1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

যুক্তফ্রন্ট গঠন, নির্বাচন ও প্রধান ইস্যু রাষ্ট্রভাষা বাংলা

ইবার্তা সম্পাদনা পর্ষদ : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

১৯৫৩ সালে মাতৃভাষার দাবিতে আন্দোলন আবার চাঙ্গা হতে থাকে। সেই সাথে পূর্ব বাংলার জনগণের প্রতি কেন্দ্রীয় মুসলিম লীগ সরকারের আর্থ- সামাজিক শোষণ, বৈষম্যের বিরুদ্ধেও জনগণ ক্ষুব্ধ হয়। শেখ মুজিব পূর্ব বাংলার জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে আবারও এগিয়ে আসেন। আওয়ামী মুসলিম লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শামসুল হকের অসুস্থতার কারণে দল সেই গুরু-দায়িত্ব মুজিবের ওপর অর্পণ করে নিশ্চিন্ত হয়। ১৯৫৩ সালে মুজিব আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করে ভাষা আন্দোলনসহ অন্যান্য আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান করেন। তৎকালীন পূর্ব বাংলার সর্ববৃহৎ দল আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদকের মত বিশাল দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে শেখ মুজিব বাংলার মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্রতী হন। দলের একজন শীর্ষ নেতা হয়েও শেখ মুজিব নিজেকে কখনই নেতা হিসেবে মূল্যায়ন করতেন না বরং নিজেকে সব সময় একজন কর্মী/সেবক ভাবতেন। সে সময় মুসলিম লীগ কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক নেতৃত্ব যখন ব্যক্তিস্বার্থ, গোষ্ঠীস্বার্থ ও পূর্ব বাংলার জনগণকে শোষণের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মকৌশল নিয়ে ব্যস্ত, কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতারা যখন মতাদর্শগত বিতর্ক (বিটি রণদীভে ও পিসি যোশী বিতর্ক) নিয়ে ব্যস্ত তখন শেখ মুজিব বাংলার মানুষের দ্বারে দ্বারে ফিরছেন, তাদের দুঃখ-দুর্দশা, অভিযোগ শুনছেন, স্বীয় অধিকার, দাবী-দাওয়া সম্পর্কে তাদের সচেতন করে তুলছেন, আন্দোলনে শরীক হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।
মোটকথা, শেখ মুজিবের রাজনীতির মূল বিষয়ই ছিল সাধারণ মানুষ, মানুষের স্বপ্ন, আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ । তাই খুব অল্প দিনের মধ্যেই শেখ মুজিব শুধু আওয়ামী মুসলিম লীগেরই নয় সারা বাংলার একজন জনপ্রিয় নেতাতে পরিণত হন। এসময় ফজলুল হক সাহেব কৃষক শ্রমিক পার্টি নামে একটি দল গঠন করে সরকার বিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত হন। গণতন্ত্রের পূজারী, অখণ্ড বাংলা আন্দোলনের অন্যতম প্রবক্তা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী যিনি পূর্বেই আওয়ামী মুসলিম লীগের সাথে যুক্ত হয়েছিলেন, তিনিও পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব বাংলায় ফিরে এসে আওয়ামী মুসলিম লীগের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।
এসময় পাকিস্তান সরকার ১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলায় সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দিলে বাংলার ছাত্র জনতা হক-ভাসানী- সোহরাওয়ার্দীকে একই মঞ্চে আসার দাবি উত্থাপন করে। পূর্ব বাংলার শোষিত বঞ্চিত ছাত্র-জনতার দাবি গ্রাহ্য হয়। ফলশ্রুতিতেই ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগকে প্রতিহত করার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি, গণতন্ত্রী দল ও নেজামে ইসলামকে নিয়ে গঠিত হয় যুক্তফ্রন্ট। যুক্তফ্রন্ট রক্তস্নাত ২১ ফেব্রুয়ারিকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য নির্বাচনী দাবি-দাওয়াকে ২১ টি দফার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখে এবং প্রথম দফায় মায়ের ভাষা বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উত্থাপন করে।
২১ দফার মধ্যে ছিল:
১. বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা;
২. বিনা খেসারতে জমিদারী প্রথা উচ্ছেদ ও সকল প্রকার মধ্যস্বত্বের বিলোপ সাধন, ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে উদ্বৃত্ত জমি বণ্টন; ভূমি রাজস্বকে ন্যায়ঙ্গতভাবে হ্রাস করা এবং সার্টিফিকেট প্রথা বাতিল করা;
৩. পাট ব্যবসা জাতীয়করণ, পাট উৎপাদনকারীদের পাটের ন্যায্য মূল্য প্রদানের ব্যবস্থা, মুসলিম লীগ আমলের পাট-কোলেঙ্কারির তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি প্রদান এবং তাদের অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা;
৪. সমবায় কৃষি ব্যবস্থা প্রবর্তন করা; কুটির শিল্পের বিকাশ ও শ্রমজীবীদের অবস্থার উন্নয়ন সাধন করা;
৫. পূর্ব বাংলাকে লবণের ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার উদ্দেশ্যে কুটির ও বৃহৎ পর্যায়ে লবণ শিল্প প্রতিষ্ঠা করা;
৬. অবিলম্বে বাস্তুহারাদের পুনর্বাসন করা;
৭. সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং দেশকে বন্যা ও দুর্ভিক্ষের কবল থেকে রক্ষা করা;
৮. পূর্ব বাংলাকে শিল্পায়িত করা এবং আই.এল.ও কনভেনশন অনুযায়ী শিল্প শ্রমিকদের জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করা;
৯. অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তন ও শিক্ষকদের জন্য ন্যায্য বেতন ও ভাতার ব্যবস্থা করা।
১০, সরকারী ও বেসরকারী বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বিভেদ বিলোপ করে সমগ্র মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থার পুনর্গঠন করা এবং মাতৃভাষাকে মাধ্যম করা;
১১. বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত সকল প্রতিক্রিয়াশীল কলাকানুন বাতিল করে তাকে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা;
১২. প্রশাসনিক ব্যয় সংকোচ করা এবং উচ্চ ও নিম্ন বেতনভোগী সরকারী কর্মচারীদের বেতনের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করা; যুক্তফ্রন্টের কোন মন্ত্রী এক হাজারের বেশি বেতন গ্রহণ না করা;
১৩. দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও ঘুষ উচ্ছেদের লক্ষ্যে ১৯৪৭ সালের পর থেকে সকল সরকারী কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী কর্তৃক অর্জিত সম্পত্তির হিসেব গ্রহণ করা এবং সকল অবৈধ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা;
১৪. নিরাপত্তা আইন ও অর্ডিন্যান্স বলে আটককৃত সকল নিরাপত্তা বন্দীকে মুক্তিদান এবং সমিতি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করা;
১৫. শাসন বিভাগ হতে বিচার বিভাগ পৃথক করা;
১৬. ‘বর্ধমান হাউস’ আপাতত ছাত্রাবাস এবং পরে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষণাগার করা;
১৭. বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জন্য যারা প্রাণ উৎসর্গ করেছেন তাদের পবিত্র স্মৃতিকে রক্ষা করার জন্য শহীদ মিনার নির্মাণ করা;
১৮. একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ঘোষণা ও তাকে সরকারী ছুটির দিন হিসেবে পালন করা;
১৯. লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পূর্ববঙ্গকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রদান এবং দেশরক্ষা, পররাষ্ট্র ও মুদ্রা ব্যতীত আর সব বিষয় পূর্ববঙ্গ সরকারের হাতে অর্পণ, সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর পশ্চিম পাকিস্তানে রেখে নৌবাহিনীর সদর দপ্তর পূর্ব বাংলায় স্থানান্তর প্রতিরক্ষার ব্যাপারে পূর্ব বাংলাকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার জন্য এখানে বস্ত্র কারখানা স্থাপন এবং আনসার বাহিনীকে পূর্ণাঙ্গ মিলিশিয়া হিসেবে গড়ে তোলা;
২০. যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা কোন অজুহাতেই আইনসভার আয়ু বৃদ্ধি করবে না; সাধারণ নির্বাচনের ছয় মাস পূর্ব মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করবে এবং নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।
২১. আইনসভার কোন আসন শূন্য হবার তিন মাসের মধ্যে উপনির্বাচনের মাধ্যমে তা পূরণ করা হবে এবং যুক্তফ্রন্ট প্রার্থীরা পরপর তিনটি উপনির্বাচনে পরাজিত হলে মন্ত্রিসভা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবে।
সরকার বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন ও ২১ ফেব্রুয়ারিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ২১ দফা কর্মসূচী ঘোষিত হওয়ায় সারা বাংলায় ছাত্র-জনতার মধ্যে বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। সরকারের অব্যাহত দমন, নির্যাতন উপেক্ষা করে ছাত্র-জনতা সারা দেশে একুশে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠান ও শহীদ দিবস পালন করে। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ ধ্বনিতে সারা দেশ যেন আবার মুখরিত হয়ে ওঠে। এ প্রসঙ্গে মোহাম্মদ তোয়াহা বলেন, ১৯৫৩ সালের ভাষা আন্দোলন ছিল বেশ সাংঘাতিক আন্দোলন; ‘৫৪ সালে এ আন্দোলন আরো ভয়ানক হয়ে উঠেছিল।
এদিকে যুক্তফ্রন্টের একজন অন্যতম নেতা হিসেবে শেখ মুজিব এই ২১ দফা দাবি নিয়ে প্রদেশের একপ্রান্ত হতে অপর প্রান্ত চষে বেড়ান । বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা, একুশে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস ও ছুটির দিন ঘোষণা, অবৈতনিক বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তন, প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনসহ ২১ দফার সমর্থনে তিনি বড় বড় জনসভায় যে গুরুত্বপূর্ণ ও জ্বালাময়ী বক্তৃতা দেন তাতে করে তিনি লাভ করেন জনগণের অকুণ্ঠ ভালবাসা ও সমর্থন।
এই নির্বাচনে তিনি যুক্তফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মুসলিম লীগ প্রার্থী ওয়াহিদুজ্জামানকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে টুঙ্গিপাড়া এলাকা থেকে পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
এই নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিপুল ভোটে জয়ী হয় এবং মুসলিম লীগের ভরাডুবি ঘটে। মুসলিম লীগ মাত্র ৯ টি আসন লাভ করে।
যুক্তফ্রন্টের এই বিজয়ের পিছনে কাজ করেছিল ২১ দফা কর্মসূচী যা অন্যতম প্রধান দফা ছিল বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পূর্ব বাংলার জনগণের মনে মুসলিম লীগ সরকারের বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ, ঘৃণার সঞ্চার হয়েছিল, ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের ফলাফলে তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
যাই হোক, নির্বাচনের পরপরই যুক্তফ্রন্টের বিরুদ্ধে আবার ষড়যন্ত্র শুরু হয়। তৎকালীন পূর্ববঙ্গের গভর্নর চৌধুরী খালেকুজ্জামান যিনি ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগের হায়দ্রাবাদ সম্মেলনে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি যুক্তফ্রন্টের সর্ববৃহৎ দল আওয়ামী মুসলিম লীগকে বাদ দিয়ে কে এস পি নেতা ফজলুল হক সাহেবকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দান করলে আওয়ামী মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। শেখ মুজিব চোধুধী খালেকুজ্জামানের এমন আচরণে বিস্মিত হন এবং এই অভিমত ব্যক্ত করেন যে, পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ যুক্তফ্রন্টের এ বিজয় সহজে মেনে নেবে না। ভবিষ্যতে তারা বার বার আঘাত হানতে থাকবে। তা সত্ত্বেও তিনি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে হক সাহেবকে মেনে নেন এবং ক্ষমতার বাইরে থেকেই দেশ ও জাতির সেবাই নিজেকে নিয়োজিত করেন। উল্লেখ্য যে ১৯৫৪ সালের এই নির্বাচনে আওয়ামী মুসলিম লীগ ১৪৩টি এবং কেএসপি মাত্র ৪৮টি আসন লাভ করে। পরবর্তীতে অবশ্য পারিপার্শ্বিকতার চাপে মুখ্যমন্ত্রী যে ১০ জন মন্ত্রি নিয়োগ করেন তার মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান হক মন্ত্রিসভায় যোগদান করেন। তিনি কৃষি, বন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন।
এক সময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা, ভাষা আন্দোলনের অগ্রনায়ক ও দক্ষ সংগঠক, আওয়ামী মুসলিম লীগের সুযোগ্য সাধারণ সম্পাদক ও পূর্ব বাংলার জনগণের প্রাণপ্রিয় নেতা, এরপর হলেন দেশসেবক, মন্ত্রী। কিন্তু প্রথমেই হোচট খেলেন। কেন্দ্রীয় সরকার পরিকল্পিতভাবে আদমজী জুট মিলে বাঙালি অবাঙালি দাঙ্গা বাধিয়ে (এ দাঙ্গায় প্রায় পাঁচশত বাঙালি নিহত হয়) এর সব দায়-দায়িত্ব যুক্তফ্রন্ট সরকারের ওপর চাপিয়ে দেয় এবং ১৯৫৪ সালের ৩০ মে ৯২ (ক) ধারা বলে যুক্তফ্রন্ট সরকারকে বরখাস্ত করে কেন্দ্রীয় শাসন জারি করে। একই দিনে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা সচিব ইস্কান্দার মীর্জাকে পূর্ব বাংলার গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই গভর্নর মীর্জা পূর্ব বাংলায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। যুক্তফ্রন্টের হাজার হাজার নেতা কর্মীকে জেলখানায় ঢোকানো হয়। আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রায় তিন হাজার কর্মী ও তিপ্পান্ন জন এমএলএ গ্রেফতার হন। শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করে পাঠানো হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় করাগারে। ফজলুল হক হন গৃহবন্দী। এসময় মওলানা ভাসানী ও সোহরাওয়ার্দী বিদেশে অবস্থান করছিলেন। ফলে একটি নির্বাচিত সরকারকে বরখাস্ত করে কেন্দ্রীয় শাসন জারি করার প্রতিক্রিয়া হিসেবে সে সময় পূর্ব বাংলায় কোন প্রতিবাদ সভা বা বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়নি।
উল্লেখ্য যে, ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের পর যুক্তফ্রন্ট সরকার ভাষা আন্দোলনের পক্ষে বেশ কিছু উদ্যোগ নেন। যেমন ২১ ফেব্রুয়ারিকে ছুটির দিন ঘোষণা, বর্ধমান হাউসকে বাংলা একাডেমিতে রূপান্তর প্রভৃতি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল কিন্তু পূর্ব বাংলায় ৯২-ক ধারা জারি ও ইস্কান্দার মীর্জার দমন নীতির কারণে তা ভেস্তে যায়। সরকার নতুন করে ভাষা আন্দোলন সম্পর্কিত সকল কর্মতৎপরতা খর্ব করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত হয় এবং পরবর্তী বছর (১৯৫৫ সালে) যাতে ২১ ফেব্রুয়ারি পালিত না হয় তার জন্য ষড়যন্র শুরু করে।
১৯৫৫ সালে সরকার ২১ ফেব্রুয়ারি উদযাপনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি এবং সংগ্রাম পরিষদের বেশ ক’জন নেতাকে গ্রেফতার করা হলে ভাষা আন্দোলন স্তিমিত হয়ে আসে। শেখ মুজিব ১৯৫৪ সালের ডিসেম্বরে মুক্তিলাভ করার পর সাংগঠনিক কাজে ঢাকার বাইরে অবস্থান করছিলেন। ফলে ১৯৫৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি উদযাপন প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এমন প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও ছাত্রসমাজ ২১ ফেব্রুয়ারি উদযাপনের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে।
২০ ফেব্রুয়ারি রাতেই বাংলার বীর ছাত্রসমাজ সরকারী নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সকল ছাত্রাবাসে পতাকা উত্তোলন করে এবং রাত ১২টার পরপরই রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, “শহীদ স্মৃতি অমর হোক’ ধ্বনিতে ঢাকার আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে তোলে। এ প্রসঙ্গে গাজীউল হক স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেছেন,
“১৯৫৫ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে আমরা হাজতে। দেশে তখন স্বেচ্ছাচারী শাসন চলছে। কয়েক হাজার কর্মী জেলে আটক অথবা আত্মগোপন করে আছেন। এমতাবস্থায়, ২১ শে ফেব্রুয়ারি যথাযথভাবে প্রতিপালিত হবে কিনা স্বভাবতই মনে প্রশ্ন ছিল। কিন্তু আমাদের এ ধরনের সন্দেহকে অমূলক ও ভ্রান্ত প্রমাণ করে দিয়ে ২০ শে ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে সমস্ত ঢাকা শহর শ্লোগানে পর শ্লোগানে গর্জে উঠলো। বাংলা ভাষার দাবিতে, রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির দাবিতে সেদিন ঢাকার বুকে গণকণ্ঠের ঢল নেমেছিল”।
সুত্র- https://www.facebook.com/166064673583399/posts/1581690922020760/?d=n


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ