1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বাংলাদেশ হয়ে উঠছে পোশাক শিল্পের ‘সোর্সিং হাব’

বাণিজ্য প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ১১ মে, ২০২২

মহামারীর ধকল থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসার পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প বৈশ্বিক ক্রেতাদের প্রধান ‘সোর্সিং হাবে’ পরিণত হচ্ছে বলে মনে করেন এই খাতের বিদেশি অংশীজনরা।

মঙ্গলবার ঢাকার বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পোশাক শিল্প বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ‘সাসটেইনেবল অ্যাপারেল ফোরাম’ অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজন ক্রেতা, বৈদেশিক বিনিয়োগকারী ও পণ্য সরবরাহকারীদের সঙ্গে কথা বলে এমন মনোভাব জানা যায়।

বিশ্বের ৩৯টি দেশের ফ্যাশন বিশেষজ্ঞ, ক্রেতা, প্রযুক্তি সহায়তা প্রতিষ্ঠান এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে। ৩০টি স্থানীয় কোম্পানিসহ বিভিন্ন দেশের ৮৫টি কোম্পানি এই প্রদর্শনীতে রয়েছে।

প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া সুইডিশ ফ্যাশন ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএম’র বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ইথিওপিয়ার আঞ্চলিক প্রধান জিয়াউর রহমান বলেন, “বাংলাদেশ এখন আমদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সোর্সিং কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। মোট কেনাকাটার ১১ শতাংশ এখন বাংলাদেশ থেকে হয়। সামনের দিনগুলোতে এই কেনাকাটা হয়তো আরও বাড়বে।

“এখন পোশাকের বিশ্বে আমাদের অবস্থা বেশ ভালো। এর প্রধান কারণ হচ্ছে এখানে অনেকগুলো গ্রিন কারখানা বা পরিবেশ বান্ধব কারখানা রয়েছে।”

তিনি বলেন, “একজন ক্রেতা এসে এখন কারখানার মান ও কর্ম পরিবেশ নিয়ে হুটহাট মন্তব্য করতে পারে না। দ্বিতীয়ত বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের ইতিহাস এখন একটা পরিণত বয়সে চলে এসেছে। এখন এমন কোনো পণ্য নেই যেটা বাংলাদেশ তৈরি করতে পারে না। এসব কারণে বিশ্বের ক্রেতারা এই বাজারের দিকে নজর দিচ্ছে।

“এছাড়া চলমান মহামারী পরিস্থিতিতে বিশ্বের বিভিন্ন পোশাক উৎপাদনকারী দেশ নাকাল হলেও বাংলাদেশ সরকারি উদ্যোগ ও বিনিয়োগকারীদের প্রচেষ্টায় বেশ সুন্দরভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে।”
বর্তমানে বাংলাদেশের ৩০০ পোশাক কারখানা থেকে এইচঅ্যান্ডএম সরাসরি পণ্য কেনে জানিয়ে জিয়াউর বলেন, কর্মপরিবেশের উন্নতি, পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ ও উচ্চমূল্যের পণ্য উৎপাদনের যে কৌশল বাংলাদেশের শিল্প মালিকরা নিয়েছে, তাতে আগামী ১০ বছরে এই দেশ থেকে ১০০ বিলিয়ন (১০ হাজার কোটি) ডলার রপ্তানি খুবই সম্ভব।

গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ৩ হাজার ৮৭৫ কোটি ডলার পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার ৩৫০ কোটি ডলার।

পোশাকের আরেক ব্র্যান্ড জি-স্টারের আঞ্চলিক কর্মকর্তা শফিকুর রহমান বলেন, তার কোম্পানি বাংলাদেশ থেকে চলতি বছরে ৭০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য কেনাকাটা করেছে যার ৭৫ শতাংশই হচ্ছে নিটপণ্য। তবে সম্প্রতি তার কো্ম্পানি নিটপণ্যের বাইরে ডেনিমসহ বিভিন্ন রকম উচ্চমূল্যের উভেন পণ্যও কেনা শুরু করেছে।

“প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে আমাদের কেনাকাটায় ৩০ শতাংশ করে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। আগামী তিন বছরের মধ্যে বার্ষিক ৯০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য কেনার আশা করছি আমরা।”

প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া ইতালিয়ান পোশাকশিল্প সংক্রান্ত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘তনেলো’ এর মালিক আলিচে তোনেলো বলেন, গত ২৮ বছর ধরে তার কোম্পানি বাংলাদেশে মেশিনারিজ সরবরাহ করে যাচ্ছে। প্রায় ১৫০০ পোশাক কারখানায় তাদের টেক্সটাইল, পোশাক ও ওয়াশিং মেশিনারিজ রয়েছে।

“বাংলাদেশ আমাদের জন্য এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বাজার। প্রতিবছরই বাংলাদেশে আমাদের বিভিন্ন মেশিনারিজের চাহিদা বাড়ছে। আগামী দিনে এখানে পোশাকখাত আরও সম্প্রসারিত হবে বলেই আমরা মনে করছি।”

বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে আগামী দুই বছরের মধ্যেই এখানে কারখানা স্থাপনের জন্য স্থানীয় সহযোগী খুঁজছে তুর্কি কো্ম্পানি বোস।

এই কোম্পানির বাংলাদেশের আঞ্চলিক সেলস ম্যানেজার ইলমিজ দেমির বলেন, “গত ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশের কোম্পানিগুলোকে আমরা ডেনিম ফেব্রিক্স সরবরাহ করছি। প্রতিবছর ১০ লাখ ইয়ার্ড ডেনিম বিক্রি হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পর ইউরোপের বাজারে জিএসপি সুবিধার ক্ষেত্রে ভ্যালুয়েডেশন একটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে। তাই আমরা এখানে কারখানা স্থাপনের জন্য বিশ্বস্ত স্থানীয় অংশীদার খুঁজছি।”

প্রদর্শনীর বিভিন্ন পর্বে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মো. আতিকুল ইসলাম, বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি, বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত অ্যান ফন লিউয়েন, নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহ, বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান, বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, ইউরোপীয় কমিশনের সামাজিক অর্থনীতি ও সৃজনশীল শিল্প ইউনিটের প্রধান আন্না আথানাসোপোলু, ওইসিডির দায়িত্বশীল ব্যবসায়িক আচরনের বিষয়ে আর্থিক খাত এন্ড রেগুলেটরি এনগেজমেন্ট লিড সেন্টার এর বারবারা বিজেলিক, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্লাটফর্ম শেপিং দি ফিউচার অব এডভান্সড ম্যানুফ্যাকচারিং এন্ড ভ্যালু চেইনস’র কমিউনিটি কিউরেটর ইয়ান ক্রোনিন, ইউএনএফসিসিসি এর সেক্টরস এনগেজমেন্ট লিড লিন্ডিটা জাফেরি সালিহু, এইচএন্ডএম এর সাসটেইনিবিলিটি প্রধান প্যাসকাল ব্রুন, ইনডিটেক্স এর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের আঞ্চলিক প্রধান জেভিয়ার সানতোনজা ওলসিনা, যুক্তরাষ্ট্রের পেন স্টেট ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর গ্লোবাল ওয়ার্কার্স রাইটসের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক ড. মার্ক অ্যানার, রিমেকের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও আয়েশা বারেনব্লাট, বেটার বায়িং এর ভাইস প্রেসিডেন্ট রিসার্চ নাজেট ড্রেপার, গুড ফ্যাশন ফান্ড এর টিম লিড ইমপ্যাক্ট ইনভেষ্টমেন্ট জেমা ভারহোভেন, ফেয়ার ওয়্যার ফাউন্ডেশনের হেড অব সাপ্লাই চেইন টান্সফরমেশন অ্যানাবেল মেয়ার্স এবং আইএল বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পোটিআইনেন অংশ নেন।

বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জ এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, “বাংলাদেশে পোশাক শিল্পের টেকসই উন্নয়নের অগ্রযাত্রা বেগবান করতে এ বছরে আমরা সাসটেইনেবল অ্যাপারেল ফোরামের (এসএএফ) সম্মেলনে সব ফ্যাশন স্টেকহোল্ডারকে একই ছাদের নিচে এনেছি।

“বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারীর পর এনেছি, যে মহামারীটি বৈশ্বিক পোশাক সরবরাহ চেইনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। এই ফোরামটি একটি উচ্চ পর্যায়ের আলোচনার প্লাটফর্ম, যেখানে টেকসই বিষয়ে আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্যগুলো কিভাবে অর্থপূর্ণভাবে, বাস্তবসম্মত প্রক্রিয়ায় অর্জন করা যেতে পারে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।”

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশের পোশাক শিল্প, বিশেষ করে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর নিরাপত্তা বিষয়ক বিধিনিষেধগুলো মেনে চলা ও নিশ্চিতকরণের বিষয়ে সদা সতর্ক হয়েছে। এখন আরও নৈতিকতাপূর্ণ ও টেকসই শিল্প নিশ্চিত করার জন্য সমন্বিত প্রচেষ্টার উপর গুরুত্বারোপ করতে হবে।”
নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত অ্যান ফন লিউয়েন বলেন, “বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে নিরাপত্তা ও টেকসই ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। তারপরও শিল্পকে আরও টেকসই করার জন্য আরও করণীয় রয়েছে, যেখানে স্টেকহোল্ডারদের সম্পৃক্ততা আর সহযোগিতাই হচ্ছে মূল বিষয়।”

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন “আজকের দিনে বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলো শুধুমাত্র নিরাপদই নয়, বরং সেগুলো আরও গতিশীল, আধুনিক, জ্বালানি সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ এখন সর্বোচ্চ সংখ্যক সবুজ কারখানার আবাসস্থল।

“আমরা বিশ্বাস করি যে টেকসই উন্নয়ন কোন স্প্রিন্ট নয়, এটি একটি ম্যারাথন। আমরা শিল্পে সামাজিক ও পরিবেশগত ক্ষেত্রে যে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছি, তা বজায় রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। পাশাপাশি, আমরা ব্যবসায় সক্ষমতা বাড়ানোর উপরও নজর দিয়েছি।”


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ