1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট দুর্যোগ প্রস্তুতি

মাহবুবা নাসরীন : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ১০ মার্চ, ২০২৩

জল-স্থল-অন্তরীক্ষের নানা দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকা বাংলাদেশে আজ পালিত হচ্ছে জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস। ১৯৯৭ সালে সূচিত হওয়ার পর থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মার্চ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার দিবসটি পালিত হতো। ২০১৬ সাল থেকে ১০ মার্চ তারিখটি ‘জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস’ হিসেবে পালিত হচ্ছে। যে কোনো দিবসের একটি তাৎপর্য রয়েছে, যাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পথ ও মত উন্মোচিত হয়। যেমন দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়, যা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও বর্তমানের জন্য অনেক গুরুত্ব বহন করে। যেমন এবারের দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবসের প্রতিপাদ্য ‘স্মার্ট বাংলাদেশের প্রত্যয়, দুর্যোগ প্রস্তুতির সময়’। প্রতিপাদ্যটি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ও সামগ্রিক দিকনির্দেশনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।

দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশে দুর্যোগের প্রস্তুতির প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। এ ক্ষেত্রে আমাদের নীতি ও অবকাঠামোগত প্রস্তুতি বিশ্বে যে প্রশংসিত, সেটাও বলতে হবে। ১৯৯৭ সালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য যে স্থায়ী আদেশাবলি (স্ট্যান্ডিং অর্ডার অন ডিজাস্টার-এসওডি) তৈরি হয়েছিল, সে অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা, নীতিমালা ও আইন প্রস্তুত হয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী এই সব ক’টি দলিলই পরিমার্জিত হয়েছে। নতুন নতুন দুর্যোগ মোকাবিলা ও প্রস্তুতির জন্য নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। ত্রাণনির্ভর ব্যবস্থাপনা থেকে ঝুঁকি নিরসনের ওপর অধিকতর মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। তাই ২০১০-পরবর্তী দুর্যোগ প্রস্তুতি বেগবান হয়েছে। বাংলাদেশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার রোল মডেল হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পেয়েছে।

আমরা দেখছি, ভৌগোলিক ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগের ঝুঁকি বহন করেই বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের পথে। যেসব দুর্যোগ আমাদের নিত্যসঙ্গী যেমন– বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙন, খরা, জলোচ্ছ্বাস, লবণাক্ততার তীব্রতার সঙ্গে এ দেশের দুর্যোগ সহনশীল মানুষ অভিযোজন করতে শিখেছে। আগাম সতর্কতা, পূর্বপ্রস্তুতি ও ঝুঁকি হ্রাস কর্মকাণ্ডের কারণে এসব দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশ্বের অনেক দেশ থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে তবুও প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে যেতে হয়। লোকায়ত জ্ঞান যখন ভরসার একটা স্থান ছিল, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ মোকাবিলায় তার বড় অংশই ব্যবহার করা যায় না। তাই দুর্যোগ প্রস্তুতির জন্য আজ সরকারি পদক্ষেপের দিকেই দুর্যোগাক্রান্ত জনগোষ্ঠী ও অন্যান্য প্রজাতি প্রকৃতি ও পরিবেশ মুখাপেক্ষী।

দুর্যোগ প্রস্তুতিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শী চিন্তার ফল ছিল ১৯৭২ সালে উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি এবং বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা। বর্তমানে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণে আগাম তথ্য সংগ্রহের জন্য ৩৫০টি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে তিন থেকে পাঁচ দিন আগে বন্যা সতর্কবার্তা দেওয়া যাচ্ছে রিমোট সেনসিং, জিআইএস রাডার, স্যাটেলাইট তথ্যচিত্র বিশ্লেষণের মাধ্যমে। ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস ও সতর্কতার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন গাণিতিক মডেল। যে কারণে ৭ থেকে ১০ দিন আগেই ঘূর্ণিঝড়ের আগাম সতর্কবার্তা দেওয়া হচ্ছে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ‘ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র’ থেকে। ১০৯০ টোল ফ্রি নম্বরে ‘ইন্টারেকটিভ ভয়েস রেসপন্স’ আইভিআর বেশ ক’বছর আগেই চালু হয়েছে। আগাম সতর্কবার্তা কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমেও প্রচার করা হচ্ছে। ঝটিকা বন্যার পূর্বাভাস আগে দেওয়া যেত না। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এখন সেটাও সম্ভব হচ্ছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যয় নিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর।

বজ্রপাতজনিত দুর্যোগ প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেশ ক’বছর ধরে চলছে গবেষণা। বর্তমানে পরীক্ষামূলক আটটি স্থানে বজ্রপাত চিহ্নিতকরণ যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া বিগত অর্থবছরে বজ্রপাতপ্রবণ এলাকার (১৫ জেলার ১৩৫টি উপজেলা) প্রযুক্তিনির্ভর লাইটনিং অ্যারেস্টার স্থাপন করা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রশিক্ষিত জনবল তৈরির লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে উচ্চতর ডিগ্রি প্রদানে সরকার ২০০৯ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছিল। বর্তমানে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করা হয়। প্রথম পর্যায়ের প্রাতিষ্ঠানিক পঠনপাঠনের অন্যতম ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘সেন্টার ফর ডিজাস্টার অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ’। ব্যাপক চাহিদার ভিত্তিতে ২০১২ সালে এটি ‘ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ’ নামে স্বতন্ত্র ইনস্টিটিউট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার উচ্চতর ডিগ্রিতে সর্বশেষ সংযোজন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রোগ্রাম। জাতীয় পর্যায়ে সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্যোগ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠন ও বিভিন্ন নাজুক জনগোষ্ঠীর জন্য দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস নিরসনকল্পে এসওডির পরিমার্জিত সংকলনের ‘জেন্ডার ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তি’ নামক অধ্যায় যোগ করা হয়েছে। দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ ও ‘মুজিবকিল্লা’ নির্মাণ; বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, সেতু-কালভার্ট, জেলা ত্রাণগুদাম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্যকেন্দ্র নির্মাণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সম্প্রসারিত হচ্ছে।

শৈশব-কৈশোরে জেনে এসেছি, জাপান ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। প্রবীণ বয়সে এসে জানছি, বাংলাদেশও এই দুর্যোগের ঝুঁকিতে রয়েছে। ঢাকা মাধ্যম মানের ভূমিকম্পপ্রবণ। কিন্তু ভূমিকম্প (রিখটার স্কেলে ৬ থেকে ৮ মাত্রার হলেও) হলে ঢাকার  ৭০ শতাংশের ওপর দালানকোঠা ভেঙে পড়বে। এরই মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে। সেখান থেকে জনবসতি সরিয়ে নেওয়াই হবে যুক্তিযুক্ত কাজ। ভূমিকম্প হয়ে যাওয়ার পর উদ্ধারকাজের মহড়া গত ১০ বছর ধরেই সরকারি পর্যায়ে চলছে। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে ভূমিকম্প-পরবর্তী নয় বরং পূর্বপ্রস্তুতি জোরদার করা প্রয়োজন।

দাহ্য পদার্থ বা গ্যাসজনিত বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্যোগ সাম্প্রতিককালে আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। যদিও নিমতলী, চুড়িহাট্টাসহ পুরান ঢাকায় সংঘটিত অগ্নিকাণ্ড থেকে আমরা শিক্ষা নিইনি। গবেষণালব্ধ ফলাফল ও সরকারি বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে, আইন না মেনে শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠা  ও ভবন নির্মাণ করলে যে মূল্য দিতে হয়; ২০১৩ সালে সেটি সাভারের রানা প্লাজা ধস ও অন্যান্য দুর্ঘটনা থেকে প্রমাণিত। সর্বশেষ সীতাকুণ্ড, সায়েন্স ল্যাব ও সিদ্দিকবাজারের বিপর্যয় তেমনি অদূরদর্শিতাকে প্রমাণ করে।

নিয়ম না মেনে ক্ষতিকর দাহ্য পদার্থ কার্বন ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন সিলিন্ডার রাখা, অগ্নিনিরাপত্তার ব্যবস্থা না থাকা, অবৈধ বিদ্যুৎ, গ্যাসের সংযোগ নেওয়া, অদক্ষ শ্রমিক বা বিশেষজ্ঞ মতামত ছাড়া ভবন নির্মাণ– এ রকম শত শত কারণকে সামনে এনে যদি প্রাণ ও সম্পদহানি কমাতে হয় তার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি প্রয়োজন। দুর্ঘটনা এড়াতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থায় প্রশিক্ষিত ব্যক্তি রয়েছেন। তাঁদেরই পরিবীক্ষণ, পর্যবেক্ষণের দায়টি নিতে হবে এবং আইন ভঙ্গ করার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ যাতে সব মানুষের প্রাকৃতিক সম্পদের জন্য স্মার্ট হয়, সেদিকেই মূল দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।

লেখক: মাহবুবা নাসরীন – উপ-উপাচার্য, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। 


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ