1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

রোহিঙ্গা ও ইউক্রেন সংকটে পশ্চিমাদের দ্বিমুখী নীতি! 

অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ১৩ মার্চ, ২০২২

যখন ‘ওয়ারশ প্যাক্ট’ ছিল তখন ন্যাটো জোটের সদস্য ছিল ১২টা দেশ। লাগাতার সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে এখন ন্যাটোর সদস্য ৩০টা দেশ। কিন্তু এখন ‘ওয়ারশ প্যাক্ট’ নেই। আমরা প্রশ্ন করতে পারি যে, যদি ‘ওয়ারশ জোট’ থাকত এবং তারা ১২টা দেশ থেকে ৩০টা দেশে সম্প্রসারিত হতো, তাহলে কি যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো বিষয়টা মেনে নিত? এভাবেও দেখা যেতে পারে যে, যদি রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত-প্রতিবেশী মেক্সিকো কিংবা কানাডার কোনো সামরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি হয় এবং সেসব দেশে রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্র মোতায়েন করা হয় তাহলে কি যুক্তরাষ্ট্র সেটা মেনে নেবে? উত্তরটা খুবই সোজা, মেনে নিত না। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে বহুল সমালোচিত ‘মনরো ডকট্রিন’ এখনো আছে। যে কারণে একসময় কিউবা সংকট তৈরি হয়েছিল। এই প্রেক্ষাপট মাথায় রেখে আমাদের বর্তমান সংকটের দিকে তাকাতে হবে।

ইউক্রেনে এখন যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা ন্যাটোর সদস্য হওয়ার কথা বারবার বলেছে। আর ন্যাটোর ১২টা থেকে ৩০টা সদস্য হওয়ার কারণটা কী? এই যে লাটভিয়া থেকে শুরু করে এস্তোনিয়ার মতো ছোট ছোট দেশ এদেরই বা ন্যাটোর সদস্য হওয়ার কারণ কী? এসব প্রশ্ন কিন্তু করা হচ্ছে না। কারণ আমেরিকা ধরে নিয়েছে রাশিয়া দুর্বল। আর আমেরিকার মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্সের যে বিনিয়োগ সেসব হিসাব করেই যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোর সম্প্রসারণ ঘটাচ্ছিল। এছাড়া আরও কিছু বিষয় আছে যেগুলো পশ্চিমা গণমাধ্যমে আমরা সচরাচর দেখি না। যেমন জার্মানিতে যুক্তরাষ্ট্রের ১১৯টা সামরিক ঘাঁটি আছে। যুক্তরাজ্যে আছে ২৪টার ওপরে। একইভাবে ইতালিতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি আছে ৪০টার ওপরে। এই বাস্তবতা আমলে না নিয়ে ইউক্রেন সংকট বোঝা যাবে না।

রাশিয়া বা পুতিন বলছেন যে, ইউক্রেন পর্যন্ত ন্যাটোর সম্প্রসারণ তারা মেনে নেবেন না। লাটভিয়া বা এস্তোনিয়া অনেক ছোট রাষ্ট্র হওয়ায় হয়তো তারা আগ্রাসী হয়নি। কিন্তু খেয়াল করতে হবে ইউক্রেন থেকে রাশিয়া দুই দুইবার আক্রান্ত হয়েছে। একবার সেই নেপোলিয়ানের আমলে আরেকবার হিটলারের আমলে। অন্যদিকে রাশিয়া কখনো পশ্চিমা দেশগুলোকে আক্রমণ করেনি। কিন্তু পশ্চিমাদের কাছ থেকে দুই বার বড় আকারে আক্রান্ত হয়েছে। যদিও দুইবারই রাশিয়া সেটা সামলে নিয়েছে।

যারা বলছে যে, পুতিন চাচ্ছে বিশ্বকে কোল্ডওয়ারের যুগে ফিরিয়ে নিতে, তারা এই এগুলোর উত্তরে কী বলবেন? এছাড়া আরও কতগুলো প্রশ্ন করতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে থাকা বা অর্থনৈতিক সহযোগিতা কাঠামোতে থাকা আর সামরিক জোট বা ন্যাটোতে থাকা তো এক বিষয় না। তার ওপর ‘সেনটো’ (সেন্ট্রাল ট্রিটি অর্গানাইজেশন) ও ‘সিয়াটো’ (সাউথ ইস্ট এশিয়ান ট্রিটি অর্গানাইজেশন) এর মতো যেসব অর্গানাইজেশন তৈরি হয়েছিল সেসবও তো এখন নেই। কিন্তু আমরা এখনো দেখছি যে, ন্যাটো আফগানিস্তানে যুদ্ধ করেছে। আফগানিস্তান তো ন্যাটোর সদস্য না, ন্যাটো তো ইউরোপের বিষয়। তাহলে যুক্তরাজ্য বা জার্মানির সেনারা আফগানিস্তানে কেন যুদ্ধ করবে? আজ যে ইউক্রেন এত কথা বলছে তারা কেন আফগানিস্তান যুদ্ধে জড়িত হয়েছিল?

একটা বিষয় খেয়াল করতে হবে। পুরো ইউক্রেন কিন্তু ভলোদিমির জেলোনস্কির অবস্থানকে সমর্থন করে না। ইউক্রেনের অভ্যন্তরে রুশভাষীরা প্রায় ৩০ ভাগ। ফলে সেখানে একটা ৭০-৩০ বিভাজন রয়ে গেছে। রুশভাষী এই ৩০ ভাগ রাশিয়াকে স্বাগতই জানাচ্ছে। তারা জেলোনস্কিকে চাচ্ছে না। ভাষা-ধর্ম-জাতীয়তার মতো বিষয়ের এই বিভাজনগুলোও গুরুত্বপূর্ণ। আরেকটা বিষয় হলো জেলোনস্কি এবং তার মন্ত্রিসভার বড় অংশই ইহুদি ধর্মাবলম্বী। এটাও একটা সমস্যা তৈরি করেছে, এদের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক রয়েছে। আজ ইউক্রেনের যে নেতৃত্ব স্বাধীনতার কথা বলছেন, আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা বলছেন, তারা প্রকাশ্যেই ইসরায়েলের সঙ্গে ছিলেন। তারা তো কখনো ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মুখ খোলেনি। এছাড়া জেলোনস্কি যেভাবে ক্ষমতায় এসেছেন সেটা নিয়েও প্রশ্ন রয়ে গেছে। কিছুদিন আগেই ইউক্রেনের নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে উৎখাত করে এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে। ওই প্রেসিডেন্টকে রাশিয়ায় পালিয়ে বাঁচতে হয়েছে। ফলে ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি যেমন এই সংকটকে ত্বরান্বিত করেছে তেমনি ইউক্রেনের ন্যাটো জোটে যোগ দেওয়ার হম্বিতম্বি রাশিয়াকে আরও উসকে দিয়েছে।

ইউক্রেন সংকটে বাংলাদেশের অবস্থানের ক্ষেত্রে আমাদের পররাষ্ট্রনীতির যে মূল ভিত্তি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’ সেটাই মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করি। একইভাবে ‘শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু, বা বন্ধুর শত্রু আমার শত্রু’ এমন নীতিতেও আমরা চলি না। আমরা শান্তিরক্ষী বাহিনীতে সেনা পাঠাই কিন্তু কোনো যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি না। আফগানিস্তানে বাংলাদেশের সেনা চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্ত বাংলাদেশ তাতে সাড়া দেয়নি। বাংলাদেশের জন্য এই পররাষ্ট্রনীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

অন্যদিকে, রোহিঙ্গা সংকটে পশ্চিমাদের ভূমিকা আর ইউক্রেন সংকটে পশ্চিমাদের যে ভূমিকা সেটা পশ্চিমাদের যে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড বা দ্বিমুখী নীতি সেটা আবারও স্পষ্টভাবে প্রমাণ হলো। আরাকানে বিরাট রোহিঙ্গা গণহত্যা চালানোর পরও মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি পশ্চিমারা। বরং তারা বলার চেষ্টা করেছে, নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কিছু হবে না। এতে মিয়ানমারের সাধারণ মানুষ কষ্ট পাবে। কিন্তু ইউক্রেন সংকটে দেখা যাচ্ছে রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমারা। অবস্থা এমন যে, যুদ্ধ নয় নিষেধাজ্ঞাই সবকিছু। এতে নিজেদের স্বার্থ আর অন্যদেশের স্বার্থের বিষয়ে পশ্চিমাদের দ্বিমুখী নীতি আবারও সামনে চলে এলো।

লেখক : অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ – আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পরিচালক, সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ। 


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ