1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

শিক্ষায় অগ্রগতিতে দেশের চালচিত্র

ড. এম. মেসবাহউদ্দিন সরকার : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২২

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলতেন, ‘সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ চাই।’ বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষাকে মানুষ গড়া এবং শিক্ষাব্যবস্থার ভিত্তি মনে করতেন এবং সে কারণে ১৯৭৩ সালের পহেলা জুলাই যুদ্ধবিধ্বস্ত জাতিকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে ৩৬ হাজার ১৬০টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ ও কর্মরত শিক্ষকদের চাকরি সরকারিকরণ করে পুরো জাতিকে অবাক করে দিয়েছিলেন। জাতি গঠনের জন্য শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপের বিষয়টি স্বাধীনতাপূর্ব সময় থেকেই বঙ্গবন্ধুর অন্যতম রাজনৈতিক এজেন্ডা ছিল। ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা সম্মেলনে গৃহীত খসড়া মেনিফেস্টোতে রাষ্ট্রের প্রত্যেকটি নাগরিকের জন্য শিক্ষার অধিকার সমুন্নত রাখার কথা ছিল। দেশের সর্বত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা, কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া এবং উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য পর্যাপ্ত সরকারি বৃত্তি বরাদ্দের দাবি ছিল জোরালো। ১৯৫৩ সালের নভেম্বরে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে সর্বজনীন শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি জোরালোভাবে উত্থাপন করেন। ১৯৫৪ সালে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব নাগরিকের শিক্ষা, ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক উন্নতির কথা বলেন তিনি। ১৯৫৫ সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্টে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের শিক্ষানীতিতে মাতৃভাষার ওপর জোর দিয়ে ‘শিক্ষা ক্ষেত্রে যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা’ কর্মসূচির কথা স্মরণ করিয়ে দেন। ১৯৬২ সালে শিক্ষা আন্দোলনের সময় বঙ্গবন্ধু সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থার দাবিতে জোরালো অবস্থান নেন।

১৯৭০ সালে নির্বাচনের সময় টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আগামী প্রজন্মের ভাগ্য শিক্ষকদের ওপর নির্ভর করছে। শিশুদের যথাযথ শিক্ষার ব্যত্যয় ঘটলে কষ্টার্জিত স্বাধীনতা অর্থহীন হবে।’ তাই পাঁচ বছর বয়স্ক শিশুদের বাধ্যতামূলক অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষাদানের জন্য একটি ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চালুর কথা বলেন তিনি। দারিদ্র্য যেন উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে মেধাবীদের জন্য বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, সেদিকে লক্ষ রাখতে বলেন এবং অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক ঘোষণা করেন। ১৯৭২ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণের মাত্র ছয় মাসের মধ্যেই (২৬ জুলাই) বঙ্গবন্ধু বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. কুদরাত-এ-খুদার নেতৃত্বে বাংলাদেশ শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। এছাড়া ১৯৭৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন আইন প্রণয়ন করেন। ২০১০ সালে যে শিক্ষা কমিশন গঠিত হয় তা ১৯৭২ সালের শিক্ষা কমিশনের আলোকেই। এ থেকেই বোঝা যায় বঙ্গবন্ধু শিক্ষাকে বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষাকে কতটা গুরুত্ব দিয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর এদেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করতে ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু এক অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ’ (বিসিএসআইআর) প্রতিষ্ঠা করেন।

বঙ্গবন্ধু জীবদ্দশায় শিক্ষা সম্পর্কিত আরও যে আইন প্রণয়ন করেছিলেন সেগুলো হলো : প্রাথমিক স্কুল অ্যাক্ট ১৯৭৪, মাদ্রাসা এডুকেশন অর্ডিন্যান্স ১৯৭২, বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান আদেশ ১৯৭৩, স্বায়ত্তশাসন অধ্যাদেশ-১৯৭৩ যার ভিত্তিতে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একদিকে সত্যিকার অর্থে জ্ঞানচর্চার তীর্থভূমি এবং মুক্তবুদ্ধি চর্চার প্রাণকেন্দ্র হয়ে ওঠে, অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাইকে গণতান্ত্রিক মতামত রাখার সুযোগ প্রদান, শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক পড়াশুনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বিকাশের বিষয়টি উঠে আসে।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পেরিয়ে এসে এখন দেশের শিক্ষাব্যবস্থার দিকে তাকালে আমরা যে চিত্রটি দেখতে পাই তা বঙ্গবন্ধুকন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের শিক্ষাকাঠামোর এক নতুন অগ্রগতির বার্তা দেয়। এখন প্রতি বছর বিদ্যালয়গুলেতে পহেলা জানুয়ারি বিনামূল্যে বই বিতরণ, দুপুরে খাবারের ব্যবস্থা, উপবৃত্তি ইত্যাদি চলছে সাফল্যের সঙ্গে। নতুন নতুন স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা প্রতিনিয়তই প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে অত্যন্ত মনোরম পরিবেশে দৃষ্টিনন্দন সুউচ্চ শিক্ষা ভবন দৃশ্যমান হচ্ছে। সেখানে লেখাপড়া করছে লাখ লাখ গ্রামের শিক্ষার্থী। দেশে বর্তমানে সাক্ষরতার হার ৭৪.৭ শতাংশ এবং প্রায় ৯৯ শতাংশ শিশুই বিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে।

খেয়াল করা দরকার, স্বাধীনতার প্রায় ৪০ বছর পর শিক্ষার ভিত্তি আরও সুদৃঢ় ও মজবুত করার লক্ষ্যে ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বে শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক গুণগত পরিবর্তন ঘটেছে। শিক্ষাকাঠামোয় নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করায় এখন প্রাথমিক স্তরের শিক্ষকতায় ৬০ ভাগ নারী শিক্ষক নিয়োগ নিঃসন্দেহে এক উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। উচ্চশিক্ষার জন্য প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন আমাদের শিক্ষাবান্ধব প্রধানমন্ত্রী। উল্লেখ্য, এখন দেশে ৪৬টি সরকারি এবং ১০৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২৬৫টি সরকারি ও ৫৯২টি বেসরকারি কলেজে অনার্স ও মাস্টার্সের ছাত্রসংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। উল্লেখ করার মতো আরও যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে সেগুলো হলো : (কমবেশি) ৭৭টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ৭০টি আইন কলেজ, ৪৪টি নার্সিং ইনস্টিটিউট, ২৮টি টেক্সটাইল কলেজ, ৫৪টি প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ১৪টি সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ৫৯টি এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউট, ২৭টি শারীরিক শিক্ষা কলেজ ইত্যাদি। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শেখ হাসিনার সরকারের আমলে।

শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারের এই অভূতপূর্ব সফলতা সমগ্র জাতির কাছে প্রশংসিত হয়েছে এবং বিশ্ব সমাজে পেয়েছে স্বীকৃতি ও মর্যাদা। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে ‘সাহসী নারী’ হিসেবে অভিহিত করেন এবং ‘শান্তিবৃক্ষ’ স্মারক তুলে দেন ইউনেস্কোর মহাপরিচালক। সরকারের গণমুখী কার্যক্রমের ফলে শিক্ষা ক্ষেত্রে ঘটেছে বিপ্লব, যা আজ সর্বত্র দৃশ্যমান। এ সাফল্য ধরে রাখতে নতুন প্রজন্মকে শপথ নিতে হবে। তবেই সার্থক হবে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন। এভাবে বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন পিতা-কন্যা দুজনই।

লেখক : ড. এম. মেসবাহউদ্দিন সরকার – তথ্য গবেষক ও অধ্যাপক, ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ

নির্বাচিত