1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন শক্ত ভিত্তি

আলী হাবিব : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৩

বাংলাদেশকে বলা হচ্ছে উন্নয়নের রোল মডেল। বৈশ্বিক বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। ঈর্ষণীয় অগ্রগতির কারণে বিশ্ব আজ বাংলাদেশের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কানাডার অনলাইন প্রকাশনা সংস্থা ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৩৫তম। যুক্তরাজ্যভিত্তিক থিংকট্যাংক সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ বলছে, ২০৩০ সালে বাংলাদেশ হবে বিশ্বে ২৮তম বড় অর্থনীতির দেশ। আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৪ বছরে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আর্থ-সামাজিক এবং অবকাঠামো খাতে বাংলাদেশ বিস্ময়কর উন্নয়ন করেছে।

আর এ সবই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে। বৈশ্বিক সংকটে বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার চ্যালেঞ্জ বেশ ভালোভাবেই সামাল দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর গতিশীল যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। পৌঁছে যাবে উন্নত দেশের কাতারে—এ প্রত্যাশাও এখন অমূলক নয়।

প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক সময়ের জাপান সফর প্রমাণ করেছে, তিনি বাংলাদেশকে কোন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন! দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সুবর্ণ জয়ন্তীতে এসে গত বুধবার বিকেলে টোকিওতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার নেতৃত্বে দুই দেশের বৈঠক শেষে পরস্পরের কৌশলগত অংশীদার হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ও জাপান। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ চীন ও ভারতের পর তৃতীয় দেশ হিসেবে জাপানের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক গড়ল। জাপানের মতো পশ্চিমঘেঁষা দেশের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ককে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন বিশ্লেষকরা। তাঁরা বলছেন, চীন ও ভারতের পর এখন জাপানও বাংলাদেশের কৌশলগত অংশীদার হওয়ায় এটা প্রমাণিত হয়েছে যে বাংলাদেশের স্ট্র্যাটেজিক অবস্থান অত্যন্ত শক্ত। কৌশলগত অংশীদারি সম্পর্কিত যৌথ বিবৃতিতে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্ব দিয়েছে দুই দেশ। ৩০ দফা যৌথ ঘোষণায় বাংলাদেশ ও জাপানের আগামী দিনগুলোর সম্পর্কের রূপরেখা প্রতিফলিত হয়েছে। এ অঞ্চল ও এর বাইরে শান্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থে দুই দেশই আন্তর্জাতিক রীতি-নীতি ও শৃঙ্খলা মেনে চলে অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিকের প্রতি অঙ্গীকার তুলে ধরেছে। গুরুত্ব পেয়েছে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন।

অদূর ভবিষ্যতে টোকিওতে বাংলাদেশ দূতাবাসে প্রতিরক্ষা শাখা ও ঢাকায় জাপান দূতাবাসে জাতীয় নিরাপত্তা শাখা খোলার কথা বিবেচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। এ ছাড়া নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদারের সম্ভাব্য উপায়গুলো চিহ্নিত করতে দুই দেশের কূটনৈতিক ও প্রতিরক্ষা কর্তৃপক্ষের মধ্যে আলোচনা জোরদারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে ৩০ বিলিয়ন ইয়েন সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এ ছাড়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে অর্থনৈতিক চুক্তির বিষয়ে কাজ করতে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে।

জাপানে চার দিনের সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন অবস্থান করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে। সেখানে আগামীকাল বিশ্বব্যাংক সদর দপ্তরে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে সম্পর্কের ৫০ বছর উপলক্ষে ‘রিফ্লেকশন অন ৫০ ইয়ার্স অব ওয়ার্ল্ড ব্যাংক-বাংলাদেশ পার্টনারশিপ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন তিনি।

বাংলাদেশকে উন্নয়নের পরবর্তী ধাপে উত্তরণে সহযোগিতা করতে বিশ্বব্যাংক গ্রুপ আগামী চার বছরে প্রতিবছর দুই বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ঋণ সহায়তা দেবে। এরই মধ্যে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই উন্নয়নে সহায়তা দিতে তিন প্রকল্পে বাংলাদেশের জন্য ১.২৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের জন্য চার বছরের একটি নতুন অংশীদার কাঠামো তৈরি করেছে, যা ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে পৌঁছানোর লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে। এর মধ্যে কৃষি ও পল্লী উন্নয়নে ৫০ কোটি ডলারের একটি প্রকল্প কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থায় বৈচিত্র্য আনার পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, উদ্যোক্তা তৈরি এবং জলবায়ু সহনশীলতা তৈরিতে সহায়তা করবে। পরিবেশবান্ধব ও জলবায়ু সহনশীল উন্নয়নে ৫০ কোটি ডলারের একটি প্রকল্প বাংলাদেশকে সবুজ এবং জলবায়ু সহনশীল উন্নয়নে উত্তরণে সহায়তা করবে। আর ২৫ কোটি ডলারের একটি প্রকল্প ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের টেকসই উত্তরণে সহায়তা করবে, এ খাতকে আরো গতিশীল করবে, দূষণ কমাবে, সম্পদ ব্যবহারের দক্ষতা বাড়াবে এবং জলবায়ু সহনশীল প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবে। অনুমোদিত এই তিন প্রকল্প মিলিয়ে বাংলাদেশে ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৬.৩ বিলিয়ন ডলারে।

যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে যুক্তরাজ্য যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৪ মে যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য কমনওয়েলথভুক্ত দেশের রাজা ও রানি হিসেবে তৃতীয় চার্লস এবং তাঁর স্ত্রী ক্যামিলার রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। কিন্তু এর বাইরে হয়তো আরো কিছু বিস্ময় অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।

সব মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই জাপান-যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য সফর অত্যন্ত ফলপ্রসূ। উজ্জ্বল এক বাংলাদেশের ছবি তিনি তুলে ধরতে পেরেছেন। কিন্তু রাজনীতির বিরোধী পক্ষের চোখে অন্য উচ্চতার এই ছবিটি ধরা পড়ে না। অথবা তাদের দৃষ্টি অত দূর পর্যন্ত যায় না। জাপান যখন বাংলাদেশের কৌশলগত অংশীদার হয়, বিশ্বব্যাংক যখন আগামী চার বছরে প্রতিবছর দুই বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ঋণ সহায়তা দিতে এগিয়ে আসে, তখন বিরোধী পক্ষ মনে করে ‘জনবিচ্ছিন্ন’ হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশিদের কাছে ‘ধরনা’ দিচ্ছেন। অথচ ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের ফল দেখলেই স্পষ্ট হবে কারা জনবিচ্ছিন্ন।

বিরোধী পক্ষের সমালোচনার জবাব না দিয়ে এখন সরকারের উচিত হবে ধারাবাহিকতা ধরে রেখে উন্নয়ন টেকসই করতে ভিত্তিটা আরো শক্ত করা। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে একটু ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারলে সেটা সম্ভব হবে। এটা নতুন কিছু নয়। সেই ১৯৪৭ সাল থেকেই আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে এই পরিবেশটি ছিল। সংস্কৃতিকে রাজনীতির সমান্তরালে আনতে হবে। রাজনীতি ও সংস্কৃতি হাত ধরাধরি করে পথ চলবে। নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্ম হবে। জনবান্ধব রাজনীতি ও প্রগতিশীল সংস্কৃতি অন্যের পরিপূরক হয়ে কাজ করবে। পঞ্চাশ ও ষাটের দশক, স্বাধীনতার পর সত্তরের দশক, এমনকি নব্বইয়ের গণ-আন্দোলন তো সেই সাক্ষ্যই দিচ্ছে।

সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে বেগবান করতে রাজনৈতিক সমর্থন দিলে দেশে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি এমনিতেই নিজেদের গুটিয়ে নেবে। রাজনীতি আর সংস্কৃতি যদি হাত ধরাধরি করে পথ চলে, তাহলে কোনো অপশক্তি বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।

লেখক: আলী হাবিব – সাংবাদিক ও ছড়াকার।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ