1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ভুটানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘিরে কুড়িগ্রামে নতুন সম্ভাবনা

ডেস্ক রিপোর্ট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ২৪ মার্চ, ২০২৪

উত্তরের সীমান্তবর্তী কুড়িগ্রাম জেলার সদর উপজেলায় ধরলা নদীর পাশে মাধবরাম গ্রামে গড়ে উঠতে যাচ্ছে ‘ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’। এজন্য আগামী ২৮ মার্চ কুড়িগ্রাম সফরে আসছেন ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুক। বাংলাদেশ ও ভুটান সরকারের যৌথ উদ্যোগে জিটুজি-ভিত্তিক প্রস্তাবিত ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শনে আসছেন তিনি। সবকিছু ঠিক থাকলে এটিই হবে কুড়িগ্রামে প্রথমবারের মতো কোনও বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানের সফর।

এখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠলে ভুটান ও বাংলাদেশের জনগণ উপকৃত হবে। বিশেষ করে কুড়িগ্রামের মানুষ সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে। এর মধ্য দিয়ে এই অঞ্চল ঘিরে তৈরি হচ্ছে নতুন সম্ভাবনা।

সফরসূচি থেকে জানা গেছে, ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুক আগামী ২৫ মার্চ একটি বিশেষ বিমানে তিন দিনের সফরে বাংলাদেশ আসবেন। ঢাকায় অবস্থানকালে তিনি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করবেন। ২৮ মার্চ ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করবেন। ওই দিনই ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে ভারত হয়ে ভুটানে ফিরবেন তিনি।

এদিকে, অর্থনৈতিক অঞ্চল দ্রুত বাস্তবায়ন হচ্ছে জেনে খুশি কুড়িগ্রামবাসী। এখানে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অঞ্চল ও বাণিজ্যিক হাব হওয়ার মধ্য দিয়ে আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতি হবে বলে জানালেন বিশিষ্টজনরা।

তারা বলেছেন, ভুটানের রাজার কুড়িগ্রাম সফর বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। তার সফর এখানের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও বাণিজ্যিক বিকাশে মাইলফলক সৃষ্টি করবে। অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হলে কুড়িগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জোন হিসেবে পরিচিতি পাবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন হবে। শিল্পায়ন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হলে আগামী এক দশকের মধ্যে কুড়িগ্রাম এই অঞ্চলের অন্যতম শীর্ষ জেলা হবে। সবমিলিয়ে অনন্য রোডম্যাপে উঠতে যাচ্ছে কুড়িগ্রাম। নদ-নদী ও চরাঞ্চল অধ্যুষিত এই জেলায় কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানাসহ শিল্পায়নের সুযোগ সৃষ্টি হবে। কুড়িগ্রাম-ভুটান বাণিজ্যিক সম্পর্কের পাশাপাশি ভারতের সেভেন সিস্টার্স-খ্যাত অঞ্চলগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক যোগাযোগের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

এ বিষয়ে একুশে পদকপ্রাপ্ত ও স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত কুড়িগ্রামের আইনজীবী এবং সমাজকর্মী এসএম আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই ভুটানের রাজাকে কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হলে মানুষের কাছে কুড়িগ্রাম হবে অন্যতম জেলা।’

দেশের সবচেয়ে গরিব জেলার ‘অপবাদ’ ঘুচে যাবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এই জেলায় এখন গৃহপরিচারিকা পাওয়া যায় না। এখানকার বৃহৎ জনগোষ্ঠী বাইরে কাজ করতে যায়। তার মানে এখানকার মানুষ অলস নয়। কাজের সুযোগ পেলেই কাজ করেন। অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কর্মের এই সুযোগ সৃষ্টি জেলার দারিদ্র্যের হার বদলে দেবে। যখন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসবে তখন মানসম্পন্ন শিক্ষাগ্রহণে নাগরিকের চেষ্টা থাকবে। মানুষ আরও উন্নত জীবনে যাবে।’

অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কুড়িগ্রাম আগামী এক দশকে এই অঞ্চলের নেতৃস্থানীয় জেলায় পরিণত হবে জানিয়ে লিংকন বলেন, ‘ভুটান আসছে মানে এখানে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। এটিকে ধরে জেলাটি আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বড় অ্যাভিনিউ হতে যাচ্ছে। বলা যায়, একটি আন্তর্জাতিক গেটওয়ে হবে, আন্তর্জাতিক হাব হিসেবে কাজ করবে। জেলার সার্বিক চিত্র বদলে যাবে। সামগ্রিকভাবে জাগরণ তৈরি হবে। তবে সবকিছুর জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন করতে হবে। রেল, নৌ, সড়ক যোগাযোগের পাশাপাশি লালমনিরহাট বিমানবন্দরটি চালু করে আকাশপথেও যোগাযোগ সহজ করতে হবে। এসবের মধ্য দিয়ে আগামী এক দশকে রংপুর অঞ্চলে কুড়িগ্রাম নেতৃস্থানীয় জেলায় রূপ নেবে।’

অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘিরে কুড়িগ্রাম বাণিজ্যিক হাব হতে যাচ্ছে উল্লেখ করে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. একেএম জাকির হোসেন বলেন, ‘এটি বিরাট সুখবর। কুড়িগ্রাম বাণিজ্যিক হাব হবে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও অর্থনৈতিক অঞ্চল নিবিড়ভাবে কাজ করবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলে কৃষিভিত্তিক যেসব ইন্ডাস্ট্রি থাকবে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ইন্টার্নশিপে যুক্ত হবে। সবমিলিয়ে এই অঞ্চলের আর্থসামাজিক অবস্থার চিত্র ইতিবাচকভাবে বদলে যাবে।’

ভুটান অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘিরে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে কুড়িগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আব্দুল আজিজ মিয়া বলেন, ‘অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে কুড়িগ্রামের বেকারত্ব নিরসন হবে। বাইরে থেকে যদি বিনিয়োগ হয়, উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীরা আসেন তাহলে ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠবে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। সেইসঙ্গে এখানে মাল্টিপল ডেভেলপমেন্ট হবে।’

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের মে মাসে লন্ডনে ভুটানের রাজা ও রানীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সভায় কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রস্তাবিত ‘ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ স্থাপনের জন্য জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে ধরলা ব্রিজের পূর্বে কুড়িগ্রাম-ভূরুঙ্গামারী সড়কের পূর্ব পাশে অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য জায়গা নির্ধারণ জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে সদরের ভোগডাঙা ইউনিয়নের মাধবরাম মৌজার অন্তর্ভুক্ত ১৩৩ দশমিক ৯২ একর খাস জমি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করেছে জেলা প্রশাসন। ধরলা ব্রিজের পূর্ব প্রান্তে সৈয়দ ফজলুল করিম (রহ.) জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার উত্তর-পূর্ব দিকে এই খাস জমির অবস্থান। প্রয়োজনে ওই স্থানে জমি অধিগ্রহণেরও সুযোগ রয়েছে।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ