1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ফুটপাতের পাশাপাশি ভাড়া হচ্ছে রাস্তাও, চাঁদা তোলে লাইনম্যান!

নিউজ এডিটর : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ২০ মার্চ, ২০২৪

যেখানেই ফুটপাত, সেখানেই হকার। যেখানে হকার, সেখানেই লাইনম্যান। আর যেখানেই লাইনম্যান, সেখানেই চাঁদাবাজি। রাজধানীর কেবল ফুটপাত নয়, অনেক এলাকার সড়ক দখল করে চলছে চাঁদাবাজি। এই টাকা যাচ্ছে কতিপয় পুলিশ, রাজনীতিবিদসহ অসাধু কর্মকর্তাদের পকেটে। গবেষণা বলছে, দুই সিটিতে প্রতিবছর ফুটপাতকেন্দ্রিক চাঁদাবাজি হয় তিন হাজার ৭০০ কোটি টাকা।

১৮ মার্চ, সোমবার। রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার ফুটপাত এবং সড়কের হকারদের কাছ থেকে চাঁদা তুলছেন এক ব্যক্তি। এই প্রতিবেদক তাকে অনুসরণ করে প্রায় এক ঘণ্টা। এই সময়ের মধ্যে অন্তত অর্ধশতাধিক দোকান থেকে চাঁদা তুলতে দেখা যায় তাকে।

অনুসরণ করতে গিয়েই হঠাৎ দেখা মেলে আরেকজনের। একই হকারদের কাছ থেকে দ্বিতীয় দফা চাঁদা তুলছেন তিনি। তার নাম-পরিচয় নিশ্চিত হয় এই প্রতিবেদক। তিনি নিউ মার্কেট পূর্ব ফাঁড়ির কনস্টেবল ফরহাদ।

এবার তৃতীয় ব্যক্তির আগমন। দোকান ঘুরে ঘুরে তিনিও ব্যস্ত চাঁদা তুলতে। তবে অনেকটাই কৌশলী। কিছুক্ষণের মধ্যেই আসে চতুর্থ ব্যক্তি। হকারদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া যায়, এই ব্যক্তি নিউমার্কেটের একজন চিহ্নিত লাইনম্যান। ততক্ষণে প্রতিবেদকের উপস্থিতি টের পেয়ে সতর্ক সেই বিশিষ্ট লাইনম্যান। চাঁদা না তুলে এদিক সেদিক ঘুরতে থাকেন তিনি।

এবার আসা যাক গুলিস্তানে। গোলাপশাহ মাজারের সামনে দেখা গেল ফুটপাত এবং সড়কে থাকা দোকানে রেকারিংয়ের নামে জরিমানা করা হচ্ছে ১২০০ টাকা করে। হকারদের দাবি দোকান প্রতি লাইনম্যানের চাঁদার বাইরেও গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা।

কিছুদিন আগে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র এই সড়কটিতে একপাশে ঘোড়া দাঁড়ানোর জায়গা এবং অন্যপাশে রিকশা দাঁড়ানোর জায়গা উদ্বোধন করেন। সেই জায়গাটিও এখন হকারদের দখলে। ঘোড়ার গাড়িগুলো এখন দাঁড়িয়ে থাকে মূল সড়কে।

এই প্রতিবেদকের উপস্থিতি টের পেয়ে তৎপর হয় পুলিশ। রাস্তায় থাকা হকাররা এবার জায়গা নেন রোড ডিভাইডারের উপর।

এবার যাওয়া যাক মিরপুরে। এখানকার বেশিরভাগ ফুটপাত বছরের পর বছর হকারদের দখলে থাকলেও কিছু সড়ক স্থায়ীভাবে হারিয়ে গেছে। যেমন মিরপুর ১০ নম্বরের একটি সড়ক দিয়ে এখন আর কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারে না।

অবস্থা দেখে বুঝার উপায় নেই এটি রাস্তা নাকি মার্কেট। যদিও কাগজে-কলমে এটি রাস্তাই আছে। স্থানীয়রাও বলছেন, এক সময় এটি রাস্তাই ছিল। সরকারি এই রাস্তাটি ভাড়া দেয়া হয়েছে হকারদের কাছে। কিন্তু সরকারি রাস্তা ভাড়া দিলো কারা? মুখ খুলতে নারাজ হকাররা। অথচ দিনের পর দিন, মাসের পর মাস তারা নিয়মিত দিয়ে যাচ্ছেন চাঁদা।

এখানে একটি দোকান নিতে ভিটে ভাড়া দিতে হয় ৫০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা। আর ফুটপাত বাণিজ্যের পেছনে আছে কয়েকজন কাউন্সিলর। হকাররা জানান, প্রতিদিন ৩০০ টাকা দিতে হয় তাদের। যা পুলিশ এবং রাজনীতিবিদদের মধ্যে ভাগাভাগি হয়। এমনকি স্থানীয় সংসদ সদস্যও তাদের কাছে অসহায়।

এসময় জহিরুল ইসলাম মানিক নামে এক নেতার কথাও বলেন হকাররা। যিনি এই পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণ করেন। মাসের টাকা মাসে বাড়িতে বসেই পেয়ে থাকেন। এমনকি এই রাস্তা বন্ধের পেছনেও তার হাত আছে।

এই চাঁদার হার আবার রোজার মাসে পাল্টে যায়। স্বাভাবিক সময়ে যে হারে চাঁদা দিতে হয় ঈদের সময় তা বেড়ে যায় কয়েকগুণ- এমন দাবি করেছেন বাংলাদেশ হকার্স লীগের সভাপতি আবুল কাসেম।

তিনি বলেন, যেখানে চাঁদা আছে ১০০, সেখানে হয়ে যায় ৪০০। যেখানে আছে এক হাজার সেখানে হয়ে যায় কমপক্ষে আড়াই থেকে তিন হাজার।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত বছরে আগের এক গবেষণা বলছে, ফুটপাতকেন্দ্রীক চাঁদাবাজির টাকা যায় পুলিশ, রাজনৈতিক ব্যক্তি এবং লাইনম্যানদের পকেটে। বছরে চাঁদাবাজি হয় ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকারও বেশি।

গবেষণা দলের প্রধান ড. মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ বলেন, চাঁদার টাকার বড় একটা ভাগ পায় পুলিশ। আর পুরো ব্যবস্থাপনার পেছনে আছে স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিরা।

নীতি-নৈতিকতাহীন লোকজন যে কোনো সুবিধা নিতে পারে বলে মনে করছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) ড. খঃ মহিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, সকল কর্মকর্তার ন্যায়সঙ্গত থাকার নির্দেশনা রয়েছে। বলা হয়েছে, আন্তরিকতার সাথে সবাই যেন কাজটা করে। দেশ এবং মানুষের সেবা করে।

সিটি করপোরেশন, এমনকি পুলিশ বাদী হয়েও একাধিক মামলা হয়েছে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে। কিন্তু ঘুরে ফিরে তারাই চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ