1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বাঙালিদের জন্য স্বাধীনতা যে কারণে জরুরি ছিল

নিউজ এডিটর : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

বঙ্গবন্ধু সাহসী এক মহান সংগ্রামী বীর। শত্রুর মুখোমুখি হতে কখনো পিছপা হননি। রাজনৈতিক জীবনে বহুবার গ্রেফতার হয়েছেন, কিন্তু কখনো আত্মগোপন করেননি। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও ২৫ মার্চের সেই ভয়াবহ রাতে বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাননি। দেশ ও মানুষের প্রতি অসীম ভালোবাসা, মানবিকতা ও অসীম সাহসিকতার অসামান্য ব্যক্তিত্ব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জয় করেছিলেন বাংলার ধনী-গরিব, কবি-সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের হৃদয়। তাই বঙ্গবন্ধু আমাদের মহান নেতা। তাঁরই নেতৃত্বে স্বাধিকারের জন্য দীর্ঘ ২৩ বছর আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি আমরা। তারই আহ্বানে ১৯৭১ সালে বাংলার মুক্তিকামী মানুষ এ দেশের অস্ত্রহাতে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। শত্রুর কাছে থেকে ছিনিয়ে এনেছে বিজয়। এনেছে লাল-সবুজের পতাকার স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ তাই এক ও অবিচ্ছেদ্য অংশ।বাঙালিদের জন্য স্বাধীনতা সবসময়ই জরুরি ছিল। ১৯৪৭ সালের দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ ভাগ হয়।

ভারত ও পাকিস্তান। ১৯৪৭ সালের পাকিস্তানের স্বাধীনতার পরও বাংলাদেশের স্বাধীনতা জরুরি হয়ে উঠেছিল নানাবিধ কারণে। প্রথম কারণ জাতিগত প্রশ্নের মীমাংসা করা ছিল জরুরি। পাকিস্তান শুরুতেই নিপীড়ন চালিয়েছে বাঙালির ওপরে, বাঙালি জাতিসত্তার ওপরে। কী নিষ্ঠুর সেই নিপীড়ন ও শোষণ। রাষ্ট্রক্ষমতা যাদের দখলে ছিল তারা কেবল যে অবাঙালি ছিল তা নয়, তারা বাঙালিবিদ্বেষী ছিল এবং যে যেভাবে পেরেছে শোষণ আর নিপীড়নে শেষ করেছে এ দেশকে, এ দেশের মানুষকে তা আজও এ দেশের মানুষ মনে রেখেছে। শাসনব্যবস্থার পুরোটাই ছিল এই বাঙালিবিদ্বেষীদের হাতে। সামরিক বাহিনী, আমলাতন্ত্র, পুলিশ, আদালত, জেলখানা-সবই তাদের অধীনে। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অর্থনীতি সবকিছু তারাই নিয়ন্ত্রণ করত। প্রচারমাধ্যমও ছিল তাদের দখলে। শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তারা হাতে রাখতে চাইত সবসময় এবং তার জন্য যা যা করা দরকার তাই করেছে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী।

১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ হওয়ার পর স্বাধীনতা একবার এসেছিল। নতুন রাষ্ট্র, সংবিধান, রাজধানী, পতাকা, দালানকোঠা ক্ষমতায় নতুন মানুষ-সবই হলো, ভূখণ্ডও পাওয়া গেল কিন্তু যে জন্য মানুষ পাকিস্তানের পক্ষে ভোট দিয়েছিল সেই আশাটাও মিটল না এবং কল্যাণ রাষ্ট্রের স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল। জনগণের মুক্তি এলো না বা বাঙালি কিছুই পেল না। পাকিস্তানের দুই অঞ্চলের মধ্যে শত শত মাইলের দূরত্ব ছিল যোজন যোজন ব্যবধান কিন্তু ওই দূরত্বের কারণে পাকিস্তান ভাঙেনি, সামরিক বাহিনী, আমলাতন্ত্র, জুলফিকার আলী ভুট্টো ওদের নির্বুদ্ধিতার কারণেও নয়, বলাই যায় পাকিস্তান ভেঙেছে বৈষম্যের কারণে। এক অংশ সব ক্ষমতা দখল করে রেখেছিল এবং সবকিছু করায়ত্ত রেখে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাচ্ছিল। বাংলাদেশের মানুষের ওপর জাতিগত নিপীড়ন ও শোষণ চলছিল তা ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছিল। নিপীড়ন ও শোষণের কারণে বাংলাদেশ শ্মশানে পরিণত হওয়ার উপক্রম হয়ে যায়। এজন্য তো মানুষ দেশ বিভাগ চায়নি। এ দেশের মানুষ অধিকার নিয়ে বাঁচতে চেয়েছে। দাবির ব্যাপারটা প্রথমে স্পষ্ট ছিল না তাদের কাছে, ঘটনাচক্র এ দেশের মানুষকে শিখিয়ে দিল যে পুরোনো রাষ্ট্রে তাদের মুক্তি নেই। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর প্রশ্ন দাঁড়াল আমাদের মুক্তি কীভাবে আসবে? আসার একটা পথ বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধানে দেওয়া হয়েছিল। চারটি মূলনীতি উল্লেখ করা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের ভেতর থেকে সেগুলো পরিণত হয়েছিল রাষ্ট্রের মূলনীতিতে। কিন্তু পথের দিশা সংবিধানে থাকাই তো যথেষ্ট নয়, পথটা বাস্তব ক্ষেত্রে গড়ে তোলা অনিবার্য ছিল। উপযুক্ত ব্যক্তি ও সংগঠনের প্রয়োজন ছিল।

১৯৪৭ সাল থেকেই বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালি জাতির প্রধান আকর্ষণ। বাঙালি জাতির মুক্তির ইতিহাস তাঁকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে। তরুণ শেখ মুজিব ধীরে ধীরে হয়ে উঠলেন বাঙালি জাতির মুক্তিদাতা। নতুন রাজনৈতিক চিন্তাচেতনা নিয়ে ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ গঠন করেন। ১৯৪৯ সালে নবগঠিত পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দারি আন্দোলনে অংশ নেওয়ার মাধ্যমেই রাজনৈতিক তৎপরতার সূচনা হয়। এরপর ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট গঠন, ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন ও ১৯৬৬ সালের ঐতিহাসিক ছয় দফাভিত্তিক আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা।

বঙ্গবন্ধু তাঁর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বের কারণে একাত্তরের মার্চের শুরুতেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ আমাদের অনিবার্য। তাই তিনি একাত্তরের ৭ মার্চ বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। এ ভাষণে বাঙালির প্রতি পাকিস্তানিদের হত্যা-নিপীড়ন-নির্যাতনের চিত্র মূর্ত হয়ে ওঠে। শত্রুর মোকাবিলায় তিনি বাঙালি জাতিকে নির্দেশ দেন, ‘তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো।’ জাতির পিতার এই সম্মোহনী ভাষণে অনুপ্রাণিত হয়ে বাঙালি জাতি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।

৭ মার্চের মাত্র ১৯ মিনিটের এই পৃথিবী কাঁপানো বজ্রকণ্ঠের ঐতিহাসিক জ্বালাময়ী ভাষণ ছিল বাঙালির হাজার বছরের আবেগ, হাজার বছরের স্বপ্নের বাণী, হাজার বছরের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন, যা ছিল বাঙালিকে মুক্ত করার দৃঢ়প্রতিজ্ঞা। দৃপ্তকণ্ঠে বঙ্গবন্ধু উচ্চারণ করলেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ।’

অনেকে বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন। কখনো তাঁরা বিচার করেন না, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দ্বারা পরিচালিত স্বাধীন দেশের অভ্যন্তর থেকে বিদেশি হানাদার-শত্রু বিতাড়নের একটি যুদ্ধ। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীন হওয়ার পর আমাদের ৯ মাস সময় লেগেছিল ওই শত্রুদের বিতাড়ন করতে। আমরা ওদের বিতাড়ন করতে সক্ষম হই বলেই ১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবস।

২৬ মার্চ বাংলাদেশের নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন, ওই ঘোষণাই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের ভিত্তিভূমি, অর্থাৎ ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণাকে ভিত্তি ধরে ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার পূর্ণাঙ্গ ঘোষণাপত্র বা বাংলাদেশের সংবিধানের মাতৃকোষ ঘোষিত হয় এবং স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়। এই ঘোষণাপত্রের ওপর ভিত্তি করেই বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ সংবিধান রচিত হয়। তাই ১৯৭১ সালে ৯ মাস বাংলাদেশে যে যুদ্ধ হয় তা ছিল নিজ স্বাধীন দেশকে হানাদার বাহিনী থেকে মুক্ত করার যুদ্ধ। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ভেতর দিয়ে আসা একটি স্বাধীন দেশের জন্য সব মানুষ এই যুদ্ধ করে। স্বাধীন বাংলাদেশ নামক যে দেশটি ২৬ মার্চ, ১৯৭১ সালে জন্ম নিল, এই দেশ বা রাষ্ট্রটি যে নির্বাচনের ভেতর দিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত তা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বা বাংলাদেশের সংবিধানের মাতৃজনন কোষে স্পষ্ট ভাষায় উল্লিখিত। এই ঘোষণা ও স্বীকৃতি চাওয়ার কাজটি ছিল প্রকাশ্যে এবং নির্বাচিত নেতা হিসেবে। তাই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যখন বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে তখন তারা একটি স্বাধীন দেশের নির্বাচিত সরকারপ্রধানকে গ্রেফতার করে। বঙ্গবন্ধু প্রমাণ করেন, তিনি বা তাঁর দল বিচ্ছিন্নতাবাদী নয়। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু প্রকাশ্যে এভাবে গ্রেফতার হওয়ার ভেতর দিয়ে, স্বাধীনতা ঘোষণার পরে এই দেশটির আর বাকি যে বিজয় অর্জন করার ছিল তার বেশিরভাগ তিনি একাই করেন। বিশ্বে প্রায় এককভাবে লড়াই করেন গ্রেফতার হওয়া নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

যেকোনো মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা সংগ্রাম যেমন দেশের মানুষের আত্মত্যাগের মাধ্যমে হয়, তেমনি তার সঙ্গে সহযোদ্ধা হিসেবে পাশে দাঁড়ায় সারা পৃথিবীর মুক্তিকামী মানুষ। সারা পৃথিবীর মুক্তিকামী মানুষকে সেদিন বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়ানোর নায্যতা দিয়েছিলেন বন্দি স্বাধীন রাষ্ট্রপ্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

জনগণের কূটনীতিতে সেদিন ইয়াহিয়াকে পরাজিত করেছিলেন বন্দি বঙ্গবন্ধু। অর্থাৎ নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির মধ্য দিয়ে সরকার গঠন করে, সশস্ত্র পথে হানাদার তাড়ানোর যুদ্ধে সেদিন বঙ্গবন্ধুর কূটনীতির কাছে হেরে যায় পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ। বিজয়ী হন বঙ্গবন্ধু, রূপান্তরিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে। অনেকেই ভুল করে বলেন, বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন।

তবে ভারত, রাশিয়াসহ বিশ্ববিবেকের সমর্থন না পেলে ৯ মাসে স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব নাও হতে পারত। তা ছাড়া কেউ ইচ্ছা করলেই একটি দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করতে পারেন না। স্বাধীনতা ঘোষণা করার এখতিয়ার বা অধিকার থাকতে হয়। যিনি ঘোষণা করবেন, তার প্রতি তার দেশের এবং আন্তর্জাতিক বিশ্বের সমর্থন থাকতে হবে। স্বাধীনতার ডাক দিলেই জনগণ এতে সমর্থন দেবে না। সত্তরের নির্বাচনে বিজয়ী দলের নেতা হিসেবে একমাত্র বঙ্গবন্ধুরই স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার অধিকার ছিল।

লেখক: হীরেন পণ্ডিত – প্রাবন্ধিক ও গবেষক


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ