1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের অপেক্ষায় বাংলাদেশ

অলোক আচার্য : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৩

সদ্য সমাপ্ত বছরে যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। প্রথমে পদ্মাসেতু এবং বছরের শেষে মেট্রোরেল চালু এবং তার মধ্যে বিভিন্ন সড়ক, মহাসড়ক, সেতু, এক্সপ্রেসওয়ে চালু হওয়া বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় দৃশ্যমান পরিবর্তন করেছে। এখন বাংলাদেশ দেখার অপেক্ষায় বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের। আমাদের ভেতর একটি আত্মবিশ্বাস এসেছে। আমরা একটি দুরদর্শী নেতৃত্বে এগিয়ে চলেছি। সমালোচনা, বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রতিকূল পরিস্থিতি, রাজনীতি সবকিছু সামাল দিয়েই জাতির সামনে একের পর এক উন্নয়নের নির্দশন তৈরি করেছে আওয়ামীলীগ সরকার। তার আর একটি নিদর্শন হলো বঙ্গবন্ধু টানেল। আমরা এখান থেকে আরও বহুদূর অগ্রসর হবো। ইতিমধ্যই এর বেশিরভাগ নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই টানেল শুধু চট্রগ্রামের জন্যই নয়, সারা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। দেশের অন্যতম প্রধান আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্রসমূহ কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, বান্দরবান প্রভৃতি স্থানে পর্যটকের বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। যে নদী চট্টগ্রামে দীর্ঘ সেটি কর্ণফুলী এবং চট্রগ্রাম হলো দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহর ও বাণিজ্যিক রাজধানী। দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম গতি পায় এই শহরকে কেন্দ্র করেই। দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালিত হয় এবং এখানে অবস্থিত সমুদ্রবন্দর দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। কর্ণফুলী নদী ১৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে পার্বত্য চট্রগ্রাম ও চট্রগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। এছাড়াও চট্রগ্রামের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় পণ্যের কাঁচামাল আনা নেওয়া, ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি বৃদ্ধি পাবে যা দেশের জিডিপিতে অবদান রাখবে। গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কর্ণফুলী টানেল বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র আন্ডারওয়াটার টানেল। ৯.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেলটির নদীর তলদেশের অংশের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩.৫ কিলোমিটার। ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যৌথভাবে এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্থ স্থাপন করেন। এই টানেলের মাধ্যমেই সংযুক্ত হয়ে গড়ে উঠবে ওয়ান সিটি, টু টাউন অর্থাৎ এক নগর দুই শহর। এটি রয়েছে চীনের সাংহাইয়ে। আর এখন আমাদের দেশে। সুতরাং গর্ব আমরা করতেই পারি।

আমরা তো প্রায় শূণ্য থেকেই স্বাধীনতার পর যাত্রা করেছিলাম। পাকিস্তানীরা আমাদের দেশের রাস্তাঘাট, অবকাঠামো এমনকি মেধাবী মানুষগুলোকেও পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছিল। সেখান থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে আস্তে আস্তে ঘুরে দাড়ায় বাংলাদেশ। এটাই সেই বাংলাদেশ। এগিয়ে চলার অদম্য বাংলাদেশ। স্বাভাবিকভাবেই পদ্মাসেতু ও মেট্রোরেলের মতোই এটি কেবল যোগাযোগ ব্যবস্থায় গতি আনবে না নানাবিধ শিল্পকারখানা হবে যা কর্মসংস্থানে গতি আনবে। আর সময় তো বাঁচবেই। এখন যমন মেট্রোরেলে উত্তরা থেকে আগারগাঁও যেতে মাত্র ১০ মিনিট ১০ সেকেন্ড সময় লাগছে, এই টানেল চালু হলে কর্ণফুলী নদী পার হতে সময় লাগবে মাত্র ৫ থেকে ৬ মিনিট যা বাংলাদেশের যোগাযোগ্য ব্যবস্থায় সত্যিই এক অত্যাধুনিক এবং সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যেও অনন্য অর্জন যা বর্তমান সরকারের সুচিন্তিত এবং পরিকল্পিত নিষ্ঠার ফল। চট্টগ্রামের মানুষ তো বটেই দেশের জনগণ এর সুযোগ সুবিধা ভোগ করবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের মাইলফলক হিসেবে স্বপ্নের মেট্রোরেল চালু হয়েছে। স্বপ্নের পদ্মাসেতুর পর মেট্রোরেল, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শতাধিক সেতু, রাস্তার উদ্বোধন- এক কথায় ২০২২ সালে যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। পদ্মাসেতুর পর গণমানুষের আগ্রহ ছিল মেট্রোরেল নিয়ে। এখন অপেক্ষা বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্ভোধনের। সেই স্বপ্নও দ্রুতই পূরণ হবে। এই টানেল কেন্দ্রকে করে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে গড়ে উঠছে নতুন নতুন শিল্প কারখানা। গড়ে উঠছে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ছোট-বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ফলে বৈশ্বিক মন্দার আভাসে চলতে শুরু করা এই বছরে টানেলটি অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করবে।

ইতিমধ্যই মেট্রোরেলের মতো একটি আধুনিক যানবাহন ব্যবস্থা চালু হওয়ায় ঢাকা শহরের আধুনিক মর্যাদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানে জীবন ব্যবস্থা বদলাতে শুরু করেছে। প্রতিদিনের যানজট থেকে মানুষ মুক্তি পেয়েছে। মেট্রোরেলকে কেন্দ্র করে অর্থনীতি গতিশীল হচ্ছে। ঠিক যেভাবে পদ্মাসেতু দক্ষিণের জীবনচিত্র সহ সারা দেশের চিত্রই পাল্টে দিচ্ছে। বঙ্গবন্ধু টানেলটিও সেরকমই হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো একটি দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, উপযুক্তকরণ এবং টেকসই করা। অর্থাৎ কোনো দেশের উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা সেদেশের অর্থনীতিতে সরাসরি প্রভাব বিস্তার করে। পিছিয়ে থাকা অঞ্চল বলতে সাধারণত সেসব অঞ্চলকে বোঝানো হয় যেসব অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো নয়। সঠিক সময়ে পৌছানো যায়, সুবিধামতো সময়ে পণ্য পরিবহণ করা যায় না, শিল্প কারখানা গড়ে ওঠার অনুকূল পরিবেশ থাকে না এবং এসব কারণে বেকারত্বের হারও থাকে বেশি। এখন দেখা যাবে, টানেল সংলগ্ন এলাকাগুলো আগের চেয়ে বেশি অবকাঠামো গড়ে উঠবে। আধুনিক সুযোগ সুবিধা যোগ হবে। কারণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং অবশ্যই দ্রুতগতি। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন তা সে শহর বা গ্রাম হোক আওয়ামী লীগের ক্ষমতায়নের সময়কালে যোগাযোগ ক্ষেত্রে বিপ্লব সাধিত হয়েছে বলা যায়। বড় বড় সব কর্মপরিকল্পনা যা আওয়ামীলীগ সরকার সম্পূর্ণ করে দেখিয়েছে। যমুনা সেতু, পদ্মা সেতু, মধুমতি সেতু, মহাসড়কের উন্নয়ন, গ্রামে-গঞ্জে পাকা রাস্তা হওয়া, বঙ্গবন্ধু টানেল টানেল, মেট্রোরেলসহ যোগাযোগ ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালীকরনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

২০৪১ সালে আজকের বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করার প্রচেষ্টায় অগ্রসর হচ্ছেন। সেই দেশ হবে স্মার্ট ডিজিটাল একটি দেশ। আমাদের শিক্ষা, অর্থনীতি সবকিছু হবে ডিজিটাল এবং স্মার্ট। এর মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থাও রয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌপথ চলাচল হবে ঝুঁকি ও ঝামেলামুক্ত। অর্থাৎ স্মার্ট যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। মানুষের প্রতিদিনের একটি বড় সময় কাটে যানবাহনে, যাতায়াতে। প্রতিদিন ঘর থেকে অফিস বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা অন্য কোনো কাজে ছুটছে মানুষ। এটি করতে গিয়ে সময়ে অপচয় হচ্ছে, নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে। একাধিকবার বাগ-বিতন্ডায় বাস থেকে যাত্রীকে ফেলে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখতে শুরু করেছি সেখানে এসব চিত্র থাকবে না। যোগযোগ ব্যবস্থা অর্থনৈতিক উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু। এটা যখন চালু হবে তখন চট্টগ্রাম কেন্দ্র করে ব্যবসা বাণিজ্যে গতি আসবে। অনেক মানুষের আয়ের পথ হবে। সময়ের অপচয় হবে না। কাজগুলো সঠিক সময়েই করা সম্ভব হবে। অর্থাৎ এখানেও অর্থনীতি লাভবান হবে। মানুষের জীবন সহজ হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে এগিয়ে যাওয়ার একটি দেশের চিত্র আমাদের সামনে। এর মূলে রয়েছে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। এই দুরদর্শী চিন্তাচেতনাই নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশকে একটি উন্নত স্মার্ট রাষ্ট্রে পরিণত করবে। পদ্মাসেতু, মেট্রোরেলের পর বঙ্গবন্ধু টানেল তার একটি অন্যতম উদাহরণ হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন অপেক্ষা করে আছে বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের সেই মাহেন্দ্রক্ষণের। খুব শীঘ্রই স্বপ্নের এই বাস্তবায়ন হবে। আর এজন্য জাতি হিসেবে আমরা গর্বিত। একটি ঐক্যবদ্ধ এগিয়ে চলা জাতির জন্য আমরা গর্বিত।

লেখক : অলোক আচার্য – কলামিষ্ট


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ