1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবই নিয়ে ভিত্তিহীন ও অমূলক অভিযোগ

শামীম আহমেদ জিতু : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৩

সপ্তম শ্রেণির জীববিজ্ঞানের (অনুসন্ধানী পাঠ) একটি বই নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। সমালোচনা হচ্ছে তার মূল কারণ প্রথম আলো একজনের ব্যক্তিগত মতামতকে ‘সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বই : হুবহু চুরি আর গুগলের অনুবাদে শিক্ষার্থীরা কী শিখবে?’ নামক আপত্তিকর শিরোনামে তাদের পত্রিকায় ছেপে দিয়েছে। বই নিয়ে মূল সমালোচনা হচ্ছে জীববিজ্ঞানের এই বইটির অনেক ধারণা ইংরেজি উৎস থেকে সরাসরি গুগল ট্রান্সলেটে অনুবাদ করে বইটিতে ছাপিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং সেখানে মূল উৎস বা লেখকের কোনো রেফারেন্স দেওয়া হয়নি। জীববৈচিত্র্য কি এই বিষয়টির সংজ্ঞা তো প্রতিষ্ঠিত। সেটি যখন সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য বইতে উল্লেখ করা হবে তখন সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও প্রতিষ্ঠিত সংজ্ঞাটিই তুলে ধরা হবে। আমাদের স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে কখনোই কোনো রেফারেন্স দেওয়া হয় না। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসাইনমেন্ট লেখার আগ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের রেফারেন্স লেখা শেখানোর প্রচলন পৃথিবীর কোথাও আছে এমনটাও শুনিনি।

সমালোচকদের বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে, জীববৈচিত্র্য কী এই ধরনের বিষয়ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য আবার নতুন করে অথবা ভাষা পরিবর্তন করে লিখতে হবে। যা অযৌক্তিক এবং অগ্রহণযোগ্য একটি ভাবনা। বিজ্ঞানের মৌলিক বিষয়গুলো যেমন আছে, যতোটুকু সত্য- শিক্ষাবিদরা সেটিই স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য তুলে দেবেন। তাতে পরিবর্তন, পরিবর্ধন বরঞ্চ পরিত্যাজ্য। এখন রেফারেন্স দেয়ার দাবি যদি আসে, তাহলে বইয়ের শেষে সেটি ভবিষ্যতে সংযুক্ত করা যেতে পারে। কিন্তু সারা বিশ্বের প্রচলিত ধারা অনুযায়ী আমিও মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের আগে তার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। গুগল ট্রান্সলেটর ব্যবহার করে অনুবাদের বিষয়টি তখনই প্রশ্নবিদ্ধ হতো যদি সেটি নিম্নমানের হতো। অনুবাদও গ্রহণযোগ্যই মনে হয়েছে।

আমি ব্যক্তিগতভাবে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় যে গুণগত পরিবর্তন আশা করেছিলাম গত ১৪ বছরে তার সবটুকু বাস্তবায়িত হয়নি। সৃজনশীলতার নামে এমন সব প্রশ্ন করা হয় যা শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের উন্মেষে কোনো ভূমিকা রাখে না। আমি আশা করেছিলাম আওয়ামী লীগের ১৪ বছরে ইংরেজি মাধ্যম, বাংলা মাধ্যম, মাদ্রাসা মাধ্যম ইত্যাদিতে আরও সমন্বয় আসবে, ততটা এখনও আসেনি। কিন্তু এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে মুখস্তবিদ্যার প্রকোপ কমেছে। বিবর্তনবাদ, নারীর অধিকার, ধর্ম নিরপেক্ষতা নানা বিষয়ের সংশ্লেষ ঘটছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায়।

সপ্তম শ্রেণীর বইটি নিয়ে এই অতি উৎসাহীদের কর্মকাণ্ডের মূল কারণ আমার মনে হয়েছে মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের সংশ্লিষ্টতা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বাধীনতা স্বপক্ষের শক্তিদের একত্রিত করে দীর্ঘদিন পরে ক্ষমতায় আসা, মুক্তিযুদ্ধের ধারণাকে প্রাধান্য দেওয়া এইসব বিষয়ে মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। শাহবাগ আন্দোলনে বাংলাদেশের মিষ্টি কথা বলা উপরের তলার সুশীলদের আমরা কখনোই যেতে দেখিনি যেখানে স্যার দিনের পর দিন উপস্থিত থেকেছেন। নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে সপ্তাহ ধরে বৃষ্টিতে ভিজেছেন।

আজকের বাংলাদেশকে ১৯৭১ সালের ভাবধারায় ফিরিয়ে নিতে মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের ভূমিকা অনন্য এবং জীববৈচিত্র্য বিষয়ক আলোচনায় যারা তাকে ‘ভিকটিম’ বানানোর চেষ্টা করছেন তাদের মূল আপত্তির জায়গা মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের সাথে আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের মূল ভাবনার সংশ্লিষ্টতা। তাদের রাগের কারণ দেশের লাখ লাখ কিশোর ও তরুণদের মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের বই পড়ে, তার কথা শুনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হওয়া নিয়ে। এখানে সপ্তম শ্রেণীর বইয়ের বিষয়টি মুখ্য নয়। এটি যে একটি অমূলক অভিযোগ সেটি বোঝার ক্ষমতা কিংবা ইচ্ছাও এদের অধিকাংশেরই নেই। তবে প্রথম আলোর এই ভিত্তিহীন বিষয়টিকে ‘লাইমলাইটে’ আনা আমার কাছে উদ্দেশ্যমূলক ও বিরক্তিকর মনে হয়েছে।

লেখক : শামীম আহমেদ জিতু – জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সোশ্যাল মিডিয়া এক্টিভিস্ট।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ