1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

সাইবেরিয়ান হাস্কির খামারে সাফল্য এবার দেশেই  

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২২

কুকুরের খামার। অবাক হলেও সত্যি। দেশের সাতক্ষীরায় গড়ে তোলা সে খামারে পালন হচ্ছে সাইবেরিয়ান কুকুর। জনপ্রিয় সাইবেরিয়ান হাস্কি প্রজাতির ১৫টি কুকুর নিয়ে সে খামার করেছেন শহীদুল ইসলাম জুয়েল।

শহীদুলের বাড়ি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের দাতিনাখালী এলাকায়। সেখানেই তিনি কাঁকড়া খামারের পাশাপাশি করেছেন কুকুরের খামার। সাতক্ষীরায় প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে গড়ে তোলা কুকুরের খামারে সফলতাও পেয়েছেন তিনি।

এরই মধ্যে অনেকেই কুকুর ছানা কেনার জন্য বুকিংও দিয়েছেন। আবার কিনতেও আসছেন অনেকেই।

ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলাম জুয়েলের কুকুরের খামার গড়ে তোলার পেছনে ছোট্ট একটি গল্প। সে গল্প মূলত তার ফিলিপাইনের নাগরিক আইভি ম্যানোলাকে বিয়ে করে ঘর বাঁধার মধ্য দিয়ে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শহীদুল ইসলাম জুয়েলের সঙ্গে ব্যাংকার আইভি ম্যানোলার পরিচয় হয়। ভালো লাগা থেকে ভালোবাসা, যা চূড়ান্ত হয় বিয়ের মাধ্যমে। আইভি ম্যানোলাসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের দাতিনাখালীতে গ্রামে বাস করছেন শহীদুল।

শহীদুল জানান, দাতিনাখালীতে ২০১৫ সালে অ্যাকোয়া ম্যাকস নামে একটি কাঁকড়ার খামার গড়ে তোলেন। কাঁকড়া চাষের প্রশিক্ষণ নিতে থাইল্যান্ডে যান জুয়েল-আইভি দম্পতি। সেখানে একটি কুকুর দেখে খুব পছন্দ হয় জুয়েলের। আইভি ম্যানোলা তাকে জানান, কুকুরটি সাইবেরিয়ান হাস্কি জাতের। পরে থাইল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে পোষার জন্য সাইবেরিয়ান হাস্কি জাতের একটি কুকুর কেনেন জুয়েল। কিন্তু ঠিকমতো পরিচর্যা করতে না পারায় শীতপ্রধান দেশের কুকুরটি ১৬ দিন পর মারা যায়। এরপর স্ত্রীর সঙ্গে ফিলিপাইনে গিয়ে পোষার জন্য একটি সাইবেরিয়ান হাস্কি জাতের পুরুষ কুকুর কিনে আনেন জুয়েল। সেটিকে এক বছর লালনপালন করেন তিনি।

এরই মধ্যে কুকুরকে পোষ মানানোসহ পরিচর্যার কৌশলও শিখে নেন তিনি। তখন কুকুরের খামার করার শখ জাগে তার। পরে একই প্রজাতির একটি মেয়ে কুকুর কেনেন জুয়েল। ছয় মাস পরই পাঁচটি বাচ্চা জন্ম দেয় কুকুরটি। এর মধ্যে একটি মারা যায়। বাকি চারটির মধ্যে তিনটি অনলাইনে বিক্রি করে দেন জুয়েল। তারপর আবারও পাঁচটি বাচ্চা হয় সাইবেরিয়ান হাস্কি প্রজাতির ওই মেয়ে কুকুরের।

জুয়েল বলেন, ‘সাইবেরিয়ান হাস্কি প্রজাতির কুকুর দেখতে ভয়ংকর হলেও খুবই ফ্রেন্ডলি। তারা মানুষের সঙ্গে খেলতে পছন্দ করে, কিন্তু কামড় দেয় না। এরা খুবই ইনভেস্টিগেটিভ। এই প্রজাতির একটি কুকুর বাইরে থেকে আনতে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু আমার খামার থেকে সাইবেরিয়ান হাস্কির বাচ্চা ৫০ থেকে ৬০ হাজারে বিক্রি করছি। শীতপ্রধান দেশের হলেও বাংলাদেশে সাইবেরিয়ান হাস্কি প্রজাতির কুকুরের খামার করা সম্ভব।’

তিনি বলেন, ‘সুন্দরবনের পাশের এলাকায় সাইবেরিয়ান হাস্কি পালনে সফলতা পাওয়া গেছে, এটা অবাক করার মতো বিষয়। এখানে মোটামুটি সব সময় ৩০ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকে। আমার খামারে বর্তমানে ১৫টি কুকুর রয়েছে, যাদের পেছনে মাসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। প্রথমে ৯৯ শতাংশ মানুষ বলত, বাংলাদেশে সাইবেরিয়ান হাস্কির খামার করা সম্ভব না। সে ধারণা সঠিক নয়, এটার বাণিজ্যিক খামারে যেমন সফলতা পাওয়া সম্ভব, তেমনি বাড়িতেও পালন করা সম্ভব। আমরা যেগুলো বিক্রি করেছি, প্রত্যেক জায়গা থেকেই ভালো ফিডব্যাক পাচ্ছি।’

খামারটি সুন্দরবনের পাশে হওয়ায় প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ দেখতে যান। আবার কেউ কেউ কুকুর কিনতে আসেন।

সাতক্ষীরা সদরের সুব্রত হালদার বলেন, ‘জুয়েল ভাইয়ের খামারে সাইবেরিয়ান হাস্কি জাতের কুকুর পালন করেন জানতে পেরে এসেছি। আমার বাড়িতে একটি জার্মানি প্রজাতির কুকুর রয়েছে। কুকুর দেখেছি, ভালো লেগেছে। একটি কুকুর নেয়ার ইচ্ছা রয়েছে, এখন দেখে গেলাম পরে এসে নেব।’

প্রতিবেশী দাতিনাখালী গ্রামের সাহেব আলী রেজা বলেন, ‘জুয়েল ভাই বিদেশি প্রজাতির কুকুরের খামার গড়ে তুলেছেন এবং সেটা বাণিজ্যিকভাবে রূপ নিয়েছে। আমি মনে করি জুয়েল ভাই দেশের বাইরের কুকুর পালনে নতুন প্রজন্মকে এই পেশার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছে। ভবিষ্যতে আমারও কুকুরের খামার গড়ে তুলতে ইচ্ছা আছে।’

সাতক্ষীরা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এ বি এম আব্দুর রউফ বলেন, ‘শ্যামনগরে বাণিজ্যিকভাবে একটি কুকুরের খামার গড়ে উঠেছে। খামারটিতে আমার এখনও যাওয়া হয়নি। খামারটির মালিক আমার কাছে এসেছিলেন, আমি তাকে সরকারিভাবে খামারটি নিবন্ধন করার কথা জানিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘নিরাপদ জায়গা থাকলে কুকুরের খামার করতে খুব একটা ঝামেলা হয় না। তবে এদের জলাতঙ্ক রোগ রোধে বছরে একবার এআরভি ভ্যাকসিন দিতে হয়।’


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ