1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা : একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ

সজীব ওয়াফি : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ২২ এপ্রিল, ২০২২

মরিয়ম বিবি। বয়স আনুমানিক সত্তরের আশেপাশে। থাকেন লালবাগের একটি বাড়ির নিচতলায়, ঘুপচিতে। রাতে খাওয়ার সময়ে লজ্জামাখা মুখে ভদ্র মহিলা এসে বললেন— বাবা কয়টা ভাত দিতে পারো? ভোর রাতে খেয়ে রোজা রাখতাম; আজকে ভোর রাতের খাবারের কিছুই করতে পারি নাই। এ রাতে কি খাবেন চিন্তা করে আরো কিছু খাবার দিতে চাইলে সেটা তিনি নিলেন না। দুর্দশার এই কারণ বছর পাঁচেক আগে তার স্বামী মারা গেছেন। বেঁচে থাকতে তিনি কাজ করতেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে, মোটামুটি মাইনে পেতেন; কোন রকমেই চলতো তাদের সুখের সংসার। একটা মাত্র ছেলে কিন্তু নিজের মতো করে মানুষ করতে পারেননি তিনি। আক্ষেপ করে বললেন অমানুষ হয়েছে, বেপথে গেছে। স্পষ্ট করে বলতে গেলে কিছুদিন আগে ছেলেটা তাকে ছেড়ে পালিয়েছে। মায়ের কোন খোঁজ নিচ্ছেন না। নিরুপায় হয়ে ঠাঁই মিলেছে লালবাগের এখানে, একটি বাড়ির নিচ তলায়, স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায়। শরমের মাথা খুইয়ে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে হাত পাততে হচ্ছে মরিয়ম বিবিকে।

মাকে ছেড়ে বিপদগ্রস্ত সন্তান পালিয়েছে খবরটা শোনার পর যে কারো খারাপ লাগা স্বাভাবিক। এমতাবস্থায় সকলে মিলে যদি মরিয়ম বিবি’র জন্য একদিন সহযোগিতা করি বা তার পক্ষে দাড়াই; এটা কি স্থায়ী কোন সমাধান? বা নিয়মিত কি এই সহযোগিতা বলবৎ রাখা সম্ভব? উত্তর হচ্ছে— কখনোই না, এটা কোন স্থায়ী সমাধান নয়। আবার কেউই নিয়মিত সহযোগিতা করতে চাইবেন না, বিরক্ত হবেন। পাশাপাশি এই চ্যারিটি কার্যক্রমের ফলে মরিয়ম বিবির হয়তো অসহায়ত্ব সাময়িক ঘুচবে কিন্তু লজ্জা আরো বাড়বে, মাথা চিরদিনের জন্য নুয়ে যাবে আরো বেশি করে। কথা হলো আমাদের দেশে এই মরিয়ম বিবির সংখ্যা এক, দুই বা দশ জনে নয়। অসহায়ত্বের এই সংখ্যাটা অসংখ্য, ব্যাপক। সারাদেশে আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বৃদ্ধদের এরকম অসংখ্য অসহায়ত্বের চালচিত্র। চাকরি চলে যাওয়ার পরে অর্থনৈতিক সংকট, পারিবারিক কলহে নেমে আসে মানসিক অবসাদ; এরপর তাদের স্থান হয় বৃদ্ধাশ্রমে। কর্মহীন হয়ে পরার পরবর্তী পরিবারে তারা যেন কেমন মূল্যহীন হয়ে পরেন প্রিয়জনদের কাছে। ক’জনকে চ্যারিটি দিয়ে রক্ষা করা যাবে? সুতরাং এর জন্য চাই স্থায়ী পরিকল্পনা এবং সেই পরিকল্পনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বাস্তবায়ন।

১৯৯৭-৯৮ সাল থেকে বয়স্ক ভাতা কার্যক্রম চলছে। বর্তমানে এই ভাতার মাসিক পরিমাণ ৫০০ টাকা। ষাটোর্ধ্ব কর্মে অক্ষম এবং দুস্থ নাগরিকবৃন্দ আছেন বয়স্ক ভাতার আওতায়। উদ্দেশ্য বয়স্কদের প্রয়োজনীয়তা লাঘব এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ। পরিকল্পনাটি অত্যন্ত ভালো হলেও সমস্যার জটিলতা এর গোড়ায়। বয়স্ক ভাতার বন্টনের দায়িত্ব স্থানীয় সরকারের উপর। বর্তমান অর্থনীতির বাজারে মাসিক পাঁচশত টাকা খুবেই সামান্য। এমনকি এই টাকাটা প্রদান করা হয় ৬ মাস বা বছরের মাথায়। ফলতঃ বয়স্ক নাগরিকদের নিয়মিত অর্থনৈতিক নিরাপত্তার বিধান করা যায়নি।

সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক সুরক্ষায় সর্বজনীন পেনশন নিয়ে আলাপ হচ্ছে, জাতীয় সংসদে আইন পাশ করতে খসড়াও উপস্থাপিত হয়েছে। বয়স্ক ভাতার প্রচলন করেও যে সমস্যার উত্তরণ ঘটানো যায়নি সেটারই আরেকবার ভিন্ন কৌশলে চেষ্টা করা। খসড়া আইনে দেখা যায় জাতীয় পরিচয়পত্রকে ভিত্তি ধরে ১৮ বছরের বেশি এবং ৫০ বছরের নিচের নাগরিকবৃন্দ পেনশন ব্যবস্থায় অংশ নিতে পারবেন; অংশ নিতে পারবেন বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশীরা। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠান, আধা-সরকারী ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মরতরা এর বাইরে থাকবেন, কেননা ইতোমধ্যে তারা পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আছেন। পেনশন পাওয়ার যোগ্যতা অর্জনে কমপক্ষে ১০ বছর দিতে হবে নির্দিষ্ট পরিমাণের চাঁদা। দুস্থ-দারিদ্র্য ব্যক্তির চাঁদার সমপরিমাণ অর্থ অনুদান হিসেবে যুক্ত হবে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে। অতঃপর নাগরিকের ৬০ বছর পূর্ণতাপ্রাপ্ত হলেই পেনশন পাওয়া শুরু হবে। চাঁদা দাতার থাকবে পৃথক হিসাব নম্বর। পেশনার ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগেই মৃত্যুবরণ করলে তার নমিনি মুনফাসহ চাঁদার টাকা ফেরত পাবেন। এমনকি পেনশন চলাকালে ৭৫ বছরের আগে পেশনার মারা গেলেও পেনশনের টাকা পাবেন নমিনি। পাবেন ঋণের সুযোগ-সুবিধা। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে থাকবে নির্দিষ্ট কতৃপক্ষ এবং গভর্নিং বডি।

সামাজিক সুরক্ষা বিবেচনায় সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুকরণ অত্যন্ত প্রসংশনীয়। কিন্তু শোনা যাচ্ছে শুরুতে পেনশন ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ স্বেচ্ছায় থাকলেও ২০৩০ সাল নাগাদ করা হবে বাধ্যতামূলক। আশঙ্কার বিষয় এই বাধ্যতামূলক করতে গিয়ে নাগরিক অধিকার খর্ব হবে কিনা! টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে পেনশন ব্যবস্থা কার্যকর করতে সাধারণ মানুষের ভিতরে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনে কি বিশেষ কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? মানুষের ভিতরে যদি নেতিবাচকতা একবার বদ্ধমূল হয় তখন তো ভালো কাজের সফলতা অর্জনেও পাহাড়সম কঠিন হয়ে দাড়ায়। অধিকন্তু চাঁদা প্রদানের সর্বনিম্ন সময়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কতৃপক্ষের প্রথমে কমপক্ষে ১০ বছরের চাঁদা প্রদান না রেখে, সময় কমিয়ে ৫ বছর রাখাটা বাঞ্ছনীয়। বিশ্বস্ততা অর্জন পরবর্তী কাঙ্ক্ষিত ১০ বছর করতে অসুবিধা ছিলো কই? সর্বোপরি দিন এনে দিন খাওয়া গ্রামীণ সাধারণ মেহনতী মানুষের জীবন সংসারই যেখানে অচল, সেখানে অল্প পরিমাণে হলেও দীর্ঘমেয়াদে পেনশন ব্যবস্থার চাঁদা কিভাবে চালাবেন? বিপুলসংখ্যক মানুষের হিসাব খোলা, পরিচালনা, পেনশনারের নামে বার্ষিক প্রতিবেদন এক বিশাল কর্মযজ্ঞের সমাহার। অপরপক্ষে সরকারি, আধা-সরকারী এবং স্বায়ত্তশাসিতসহ যে সকল প্রতিষ্ঠানে পেনশন ব্যবস্থা চালু আছে সেটা বহাল রেখে সার্বজনীন পেনশন বাস্তবায়ন হয় কি করে! পাইলটিং ব্যবস্থায় পরীক্ষা নিরীক্ষার ব্যবস্থা না করে বয়স্ক ভাতার মতো নামকাওয়াস্তে হলে তো সামাজিক সুরক্ষার সংকট দূরীকরণ সম্ভব নয়।

সকলকে পেনশনের আওতায় আনার উদ্যোগ নিসন্দেহে একটি মহৎ প্রচেষ্টা। নানান মহলে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক আলাপ-আলোচনা চলছে। কিন্তু কর্মযজ্ঞ আয়োজনে শুরুতেই বিশ্বস্ততা অর্জনের মনস্তাত্ত্বিক যে ধাক্কাটা খেলো সেটাই একটা বৃহৎ চ্যালেঞ্জ। এবার দেখা যাক চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করে কতটুকু সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া যায়। মরিয়ম বিবিদের শেষ জীবনে স্বস্তি মিলুক এই প্রত্যাশা। মত-দ্বিমতে নানামুখী প্রশ্ন থাকলেও উদ্যোক্তাদের কুর্নিশ।

লেখক : সজীব ওয়াফি, প্রাবন্ধিক।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ

নির্বাচিত

বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের বড় গ্রাহক হবে দেশী চ্যানেলগুলো: মোজাম্মেল বাবু

অর্থপাচার প্রতিরোধ সূচকে বাংলাদেশের উন্নতি

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন 

অপরূপ সৌন্দর্যের হাতিমাথা স্বর্গের সিঁড়ি

চিরকুটে বাবাকে ‘রেপিস্ট’ বলে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে তরুণীর আত্মহত্যা

জার্মানিতে বন্ধ হচ্ছে শেষ তিনটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র

নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করতে পারছি সে জন্য দেশবাসীকে কৃতজ্ঞতা জানাই

পর্যটক হয়রানি ঠেকাতে কক্সবাজারের কটেজ মালিকদের ৮ নির্দেশনা

দেশে উন্নত চিকিৎসার সকল ধরনের প্রস্তুতির নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

ঈদে যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে বিআরটিসির স্পেশাল সার্ভিস, মিলছে অগ্রিম টিকিট