1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

দক্ষিণ এশিয়া নীতিতে বাংলাদেশ ও ভারতের অবস্থান

জয়ন্ত ঘোষাল : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল, ২০২২

ইউক্রেনের যুদ্ধ কবে থামবে তা আমরা এখনো জানি না। ছোট্ট একটা দেশ ইউক্রেন। সেই দেশকে আক্রমণ করেছেন রাশিয়ার দোর্দণ্ড প্রতাপশালী রাষ্ট্রনায়ক পুতিন। ইউক্রেনের মানুষ বাঁচার জন্য লড়াই করছে।

সেখানে অনেক নিরীহ মানুষ মারা যাচ্ছে। আবার আমেরিকার যে ইউক্রেনের জন্য প্রাণ কাঁদছে, সেটা যতটা না ইউক্রেনের মানুষের জন্য, তার চেয়ে অনেক বেশি রাশিয়াকে ‘টাইট’ দেওয়ার জন্য।ন্যাটোর সদস্যদের একটা পাল্টা যুদ্ধের জন্য তৈরি করা হচ্ছে। আমেরিকা তো ধোয়া তুলসীপাতা নয়। পৃথিবীর ইতিহাসে যুদ্ধবাজ দেশ হিসেবে আমেরিকার পরিচিতি কিছু কম নয়। অতএব ইউক্রেনকে নিয়ে যুদ্ধটা মূলত আমেরিকা বনাম রাশিয়ার। আর সেই যুদ্ধের প্রভাব এসে পড়ছে এই উপমহাদেশে। ভারত এখন একটা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে অবস্থান করছে। তার কারণ, রাশিয়ার বিরোধিতা করে আমেরিকার পাশে দাঁড়ালে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বটা নষ্ট হয়ে যাবে। রাশিয়ার কাছ থেকে যে আমরা শুধু অস্ত্র কেনা হয় তা নয়, রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের যে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক তাতে নিরাপত্তাজনিত কারণেও রাশিয়াকে দরকার হয়।

আফগানিস্তানে তালেবান সরকার গঠিত হওয়ার পরও ভারত বড় কোনো বিপদের মধ্যে পড়ল না, বরং উল্টো পাকিস্তানকেই কিছুটা কোণঠাসা করে দিতে পেরেছে। এ ছাড়া তালেবানের সঙ্গেও ভারত একটা এনগেজমেন্টে গেল; সেটাও রাশিয়ার সমর্থন নিয়েই করল। রাশিয়াকে একদম শত্রু করে দিলে যে বিপদ, সেটা হচ্ছে চীন আর রাশিয়ার বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্ব তো এখন খুব মাখো মাখো। এটাকে বলা হচ্ছে প্রিমোলার ফ্রেন্ডশিপ। চীন যদি রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব করে এবং ভারত যদি রাশিয়ার শত্রু হয়, তাহলে আমেরিকা তো অনেক দূরের দেশ আর চীন অনেক কাছের, সেখানে চীনের সঙ্গে শত্রুতা করা ভারতের জন্য খুব একটা সুখকর নয়।

এখন পরিস্থিতিটা এমন যে ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে যখন আমেরিকা ও রাশিয়ার একটা চূড়ান্ত লড়াই চলছে তখন পাকিস্তানও কিন্তু অশান্ত হয়ে উঠেছে। সেখানে একটা ভয়ংকর নৈরাজ্যের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের গদি চলে গেছে। অবশ্য নানা রকমভাবে তিনি গদি রক্ষা করার চেষ্টা করেছিলেন। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী হচ্ছে মূল ক্ষমতার উৎস। আর সেই সেনাবাহিনী এখন ইমরান খানকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না।

এ রকম একটা পরিস্থিতিতে আমরা দেখছি, ভারতের আর এক প্রতিবেশী রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কাও খুব বিপদে পড়েছে। শ্রীলঙ্কা এখন চূড়ান্ত অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়েছে। সেখানে হাসপাতালে অপারেশন করা যাচ্ছে না। হাসপাতালগুলোর ওষুধ কেনার ক্ষমতা নেই। জিনিসপত্রের দাম এমন বেড়ে গেছে যে সেখানে খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। ভারতে জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও আমরা তবু আলু, পেঁয়াজ পাচ্ছি, সবজি কিনে নিয়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে পারছি। চরম আর্থিক সংকটের কারণে শ্রীলঙ্কায় তো সবজি বাজারই উঠে গেছে। সেই কারণে শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক নেতৃত্ব জরুরি অবস্থা জারি করে দিতে বাধ্য হয়েছে।

শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দিয়েছিল কে? চীন। তখন শ্রীলঙ্কা ভেবেছিল চীনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে তাদের অর্থনৈতিক সংকট দূর করবে। তখন ভারত বারবার শ্রীলঙ্কাকে বলেছিল, চীনের ঋণ কিন্তু মারাত্মক বিপদ ডেকে আনে! চীন সব সময় ঋণ দেয় ঠিকই; কিন্তু তারা বিনা পয়সায় কিছু দেয় না। ওই ঋণের ফাঁদে জড়িয়ে পড়বে তোমরা। তখন শ্রীলঙ্কা ভারতের কথা শোনেনি। এখন শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রসচিব ভারতে এসে ভারতের কাছে সাহায্য চাইছে। তারা বলছে, আমরা চীনের ঋণ শোধ করতে পারছি না। সে ব্যাপারে ভারতকে এখন শ্রীলঙ্কাকে সাহায্য করতে হচ্ছে।

পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা তো এমন যে সেখানে টাকার দাম কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে, সেটা তো দেখলেই বোঝা যাচ্ছে। সুতরাং পাকিস্তানে অর্থনৈতিক সংকট, শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক সংকট, নেপালের অবস্থাও খুব খারাপ। আর ভুটানের আর্থিক অবস্থা তো অনেক দিন থেকেই খারাপ। এমনকি অনেক দিন ধরে মিয়ানমারও অশান্ত হয়ে রয়েছে।

এ রকম একটা কঠিন পরিস্থিতিতে ভারতের পাশে রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ একটা ছোট দেশ হলেও শেখ হাসিনা অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত যোগ্যতার সঙ্গে সেই দেশটাকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। বর্তমানে বাংলাদেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার ভারতের থেকেও বেশি। এটা বলতে আমার কোনো লজ্জা লাগছে না এই জন্য যে এটা আজকের ঘটনা নয়, আবার বাংলাদেশ ছোট রাষ্ট্র বলেই এটা সম্ভব হয়েছে, এমনও নয়। অমর্ত্য সেনের মতো নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অনেক দিন থেকেই বলছেন, বাংলাদেশ অত্যন্ত মুনশিয়ানার সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা কী করবে এবং কী করবে না, কোন ঋণ নেবে এবং কোন ঋণ নেবে না ইত্যাদি বিষয়ে একা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।

চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে বাংলাদেশ সম্পূর্ণ সার্বভৌমত্বকে বিসর্জন দিয়ে চীনের বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশ তার স্বাধীন-সার্বভৌম পররাষ্ট্রনীতিকে রক্ষা করে এগোচ্ছে। এখানেই ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটা ঐক্যের সূত্র গড়ে উঠছে। কেননা ভারত ও বাংলাদেশ এখন যৌথভাবে অংশীদারি নিয়ে এই উপমহাদেশের সংকট ঘোচাতে বদ্ধপরিকর।

ভারত এখন নতুন করে এই দক্ষিণ এশিয়ার একটা পররাষ্ট্রনীতি নিচ্ছে, যেখানে তারা প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। ভারত ও বাংলাদেশ যৌথভাবে এই কাজটা করছে। ভারত কী করতে চাইছে, সেটা বাংলাদেশকে বলছে। বাংলাদেশও তাদের অবস্থান ভারতকে জানাচ্ছে। ভারত ও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যেসব জায়গায় ভুল-বোঝাবুঝি হচ্ছিল, সেটা মূলত ইনফরমেশন গ্যাপ। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রসচিব অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে সেই ইনফরমেশন গ্যাপ মেটানোর চেষ্টা করেছেন। তার ফলে বাংলাদেশে যে বিষয়গুলো এক্ষুনি হতে পারে না বা হওয়া সম্ভব নয়, সেগুলোকে নিয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি না করে, যেসব জিনিস এখন পাওয়া সম্ভব সেগুলোতে বেশি জোর দিচ্ছে ভারত।

এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় ভারতের ভূমিকাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। একটা জিনিস তো পরিষ্কার যে গোটা পৃথিবীর রাষ্ট্রনায়করা সম্প্রতি ভারতে এসে ঘুরে গেলেন। রাষ্ট্রনায়করা সাধারণত শীতকালে ভারতে ঘুরতে আসেন। আমরা তাঁদের বলতাম সাইবেরিয়ান পাখি। তাঁরা শীতকালে আসেন, আবার চলেও যান। তাঁরা আগ্রায় তাজমহল দেখতে যান। তাতে থাকে কিছুটা পর্যটন এবং কিছুটা কূটনীতি।

আমরা দেখতে পাচ্ছি, এখন এই প্রচণ্ড গরমে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের সঙ্গে দেখা করে গেলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে দেখা করেছেন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেছেন। এমনকি তাঁরা নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন; কিন্তু নরেন্দ্র মোদি বিনীতভাবে সেটা প্রত্যাখ্যান করলেন।

এখন কথা হচ্ছে, শুধু চীন নয়, আমেরিকা, ব্রিটেন, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং তাদের অ্যাম্বাসাডররা ভারতে আসছেন। এই তো কিছুদিন আগে নেপালের প্রধানমন্ত্রী ভারতে এলেন। এই রকম একটা আগমনের ঘনঘটা কেন? আসলে তাঁরা সবাই বুঝতে চাইছেন যে ভারত কী চাইছে। তবে বাংলাদেশের ভারতে আসার প্রয়োজন খুব কম। কারণ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কূটনীতিটা অনেক বেশি হটলাইন কূটনীতি। তার ফলে ভারত ও বাংলাদেশ যৌথভাবে এই পরিস্থিতির মোকাবেলা করছে।

এই গ্রীষ্মে দক্ষিণ এশিয়ার একটা বৃহত্তর পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়ন করার জন্য এই দেশগুলো প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরপর বিমসটেক সম্মেলন চীনে হওয়ার কথা। চীন চাইছে ভারত তাদের আমন্ত্রণে যোগ দিক। ভারত সেটা এখনো অফিশিয়ালি কনফার্ম করেনি; কিন্তু চেষ্টা চলছে যাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাতে যোগ দেন। বিমসটেকও কিন্তু সার্কের মধ্যে একটা সম্মেলন, যেখানে একটা দেশ যদি না যায়, তাহলে বিমসটেক হতে পারবে না। সুতরাং চীনে এখন বিমসটেক হওয়া বা না হওয়া অনেকটা নির্ভর করছে ভারতের ওপর। বিমসটেক হওয়ার পরই চীনের পার্টি কংগ্রেস হবে, যেখানে শি চিনপিং আবার নতুন করে রাষ্ট্রনায়ক হবেন। দলের নেতা হবেন। সুতরাং বিমসটেকের সাফল্যটা চীনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি।

এই রকম একটা পরিস্থিতিতে আমার মনে হয়, চীনের সঙ্গেও ভারতের সম্পর্কটা ভালো করা উচিত। আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করে চীনের সঙ্গে ঝগড়া করা, আবার চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করে আমেরিকার সঙ্গে ঝগড়া, ভারতের এই দুটির কোনোটারই প্রয়োজন নেই। সার্বভৌম নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি রক্ষা করে যেভাবে ভারত চলছে সেই পথে ঝড়ঝঞ্ঝা থাকতে পারে, অনেক চ্যালেঞ্জ থাকতে পারে, কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জ মাথায় রেখেই ভারতকে এগোতে হবে। আর সেই কাজটা করার জন্য ভারতের পাশে আজ সব চেয়ে বেশি যাকে প্রয়োজন, সেই দেশটির নাম বাংলাদেশ।

লেখক : জয়ন্ত ঘোষাল – নয়াদিল্লিতে কালের কণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ