান সরকারের আমলে দেশের মানুষ তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হতে দেখেছে। দেখেছে মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি আর দেশের বয়স ৫০ হওয়ার আগেই বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হতে।

নির্বাচনের বছরে পা রেখে আওয়ামী লীগকে কিছু বিষয় নিয়ে নতুন করে চিন্তা করতে হবে। প্রথমটা হচ্ছে যোগ্য মানুষকে যথাস্থানে পদায়ন করা, যা অনেক ক্ষেত্রে বর্তমানে অনুপস্থিত। আওয়ামী লীগের অর্জনগুলো দলের নেতাকর্মীরা জনগণের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারেন না। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সঠিকভাবে মূল্যায়িত হন না। সঙ্গে যোগ হয়েছে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, যা যেকোনো দলের জন্যই মারাত্মক ক্ষতিকর। অনেক স্থানে দল থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের সঙ্গে স্থানীয় জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। এদিকে নজর দেওয়া খুবই জরুরি। বলা হয়ে থাকে, শেখ হাসিনা সব সমস্যার সমাধান দেবেন। তা কেন হবে? তাই যদি হয়, তাহলে সরকারের এত এত নেতা কী করেন—এমন প্রশ্ন তো করা যেতেই পারে। বুঝতে হবে বিএনপি আর একাত্তরের ঘাতক দল জামায়াত বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে এক হয়ে আবার দেশটাকে এক অন্ধকার যুগে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের সহায়তা দিচ্ছে দেশের ভেতরের ও বাইরের কিছু শক্তি। সুতরাং আগামী এক বছর সরকারি দলকে অনেক বেশি কুশলী হতে হবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশকে যে উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, তাঁকে জাতীয়ভাবে অভিনন্দন জানানো উচিত। বর্তমান সরকারের আগামী এক বছর শান্তিতে কাটুক জনগণের এটাই একমাত্র প্রত্যাশা।

 

লেখক : আবদুল মান্নান – বিশ্লেষক ও গবেষক।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ