1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে চালু হচ্ছে আরেকটি নৌপথ, বাড়বে বাণিজ্য

ডেস্ক রিপোর্ট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে রাজশাহী থেকে নৌপথে ভারতে পণ্য পারাপার করা হতো। ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদীঘি থানার ময়া এলাকা থেকে গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জ পর্যন্ত পণ্য আনা-নেওয়া হতো। বাংলাদেশ থেকে পাঠানো হতো পাট ও মাছ। ভারত থেকে আসতো বিভিন্ন পণ্য। ৫৯ বছর পর আবারও এই নৌপথে শুরু হচ্ছে বাণিজ্য। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি এর উদ্বোধন হবে।

১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আগ পর্যন্ত সুলতানগঞ্জ-ময়া ও গোদাগাড়ী-ভারতের লালগোলা নৌঘাটের মধ্যে নৌপথে বাণিজ্য কার্যক্রম চালু ছিল। যুদ্ধের সময় বন্ধ করে দেওয়া হয়। এত বছর পর নৌ প্রটোকল চুক্তির আওতায় আবার চালু হচ্ছে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ও অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সুলতানগঞ্জ নদী বন্দর উদ্বোধনের বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে। উদ্বোধনের পর সুলতানগঞ্জ ঘাটটি নদী বন্দরের মর্যাদা পাবে।

জানা গেছে, প্রাথমিক পর্যায়ে এই পথে ভারত থেকে সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল, পাথর, মার্বেল, খনিজ বালু ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের খাদ্যসামগ্রী বাংলাদেশে আসবে। বাংলাদেশ থেকে বস্ত্র, মাছ, পাট ও পাটজাত পণ্য ছাড়াও বিভিন্ন কৃষিপণ্য ভারতে যাবে। এসব পণ্য মূলত বিভিন্ন স্থলবন্দরের মাধ্যমে সড়ক ও রেলপথে বাংলাদেশে আমদানি করা হয়।

সুলতানগঞ্জ নৌ বন্দরের মাধ্যমে এসব পণ্য ভারত থেকে আমদানিতে সময় ও খরচ কম হবে। এতে উপকৃত হবেন দুই দেশের ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, বছরে এই নৌপথে দুই দেশের মধ্যে হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হবে।

নৌপথ চালুর বিষয়ে আন্তরিক ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। ২০২০ সালে একবার উদ্যোগও নিয়েছিলেন চালুর। কিন্তু করোনার কারণে সম্ভব হয়নি। গত সিটি নির্বাচনে নির্বাচনি ইশতেহারে সুলতানগঞ্জ থেকে ভারতের ময়া পর্যন্ত নৌপথ চালুর প্রতিশ্রুতি ছিল তার। নৌপথ চালুর মধ্য দিয়ে ইশতেহার বাস্তবায়িত হবে বলে জানিয়েছেন মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি বলেন, শিগগিরই মুর্শিদাবাদের ময়া থেকে সুলতানগঞ্জ পর্যন্ত নৌপথে নৌযান চলাচল শুরু হবে। এরপর রাজশাহী পর্যন্ত চালু ও নগরীতে নৌবন্দর স্থাপনের উদ্যোগ নেবো। এটি চালু হলে রাজশাহীর অর্থনীতি গতিশীল হবে, কর্মসংস্থান বাড়বে।

সুলতানগঞ্জ-ময়া নৌপথ খুবই সম্ভাবনাময় বাণিজ্য পথ উল্লেখ করে মেয়র আরও বলেন, ভারতের পক্ষ মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান, ময়া নৌবন্দর সম্পন্ন প্রস্তুত করে রেখেছে। সুলতানগঞ্জে একটি পল্টুন নিয়ে আসা হয়েছে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে। পাঁচটি নৌযানের মাধ্যমে ট্রায়াল দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে নদীর নাব্যতা ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বৃদ্ধি করা হবে। রাজশাহীর পশ্চিমে একটি নৌবন্দর হতে যাচ্ছে। যেটির খুব অল্প সময়ের মধ্যে কাজ শুরু হবে। নদী ড্রেজিং হচ্ছে আরিচাতেও। আরিচা থেকে উত্তরে ব্রহ্মপুত্র নদ হয়ে আসামের নৌবন্দরে মালামাল নিয়ে যেতে পারবে। এই পথে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য শুরু হলে বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশই লাভবান হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নৌবন্দরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফাসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, রাজশাহী থেকে মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান পর্যন্ত ৭৮ কিলোমিটার নৌপথের অনুমোদন থাকলেও পদ্মার নাব্যতা সংকটের কারণে কার্যকর করা হয়নি। ফলে পথটি সংক্ষিপ্ত করে গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ থেকে মুর্শিদাবাদের ময়া নৌবন্দর পর্যন্ত আড়াআড়িভাবে ২০ কিলোমিটার পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে পণ্য আনা-নেওয়া হবে। শুরুতে এই নৌপথ দিয়ে ভারত থেকে পাথর, বালু ও বিভিন্ন ধরনের খাদ্যসামগ্রী আনা হবে।

উদ্বোধন ঘিরে সুলতানগঞ্জ নৌবন্দরকে নতুন করে সাজানো হচ্ছে। জোরেশোরে চলছে কাজ। পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য তৈরি করা হচ্ছে রাস্তা। পল্টুনও তৈরি রাখা হয়েছে, চলছে রঙের কাজ। পাশেই রাখা হয়েছে বড় একটি ট্রলার। এই ট্রলার দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ভারতে পণ্য পাঠানো হবে। নৌবন্দর ঘাটের পাশে রাখা আছে সারি সারি ইট। পলি মাটিতে এই ইট দিয়ে রাস্তা তৈরি করা হবে।

বৃহস্পতিবার সেখানে কাজের তদারকি করছিলেন বিআইডব্লিউটিএর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহ আলম। কাজের অগ্রগতি জানিয়ে বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আমরা দ্রুত কাজ শেষ করছি। আগামী সোমবার নৌবন্দরের উদ্বোধন হবে। এর আগে শনিবারের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। এখানে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। জমি অধিগ্রহণ করা হবে। বন্দর থেকে একটি সড়ক গিয়ে সরাসরি জাতীয় সড়কে উঠবে।

এই নৌপথে নাব্যতা নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না উল্লেখ করে শাহ আলম আরও বলেন, এখানে নদীতে অনেক পানি থাকে। পণ্য পরিবহন শুরু হলে চর থাকবে না। চর জাগারও সম্ভাবনা নেই। জাগলে ড্রেজিং করা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুলতানগঞ্জ থেকে ময়া নৌঘাটের দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার। সুলতানগঞ্জ নৌঘাট রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়ক থেকে এক কিলোমিটার ভেতরে পদ্মা মহানন্দার মোহনায় অবস্থিত। সারা বছর সুলতানগঞ্জ পয়েন্টে পদ্মায় পানি থাকে। পশ্চিমবঙ্গের ময়া নৌঘাটটি মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর মহকুমা শহরের কাছে ভারতীয় ৩৪নং জাতীয় সড়কের সঙ্গে যুক্ত। ফলে সুলতানগঞ্জ-ময়া পথে নৌ-বাণিজ্য শুরু হলে পরিবহন খরচ কমবে।

নৌপথ চালুর বিষয়ে খুশি স্থানীয়রা। বীর মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান বলেন, এখানে নৌবন্দর চালু হলে স্থানীয় বহু মানুষের কর্মসংস্থান হবে। যা আমাদের জন্য ইতিবাচক। একসময় এখানে নৌবন্দর ছিল। তা পরে বন্ধ হয়ে যায়। তখন আমরা ছোট ছিলাম, স্কুলে পড়তাম। স্বাধীনতা যুদ্ধের ছয় বছর আগে বন্দর বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আগে বিশাল বিশাল জাহাজ আসতো। সুলতানগঞ্জ ঘাটের পশ্চিম দিকে বিশাল জায়গা আছে। সেখানে বন্দরটি করলে আরও ভালো হতো। অনেক সরকারি জায়গা পড়ে আছে। পাশেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা। সেখান থেকে সরাসরি সড়কে ওঠা যাবে।

স্থানীয় চা দোকানি মো. সেলিম বলেন, বর্তমানে সুলতানগঞ্জ ঘাট আছে। এখান থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার দেবীনগর ইউনিয়নে যাওয়া যায়। প্রতিদিন এখান থেকে ৫০টি নৌকা যাওয়া-আসা করে। ভোর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত নৌকা চলে। এখানে বন্দর হলে সবসময় মানুষের যাতায়াত থাকবে। আমাদের মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন।

আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা জানান, বাংলাদেশের অবকাঠামোর উন্নয়নকাজের জন্য প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ পাকুড় ব্র্যান্ডের পাথর ও খনিজ বালুর প্রয়োজন হয়। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও যমুনা রেলসেতুর মতো বড় বড় প্রকল্পে ব্যবহার হচ্ছে ঝাড়খণ্ডের পাকুর ব্র্যান্ডের পাথর; যা সড়ক ও রেলপথের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসছে। তবে সড়কপথে এসব পণ্য আমদানিতে সময় যেমন বেশি লাগে, তেমনি খরচ বেশি পড়ে। নৌপথে এসব পণ্য আমদানি হলে পরিবহন খরচ কম পড়বে।

নৌপথ চালুর প্রসঙ্গে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা বলেন, বাংলাদেশ-ভারত নৌ প্রটোকলের আওতায় নদীপথে দুই দেশের মধ্যে কম খরচে বিপুল পরিমাণ বাণিজ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। সুলতানগঞ্জ নৌবন্দরের কার্যক্রম চালু হলে মুর্শিদাবাদ জেলার ময়া নৌবন্দরের সঙ্গে নদীপথে বাণিজ্য শুরু হবে। এর ফলে বাংলাদেশ ও ভারত; দুই দেশের ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন।

সুলতানগঞ্জ-ময়া লাভজনক ও চমৎকার নৌপথ হতে পারে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, দুই বন্দরের অবকাঠামোগত কিছু সমস্যা এখনও রয়েছে। তবে সুলতানগঞ্জ বন্দর চালু হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে সেগুলো ঠিক হয়ে যাবে। ভারত ময়া ঘাট প্রস্তুত করেছে। উদ্বোধন হলে পণ্য আনা-নেওয়া শুরু হবে।

পদ্মা-মহানন্দার মোহনায় সারা বছর পানি থাকে জানিয়ে আরিফ আহমেদ মোস্তফা বলেন, বিপরীতে ময়া বন্দরটিতেও সারা বছর পানি থাকে। শুষ্ক মৌসুমে পদ্মার মাঝখানে কিছু পথে নাব্যতা কমে যায়। তেমন পরিস্থিতি দেখা দিলে দুই দেশের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে ড্রেজিং করে নৌপথটি সারা বছর সচল রাখা হবে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ময়া থেকে সুলতানগঞ্জে আসতে পণ্যবাহী নৌযানের সময় লাগবে এক ঘণ্টা। এতে অনেক খরচ বাঁচবে ব্যবসায়ীদের।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ