ঈদের ছুটি শেষে বরিশাল থেকে মোটরসাইকেলে রওনা দিয়ে পদ্মা সেতু হয়ে মাত্র তিন ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছেছেন মোজাম্মেল বাবু। তিনি বরিশাল নগরীর কাশিপুর গড়িয়ারপাড় এলাকার বাসিন্দা। বনানীতে একটি রেস্টুরেন্টে চাকরি করেন।
সোমবার (২৪ এপ্রিল) সকাল ৭টায় বরিশাল থেকে রওনা দিয়ে সকাল ১০টায় ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে পৌঁছান মোজাম্মেল। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করে কোনও ধরনের যানজটে পড়া ছাড়াই ঢাকায় আসতে পেরে দারুণ উচ্ছ্বসিত মোজাম্মেল।
একইদিন বরিশালের নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে হানিফ পরিবহনের বাসে সাড়ে তিন ঘণ্টায় ঢাকায় এসেছেন নজরুল ইসলাম। নগরীর কলেজ এভিনিউয়ের বাসিন্দা নজরুল বিকাল সাড়ে ৩টায় রওনা দিয়ে সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকায় পৌঁছান। সঙ্গে ছিলেন তার পরিবারের সদস্যরা। পরিবার নিয়ে থাকেন মিরপুরে। বেসরকারি একটি অফিসে চাকরি করায় তাকে দ্রুত ঢাকায় ফিরতে হয়েছে।
তাদের মতো ঈদ শেষে নির্বিঘ্নে সোমবার ঢাকায় কর্মস্থলে ফিরেছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীরা। পদ্মা সেতুর কল্যাণে এবার ঈদযাত্রা ও কর্মস্থলে ফেরা স্বস্তির বলে জানিয়েছেন তারা।
মোজাম্মেল বাবু বলেন, ‘এবারের ঈদ ছিল মোটরসাইকেলচালকদের জন্য স্পেশাল। কারণ প্রধানমন্ত্রী ঈদে উপহার হিসেবে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল পারাপারের অনুমতি দিয়েছেন। আমরা সরকারি নির্দেশনা মেনে পদ্মা সেতু দিয়ে খুব অল্প সময়ে বরিশাল যেতে আবার ঢাকায় ফিরতে পেরেছি।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকায় ফেরার পথে কোথাও যানজট পাইনি। তিন ঘণ্টায় ঢাকায় ফিরেছি। যেখানে আগে লঞ্চে সময় লাগতো ৮-৯ ঘণ্টা। সেখানে এখন সড়কপথে লাগছে তিন ঘণ্টা। পদ্মা সেতুর কল্যাণে আমাদের যাতায়াত সহজ হয়েছে।’
একই স্বস্তির কথা জানিয়েছেন শরীয়তপুর সুপার পরিবহনের বাসচালক মোক্তার হোসেন। তিনি বলেন, ‘এবারের ঈদে গাড়ি চালাতে কোনও রকম যানজটে পড়তে হয়নি। ছুটি শেষে মানুষ এখন ঢাকায় ফিরছে। সোমবার সকালে এক ট্রিপ নিয়ে ঢাকা থেকে শরীয়তপুরে এসেছি। এখন আবার ঢাকায় ফিরছি। শরীয়তপুর থেকে মাওয়া প্রান্তে আসতে সময় লেগেছে দেড় ঘণ্টা। কোনও সড়কে যানজট নেই। গাড়ি চালিয়ে আনন্দ পাচ্ছি। সব সময় যদি এভাবে গাড়ি চালাতে পারতাম, তাহলে কষ্ট কম হতো, ট্রিপ বাড়তো, আয়ও বেশি হতো। যাত্রীরা ভোগান্তি ছাড়াই গন্তব্যে যেতে পারতেন।’
ঈদের ছুটি শেষে পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকায় ফিরছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীরা। সোমবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কিছুটা গাড়ির চাপ থাকলেও কোনও যানজট সৃষ্টি হয়নি। কোনও ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই গণপরিবহনে, ব্যক্তিগত গাড়িতে ও মোটরসাইকেলে কর্মস্থলে ফিরতে দেখা গেছে যাত্রীদের।
এবার ঈদযাত্রা স্বস্তির হয়েছে এবং ফিরতিযাত্রাও স্বস্তিদায়ক হবে বলে আশা করছেন পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ঈদের ছুটি শেষে সোমবার থেকে কর্মদিবস শুরু হয়েছে। এ জন্য সোমবার সকাল থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষজন ঢাকায় ফিরছেন। সেতু এলাকায় কিছুটা যানবাহনের চাপ থাকলেও কোনও যানজট সৃষ্টি হয়নি। এখন পর্যন্ত ফিরতিযাত্রাও স্বস্তির। আশা করছি, ভোগান্তি ছাড়াই সবাই কর্মস্থলে ফিরতে পারবেন।’
পদ্মা সেতুর অতিরিক্ত পরিচালক আমির হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘পদ্মা সেতুর কল্যাণে এবারের ঈদে এই পথে যাত্রীরা নির্বিঘ্নে ঘরে ফিরেছেন। ফেরার পথেও ভোগান্তি হবে না। মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে কর্মস্থলে ফিরতে পারছেন।’