1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

সমুদ্রপথে আসছে ইয়াবা : নজরদারিতে গডফাদারসহ বহনকারী জেলেরা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ২৩ মার্চ, ২০২২

সমুদ্রপথে ইয়াবা চালানের চক্র আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। মাদকের ‘ক্যারিয়ার’ হিসেবে কাজ করছেন জেলে নৌকার মাঝিরা। টেকনাফ থেকে সমুদ্রপথে মাছ ধরার ট্রলারে করে বঙ্গোপসাগর হয়ে পাথরঘাটা, তালতলী, পটুয়াখালীর কুয়াকাটাসহ দক্ষিণ উপকূলে মাদক আনা হয়। সেখান থেকে নানা হাত ঘুরে ছড়িয়ে যায় গোটা দেশে।

জেলা পুলিশের তথ্য মতে, গত ৪ ফেব্রুয়ারি বরগুনার বামনা থেকে ৪৮ হাজার পিস ইয়াবার চালানসহ নজরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে আটক করে র‌্যাব। এর পরদিন বিষখালী নদীর পাথরঘাটা এলাকার একটি ট্রলার থেকে ১ হাজার ৩ পিস ইয়াবাসহ রুস্তম নামের একজনকে আটক করে কোস্ট গার্ড। এক দিন পর রাতে ফের বরগুনার বেতাগী উপজেলার মোকামিয়া ইউনিয়নে করুনা গ্রামের দোলন সিকদারের বাড়িতে অভিযানে রিপন হাওলাদার, আব্দুর রব ও জসিম নামের তিনজনকে আটক করে ডিবি পুলিশ। তাদের কাছ থেকেও ১ হাজার ২৭৫ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। তিন দিনের অভিযানে ইয়াবাসহ আটক পাঁচ ব্যক্তির দুজনই পেশায় জেলে।

আটক নজরুল ট্রলারে জেলের কাজ করতেন। রুস্তমও পেশায় জেলে। জিজ্ঞাসাবাদে এসব ব্যক্তি জানান, ইয়াবা চালানের ‘ক্যারিয়ার’ হিসেবে কাজ করেন আরও অনেক জেলে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, ২০১৮ সাল থাকে তারা কড়া নজরদারি চালাচ্ছে। ফলে তাদের নজর এড়াতে এখন গভীর সাগর পাড়ি দিয়ে ইয়াবার চালান আনার চেষ্টা করছে পাচারকারীরা। আগে মিয়ানমার থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ হয়ে চট্টগ্রামকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু ওই রুটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে টেকনাফ, উখিয়া ও কক্সবাজার থেকে ইঞ্জিনচালিত কাঠের বোটগুলো সমুদ্রপথে সরাসরি বরগুনার পাথরঘাটা, তালতলী, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা ও মহিপুর এলাকায় চলে আসে। এরা গভীর সমুদ্রে ইয়াবা হস্তান্তরের কাজ করে।২০১৮ সালের ৬ অক্টোবর কলাপাড়ার শেখ কামাল সেতুর টোল পয়েন্ট থেকে ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৫৬ পিস ইয়াবার বিশাল চালানসহ উখিয়ার আলমসহ তার সহযোগী টেকনাফের ইব্রাহিমকে বরিশালে আটক করা হয়। এরপর ২০১৯ সালের ২ এপ্রিল ঢাকায় বরগুনা-ঢাকা রুটে চলাচলকারী সপ্তবর্ণা-১ লঞ্চ থেকে ৮ লাখ ৪৫ হাজার পিস ইয়াবাসহ তিনজনকে আটক করে র‌্যাব।

এই দুটি চালান আটকের পর দুই বছর এই রুটে মাদকের চালান কমে আসে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা মনে করছেন, আবারও সমুদ্রপথে জেলে ট্রলারে ইয়াবা পাচার শুরু করা হয়েছে।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এলাকায় ট্রলার মালিক, জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কক্সবাজার থেকে সরাসরি পাথরঘাটায় মাছ শিকারের জন্য ট্রলার আসে। এসব ট্রলার পাথরঘাটায় নোঙর করে বাজার-সওদা ও বরফ কিনে সাগরে মাছ শিকার করে ফিরে এসে বিএফডিসি পাথরঘাটায় মাছ বিক্রি করে। তারপর কক্সবাজার ফিরে যায়।

এসব ট্রলারের মাঝিদের ব্যবহার করেন ইয়াবা চোরাচালানের গডফাদাররা। মাঝিদের মাধ্যমে টেকনাফ থেকে আসা ইয়াবা নৌপথে পাথরঘাটায় পৌঁছানোর কাজ করানো হয়। কক্সবাজার উপকূল থেকে ২০ নটিক্যাল মাইল দূরত্বে গভীর সমুদ্রে জেলে ট্রলারে ইয়াবার এসব চালান তুলে দেয়া হয়। পটুয়াখালী থেকে ৩০ নটিক্যাল মাইল দূরত্বেও বরগুনার পাথরঘাটা ও তালতলী এলাকার ট্রলারে জেলেরা ইয়াবা গ্রহণ করেন।

গডফাদারদের নেটওয়ার্কে যুক্ত স্থানীয় কিছু ব্যক্তি এসব তত্ত্বাবধান করেন। পরে স্থলপথে ক্যারিয়ার হিসেবে কাজ করা কিছু লোক এসে এসব ইয়াবা পৌঁছে দেন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।

ইয়াবা পাচার থেকে শুরু করে বিক্রেতা পর্যন্ত কয়েকটি ধাপে আলাদা লোকজন নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করেন।

এই চক্রের সঙ্গে পাথরঘাটা, তালতলী, বরগুনা সদর, পটুয়াখালীর মহিপুর এবং কুয়াকাটার স্থানীয় কিছু ব্যক্তি জড়িত। এলাকার পরিচিত কিছু মুখ ইয়াবার এ বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত।

পাথরঘাটার মতোই কক্সবাজার থেকে পটুয়াখালীর মহিপুরে আসা জেলে ট্রলারেও একইভাবে ইয়াবা আসে এবং সেগুলো নৌ ও স্থলপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে যায়।

ধরা পড়ছে না মূল গডফাদাররা

র‌্যাব জানিয়েছিল, সমুদ্রপথে ইয়াবা চালানের চক্রে আট থেকে ১০ জনের একটি গ্রুপ জড়িত। এ গডফাদারদের তালিকা র‌্যাবের কাছে আছে, কিন্তু এখনও ইয়াবা বহনকারীরাই বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অভিযানে আটক হন, আর মূল হোতারা থেকে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে।

যারা ধরা পড়ছেন, তারা খুচরা বিক্রেতা। তারা নিজেরা সেবন করার পাশাপাশি সেবনের খরচ উঠাতে অতিরিক্ত কিছু ইয়াবা সংগ্রহ করে খুচরা বিক্রি করেন।  এখন প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে কিশোরদের হাতে ইয়াবা পাওয়া যায়।

র‌্যাব-৮ পটুয়াখালী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট শহিদুল ইসলাম জানান, গত শুক্রবার বরগুনার বামনা উপজেলা থেকে আটক হওয়া ইয়াবার চালান কক্সবাজার থেকে বঙ্গোপসাগর হয়ে পাথরঘাটার বিষখালী মোহনায় আসে। একই দিন শুক্রবার ভোর রাত ৪টার দিকে পাথরঘাটার বিষখালী নদী থেকে ইয়াবাসহ আটক জেলের কাছেও সমুদ্রপথে ইয়াবার চালান এসেছিল।

তিনি জানান, সম্প্রতি আটক ব্যক্তিদের দেয়া তথ্য মতে সমুদ্রপথে আসা ইয়াবার চালান গ্রহণ করে বরগুনার পাথরঘাটা ও তালতলী, পটুয়াখালীর মহিপুর-আলীপুরের স্থানীয় কোনো গডফাদার। বিষয়টি একাধিক সংস্থা খতিয়ে দেখছে।

বরগুনার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক বলেন, ‘এই রুট বন্ধে জেলা পুলিশের বিভিন্ন শাখা, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা যৌথ বাহিনীর সদস্যরা কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছেন। আমরা এই রুটে ইয়াবা চালান বন্ধে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি স্থানীয় গডফাদারদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।’


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ