1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

গৃহহীনদের জন্য আমাদের প্রধানমন্ত্রী আছেন

ফারিহা হোসেন : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২২

একটি মানবিক ও কল্যাণকামী রাষ্ট্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কল্যাণ, উন্নয়ন এবং মানবিক আচরণ। বিশ্বের উন্নত কোনো কোনো দেশ তাদের নাগরিকদের কল্যাণে কাজ করলেও অনেক সময় মানবিক হতে পারে না। কিন্তু বাংলাদেশ গত একযুগেরও বেশি সময় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সরকার আমাদের এই প্রিয় দেশকে একটি মানবিক, কল্যাণকর রাষ্ট্রে পরিণত করার মহতী বেশ কিছু কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলেছেন। এই মানবিক এবং কল্যাণকর কর্মসূচির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ঠিকানাবিহীন, আশ্রয়হীন এবং গৃহহীন মানুষের জন্য আশ্রয়ণের ব্যবস্থা করা। একই সঙ্গে এসব মানুষের জন্য আশ্রয়ণের জন্য গৃহীত প্রকল্প এলাকায় তাদের কর্মসংস্থানে পশু পালন, মৎস্য চাষ, গবাদি পশু পালন, তাদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য স্কুল, মক্তব, মাদ্রাসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। একই সঙ্গে এসব এলাকায় বিদ্যুৎ, পানি, রাস্তাঘাটসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন নোয়াখালী বর্তমান লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চর পোড়াগাছা গ্রামে ভূমিহীন-গৃহহীন, অসহায়-ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসন কার্যক্রমের যাত্রা শুরু করেন। তার দেখানো পথেই বঙ্গবন্ধুকন্যা ১৯৯৭ সালের ১৯ মে কক্সবাজার জেলার সেন্টমার্টিনের প্রবাল দ্বীপ এলাকায় একটি প্রকল্প শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ গত ২৬ এপ্রিল এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ৩২ হাজার ৯শ ৪টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে ঘর হস্তান্তর করা হয়। প্রত্যেক মানুষের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার হচ্ছে তাদের বাসস্থানের সুযাগে পাওয়া।

নাগরিকের এই মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকারটি বাস্তবায়ন হলো, তাদের বাসস্থানের স্বপ্ন একটি বাড়ি পাওয়ার সেই স্বপ্ন সত্যি হলো। কেননা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি খরচে বাড়ি নির্মাণ করে তা তাদের কাছে হস্তান্তর করেছেন। যার মোট উপকারভোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজার ২শ ৩৩ জন।

ঈদ-উল-ফিতরের আগেই তার উপহার হিসেবে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের তৃতীয় ধাপের আওতায় উপকারভোগীদের দুই শতক জমিতে টিনশেড আধা-পাকা ঘর প্রদান করা হলো। প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি নবনির্মিত বাড়ির দলিল ও চাবি বিতরণ করেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত বক্তব্যও মানুষের কাছে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ৩২ হাজার ৪শ ৯টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের মাঝে জমি ও ঘর দিয়েছি। আমি ঈদ-উল-ফিতরের উপহার হিসেবে আজ এসব জমি ও ঘর দিয়েছি।’ তার সরকার মুজিববর্ষের কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই দফায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসিত করেছে। তিনি বলেন- ‘যারা ঘর পেয়েছে, তাদের মুখের হাসি আমি খুব পছন্দ করি’ উল্লেখ করে তিনি সবাইকে বিশেষ করে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদেরকে জাতির পিতার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি উন্নত ও সুন্দর জীবন উপহার দিয়ে জনগণের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। মূলত, এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সমাজের অবহেলিত, নিগৃহীত বেদে, তৃতীয় লিঙ্গ, চা-শ্রমিক, কুষ্ঠরোগী, বিভিন্নভাবে অক্ষমসহ সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে সুন্দর জীবন উপহার দিতে গৃহায়ণ প্রকল্পের আওতায় আনা হবে।

মুজিববর্ষে দেশের প্রতিটি ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে গৃহায়ণের আওতায় নিয়ে আসার সরকারি অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় তিনধাপে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৫০ হাজার ২শ ৩৩টি বাড়ি বিতরণ করা হয়েছে। ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি, ৬৩ হাজার ৯শ ৯৯টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবার প্রথম ধাপের অধীনে ঘর পেয়েছিল।

গত বছরের ২০ জুন আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের দ্বিতীয়পর্যায়ে তাদের মাথার উপর একটি ছাদ পেয়েছে। এ কর্মসূচির তৃতীয় ধাপের আওতায় সারা দেশে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মধ্যে আরও ৬৫ হাজার ৬শ ৭৪টি ঘর বিতরণের পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী ২৬ এপ্রিল ৩২ হাজার ৯শ ৪টি বাড়ি হস্তান্তর করেছেন। সারা দেশের ৪শ ৯২টি উপজেলায় এসব ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রকল্পের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ১ লাখ ১৭হাজার ৩শ ২৯টি বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে এবং ২০২১-২০২২ সালের চলতি অর্থবছর পর্যন্ত ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩টি বাড়ি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ভূমিহীন, গৃহহীন, হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল পরিবারের স্বামী-স্ত্রীর যৌথ নামে জমি ও বাড়ির মালিকানা দেয়া হয়। প্রতিটি ইউনিটে দুটি কক্ষ, একটি রান্নাঘর, একটি টয়লেট এবং একটি বারান্দা রয়েছে, যার মূল্য ২ লাখ ৫৯ হাজার ৫শ টাকা কর ও ভ্যাট ছাড়াই।

ট্যাক্স ও ভ্যাটসহ এর পরিমাণ ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। আশ্রয়ণ-২ এর তৃতীয়পর্বে বাড়িগুলোকে আরও টেকসই এবং জলবায়ু সহনশীল করতে সরকার খরচ বাড়িয়েছে এবং নকশায় পরিবর্তন এনেছে। বাড়িগুলোকে আরও টেকসই করার জন্য শক্তিশালী গ্রেটবিম, লিন্টেল এবং আরসিসি পিলার-বিশিষ্ট বাড়িগুলো নির্মাণ করা হয়। চলতি অর্থবছর পর্যন্ত বাড়ি নির্মাণে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৯শ ৭২ কোটি ৭ লাখ ৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

খাসজমি ছাড়াও গৃহহীন ও ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের জন্য সরকার ১৬৮ দশমিক ৩২ একর জমি কিনেছে। ইতোমধ্যেই জমি কেনার জন্য ১১৫ দশমিক ৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এসব বাড়ি নির্মাণে সারা দেশে অবৈধ দখল থেকে ২ হাজার ৯শ ৬৭ কোটি ৯ লাখ টাকা মূল্যের ৫ হাজার ৫শ ১২ দশমিক ৪ একর খাসজমি উদ্ধার করেছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে, ১৯৯৭ থেকে মার্চ, ২০২২ পর্যন্ত মোট ৫ লাখ ০৭ হাজার ২শ ৪৪ পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে এবং পুনর্বাসিত পরিবারগুলোকে তিন মাসের জন্য ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে।

পুনর্বাসিত পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন উৎপাদনশীল এবং আয়বর্ধক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করতে ব্যবহারিক এবং প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। একই সঙ্গে তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য ক্ষুদ্রঋণ বিভিন্ন সরকারি সংস্থা যেমন বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড, সমবায়, মহিলা ও শিশু অধিদপ্তর, সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে বিতরণ করা হয়।

পরিবারগুলোর জন্য বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে এবং প্রকল্পের জায়গায় নিরাপদ পানির জন্য নলকূপ স্থাপন, পুকুর খনন, খেলার মাঠ, কমিউনিটি সেন্টার, প্রার্থনা ঘর এবং কবরস্থান এবং অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য রাস্তা দিয়ে আবাসন প্রকল্পগুলোকে সহজতর করা হয়েছে।

ঘর পেয়ে আশ্রয়হীনদের একেকজন তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন নানাভাবে। সেই উপহারের ঘরে বসে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নকশিকাঁথা সেলাই করছেন চট্টগ্রামের আনোয়ারার গৃহহীন রহিমা আক্তার। তিনি খুশি হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দুটি নকশি কাঁথা সেলাই করেছেন।

আমাদের প্রত্যাশা থাকবে গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর এই মহতী ও মানবিক উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে আগামীতেও। তবেই আমার পাব একটি মানবিক এবং কল্যাণকর রাষ্ট্র, যা জাতির পিতার আজীবনের স্বপ্ন ছিল।

লেখক : ফারিহা হোসেন – ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, নারী-শিশু, বায়োকেমেস্ট্রি ও পরিবেশ বিজ্ঞানে অধ্যয়নরত।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ