1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ব্লুমবার্গের পূর্বাভাস এবং প্রকট ত্রয়ী শক্তি

আলী হাবিব : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ২ এপ্রিল, ২০২৩

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘স্বপ্নমঙ্গল’ কবিতার একটি পঙক্তি হচ্ছে, ‘ত্রয়ী শক্তি ত্রিস্বরূপে প্রপঞ্চে প্রকট’। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই তিনটি শক্তি প্রকটভাবে সক্রিয়।

বিস্তারিত বিবরণে যাওয়ার আগে আমরা জন পার্কিন্স নামের অতি পরিচিত এক আমেরিকান লেখকের সঙ্গে নতুন করে পরিচিত হই। ২০০৪ সালে প্রকাশিত তাঁর বই ‘কনফেশন অব অ্যান ইকোনমিক হিটম্যান’ সারা বিশ্বে ব্যাপক সাড়া ফেলে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে অর্থনৈতিক উপনিবেশ কিভাবে কাজ করে, তার বিবরণ তিনি তুলে ধরেছেন এই বইয়ে। জন পার্কিন্স নিজেকে তুলে ধরেছেন একজন ইকোনমিক হিটম্যান হিসেবে। এখানে দেখানো হয়েছে একজন ইকোনমিক হিটম্যান কিভাবে তার লক্ষ্য পূরণ করে। জন পার্কিন্সের ভাষায়, ইকোনমিক হিটম্যান হলো উচ্চ বেতনের পেশাদার। তারা বিভিন্ন বিদেশি সাহায্য সংস্থার কাছ থেকে অর্থ নিয়ে বিভিন্ন দেশে যায়। ওই সব দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ লুণ্ঠনের নানা কায়দা করে থাকে তারা। তাদের খেলাটা অনেকটা পুরনো সাম্রাজ্যবাদের মতো। বিশ্বায়নের এই সময়ে খেলাটা নতুন এবং ভয়ংকর মাত্রা গ্রহণ করেছে। পার্কিন্স লিখেছেন, একজন ইকোনমিক হিটম্যান যখন কোনো দেশে যাবে তখন তাকে স্বাগত জানাতে তৈরি থাকবে ওই দেশের সুধীসমাজ ও কিছু রাজনীতিবিদ, বেসরকারি কিছু উন্নয়ন সংস্থা বা সাহায্য সংস্থা এবং কিছু গণমাধ্যম। ইকোনমিক হিটম্যানের পেছনে শুধু অর্থের শক্তি নয়, অস্ত্রের শক্তিও থাকবে। থাকবে আন্তর্জাতিক শক্তির আশীর্বাদ।

তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যে এই ইকোনমিক হিটম্যানদের টার্গেট বা তাদের খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ এখানে তাদের অপেক্ষায় আছে এক শ্রেণির সুধীসমাজ। এই সুধীসমাজের পৃষ্ঠপোষক কিছু বেসরকারি সাহায্য সংস্থা বা উন্নয়ন সংস্থা। একজন ইকোনমিক হিটম্যানের কোনোখানে কাজ করতে যাওয়ার মূল্য উদ্দেশ্য ওই দেশের সরকার কথা না শুনলে সেই সরকারকে নড়বড়ে করে দেওয়া। প্রয়োজনে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা। সুধীসমাজ, রাজনৈতিক দল এবং বেসরকারি কিছু উন্নয়ন সংস্থা বা সাহায্য সংস্থাকে এ কাজে ব্যবহার করা হয়। আন্তর্জাতিক শক্তি যেমন পাশে থাকে, তেমনি দেশের কিছু গণমাধ্যমও ইকোনমিক হিটম্যানদের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে।

দেশি-বিদেশি ইকোনমিক হিটম্যানরা যে বাংলাদেশে সক্রিয় তার নমুনাও দৃশ্যমান। ২০২৩ সাল নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক বৈশ্বিক পূর্বাভাস প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ব প্রবৃদ্ধি শ্লথ হচ্ছে, রয়েছে বিপজ্জনকভাবে মন্দার কাছাকাছি। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, সুদের হার বৃদ্ধি এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার জেরে বিশ্বের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমবে। এর আগে আইএমএফ জানিয়েছিল, বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ দেশ এ বছর মন্দায় পড়বে। অর্থাৎ গোটা বিশ্বব্যবস্থা একটি সংকটের মধ্যে পড়বে। ঠিক এই সময়ে এসে বিশ্বখ্যাত সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গ বলছে, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও ‘সময়োচিত সংস্কার পদক্ষেপ’ গ্রহণের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখেছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক অর্থবিষয়ক সংবাদ সংস্থাটি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে এক নিবন্ধে লিখেছে, ‘তিনি টানা চতুর্থ মেয়াদে জয়ী হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।’ নিবন্ধে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা চতুর্থ মেয়াদে সম্ভাব্য জয়ী হওয়ার কারণ এটা নয় যে তাঁর অনেক প্রতিপক্ষ কারাগারে আছেন বা আইনি ফাঁদে পড়েছেন। বরং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তাঁর সাফল্যের কারণেই এটা ব্যাপকভাবে প্রত্যাশিত।

এটা গেল একটি দিক। আরো কয়েকটি সমীকরণ এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫২ বছর পূর্তি ও মহান স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বাইডেনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ৫০ বছরের বেশি কূটনৈতিক সম্পর্কের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ উভয় দেশই অনেক কিছু অর্জন করেছে। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের জনগণকে উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিনকেনও। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের গর্ব করার অনেক কারণ রয়েছে। দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি, ক্রমবর্ধমান সুশিক্ষিত কর্মশক্তি এবং একটি গতিশীল যুব জনসংখ্যার সঙ্গে বাংলাদেশ দ্রুত একটি আঞ্চলিক নেতা হয়ে উঠছে। ব্লিনকেনের বিশ্বাস, বাংলাদেশ তার বিশাল সম্ভাবনা অর্জন করবে।

এসব কারণে গাত্রদাহ শুরু হয়েছে দেশে ও দেশের বাইরে একটি বিশেষ শ্রেণির। এই দলে দেশের অভ্যন্তরে অকার্যকর কিছু রাজনৈতিক দল যেমন আছে, তেমনি ‘চোখে ভালো কিছু দেখতে না পারা’ রোগে আক্রান্ত সুধীসমাজও এই দলভুক্ত। ‘দুই নেত্রীকে সরে যেতে হবে’ দেড় দশক আগে এমন ভাবনায় পেয়ে বসা গণমাধ্যমও বসে নেই। তারাও স্বাধীনতা দিবসে স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করার দুঃসাহস দেখাচ্ছে। কারণ তারা জানে তাদের পেছনে আন্তর্জাতিক শক্তির সমর্থন ও অর্থ নিয়ে প্রস্তুত ইকোনমিক হিটম্যান। জনসমর্থনের শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা সরকারের অবস্থান নড়বড়ে করার প্রক্রিয়াটি এখন এভাবেই চলছে।

ওদিকে অভ্যন্তরে বহুধাবিভক্ত বিএনপি এখন নতুন করে ‘গণতন্ত্র গেল’ বলে রব তুলতে শুরু করেছে। ১০ থেকে ২৭ দফা হয়ে এখন তারা সরকার পতনের এক দফার খোয়াব দেখছে। লন্ডনে পলাতক এক দণ্ডিত অপরাধী এখন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলদের গুরুর ভূমিকায়। মাঝেমধ্যে তাঁর ওহি নাজিল হওয়ার কথা শোনা যায়। আচ্ছা, বিএনপি কি দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাহলে তারা কী করে একজন দণ্ডিত অপরাধীকে নেতা মানে? গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, দলটি এখন নাকি ‘রাজনৈতিক সংকট’ সমাধানে সহায়তা চেয়ে শিগগির জাতিসংঘকে চিঠি দেবে। দলটি নাকি মনে করে, শেষ দুই জাতীয় নির্বাচনে জনগণের ‘ভোটাধিকার হরণ’ করার পাশাপাশি আগামী সংসদের ভোটও ‘একতরফা’ করতে সরকার নানামুখী ‘ষড়যন্ত্র’ করছে। এসব কথাই হয়তো চিঠি দিয়ে জাতিসংঘকে জানাবে দলটি। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার যৌক্তিকতাও চিঠিতে উল্লেখ করা হবে গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগেও জাতিসংঘ, ইইউ ও কমনওয়েলথকে এ ধরনের চিঠি দিয়েছিল বিএনপি। আর ২০১৪ সালের ভোটের আগেও জাতিসংঘের মধ্যস্থতা চেয়েছিল।

রাজনীতি করতে হলে জনগণের কাছে যেতে হয়। বিএনপি বিদেশিদের কাছে গিয়ে নালিশ করে। কিন্তু বিদেশিরা এসে তো এ দেশের সরকার গঠন করে দেবে না। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে জনগণ যাদের ম্যান্ডেট দেবে, তাদের বাইরে কারো সরকার গঠনের এখতিয়ার নেই।

সুধীসমাজের একটি অংশের বিরোধিতা, এক শ্রেণির গণমাধ্যমের অপপ্রচার ও বেসরকারি সংস্থার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত জরিপের ফলাফল এবং রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির নানা কর্মসূচি ম্লান হয়ে গেছে ব্লুমবার্গের একটি নিবন্ধে। যেখানে পূর্বাভাস করা হয়েছে যে ২০২৪ সালের নির্বাচনে আবার ক্ষমতায় আসছেন শেখ হাসিনা। ব্লুমবার্গের এই পূর্বাভাসের পর বিএনপি ও সমগোত্রীয়দের জ্বালাপোড়া কোন মাত্রায় শুরু হয়—সেটাই এখন দেখার বিষয়।

লেখক : আলী হাবিব – সাংবাদিক, ছড়াকার

সূত্র- কালের কণ্ঠ 


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ

নির্বাচিত