নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন গড়ে তুলতে এবং এর ধারাবাহিকতায় নির্বাচন বর্জন ও প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। ব্যর্থতার নাগাল টানতে সাংগঠনিক ভিত্তি শক্তিশালী করার তথা দলকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। কিন্তু মূল্যায়ন করার কথা বলে কয়েকজন নেতাকে পদোন্নতি দেওয়ায় দলে অসন্তোষ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। সম্প্রতি গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। তবে তাদের রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন দলটির নেতাকর্মীরা। ত্যাগীদের উপেক্ষা করে সুবিধাবাদী ও তোষামোদকারীদের পদোন্নতি দেওয়ার জন্য তারেক জিয়ার স্বেচ্ছাচারিতা ও অদূরদর্শিতাকে দায়ী করছেন নেতাকর্মীরা।
বিএনপির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে জানান, মূল্যায়নের নামে এমন কিছু নেতাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে যারা ২৮ অক্টোবরের পর থেকে রাজপথেই ছিলেন না। এমন নেতাকেও পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে যিনি কি না আন্দোলনের তিন মাস দেশেই ছিলেন না।
বিএনপি নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল অনেকটা খোলাখুলিই বলেছেন, যাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, দল তাদের কী যোগ্যতা খুঁজে পেয়েছে তা আমার জানা নেই।
বিএনপির অনেক নেতাকর্মী এসব পদোন্নতির বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন। তাদের অভিযোগ, আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা রাখা নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করার কথা বলা হলেও বাস্তবে তা কার্যকর না করে উল্টো রাজপথে যাদের উল্লেখ করার মতো ভূমিকা ছিল না তাদেরই পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের উপেক্ষা করার উদাহরণ হিসেবে একাধিক নেতা অভিযোগ করেন, পদোন্নতি প্রাপ্ত নেতা অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার বা অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া আদৌ পদোন্নতির যোগ্যতা রাখেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
কার সুপারিশে কীসের ভিত্তিতে নেতারা পদোন্নতি পেয়েছেন তা নিয়ে দলের মধ্যে নানান কথা আলোচিত হচ্ছে।
পদোন্নতি নিয়ে বিভ্রান্তি থাকার কথা স্বীকার করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু।
আরেক নেতা রাশেদুল হককে আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। তার ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। কয়েকদিন বিদেশ থাকলেই তিনি আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হওয়ার যোগ্যতা রাখেন কি না- এমন প্রশ্ন দলের ভেতরেই।
এ বিষয়ে সদ্য কারামুক্ত ছাত্রদলের এক সাবেক নেতা বলেন, ‘তারেক রহমান দেশের বাইরে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুবাদে কয়েকজন সিনিয়র নেতা সুযোগ বুঝে তাদের অনুসারীদের পদোন্নতি দিচ্ছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে এমন কিছু নেতাকে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে যাদের রাজপথে ভূমিকা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে।’
বিএনপির এই শোচনীয় অবস্থা, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, অসন্তোষ ও আন্দোলনে ব্যর্থতার জন্য মূলত তারেক জিয়াকেই দায়ী করেন বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মী ও সিনিয়র নেতারা।