1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার মুদ্রানীতি

ড. আতিউর রহমান : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ২৫ জুন, ২০২৩

নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ (জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৩ সময়কালের জন্য) মুদ্রানীতি অতীত থেকে ব্যতিক্রম। অনেক দিন ধরেই আমরা মুদ্রানীতিকে বাজারনির্ভর করার কথা বলে আসছিলাম। হয়তো এখনো তা পুরোপুরি করা সম্ভব হয়নি। তবে সে পথে এগোনোর একটি সঠিক পদক্ষেপ হিসেবে সর্বশেষ মুদ্রানীতির বিবৃতিকে দেখা যেতে পারে।

মূলত বাড়ন্ত মূল্যস্ফীতিকে বাগে আনার জন্যই দেওয়া হয়েছে সংকোচনমূলক এই মুদ্রানীতি। যেহেতু মূল্যস্ফীতি একটি মুদ্রাজনিত বিষয়, তাই এই মুদ্রানীতিকে নানা কায়দায় বাজারে মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিতে হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে যে নীতি সুদের মাধ্যমে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেয় তার সুদ বাড়ানো হয়েছে। আবার বাজারে যে তারল্য আছে তাকে শুষে নেওয়ার জন্য বিপরীত রেপো বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রাখা ব্যাংকের আমানতের হার বাড়ানো হয়েছে।

অন্যদিকে ব্যক্তি খাতের ঋণের প্রবাহকে কমানোর জন্য তার পরিমাণ কমানো হয়েছে। মূলত ব্যাংক সুদের হার বাড়ার ফলে এই প্রবাহ কমবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রত্যাশা করছে। এর ফলে ব্যাংকে রাখা ডেপোজিটের সুদের হারও খানিকটা বাড়বে। বাজারের নর্মস বা বৈশিষ্ট্যকে মেনে নিয়ে এই মুদ্রানীতি প্রণয়নের চেষ্টা করা হয়েছে।

নীতি (রেপো) সুদের হার ৫০ বেসিস পয়েন্ট (০.৫ শতাংশ) বাড়ানো হয়েছে। রিভার্স রেপো সুদের হার ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি ২০০ বেসিস পয়েন্টের (২.০ শতাংশ) একটি সুদের হারের করিডর থাকবে। এর ফলে সুদের হার বাজারের চাহিদামতো নমনীয় রাখা যাবে। দেয় ঋণ কিংবা প্রাপ্ত আমানত—যা-ই বলি না কেন, তাদের একটি করে বাজারমূল্য আছে।
বিপুলসংখ্যক উদ্যোক্তা ও আমানতকারীর চাওয়া-পাওয়ার প্রতিফলন ঘটে এই মূল্যমানে। নিবিড় প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এই দাম ঠিক হয়। তার মানে মূল্যমানের বিষয়টি অনেকের জ্ঞান বা পারসেপশনের প্রতিফলন বলা চলে। বাজারের এই ধর্ম মেনে চললে অর্থনীতির অপচয় কম হয়। দক্ষতা বাড়ে। সম্পদের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। এর ফলে সুযোগসন্ধানীদের বাড়তি সুবিধা নেওয়ার সুযোগ কমে। ব্যাংক খাতের সুদের হার বেঁধে দেওয়ার ফলে অর্থনীতির বড় খেলোয়াড়দের অন্যায় সুবিধা নেওয়ার সুযোগ বেড়ে গিয়েছিল। আর প্রচলিত পূর্বনির্ধারিত সুদের হারের চেয়েও যখন মূল্যস্ফীতি বেশি হয়ে গেল, তখন বড় বড় ঋণগ্রহণকারী বলতে গেলে বিনা সুদে কিংবা নেতিবাচক প্রকৃত সুদে ঋণ ভোগ করছিলেন। আমানতকারীরাও নেতিবাচক প্রকৃত সুদে ব্যাংকে টাকা রাখতে বাধ্য হচ্ছিলেন। তাঁদের পকেট কাটা যাচ্ছিল। ফলে ব্যাংকগুলোতে আমানতের পরিমাণ কমতে শুরু করেছিল।

মুদ্রানীতি আরো বলছে, ডলার-টাকার একাধিক বিনিময় হারের পরিবর্তে একক বিনিময় হার নির্ধারণ করা হবে। সত্যি বলতে, এমন নীতি পরিবর্তন খুবই জরুরি হয়ে পড়েছিল। একক বিনিময় হার না থাকায় গুজবের কারণে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হচ্ছিল। নতুন মুদ্রানীতিতে মুদ্রার বিনিময় হার বেঁধে না দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা রিজার্ভ সুরক্ষায় ইতিবাচক ভূমিকাই রাখবে। বাজার ইতিবাচক ইঙ্গিত পাবে। আর একক বিনিময় হারের আশপাশেই বৈদেশিক মুদ্রার বাজার সক্রিয় থাকবে বলে আশা করা যায়।

আমার মতে, এবারের মুদ্রানীতির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত হলো ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত কোনো সুদের হারে ক্যাপ না রাখাটি। ট্রেজারি বন্ডের বিগত ছয় মাসের চলমান গড় হারকে ব্যাংকের ঋণের রেফারেন্স হার হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এই হারকে স্মার্ট রেট (smart rate) বলা হচ্ছে। বাজারে ঋণ ও আমানতের হার—দুটিই নির্ধারিত হবে এই রেফারেন্স হারের সঙ্গে ৩ ও ৫ শতাংশ মার্জিন ধরে। প্রতি মাসেই এই রেফারেন্স হার ঘোষণা করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর সঙ্গে তাল মিলিয়েই ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাজারের ইঙ্গিতমতো সুদের হার নির্ধারণ করবে। এর সঙ্গে সমন্বয় করে আন্ত ব্যাংক কলমানি হারও ওঠানামা করবে। ভোক্তা ঋণ ও কুটির-ক্ষুদ্র-মাঝরি ঋণের ঝুঁকি বেশি। সে জন্য এসব ঋণের তত্ত্বাবধানের প্রয়োজনও বেশি। তাই এসব ঋণের জন্য বাড়তি ১ শতাংশ সুদ আরোপের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কৃষিঋণের সুদও ১ শতাংশ বাড়বে। খুদে ঋণের সুদের হার খানিকটা বাড়লেও ব্যাংক ছোটখাটো উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে অনীহা প্রকাশ করবে না।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এই নতুন ব্যবস্থায় কিছুটা স্বস্তি পাবে। কেননা পূর্বনির্ধারিত হারে (যা কি না আবার মূল্যস্ফীতির হারের চেয়ে অনেক কম) আমানত সংগ্রহ করা যাচ্ছিল না। এখন আমানতের সুদের হার খানিকটা বাড়াতে পারবে তারা। এতে তাদের স্প্রেড (লাভ) বাড়ার সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে। তবে এই ব্যবস্থাও কিন্তু পুরোপুরি বাজারভিত্তিক নয়। তবু মন্দের ভালো। এক্ষুনি পুরোপুরি বাজারভিত্তিক সুদের হার দিতে গেলে ব্যাংকগুলো ফের অস্বস্তিতে পড়ত। ঋণগ্রহণকারী বিনিয়োগকারীদের ব্যবসা-বাণিজ্যের খরচ অনেকটা বেড়ে যেত। ধীরে ধীরে সুদের হার বাজারের চাওয়া অনুসারে স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা যায়। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারও পুরোপুরি বাজারের কাছে ছেড়ে দেওয়া হয়নি। নিঃসন্দেহে এটি ‘ম্যানেজড ফ্লোটিং’ ব্যবস্থা। বিদেশি মুদ্রাবাজারকে স্থিতিশীল রাখতে এর প্রয়োজন ছিল। তবে সবার জন্য একটিমাত্র বিনিময় হার থাকায় বাজার ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা যায়।

মুদ্রানীতি দেওয়ার সময় সাধারণত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর অনেক প্রাসঙ্গিক কথা বলে থাকেন। এরই অংশ হিসেবে তিনি জানিয়েছেন, এখন থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যালান্স অব পেমেন্ট ম্যানুয়াল এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের অবস্থান অনুসরণ করে সঠিক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রিপোর্ট করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক তার পুরনো হিসাবও চালু রাখবে। একসময় হয়তো পুরোপুরি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে তৈরি হিসাবটিই দেওয়া হবে। এটিও সঠিক পথে হাঁটার আরেকটি দৃষ্টান্ত।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় একটি সময়োপযোগী পরিবর্তন আনতে নতুন ব্যাংক কম্পানি আইনের কথাও গভর্নর জানিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তদারকি বাড়ানোর প্রশ্নে শক্ত অবস্থানে থাকবে, সেটিই প্রত্যাশিত। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এ ধরনের তদারকিতে একে অপরকে গভীরভাবে সহযোগিতা করতে পারে। কেননা দুটি নিয়ন্ত্রক সংস্থারই দায়িত্ব আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সুশাসন নিশ্চিত করা। সে জন্য তাদের মাঝে সম্পর্ক আরো নিবিড় হোক, সেটিই প্রত্যাশিত।

মুদ্রানীতির কার্যকারিতার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কমিউনিকেশন বা অংশীজন ও দেশবাসীর সঙ্গে যোগাযোগের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিত মুদ্রাবাজারে কী হতে যাচ্ছে তার আগাম বার্তা দেবে—এমনটিই কাম্য। তাদের মাসে বা দুই মাস পর পর অন্তত একবার সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা এবং মুদ্রা বিনিময় হার নীতির একটি পর্যালোচনা জনসাধারণের সামনে উপস্থাপন করা উচিত। এটিকে বলে ‘ফরওয়ার্ড গাইডেন্স’। পৃথিবীর সব বড় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই কাজটি নিয়মিত করে থাকে। বিশেষ করে ২০০৮-এর বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের পর থেকেই বাজার সংশ্লিষ্টজন ও সাধারণ মানুষকে বার্তা দেওয়ার এই যোগাযোগব্যবস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্যতম নীতি-কৌশল হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও যোগাযোগের ক্ষেত্রে যথেষ্ট পারদর্শিতা দেখিয়ে চলেছে। আশা করি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সঙ্গেও সমন্বয় করে প্রতি মাসের ‘হেডলাইন ইনফ্লেশন’ ও ভোক্তা পর্যায়ের মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশে উৎসাহিত হতে পারে। বিশ্বব্যাপী প্রতিটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরই মূল্য স্থিতিশীলতার লক্ষ্যটি প্রধান। বাংলাদেশ ব্যাংকও মূল্যস্ফীতিকে ‘অ্যাংকর’ করে এই তথ্য নিয়মিত দিতে পারে। সে জন্য মূল্যস্ফীতির আশঙ্কার জরিপ তাকে চালিয়ে যেতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকৃত মূল্যস্ফীতির তথ্য যাতে মাসিক প্রকাশনা হিসেবে পাওয়া যায় বিবিএসের সাহায্য নিয়ে তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ ব্যাংকে মুদ্রানীতির পর্যালোচনা কমিটি রয়েছে। আর্থিক নীতি সংশ্লিষ্ট আরো কিছু কমিটি আছে। এসব কমিটি বাংলাদেশ ব্যাংকের অতীত নীতিগুলো পর্যালোচনা করার আগে এবং কোনো নীতি পরিবর্তনের প্রস্তাব দেওয়ার আগে এই তথ্য তাদের কাছে দেওয়া যায়। নীতিনির্ধারকরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই ‘গাইডেন্স’ খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেন। প্রতি ছয় মাস অন্তর একটি দূরদর্শী মুদ্রানীতি বিবৃতি দেওয়ার সংস্কৃতি ফিরে আসায় আমি খুশি। আরো ঘন ঘন আর্থিক বাজার, পরিবার ও ব্যবসায়ীদের এই বিবৃতির সঙ্গে পরিচিত করতে পারলে আরো ভালো হবে। তবে বার্ষিক বিবৃতির চেয়ে অন্তত ষাণ্মাসিক বিবৃতি অনেকটাই ভালো। কেননা ম্যাক্রো অর্থনীতির সূচকগুলো তো আর এক বছর ধরে বসে থাকে না। তাই যত ঘন ঘন মুদ্রানীতি দেওয়া যাবে, ততই ভালো। কিভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বল্প থেকে মধ্য মেয়াদে ব্যাংকের তারল্য, মুদ্রাস্ফীতি, সুদের হার এবং বিনিময় হার পরিচালনা করবে, সেই কৌশলটির কথাও স্মার্টলি অংশীজনদের বলার প্রয়োজন রয়েছে। পুঁজিবাজার ও বৈদেশিক মুদ্রার বাজারের ক্ষেত্রে কিভাবে বড় নীতিগত পরিবর্তনগুলো কাজ করে সে কথাগুলোও আর্থিক বাজারগুলোকে আরো বিচক্ষণতার সঙ্গে জানানো উচিত। উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাই সর্বদাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতামত বিনিয়োগ করার সুযোগ থাকা চাই।

কখনো কখনো ব্যাংকের তারল্য, বিনিময় হার এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের স্তরের মতো কিছু সামষ্টিক সূচক প্রত্যাশার বাইরে গিয়ে ওঠানামা করতেই পারে। মূল সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলোর এ ধরনের অস্বাভাবিক অস্থিরতার পেছনের কারণগুলো কী হতে পারে তার আভাস দেওয়ার জন্যও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরো ঘন ঘন নীতি পর্যালোচনা এবং জনসাধারণের সঙ্গে যোগাযোগের প্রয়োজন। এসব ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই কেন্দ্রীয় ব্যাংক জনগণের কাছে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে তার কমিউনিকেশন কৌশল বদলাতে পারবে। নীতির বিশ্বাসযোগ্যতা যাতে কমে না যায় সেদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সর্বদাই সজাগ দৃষ্টি রাখতেই হবে।

সারা বিশ্বের প্রধান প্রধান কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই জনযোগাযোগকে তাদের মুদ্রানীতির অন্যতম পরিচালনা কৌশল হিসেবে এরই মধ্যে গ্রহণ করেছে। বিশ্ব আর্থিক সংকটের পর থেকেই এই নীতিতে পরিবর্তন এসেছে। মুদ্রানীতি ও মূল্যস্ফীতির তথ্য ঘন ঘন প্রকাশের লক্ষ্যে মুদ্রানীতির কোনো বিশেষ দিক নিয়ে দুই মাস বা তিন মাস অন্তর অন্তর বাজারকে আপডেট দিতেই পারে। এ জন্য আর্থিক বিষয়ে রিপোর্ট করেন যে সব সাংবাদিক, তাঁদের দক্ষ করে তুলতেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার জ্ঞান সহায়তা নিশ্চয়ই দিতে পারে।

বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার বেড়েছে। ম্যাক্রো অর্থনীতির চ্যালেঞ্জও বেড়েছে। তাই যথাযথ নীতি বদলের এখনই সময়। এই মুদ্রানীতির মাধ্যমে ব্যালান্স অব পেমেন্টের ভারসাম্য এবং বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা আনতে একটি ম্যাক্রো প্রুডেনশিয়াল নীতি গ্রহণের জন্য আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও তাঁর সহকর্মীদের অভিনন্দন জানাই। তবে এ ক্ষেত্রেও আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। মুদ্রানীতি ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য নীতি যাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করে, বাংলাদেশ ব্যাংক যেন সেই বাস্তবায়নপ্রক্রিয়া ডিজিটালি সর্বক্ষণ মনিটর করে, সেই প্রত্যাশাই করছি।

একই সঙ্গে রাজস্বনীতিকেও মুদ্রানীতির লক্ষ্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার অভ্যাস করতে হবে। মুদ্রানীতি সংকোচনমূলক অথচ রাজস্বনীতি যদি সম্প্রসারণমূলক হয়, তাহলে তো ব্যাটে-বলে এক হবে না। যেসব উন্নয়ন প্রকল্প থেকে দ্রুত কর্মসংস্থান, অবকাঠামো উন্নয়ন ও জনসেবা নিশ্চিত হবে, সেসবের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেওয়া সরকারি ঋণ যাতে ঠিকমতো ব্যবহার করা হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এই ঋণের ‘এন্ড ইউজ’ বা শেষ মাইলে সদ্ব্যবহার করা কতটা হচ্ছে, তা সর্বক্ষণ অবলোকন করার প্রয়োজন রয়েছে। তা না হলে মূল্যস্ফীতি বাড়ার ঝুঁকি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

লেখক: ড. আতিউর রহমান – বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ