1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ এবং চট্টগ্রামে যা করণীয়

মো. শাহ জালাল মিশুক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ১৩ মে, ২০২৩

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোখা ইতোমধ্যে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। আগামীকাল রবিবার এই ঘূর্ণিঝড় কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে আবহাওয়াবিদরা বলছেন। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র কেন্দ্রে ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার। এটি দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের আশপাশে সাগর খুবই উত্তাল আছে। এটি সুপার সাইক্লোনে রূপান্তরিত হবে কিনা, সে বিষয়ে সুনিশ্চিতভাবে কিছু না বললেও সেই সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না আবহাওয়াবিদরা। তাই ঘূর্ণিঝড়ে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় সেন্ট মার্টিনসহ উপকূলীয় এলাকাগুলোতে সব ধরনের প্রস্তুতিই নেওয়া হচ্ছে।

উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের প্রবল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। এছাড়া নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ১০ থেকে ১২ ফুট, বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতে ৮ থেকে ১২ ফুট ও খুলনা বিভাগের জেলাগুলোতে ৭ থেকে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হওয়ার হুমকিতে রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি সেন্টমার্টিনে পুরোপুরি আঘাত হানবে, তাই এখানে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। সেন্টমার্টিনে ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ দ্বীপটি প্রচণ্ড হুমকির সম্মুখীন হতে পারে। মোখা দেশের উপকূলবাসীকে ভয় ধরাচ্ছে। তবে এই অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হবে তা এখনও বলা যাচ্ছে না। ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি কমাতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

আবহাওয়ার এমন পূর্বাভাসে চট্টগ্রামের বাঁশখালী, আনোয়ারা, সীতাকুণ্ড, সন্দ্বীপ, মিরসরাই উপকূলসহ সবকটি উপজেলার মানুষের মাঝে এখন চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিশেষ করে জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কায় রয়েছেন উপকূলের মানুষেরা। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছে। যা দেখে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছে উপকূলবাসী। পাশাপাশি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সমুদ্র তীরের মানুষের মাঝেও কাজ করছে অজানা এক ভয়।

১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৫০ কি.মি. দক্ষিণে বাংলাদেশ উপকূলে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছিল এবং ২৫৫ কি.মি. বেগে অবিরাম বাতাসের সঙ্গে ৬ কি.মি. জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়েছিল। সেই ঘূর্ণিঝড়ে চট্টগ্রামের উপকূলীয় অঞ্চলে আনুমানিক ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল। তাই ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় ১৯৯১ সালের সেই ঘূর্ণিঝড় বিবেচনায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মাল্টি হ্যাজার্ড কনটিনজেন্সি প্ল্যানের ফিল্ড সার্ভে ও আমেরিকান জার্নাল অব এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশনে প্রকাশিত গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সমুদ্র তীরের ওয়ার্ডগুলো চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। সেক্ষেত্রে কাট্টলি, বাকলিয়া, হালিশহর ও পতেঙ্গা এলাকা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। অর্থাৎ, ওয়ার্ড নম্বর ১০, ১১, ১৮, ১৯, ২৬, ৩৮, ৩৯ ও ৪১ হলো চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা।পাশাপাশি পাহাড়তলি, সরাইপাড়া ও বক্সিরহাট এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ। অর্থাৎ, ওয়ার্ড নম্বর ৯, ১২, ৩৫, ৩৭ ও ৪০ হলো চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা।

তাই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে অতিদ্রুত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষের জন্য বেশ কিছু জরুরি কাজ সম্পাদন করতে হবে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের অতিদ্রুত সাইক্লোন শেল্টারে নিয়ে আসা। পাশাপাশি সাইক্লোন শেল্টারে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো ও শেল্টার ম্যানেজমেন্ট অতি দ্রুত প্রয়োজন। অন্যদিকে সাইক্লোন শেল্টারে মানুষদের জন্য শুকনো খাবার ও প্রাথমিক চিকিৎসা সামগ্রী সংরক্ষণ করতে হবে। পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলোতে পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তুত রাখতে হবে। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবীদের প্রস্তুত রাখতে হবে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কর্তৃক খোলা জরুরি কন্ট্রোল রুম ২৪ ঘণ্টা কার্যকরভাবে খোলা রাখতে হবে।

পরিশেষে বলবো, ইতোমধ্যে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র আঘাত ও জানমাল রক্ষায় চট্টগ্রামের উপকূলীয় চার উপজেলাসহ জেলার ১৫ উপজেলা ও সিটি করপোরেশন এলাকায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৩৮৮টি আশ্রয়কেন্দ্র এবং প্রায় ৭ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোখার গতিবিধি পর্যবেক্ষণে রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। আবহাওয়া অধিদফতর ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেওয়ার পরই ক্ষয়ক্ষতি কমাতে মূল কার্যক্রম শুরু করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তারপরও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো বাসিন্দাদের সাইক্লোন শেল্টারে নিয়ে যাওয়া এবং সেই সময়ে তাদের বাড়িঘরের নিরাপত্তা প্রদান করা। অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড়ের ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলে, জরুরি উদ্ধার কিংবা ত্রাণ-সাহায্য বিতরণ থেকে শুরু করে ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী কার্যক্রম কীভাবে পরিচালনা হবে তার সুস্পষ্ট এবং কার্যকর পরিকল্পনা অতিদ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।

লেখক : মো. শাহ জালাল মিশুক – সহকারী অধ্যাপক, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলামিস্ট।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ