1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

দেশে দেশে বাংলাদেশের জয়গান শুনি

নিউজ এডিটর : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ১ জানুয়ারি, ২০২৪

বিদেশে বাংলাদেশের চেহারাটা আসলে কেমন? যারা সরকারের কড়া সমালোচক তারাও স্বীকার করবেন দেশ আর আগের জায়গায় নেই। বিরোধীদের মুখে ছাঁই দিয়ে এগিয়ে চলা এই দেশটি আজ সমুন্নত তার আপন মর্যাদায়। এই কাজ একদিনে হয়নি। যে দেশকে আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী তলাবিহীন ঝুড়ি নামে ডাকতেও সে দেশ আজ মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। এটা কোনো কথার কথা না । আপনি যেকোনো দেশে গেলেই তা টের পাবেন।

একসময় যে আমেরিকা আর ইউরোপ না হলে আমাদের চলতো না। যাদের আনুকূল্য না পেলে সরকারের ভিত নড়ে উঠতো সেই বাংলাদেশ এখন তাদের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে শিখেছে। শুধু কি তাই? এই দেশটির রপ্তানি বাণিজ্যের দিকে তাকালেই আপনি টের পাবেন ভারসাম্য ধীরে ধীরে কীভাবে বদলে যাচ্ছে । এই বদলে যাওয়া কাজের বদলে যাওয়া। শ্রমের মাধ্যমে বদলে যাওয়া। ‘দারিদ্র্যের অনেক চিহ্ন বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে গেছে।’ এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ২০৪১ সাল নাগাদ ‘একটি দারিদ্র্যশূন্য দেশ’ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে ‘ভিশন ২০৪১’-এর চতুর্থ অধ্যায়ে। ‘কাউকে পেছনে ফেলে নয়’- এসডিজির এই মূলনীতিকে গ্রহণ করা হয়েছে অনুপ্রেরণা হিসেবে। আগামী দিনের শ্রমবাজার হবে দক্ষতানির্ভর। তাই দ্রুত পরিবর্তনশীল আগামীর শ্রমবাজারে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার জন্য তাদের গড়ে তুলতে হবে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে। সমাজের আয়বৈষম্য (পালমা অনুপাত) কমিয়ে আনার লক্ষ্যে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য ঋণবাজারের উন্নয়ন, সম্পদের সুষম বণ্টন, সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী বৃদ্ধিকরণই হবে আগামী দিনের সরকার যন্ত্রের অন্যতম করণীয়।

শেখ হাসিনার আমলে আমাদের দেশ যেসব বিষয়ে আজ শীর্ষে বা যোগ্য অবস্থানে তার তালিকা দীর্ঘ। আমি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, বহু দেশ বহু নগরে ভ্রমণকালে আমি মানুষের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি তারা এই বদলে যাওয়া বাংলাদেশকে কেন সম্মান করে। মনে রাখতে হবে কোনো পরাধীন জাতির জন্য যা অসম্ভব তা স্বাধীন যেকোনো জাতি করতে পারে। যদি তার থাকে ভিশন। থাকে যোগ্য নেতা। আমাদের দেশে একটি ধারাবহিক সরকারের দরকার ছিল খুব বেশি। সেটা যে দলই হোক না কেন যদি তারা পর্যাপ্ত সময় না পায় তো ধারাবাহিক উন্নয়ন হবে কীভাবে? সে সুযোগটা যখনই দেশপ্রেমিক কোনো নেতার হাতে যায় তখন সে দেশের উন্নয়ন চলে জোর কদমে ।

ভিয়েতনামের সঙ্গে আমাদের দেশের মিল আছে । তারা যেমন যুদ্ধ বিগ্রহ আর রক্তপাতের ভেতর দিয়ে স্বাধীন হয়েছে আমরা ও তাই। তাদের দেশে গণহত্যা আর নির্যাতন দুনিয়াকে স্তব্দ করে দিয়েছিল। এখন পর্যন্ত এটাই সম্ভবত দীর্ঘ মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস। সে একই দুশমন আন্তর্জাতিক চক্রান্তের বিরুদ্ধে আমরা লড়েছিলাম। আমাদের ত্রিশ লাখ মানুষ জান দিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। ভিয়েতনাম যেমন মাথা তুলেছে আজ আমরাও পিছিয়ে নেই। বরং বলা উচিত আমরা তাদের পোশাকশিল্পে পিছিয়ে দিয়েছি। চাল উৎপাদনেও আমরা চলছি সমান গতিতে। বলাবাহুল্য জনসংখ্যা যদি কম হতো বাংলাদেশ আজ কোথায় গিয়ে দাঁড়াতো তা ভাবাও বিস্ময়ের ব্যাপার।

দুনিয়ার অন্য দেশগুলোতে বদলে যাওয়া ভাবমূর্তির বিবিধ কারণের অন্যতম তৈরি পোশাক, ক্রিকেটসহ দুনিবাব্যাপী ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশীরা। এই যে এক বিশাল জনগোষ্ঠী যারা দেশের বাইরে পরিশ্রমও মেধায় জায়গা করে নিয়েছেন তাদের ভূমিকা অনন্য। আমি নিজে একজন বাংলাদেশি অস্ট্রেলিয়ান। গর্বিত প্রবাসী। এই আত্মপরিচয় একদিনে গড়ে ওঠেনি। কিছু বছর পূর্বেও আমাদের দেশকে যারা চিনতো না এখন তাদের আর বলতে হয় না এই দেশটি কোথায়। একদা নেক্স্ট টু ইন্ডিয়া বা ভারতের প্রতিবেশী নামে পরিচিত দেশটি এখন স্বনামে পরিচিত। তার উৎপাদন তার খাবার তার পরিশ্রমী মানুষ তাকে নতুনভাবে চিনিয়ে দিয়েছে। দুনিবার ক্রিকেট পাগল যেকোনো দেশে সাকিব আল হাসান একটি পরিচিত নাম। তাঁর সঙ্গে উচ্চারিত আরো কিছু নাম আজ সম্মানের।

একবার আমি শহরের ব্যস্ত রাস্তায় রাস্তা পার হবার জন্য দাঁড়িয়েছিলাম। সিডনির এই ব্যস্ত ট্রাফিক সিগন্যালে দেখি রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও দাঁড়িয়ে। এদেশে প্রটোকলের বালাই নেই। সহজেই কথা বলা যায়। তাঁর সঙ্গে কথা বলে পরিচয় জানাতে তিনি বলে উঠেছিলেন, আই নো শেখ হাসিনা । সি ইজ ডুয়িং সো গুড। এই ভদ্রলোক স্বাধীনতার ৫০তম রজত জয়ন্তীতে এসেছিলেন পার্লামেন্ট হাউসে আমাদের এক অনুষ্ঠানে। সে অনুষ্ঠানে বগল দাবা করে নিয়ে আসা বই থেকে শুনিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর লেখার কোটেশন। ছিল তাঁর সরল স্বীকারোক্তি, এই কথাগুলো তাঁকে ভরসা যোগায়। এভাবেই বদলে গেছে আমাদের দেশের ভাবচিত্র।

আজকের বাংলাদেশ ফিজি থেকে হাওয়াই সর্বত্র এক সুপরিচিত নাম। রাজনৈতিক কলহ আর হানাহানি না থাকলে আমরা হতে পারতাম আরো সমৃদ্ধ। দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি গণতন্ত্র আর সহাবস্থান থাকলে প্রতিবেশী যেকোনো দেশের চাইতে এগিয়ে থাকতাম আমরা। আমাদের ব্হৃৎ দাপুটে প্রতিবেশী ভারতের ব্যাপারে শ্রীলঙ্কা নেপাল মালদ্বীপ বা অন্য দেশগুলোর মনোভাব সুবিধার কিছু না। বরং তারা মোড়লগিরির বিরুদ্ধে। ভারতের উন্নতি অগ্রগতি চোখ ধাঁধানো। তাদের সিনেমা গান সংস্কৃতি সবাইকে মুগ্ধ করলেও ঝামেলা আছে। কিন্তু আমাদের বেলায় তা নয়। আমাদের সমাজে ওরাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যে একধরনের সরলতা আর আতিথেয়তা আছে যা অন্যদের নেই। এ কারণটি আমাদের এগিয়ে রেখেছে নিঃসন্দেহে। আমরা যদি একত্রে একসঙ্গে দেশের পাশে থাকি সরকার ও দেশবিরোধিতা গুলিয়ে না ফেলি কেউ আমাদের ঠেকাতে পারবে না ।

জন্মলগ্ন থেকে আজ অবধি স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বেড়ে ওঠার গল্প অনন্যসাধারণ। কারও কাছে এই গল্প অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিস্ময় বা সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে অগ্রগতি আর বহু মানুষের সম্মিলনীতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র তৈরির প্রচেষ্টা। একইসঙ্গে এই গল্পে অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক সহনশীলতা অর্জনের ক্ষেত্রে সমস্যাসংকুল পথ পরিক্রমার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত। এগুলোর সমন্বয়ে গত ৫০ বছরে বাংলাদেশে যে দৃশ্যমান পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে, তা সমাজবিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী থেকে শুরু করে সব ধরনের বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

আমি এ কথা বলতেই পারি পথ হারাবে না বাংলাদেশ। তার পরিশ্রমী মানুষ মানবসম্পদ আর মেধা ও উদ্যম তাকে থামতে দেবে না। মাঝেমধ্যে যেসব কালো ঘটনা দেশের মুখ ম্লান করে দেয় সেগুলো এড়ানো গেলেই আমাদের ইমেজ চকচক করে উঠবে। এটা কোনো আশাবাদ নয়, এটাই আসল কথা। বাংলাদেশ ৫০ পেরিয়ে আজ স্থিত। তার শরীরে আজ পরিবর্তনের হাওয়া। সবাই মিলে তাকে এগোতে দিলে আমরা হয়ে উঠব আরো এক রোল মডেল। আপাতত এই ভরসাই আমাদের জয়ী করুক।

লেখক : অজয় দাশগুপ্ত – কলামিস্ট, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী 


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ