1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বাবা-মায়ের যত্নের বাইরে ৩৪ লাখ পথশিশু

নিউজ এডিটর : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

সারা দেশে ৩৪ লাখের বেশি পথশিশু বাবা-মায়ের যত্ন ছাড়াই জীবনযাপন করছে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও ইউনিসেফ বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে ‘চাইল্ড সেনসিটিভ সোশ্যাল প্রোটেকশন ইন বাংলাদেশ ফেইজ-২’ প্রকল্পের অধীনে গবেষণাটি পরিচালিত হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি। গতকাল সোমবার বিকেলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় এই গবেষণাপত্রের মোড়ক উন্মোচন করেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি।

‘বাংলাদেশে পথশিশুদের পরিস্থিতি-২০২৪’ শীর্ষক এই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চরম দারিদ্র্য, পারিবারিক অস্থিরতা এবং শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের পটভূমি থেকে বেড়ে ওঠা শুরু হয়

পথশিশুদের। অর্থনৈতিক চাপ প্রায়ই এসব শিশুকে শ্রমে বাধ্য করে, তাদের শিক্ষার সুযোগ কমিয়ে দেয় এবং দারিদ্র্যের একটি চক্রকে স্থায়ী করে। পিতা-মাতার অবহেলা, অপব্যবহার এবং পরিত্যাগসহ পারিবারিক কর্মহীনতা সরাসরি তাদের রাস্তায় বেরিয়ে আসতে প্রভাবিত করে। গবেষণাপত্রে বলা হয়, পথশিশুরা বেঁচে থাকার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে, যার মধ্যে রয়েছে জনগণের সহানুভূতি চাওয়া, অনানুষ্ঠানিক শ্রমে জড়িত হওয়া এবং কিছু ক্ষেত্রে অবৈধ কার্যকলাপের অবলম্বন করে।

অনুষ্ঠানে দীপু মনি বলেন, গবেষণায় বলা হয়েছে ৩৪ লাখের মতো শিশু সারা দেশে পথশিশু হিসেবে রয়েছে। এই শিশুরা সমাজের অংশ। তাদের জীবনের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে সব মৌলিক অধিকার রয়েছে। তারা এসব অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে, এটা কাম্য নয়। তবে বাস্তবতা হলো বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই পথশিশু রয়েছে। যুদ্ধবিগ্রহের কারণে অনেক দেশে পথশিশুর সংখ্যা বাড়ছে। আমরা চাই, সারা বিশ্বের শিশুরাই যেন তাদের অধিকার পায়।

তিনি বলেন, আমাদের সমাজে দারিদ্র্য এখনো আছে। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের কারণে কিছুটা কমে এসেছে। বর্তমানে দেশে হতদরিদ্রের পরিমাণ ৫ দশমিক ৬ ভাগ। এই সংখ্যা একসময় শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে। শুধু দরিদ্রতাই নয়, অন্য যেসব কারণে পথশিশু বাড়ে, সেই কারণগুলো নিয়েও কাজ করতে হবে। শিশুরা যেসব বিপজ্জনক কাজে জড়িত, তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সরকার কাজ করছে।

পথশিশুর সংখ্যা কমিয়ে আনতে সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে সমাজকল্যাণমন্ত্রী বলেন, আমাদের কোটি খানেক মধ্যবিত্ত পরিবার রয়েছে। পথশিশু রয়েছে ৩৪ লাখ। একেকটি পরিবার যদি একেকটি পথশিশুর দায়িত্ব নেয়, তাহলে এই সমস্যা থাকবে না। সরকার ও এনজিওগুলো কাজ করছেই, এর সঙ্গে সমাজের মানুষেরা এগিয়ে এলে এসব শিশুর জীবন বদলে যাবে।

অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি বলেন, পথশিশুদের জীবনের গল্প বোঝা আমাদের সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তারা ভালোবাসা ও যত্ন ছাড়া বড় হয়। তাদের জীবনমান উন্নয়নে আমাদের কাজ করতে হবে। সমাজের বিত্তশালীদেরও দান করার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। সরকারের সঙ্গে এসব বিত্তশালী এগিয়ে এলে পথশিশুদের সংখ্যা অনেক কমে আসবে।

বাংলাদেশে অনেক পথশিশু থাকার তথ্য দিয়ে ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, তাদের জীবন আমাদের থেকে অনেক আলাদা এবং কঠিন। এই রিপোর্টের মাধ্যমে এসব শিশুর প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। এই রিপোর্টে শুধু চ্যালেঞ্জগুলোই তুলে ধরা হয়নি; বরং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপায়ও বলে দেওয়া হয়েছে। পথশিশুরা তাদের দৈনন্দিন জীবনে যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হচ্ছে তা মোকাবিলার জন্য একটি সমন্বিত নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জন্য সুপারিশও করা হয়েছে।

ইউনিসেফ বাংলাদেশের চাইল্ড প্রোটেকশন সেকশন চিফ নাটালি ম্যাক্কলি বলেন, পথশিশুদের বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। মানুষ যেন এসব শিশুর প্রতি সহানুভূতিশীল হয়, তার জন্য সচেতনতার প্রয়োজন। একই সঙ্গে এসব শিশুর জন্য সরকারি প্রকল্প নিতে হবে। শিশুদের জীবনমান উন্নয়নে সরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

গবেষণাপত্রে কিছু সুপারিশও করা হয়েছে। সুপারিশে পারিবারিক ভাঙনের মূল কারণগুলোকে লক্ষ্য করে সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অরক্ষিত পরিবারের জন্য অর্থনৈতিক সহায়তা, কাউন্সেলিং এবং শিক্ষায় প্রবেশাধিকার প্রদানের নিশ্চয়তা চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষা ও দক্ষতা বিকাশের সুবিধার্থে পথশিশুদের জন্য উপযোগী শিক্ষা এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করার কথা বলা হয়েছে সুপারিশে। পাশাপাশি নারী ও শিশুদের জন্য সুরক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালী ও প্রসারিত করা, আইনি ও সামাজিক সুরক্ষার উন্নতি করা, জনসচেতনতা ও অন্তর্ভুক্তি বাড়ানো এবং সরকার থেকে এসব শিশু ও নারীদের জন্য তহবিল বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু সালেহ্ মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারক, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব খায়রুল আলম শেখ, সিএসপিবি (ফেইজ-টু) জাতীয় প্রকল্প পরিচালক ছরোয়ার হোসেন।

এর আগে সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি ইউনিসেফ আয়োজিত ‘অবছায়ায় ধ্বনি’ শীর্ষক সপ্তাহব্যাপী চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় (গ্যালারি ৭, ৪র্থ তলা) ১৮ থেকে ২৩ মার্চ এই প্রদর্শনী চলবে।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ