1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট স্কাউটিং

নিউজ এডিটর : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

স্কাউটিং বিশ্বব্যাপী একটি জনপ্রিয় অরাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবামূলক প্রতিষ্ঠান। যার কাজ হলো আনন্দের মাধ্যমে শিক্ষাদান। শিশু-কিশোর ও যুব বয়সীদের ধারাবাহিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সৎ, চরিত্রবান, পরোপকারী, আত্মনির্ভরশীল করে তোলা, আনন্দের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ গ্রহণে অভ্যস্ত করা; সর্বোপরি আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলাই স্কাউট আন্দোলনের মূল লক্ষ্য। স্কাউটিংয়ের ফলে একজন শিক্ষার্থী জীবনের শৃঙ্খলার মাধ্যমে নিজেকে প্রকৃত অর্থে একজন স্মার্ট সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম।

শিক্ষার্থীদের প্রাণোচ্ছল, উদ্যমী করতে রবার্ট স্টিফেন স্মিথ লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল ১৯০৭ সালে ২১ জন খুদে শিক্ষার্থীকে নিয়ে ইংল্যান্ডের ব্রাউন্সি দ্বীপে ক্যাম্প আয়োজনের মাধ্যমে স্কাউট আন্দোলনের সূচনা করেন। পরে মেয়েরাও উৎসাহিত হলে ১৯১০ সালে শুরু করেন গার্লস গাইড। এই আন্দোলন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রয়েছে এবং বাংলাদেশেরও স্কাউট আন্দোলনের সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।

১৯৭২ সালের ৮-৯ এপ্রিল সারা দেশের স্কাউট নেতারা ঢাকায় এক সভায় মিলিত হয়ে গঠন করেন বাংলাদেশ স্কাউট সমিতি। ১৯৭২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতির ১১১নং অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে বাংলাদেশ স্কাউট সমিতির স্বীকৃতি দেন। সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশ স্কাউটসের প্রথম চিফ স্কাউট।

বিশ্ব স্কাউট সংস্থা ১৯৭৪ সালের ১ জুন বাংলাদেশ স্কাউট সমিতিকে তার ১০৫তম সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৭৮ সালের ১৮ জুন পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল সভায় সমিতির নাম বদলে রাখা হয় বাংলাদেশ স্কাউটস। ১৯৯৪ সালের ২৪ মার্চ বিশ্ব স্কাউট সংস্থার অনুমোদনক্রমে জাতীয় কাউন্সিল গার্ল-ইন-স্কাউটিং চালু করে বাংলাদেশে।

বাংলাদেশ স্কাউট কার্যক্রম মাত্র ৫৬ হাজার ৩২৫ সদস্য নিয়ে শুরু হলেও এখন সদস্য সংখ্যা প্রায় ২৪ লাখ ৩৪ হাজার। তবে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে ৫০ লাখ স্কাউট তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। স্কাউটদের সংখ্যার ভিত্তিতে বিশ্ব স্কাউটে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। বাংলাদেশের স্কাউটরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সমাবেশে অংশগ্রহণ করে সুনামও অর্জন করেছে।

বাংলাদেশে স্কাউট অগ্রাধিকার কার্যক্রমগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২২টি উচ্চপর্যায়ের জাতীয় কমিটি আছে। সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পরিষদ হচ্ছে জাতীয় স্কাউট কাউন্সিল। রাষ্ট্রপতি ও চিফ স্কাউট হলেন এর প্রধান।

দেশব্যাপী স্কাউট আন্দোলনের সার্বিক উন্নয়নে প্রশিক্ষিত ৬৪ জন পেশাদার স্কাউট এক্সিকিউটিভ রয়েছেন। যাবতীয় কার্যক্রম জাতীয় সদর দপ্তর, স্কাউট ভবন থেকে পরিচালিত হয়। স্কাউটিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশে প্রায় ৩০টির মতো প্রকাশনা ও একটি মাসিক পত্রিকা রয়েছে।

স্কাউট আন্দোলন পরিচালনার জন্য রয়েছে ৭টি আইন এবং নির্দিষ্ট শপথ বাক্য। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্কাউট আন্দোলন কাজ করছে তিনটি শাখায়—কাব স্কাউট (৬ থেকে ১০ বছর), স্কাউট (১১ থেকে ১৬ বছর) ও রোভার স্কাউট (১৭ থেকে ২৫ বছর)। এ ছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে মুক্ত দল।

স্কাউটদের কার্যক্রম ও প্রশিক্ষণের জন্য ব্যাজ দিয়ে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তিনটি শাখার জন্য সর্বোচ্চ ব্যাজ হচ্ছে—শাপলা কাব, প্রেসিডেন্ট’স স্কাউট এবং প্রেসিডেন্ট’স রোভার স্কাউট। অ্যাডাল্ট লিডারদের স্কাউটিংয়ে অবদান রাখার সর্বোচ্চ পুরস্কার হচ্ছে রৌপ্য ব্যাঘ্র এবং দ্বিতীয় রৌপ্য ইলিশ।

সদস্য হতে হলে নিয়ম অনুসারে অনুশীলন, প্রতিজ্ঞা পাঠ ও দীক্ষা নিতে হবে। বিভিন্ন উপদলের মাধ্যমে পরিচালিত স্কাউট আন্দোলন কার্যক্রম শারীরিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধন করে জীবনকে সুন্দরভাবে গঠন করতে এবং নেতৃত্বের বিকাশে সহযোগিতা করে। এর ফলে দেশের অভ্যন্তরে আঞ্চলিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং বিভিন্ন সংস্কৃতির মিথস্ক্রিয়া হয়।

স্কাউটদের কার্যক্রমে বিভিন্ন সমাজ উন্নয়নমূলক কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যেমন—বৃক্ষরোপণ, টিকাদান, স্যানিটেশন ও পরিবেশ সংরক্ষণ, ট্র্যাফিক কার্যক্রম, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সেবাদান কর্মসূচি।

স্কাউটিং মূলত প্রচলিত শিক্ষার সম্পূরক। একজন স্কাউট সবার বন্ধু। যে কি না কোনো কিছু প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে নয়, বরং মানবতার টানে সবার সাহায্যে এগিয়ে যায়। সেবামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে এটি মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ দূর করে ঐক্য বাড়ায়। এর মাধ্যমে সন্ত্রাস ও মাদক প্রতিরোধ, বাল্যবিয়ে রোধ, ইভটিজিং প্রতিরোধ ইত্যাদিও সম্ভব হয়।

আজকের শিশুরা স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠলে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ ত্বরান্বিত হবে। তাই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কার্যকর ও গতিশীল স্কাউটিং প্রয়োজন।

লেখক: মাসুমা জান্নাত – উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, কর্ণফুলী, চট্টগ্রাম


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ