1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

নতুন দল নিবন্ধন আইন ও নির্বাচন কমিশন

রণেশ মৈত্র : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ৬ জুন, ২০২২

বছর দেড়েক সময় হাতে থাকলেও আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো এবং নির্বাচন কমিশন নানাবিধ তৎপরতা ইতোমধ্যেই শুরু করেছে। বৈধ ভোটারদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হলে সঠিক ভোটার তালিকা প্রণয়ন বা হালনাগাদকরণ নির্বাচন কমিশনের একটি নিয়মিত ও অত্যন্ত আবশ্যিক কাজ। সেই কাজটি কমিশন ইতোমধ্যেই শুরু করেছে। আশা করি তারা একটি নির্ভুল ভোটার তালিকা দেশবাসীকে উপহার দিতে সক্ষম হবে।

নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন

এ বিষয় নিয়ে পাঁচ বছর আগে একবার লিখেছিলাম। বিদায়ী বা সাবেক নির্বাচন কমিশনের নজরে তা পড়েছিল কিনা জানি না। শুধু এটুকু জানি যে, ওই লেখায় প্রকাশিত মতামতকে তারা আদৌ আমলে নেয়নি। নতুন নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছে। শীঘ্রই তারা নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের কাজটি হাতে নেবে। তবে তারা কাজটি হাতে নেয়ার আগে এ বিষয়ে আমার মতামত ও সুপারিশ এই নিবন্ধ মারফত তুলে ধরছি। আশা করি কমিশন অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে এই সুপারিশ ও মতামতসমূহ বিবেচনায় নেবে।

সুপারিশসমূহ

এক. প্রচলিত নিয়মে শুধু সংসদের নির্বাচন- যাকে আমরা সাধারণ নির্বাচন বলে থাকি- তার আগ দিয়ে পাঁচ বছর অন্তর নতুন রাজনৈতিক দল বা দলসমূহের নিবন্ধন দিয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় তা অনেককে, বিশেষ করে নতুন দলগুলোকে ক্ষতির সম্মুখীন করে। যেমনÑ স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এই নির্বাচনগুলো পাঁচটি বছর ধরেই হতে থাকে। এসব নির্বাচন অতীতে সম্পূর্ণ নির্দলীয় ভিত্তিতে হওয়ায় তখন যে পরিস্থিতি ছিল বর্তমানে বেশ কয়েক বছর যাবত স্থানীয় সরকার নির্বাচনও দলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠানের নিয়ম চালু করায় নতুন দলগুলো তাতে অংশ নিতে পারছে না। এতে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুণœ হচ্ছে। তাই নির্বাচনগুলো যেহেতু পাঁচ বছর ধরেই হচ্ছে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনও পাঁচ বছর ধরে করা বাঞ্ছনীয়। আশা করি এই যুক্তিগ্রাহ্য অভিমত নির্বাচন কমিশন বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করবে।

দুই. একটু মনোযোগ দিয়ে পড়লে রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইনটি অগণতান্ত্রিক, বাস্তবতাবর্জিত এবং সর্বোপরি সংবিধানে বর্ণিত এ সংক্রান্ত মূলনীতিসমূহের সঙ্গে পরিপন্থী। তাই এই আইনটির খোল-নলচে পাল্টাতে হবে।

নিবন্ধন আইনে বলা আছে, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন নিতে হলে সেই দলের ঢাকায় একটি কেন্দ্রীয় কার্যালয়, জেলা ও উপজেলাগুলোতে ন্যূনতম এতজন সদস্য, এতগুলো কমিটি, এতগুলো অফিস, ৩০ ভাগ মহিলা সদস্য থাকতে হবে। এটি বাধ্যতামূলক হবে কেন? ২০/৫০ বছরেও বড় বড় সুপরিচিত পুরাতন দলগুলোও ৩০ ভাগ মহিলা সদস্য তাদের নানা কমিটিতে গ্রহণ করতে পারেনি। মূল কথা হলো, কাউকে জোর করে সদস্য করা যায় না, আগ্রহ নিয়ে সদস্যপদ দলীয় নিয়মকানুন মেনে গ্রহণ করতে হয়। সাধারণভাবে এক্ষেত্রে আজও আমাদের নারী সমাজ যথেষ্ট পিছিয়ে আছেন নানা কারণে। ধর্মীয় কুসংস্কার, প্রচলিত রাজনীতিতে কালোটাকা, অস্ত্র, নারী নির্যাতন প্রভৃতি তাদের এ ব্যাপারে উৎসাহে বাড়তি ঘাটতি সৃষ্টি করেছে।

তদুপরি নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রার্থী (যেমন ৫০ বা ১০০) দলীয় মনোনয়নে সাংসদদের ভোটে নির্বাচিত হবেন এমন বিধান থাকায় নতুন কোন দলে যোগ দিতে নারী সমাজ আগ্রহবোধ করেন না। এরূপ পরোক্ষ নির্বাচন সচেতন নারী সমাজও চান না। তাই এই বিধানটি তুলে দিয়ে নারীর জন্য ১০০/১৫০ আসন রিজার্ভ রেখে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচনের ব্যবস্থা করলে এ ব্যাপারে নারী সমাজ নিশ্চিতভাবেই অনুকূল সাড়া দেবেন। তাই ওই আইনটি রদ করে সরাসরি নির্বাচন ব্যবস্থা অনতিবিলম্বে চালু করা প্রয়োজন।

এবারে আসি নানা পর্যায়ে কমিটি, অফিস ও ন্যূনতম সংখ্যক সদস্য থাকা বাধ্যতামূলক এমন বিধান সম্পর্কে। আসলে একটি রাজনৈতিক দল যখন নতুন গঠিত হয় তখন (অসৎ, দুর্নীতিবাজ, কালো টাকার মালিকরা যদি তা গঠন না করে থাকে) সকল পর্যায়ে সদস্য, অফিসঘর (অত্যধিক ব্যয়সাধ্য ও দুষ্প্রাপ্যও বটে) পাওয়া অবাস্তব। দলটিকে সেই পর্যায়ে যেতে বছরের পর বছর তার নীতি, আদর্শ প্রচারের মাধ্যমে তার সততা প্রভৃতি সম্পর্কে তৃণমূল পর্যায়ে গিয়ে প্রচার, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, সমাজকল্যাণমূলক কাজ প্রভৃতির মাধ্যমে মানুষকে আকৃষ্ট করতে হবে। জনগণের মূল সমস্যাসমূহ সমাধানের দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমেই তা সম্ভব। এটা কতদিনে বা কত বছরে হবে তা কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারে না। আমাদের দেশের রাজনৈতিক দল গঠন ও সেগুলোর বিকাশও ওই অভিমতকে পুরোপুরি সমর্থন করে।

তাই এসব বিধিনিষেধ তুলে দিয়ে দলটির মেনিফেস্টো আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমৃদ্ধ কিনা এবং মেনিফেস্টোতে বর্ণিত কর্মসূচী সাম্প্রদায়িকতাবর্জিত, পরিপূর্ণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়ায় অঙ্গীকার সমৃদ্ধ কিনা তা দেখে এবং একটি কেন্দ্রীয় কমিটি ও কেন্দ্রীয় কার্যালয় থাকলেই দলটি নিবন্ধন পাওয়ার অধিকারী এমন বিধান করা অপরিহার্য। কারণ, দল গঠন নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার।

ব্যক্তিগতভাবে ১৯৪৮ সাল থেকে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত। বিশাল ইতিহাসের সাক্ষী। সেই ইতিহাসের কিছু কথা বলি। আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন। সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক। অল্পকাল পরেই শামসুল হকের মৃত্যু হলে ওই পদে আসীন হন শেখ মুজিবুর রহমান (এই সভাপতি ও সম্পাদকের চাইতে জনপ্রিয় এবং গণমুখী নেতৃত্ব কল্পনা করা যায় কি?)। দলটি গঠনের সময় তো দূরের কথা, ৫ বছর পরে যখন ১৯৫৪ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তখনও দলটির সব জেলা ও থানায় কমিটি গঠন সম্ভব হয়নি। ওই নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের পর থেকে আওয়ামী মুসলিম লীগ গণভিত্তি পেতে থাকে। যুক্তফ্রন্টের ভূমিধস বিজয় সম্ভব হয়েছিল মুসলিম লীগের জনপ্রিয়তা শূন্যের কোঠায় নেমে যাওয়া, ভাষা আন্দোলোনের উত্তাল ঢেউয়ের কারণে এবং সর্বোপরি শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মতো দিকপাল নেতার নেতৃত্ব এবং অতুলনীয় সাংগঠনিক দক্ষতাসম্পন্ন তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের দিবারাত্র পরিশ্রম ও ছাত্রলীগ-ছাত্র ইউনিয়নের তথা ছাত্র সমাজের সমগ্র প্রদেশে ক্লান্তিহীন কর্মকা-ের সুফলে। প্রকৃত প্রস্তাবে আওয়ামী লীগ ১৯৬৬-তে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষণার পর বাঙালীর ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছিল।

আরও একটি কথা। নিবন্ধিত দলগুলোর মধ্যে কয়টি পূর্বোক্ত শর্তসমূহ পূরণ করতে পেরেছে বা পারছে তৃণমূলে সারাদেশে খোঁজ নিলেই প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে। তাই বলে এ নয় যে, তারা নিবন্ধনের অযোগ্য বা নিবন্ধন প্রত্যাহার করা প্রয়োজন। বরং অবশ্যই সকলের নিবন্ধন বজায় থাকতে হবে এবং নির্বাচন কমিশন নতুন দল নিবন্ধন আইনে বর্ণিত নিবন্ধনের শর্তসমূহ বাতিল করতে হবে। তবেই তা হবে গণতান্ত্রিক। কোন দলের কয়জন সদস্য, কতগুলো অফিস, কতগুলো কমিটি থাকবে তা দলটিরই বিবেচ্য। এর সুফল-কুফল যাই হোক তা ওই দলগুলোই পাবে, নির্বাচন কমিশন নয়।

তিন. স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে যে বিধানটি রয়েছে তা সম্পূর্ণ গণতন্ত্রবিরোধী ও অবাস্তব। কি করে সারাদেশ থেকে তার বা বিশালসংখ্যক ভোটার থেকে হাজার হাজার ভোটারের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে মনোনয়ন চাইবেন? এ আইন তুলে দিয়ে তার পরিবর্তে মনোনয়ন ফি দিয়ে এবং ঋণখেলাপী বা অপ্রকৃতিস্থ বা সাজাপ্রাপ্ত ইত্যাদি না হলে তার প্রার্থিতা মেনে নিতে হবে- এটাই গণতন্ত্র। স্মরণে রাখা প্রয়োজন, নির্বাচন কমিশনকে জনগণ বা রাজনৈতিক দলসমূহের প্রভু বলে নিজেকে বিবেচনা না করে তাদের সেবক বলে ভাবতে হবে।

চার. নির্বাচন নিয়ে মামলা হলে তা পরিচালনার জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করে রাখতে হবে। কোন দল বা প্রার্থী মামলা দায়ের করলে তা দায়েরের দিন থেকে ছয় মাস বা ১০০ কার্যদিবসের মধ্যে বাধ্যতামূলক নিষ্পত্তি করতে হবে। আপীল নিষ্পত্তির সময় হবে সর্বাধিক তিন মাস বা ৫০ কার্যদিবস।

পাঁচ. দলগুলো এবং প্রার্থীদের আয়-ব্যয়ের হিসাব নির্বাচনে মনোনয়ন গ্রহণকালে দাখিল করতে হবে। নির্বাচন কমিশন তা প্রতি বছর তদন্ত করে জনসমক্ষে প্রকাশ করবে। এমন বিধিমালা প্রণীত হলে নির্বাচন জনগণের কল্যাণমুখী হবে- এমনটা বিশ্বাস করি।

লেখক : রণেশ মৈত্র – একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ