1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

মুজিবনগর সরকার, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা

অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২২

১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল আগরতলায় গঠিত হয়েছিলো বাংলাদেশের প্রথম সাংবিধানিক ও বৈধ সরকার। তার একটি পটভূমি আছে। পটভূমিটি হলো এপ্রিল মাসের ৪ তারিখে তাজউদ্দীন আহমদ ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে দেখা করেন। তখন শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী পরিষ্কার জানতে চেয়েছিলেন যে, স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে কোনো সরকার গঠিত হয়েছে কিনা। এই প্রসঙ্গটি আনার কারণ ছিল যে, একটি সরকার গঠিত হলেই সরকারে সরকারে সহযোগিতা সম্ভব; নইলে নয়। তখন তাজউদ্দীন আহমদ অনেকটা ইচ্ছাকৃত এবং ঐতিহাসিক মিথ্যা কথা বলেছিলেন যে, হ্যাঁ সরকার গঠিত হয়েছে।

সরকার গঠনের একটা চিন্তা-ভাবনা ছিলো, কিন্তু গঠিত হয়নি। সেই সরকার গঠিত হলো ১০ এপ্রিল আগরতলায় ১৯৭১ সালে। এবং এই সরকারকে মুজিবনগর সরকার বলার একটি কারণ হলো ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর বা সেই আমলের মেহেরপুরের বৈদ্যনাথ তলায় শপথগ্রহণ করা হয়েছিলো এবং বৈদ্যনাথ তলাকে তাৎক্ষণিকভাবে তাজউদ্দীন আহমদ মুজিবনগর নাম রেখেছিলেন বঙ্গবন্ধুর নামে। সেই থেকে এটা মুজিবনগর। আর মুজিবনগর ছিলো বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী এবং সেই হিসেবেই স্বীকৃতি দেওয়া উচিত এবং সম্মানিত করা উচিত মুজিবনগরকে।

এই মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে বা স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের অধ্যায় শুরু হয়। প্রথম সিদ্ধান্ত ছিলো, চুয়াডাঙায় শপথ গ্রহণ করবে। কিন্তু চুয়াডাঙার খবরটি পাকিস্তানিরা জেনে যায়, যে কারণে চুয়াডাঙায় বিমানবাহিনী বোমাবর্ষণ করে। সেজন্য অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে মুজিবনগরের শপথগ্রহণ হয়েছিলো সীমান্তের কাছাকাছি। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের পরেই দ্রুত তারা কলকাতায় চলে যান। কলকাতার আর্টথিয়েটার রোড ছিলো মুজিবনগর সরকারের প্রধান কেন্দ্র কিন্তু সেটা ছিলো কৌশলগত ও নিরাপত্তাজনিত কারণে। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় মুজিবনগর সরকার হিসেবে অভিহিত ছিলো এই সরকার। প্যাডেও লেখা থাকতো মুজিবনগর সরকার। এই সরকারের আয়ু ছিলো ৮ মাস ১২ দিন। এই সময়ের মধ্যে সরকার অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যুদ্ধ করতে হয়েছে। অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে আর আন্তর্জাতিক যুদ্ধটা ছিলো বাংলাদেশে সাহায্য সহযোগিতা, সমর্থন আদায়ের জন্য। মুজিবনগর সরকার অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে প্রথম যে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপটি গ্রহণ করে ১২ থেকে ১৫ জুলাই ১৯৭১ কলকাতায়, একটি সভা করে সারা বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টরে ভাগ করা এবং সেই হিসেবে আমাদের সামরিক বাহিনীকে বিন্যস্ত করা হয়। অবশ্য এর প্রাথমিক উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছিলো ৪ঠা এপ্রিল তেলিয়াপাড়ায়। তবে সরকারি উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছিলো ১২ থেকে ১৫ জুলাই ১৯৭১। এই ১১টি সেক্টরের মধ্যে ১০ নম্বর সেক্টরটি আমাদের যুদ্ধকালীন মানচিত্রে দৃশ্যমান নয় এজন্য যে এটি ছিলো…। আমরা দেখি শুধু সামরিক দিক থেকে যুদ্ধ নয় যে…ছয় সদস্য বিশিষ্ট একটি  মন্ত্রী পরিষদ গড়া হয়েছিলো আর মন্ত্রী পরিষদের পরামর্শক সদস্য ছিলো ৮ সদস্য বিশিষ্ট। উপরন্তু ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে কীভাবে গড়তে হবে তার জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করা হয়, যার প্রধান ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ চৌধুরী। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভ্রাম্যমান রাষ্ট্রদূত হিসেবে ভূমিকা পালন করার জন্য নির্দেশিত হয়েছিলেন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী যেখানেই গেছেন সেখানেই বাংলাদেশের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এমনকি জাতিসংঘের অধিবেশনেও বাংলাদেশ গিয়েছিলো, কিন্তু বাংলাদেশ অনুমতি পায়নি তার বক্তব্য রক্ষায়। বাংলাদেশের প্রতিনিধি ছিলেন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। তার লেখা একটি চিঠি জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদের সদ্যসের মধ্যে বিতরণ করা হয়। সেই সময় জাতিসংঘে ভারতের প্রতিনিধি ছিলেন সমর সেন। তিনি চমৎকার একটি মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমরা হেমলেট নাটক মঞ্চস্থ করছি, কিন্তু ডেনমার্কের যুবরাজকে ছাড়াই। সমর সেন নিজে কবি ছিলেন; কাব্যিক ভাষায় তিনি কথাটা বলেছিলেন।

মুজিবনগর সরকার ভারতের স্বীকৃতি পাবার জন্য চারটি চিঠি লিখেছিলো। ভারতের স্বীকৃতি পাই আমরা ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে, কিন্তু তার কয়েকঘণ্টা আগেই বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দেয় ভুটান। মুজিবনগর সরকার ২২ ডিসেম্বর ঢাকায় চলে আসে। এসে বাংলাদেশের দায়িত্ব গ্রহণ করে। আমরা যদি পেছন ফিরে তাকিয়ে মূল্যায়ন করি এই সরকারের দৃষ্টান্তমূলক সাফল্যজনক ভূমিকার কারণেই আজকের বাংলাদেশ চূড়ান্তপর্যায়ে বাস্তবরূপ পেয়েছে এবং সম্পূর্ণ যুদ্ধ, সম্পূর্ণ কর্মপ্রক্রিয়া পরিচালিত হয়েছিলো বঙ্গবন্ধুর নামেই এবং মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বে চার জাতীয় নেতা বিশেষ করে তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বের প্রতি বাংলাদেশ চিরঋণী থাকবে। তবে একটি কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই এই সরকার অস্থায়ী নয়, এই সরকার প্রবাসীও নয়, এই সরকার আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হয়েছিলো। সুতরাং এই সরকারটি বাংলাদেশের প্রথম বৈধ এবং সাংবিধানিক সরকার।

পরিচিতি : অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন – ইতিহাসবিদ। শ্রুতিলিখন : জান্নাতুল ফেরদৌস। 


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ