1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বিএনপির মুখে ‘মানবাধিকার’ ও ‘গণতন্ত্রের’ কথা!

আলী হাবিব : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০২৩

ভীষণ লজ্জা পেয়েছেন বিএনপি মহাসচিব। লজ্জায় নাকি তাঁর মুখ দেখানোর জো নেই! হঠাৎ তিনি এমন লজ্জা পেলেন কেন? ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে যে মূল্যায়ন প্রকাশ করা হয়েছে, তা দেখে তিনি ‘লজ্জা’ পেয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘দেশে একদলীয় শাসন কায়েমের চেষ্টা চলছে’, মানুষের ‘অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে’, সাংবাদিকদের ‘সত্য কথা লেখার অধিকার নেই’!

লজ্জা পাওয়াটা মানুষের একটা অনুভূতির ব্যাপার। যে মানুষের অনুভূতিশক্তি আছে, সে লজ্জা পাবে, তার ক্রোধ হবে। অনুভূতিহীন মানুষকে তো স্বাভাবিক বলা যাবে না। বিএনপি মহাসচিবের এই লজ্জা পাওয়ার ঘটনায় আমরা বুঝতে পারছি তিনি এবং তাঁর দলের সবাই অনুভূতিশীল মানুষ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ২০০১ সালে তাঁদের এই অনুভূতি কোথায় ছিল?

২০০১ সালে একটি সাধারণ নির্বাচন হয়েছিল। সেই সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। নির্বাচনের ফল প্রকাশের আগেই শুরু হয় চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষণ ও দখলবাজি। দলের কর্মী-সমর্থকরা সারা দেশে একটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক সহিংসতা শুরু করে। শুরু করে যৌনসন্ত্রাস। এসবের নেপথ্যের কারণ ছিল রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা ও দলে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অনুপস্থিতি। রাজনৈতিক পরিচয় ছিল ধর্ষকদের রক্ষাকবচ। সেই সময়ে জামায়াত-বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন আলতাফ হোসেন চৌধুরী। তাঁকে সেই সময় একজন সাংবাদিক এই ধর্ষণের ঘটনাগুলো সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলেন। খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ওই সাংবাদিককে বলেছিলেন, ‘আপনি কি নিজের চোখে কাউকে ধর্ষিত হতে দেখেছেন? আমি তো দেখিনি। যদি নিজের চোখে দেখে থাকেন, তাহলে উল্লেখ করেন।’ মানুষের বিবেকবোধ কোথায় নামলে এ ধরনের মন্তব্য করা যায়?

অর্থাৎ বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের মন্ত্রসিদ্ধ এই অবসরপ্রাপ্ত এয়ার ভাইস মার্শালের যুক্তি ছিল, যেহেতু তাঁর সামনে কেউ ধর্ষিত হয়নি, কাজেই ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বাংলাদেশে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে পাঠকের মনে আছে তো? জামায়াত-বিএনপি জোট সরকারের আমলে ২০০২ সালে রাজধানীতে বাবার কোলে থাকা ২০ মাসের শিশু ছিনতাইকারীদের গুলিতে নিহত হওয়ার পর শোকার্ত পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে এই ভদ্রলোক বলেছিলেন, ‘আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছে!’ এর পর থেকে ভদ্রলোক ‘আল্লাহর মাল’ নামে বিশেষ পরিচিতি পান। আমাদের প্রশ্ন বিএনপি মহাসচিবের কাছে, তিনি তাঁদের এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায় তখন লজ্জা পেয়েছিলেন? নাকি এই অনুভূতি তখন তাঁর ছিল না। অনুভূতিহীন মানুষ কিন্তু স্বাভাবিক নয়। আচ্ছা, অনুভূতি প্রকাশের অধিকার তখন তাঁর ছিল তো?

যা হোক, বিএনপি মহাসচিবের আজকের অনুভূতি কিংবা আলতাফ হোসেন চৌধুরীর সেদিনের অনুভূতি প্রকাশ কিন্তু নিছকই দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার; সেটা নৈতিক কিংবা রাজনৈতিক, যেটাই হোক না কেন। দৃষ্টিভঙ্গি বলতে আমরা কী বুঝি? রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় দুই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি পাওয়া যায়—ঐতিহ্যগত দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি। আবার আমাদের সমাজে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিও আছে। দেখারও রকমফের আছে। মূল বিষয় হচ্ছে, আমরা কিভাবে দেখছি। যেমন বিএনপি সব কিছুতেই ষড়যন্ত্র দেখে। দলটির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য সম্প্রতি বলেছেন, ‘সরকার ফের পুরনো খেলায় মেতেছে। পুরনো ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।’

আবার এ দেশের বুদ্ধিজীবী মহলের কারণে কষ্টে আছেন বিএনপি মহাসচিব। তাঁর নাকি মাঝেমধ্যে খুব কষ্ট হয়। কারণ এ দেশের কিছু বুদ্ধিজীবী, বিভিন্ন পেশার মানুষ আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার সরকারকে সমর্থন করে কথা বলে। সেদিন এক আলোচনাসভায় বিএনপি মহাসচিব আক্ষেপ করে বলেছেন, তিনি এই বাংলাদেশ চাননি। আর সে কারণেই তাঁর স্লোগান ‘টেইক ব্যাক বাংলাদেশ’। সেটা কোন বাংলাদেশ? ২০০১ সাল-পরবর্তী ফ্যাসিবাদী, স্বৈরতান্ত্রিক, কর্তৃত্ববাদী বিএনপি সরকারের বাংলাদেশ? সেটা কি ওই ‘আল্লাহর মাল’দের বাংলাদেশ? বিএনপির এই দায়িত্বশীল নেতারা কোথায় নিয়ে যেতে চান বাংলাদেশকে? কোন বাংলাদেশকে ফিরে পেতে চান তাঁরা? পাকিস্তান জিন্দাবাদের বাংলাদেশে কি ফিরতে চান? কোথায় তাঁরা ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান বাংলাদেশকে? তথাকথিত বহুদলীয় রাজনীতির নামে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করার দিনগুলোতে? বিএনপি মহাসচিব বলছেন, এই বাংলাদেশ চাননি তিনি। কোন দেশ চেয়েছেন? যুদ্ধাপরাধীদের গাড়ি ও বাড়িতে জাতীয় পতাকা ওড়ানোর বাংলাদেশ? হুট করে বাংলাদেশে ১০ ট্রাক অস্ত্র ঢুকে পড়া বাংলাদেশ ফিরে পেতে চান তাঁরা? ব্যাখ্যা নেই তাঁদের। এ নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুললে তাঁরা আবার ক্ষুব্ধ হন। যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদন ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে সংসদীয় গণতন্ত্রের সরকার গঠন হয়, যেখানে বেশির ভাগ ক্ষমতা ন্যস্ত প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের কাছে।’ সে কারণেই কি মির্জা ফখরুলদের ‘টেইক ব্যাক বাংলাদেশ’ স্লোগান? ২০০১ সালে তো প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সমান্তরালে ছিল ‘হাওয়া ভবন’। সরকারের সমান্তরাল সেই হাওয়া ভবনের কর্তৃত্ববাদী সময়ে কি তাঁরা বাংলাদেশকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান? বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদীরা কি গণতন্ত্রের আবহাওয়ায় আবার নতুন করে দুর্নীতির ‘হাওয়া ভবন’ ফিরিয়ে আনার স্বপ্নে বিভোর?

যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে যে মূল্যায়ন প্রকাশ করা হয়েছে, তা দেখে বিএনপি মহাসচিব মনে করছেন, একটা ভয়াবহ চিত্র এই রিপোর্টের মধ্যে এসেছে। ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর ঘটে যাওয়া কিছু ভয়াবহ ঘটনার চিত্র আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করি। সেই সময়ের সংঘটিত জামায়াত-বিএনপি চক্রের যৌনসন্ত্রাসের কথা কি বাংলাদেশ ভুলে গেছে? পূর্ণিমা, মহিমা, ফাহিমা, সাবিনা—এমন আরো অনেকের নামই তো মনে করা যায়। সেই সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, ২০০১ সালের ১ থেকে ২০ অক্টোবরের মধ্যে ১০০টির মতো ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।

২০০১ সালের ১৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের নাজিরহাট কলেজের অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তখন তো তাঁরা লজ্জা পাননি! তখনকার বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদীদের কাউকে তো মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দেখা যায়নি। ধরে নেওয়া যাক, তখন তাঁরা অনুভূতিহীন ছিলেন। কিন্তু এখন তো তাঁদের অনুভূতিশক্তি আবার ফিরে এসেছে। এখন কি তাঁরা সেসব দিনের জন্য লজ্জিত হচ্ছেন? এসব প্রশ্নের জবাব জানা দরকার। আরেকটি নির্বাচন এগিয়ে আসছে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের রাজনৈতিক দৌরাত্ম্যের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসা দরকার। আজকের ভালো মানুষের মুখোশের আড়ালে সেদিনের ধর্ষক-উত্পীড়ক-দখলবাজদের পরিচিতি নতুন করে জানানো রাজনৈতিক কারণেই জরুরি।

লেখক : আলী হাবিব – সাংবাদিক, ছড়াকার

সূত্র- কালের কণ্ঠ


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ